Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যে তাপমাত্রায় শিশির জমতে শুরু করে তাকে শিশিরাঙ্ক বলে।শিশিরাঙ্ক হলো এমন তাপমাত্রা যাতে পৌছালে বায়ু, জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। বায়ুকে আরো শীতল করলে এতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তরল জল (শিশির) উৎপাদন করে। বাতাসের চেয়ে শীতল এমন কোনো পৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে যখন বায়ু শিশিরাঙ্কে পৌছায়, তখন জল ঐ পৃষ্ঠের উপর ঘনীভূত হয়।[1][2]
আর্দ্রতা এবং আর্দ্রতামিতি | |
---|---|
বিশেষ ধারণা | |
| |
সাধারণ ধারণা | |
পরিমাপ ও যন্ত্রপাতি | |
| |
যখন তাপমাত্রা জলের হিমাঙ্কের নিচে অবস্থান করে তখন শিশিরাঙ্ককে বরফ বিন্দু (ফ্রস্ট পয়েন্ট) বলা হয়ে থাকে, কেননা বরফ ঘনীভূত না হয়ে জমাটবদ্ধকরণের মাধ্যমে গঠিত হয়।[3] শিশিরাঙ্কের পরিমাপ আর্দ্রতার সাথে জড়িত। উচ্চ শিশিরাঙ্ক বায়ুতে আর্দ্রতার আধিক্যকেই নির্দেশ করে।[2]
তরলের ক্ষেত্রে মেঘ বিন্দু সমতুল্য শব্দ।
যদি আর্দ্রতার ওপর প্রভাব দানকারী অন্য সকল উপাদান ধ্রুব থাকে তবে তাপমাত্রা হ্রাস পেলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়; কেননা তখন বায়ু সম্পৃক্ত করতে কম বাষ্পের প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, শিশিরাঙ্কের তাপমাত্রা বায়ুর তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হতে পারে না কারণ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% এর অধিক হতে পারে না।[4]
প্রায়োগিকভাবে, শিশিরাঙ্ক হলো সে তাপমাত্রা যাতে পানি যে হারে বাষ্পীভূত হয় সে হারেই তরলে পরিণত হয়, যদি বায়ুমণ্ডলীয় চাপ স্থির থাকে।[5] শিশিরাঙ্কের চেয়ে নিম্ন তাপমাত্রায় বাষ্পায়নের চেয়ে ঘনীভবনের হার বেশি হয়। ঘনীভূত জল কঠিন পৃষ্ঠের উপর শিশির গঠন করে অথবা জমাটবদ্ধ হয়ে বরফ গঠন করে। বায়ুতে ঘনীভূত হওয়ার উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে ঘনীভূত জলকে কুয়াশা অথবা মেঘ বলা হয়। যদি তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে থাকার পরও কুয়াশা বা শিশির তৈরী না হয় তবে বাষ্পকে অতিপৃক্ত বলা হয়। বায়ুতে গাঠনিক অণু হিসেবে কাজ করার মত যথেষ্ট অণু না থাকলেই এমনটা হয়।[6]
উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্দেশ করে যে শিশিরাঙ্ক বায়ুর তাপমাত্রার কাছাকাছি। ১০০% আপেক্ষিক আর্দতা নির্দেশ করে যে শিশিরাঙ্ক বর্তমান তাপমাত্রার সমান ও বায়ু জলীয়বাষ্প দ্বারা পরিপূর্ণভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। যখন আর্দ্রতা স্থির থাকে ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন আপেক্ষিক আর্দ্রতা হ্রাস পেলেও শিশিরাঙ্ক স্থির থাকে।[7]
বায়ুমন্ডলীয় চাপ বৃদ্ধি পেলে শিশিরাঙ্ক বৃদ্ধি পায়।[8] এর অর্থ হলো, চাপ হ্রাস পেলে, শিশিরাঙ্ক স্থির রাখতে একক আয়তনে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস পেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, নিউ ইয়র্ক শহর (উচ্চতা ৩৩ ফুট বা ১০ মিটার) ও ডেনভার (উচ্চতা ৫২৮০ ফুট বা ১৬১০ মিটার[9]) এর কথা বিবেচনা করা যায়। যেহেতু ডেনভারের উচ্চতা নিউ ইয়র্ক থেকে বেশি তাই সেখানে বায়ুমন্ডলীয় চাপ কম থাকবে। এর অর্থ হলো, শহর দুটিতে তাপমাত্রা ও শিশিরাঙ্ক সমান হলে, ডেনভারে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অধিক থাকবে।
যখন বায়ুর তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন মানবদেহ ঘাম বাষ্পীভূত করে ঠান্ডা হয় আর এই শীতলীকরণের প্রভাব নির্ভর করে কত তাড়াতাড়ি ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে তার ওপর। ঘাম কি হারে বাষ্পীভূত হবে তা নির্ভর করে বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ ও আর্দ্রতা ধারণক্ষমতার ওপর। যদি বায়ু ইতিমধ্যে জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত থাকে তবে ঘাম বাষ্পীভূত হবেনা। ঘাম উৎপাদনের হার বাষ্পায়নের হারকে অতিক্রম করলেও দেহ তার তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টায় এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে, এজন্যই আর্দ্র দিনে অতিরিক্ত দেহ-উত্তাপ তৈরী (যেমন, ব্যায়ামের মাধ্যমে) না করেও কেউ ঘাম দ্বারা আবৃত হয়ে যেতে পারে।
কারও দেহের চারপাশের বায়ু শরীরের উত্তাপ দ্বারা উষ্ণ হতে থাকলে তা ওপরে উঠে যাবে ও আশেপাশের বায়ু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। প্রাকৃতিক বাতাস বা ফ্যানের মাধ্যমে বায়ু যদি কারও শরীর থেকে দূরে সরে যায় তবে ঘাম আরও দ্রুত বাষ্পীভূত হবে, যা দেহ শীতল করার ক্ষেত্রে ঘামকে আরও কার্যকর করে তুলবে। যত অবাষ্পীভূত ঘাম থাকবে, তত বেশি অস্বস্তি অনুভূত হবে।
শিশিরাঙ্ক অতি নিম্ন ( প্রায় -৫° সেলসিয়াস বা ২৩° ফারেনহাইটের নিচে) থাকলেও অস্বস্তি অনুভূত হয়। শুকনো বায়ু ত্বকে ফাটল তৈরী করতে পারে ও জ্বালা অনুভব করায়। যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদারী নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন (অকুপেশোনাল সেফটি এন্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনুযায়ী, গৃহমধ্যস্থ বায়ুর তাপমাত্রা ২০-২৪.৫° সেলসিয়াস (৬৮-৭৬° ফারেনহাইট) ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ২০-৬০%,[10] অর্থাৎ শিশিরাঙ্ক ৪ থেকে ১৫.৫° সেলসিয়াস (৩৯ থেকে ৬০° ফারেনহাইট) হওয়া উচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শিশিরাঙ্ক নিম্ন, অর্থাৎ ১০° সেলসিয়াস (৫০° ফারেনহাইট) এর কম হলে তা নিম্ন তাপমাত্রাকে নির্দেশ করে ও দেহের শীতলীকরণের প্রয়োজনীয়তাকে কমিয়ে দেয়। উচ্চ তাপমাত্রায় নিম্ন শিশিরাঙ্ক শুধু অতিনিম্ন আপেক্ষিক আর্দ্রতাবিশিষ্ট স্থাণেই সম্ভব, যা তুলনামূলকভাবে কার্যকর শীতলীকরণের সুযোগ তৈরী করে।
ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলবায়ুতে বসবাসকারী লোকেদের উচ্চ শিশিরাঙ্কের প্রতি অভ্যস্ততা তৈরী হয়। এজন্য, সিঙ্গাপুর বা মায়ামির একজন বাসিন্দার সহনশীলতা, লন্ডন বা শিকাগোর মত জলবায়ুতে বসবাসকারীদের থেকে বেশি হবে। অনেকসময় নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা শিশিরাঙ্ক ১৫° সেলসিয়াস (৫৯° ফারেনহাইট) অতিক্রম করাতে অস্বস্তি বোধ করলেও অন্যরা ১৮° সেলসিয়াস (৬৪° ফারেনহাইট) এর ওপরের শিশিরাঙ্ককেও আরামদায়ক মনে করতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা ২১° সেলসিয়াস (৭০° ফারেনহাইট) তাপমাত্রার ওপরে শিশিরাঙ্ককে দুঃসহ মনে করলেও উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে তা একদমই অস্বস্তিকর নাও ঠেকতে পারে। তাপীয় আরাম কেবল শারীরিক বা পরিবেশগত নয়, বরং, মনস্তাত্ত্বিক কারণসমূহের উপরও নির্ভর করতে পারে। [11]
শিশিরাঙ্ক | ৩২° সেলসিয়াসে(৯০° ফারেনহাইট) আপেক্ষিক আর্দ্রতা | |
---|---|---|
২৬° সেলসিয়াস এর অধিক | ৮০° ফারেনহাইট এর অধিক | ৭৩% এবং উচ্চতর |
২৪-২৬° সেলসিয়াস | ৭৫-৮০° ফারেনহাইট | ৬২-৭২% |
২১-২৪° সেলসিয়াস | ৭০-৭৪° ফারেনহাইট | ৫২-৬১% |
১৮-২১° সেলসিয়াস | ৬৫-৬৯° ফারেনহাইট | ৪৪-৫১% |
১৬-১৮° সেলসিয়াস | ৬০-৬৪° ফারেনহাইট | ৩৭-৪৩% |
১৩-১৬° সেলসিয়াস | ৫৫-৫৯° ফারেনহাইট | ৩১-৩৬% |
১০-১২° সেলসিয়াস | ৫০-৫৪° ফারেনহাইট | ২৬-৩০% |
১০° সেলসিয়াস এর কম | ৫০° ফারেনহাইট এর কম | ২৫% এবং নিম্নতর |
আর্দ্রতামাপক যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন তাপমাত্রায় শিশিরাঙ্ক পরিমাপ করা হয়। এই যন্ত্রগুলোর অভ্যন্তরে একটি পালিশ করা ধাতব আয়না থাকে, যার ওপর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হলে তা শীতল হতে থাকে। সংজ্ঞানুযায়ী, যে তাপমাত্রায় শিশির গঠিত হয় তাই শিশিরাঙ্ক। এই ধরনের ম্যানুয়াল যন্ত্র, অন্যান্য আর্দ্রতা সেন্সর ক্যালিব্রেট করতে ব্যবহৃত হয় আর স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করে কোনো কক্ষ বা ছোট জায়গার শিশিরাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
শুধুমাত্র ("শুষ্ক বাল্ব") বায়ুর প্রকৃত তাপমাত্রা, T (সেলসিয়াস এককে) এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা (শতাংশে), RH, দেওয়া থাকলে শিশিরাঙ্ক, Tdp, নির্ণয়ের একটি অতি পরিচিত পদ্ধতি হলো ম্যাগনাস সূত্র:
এই সূত্রের পরিপূর্ণ গঠন এবং উৎস, সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ (মিলিবার এককে), Ps(T) এবং প্রকৃত জলীয়বাষ্পের চাপ (মিলিবার এককেই), Pa(T) এর আন্তঃসম্পর্কের সাথে জড়িত, যা হয় RH এর সাথে পাওয়া যায় অথবা বায়ুমণ্ডলীয় চাপ (মিলিবার এককে), BPmbar ও সিক্ত বাল্ব তাপমাত্রা, Tw এর মাধ্যমে নির্ণীত হয়। (অন্যথায় ঘোষিত না হলে সকল তাপমাত্রা সেলসিয়াস এককে প্রকাশিত) :
বোগেল মডিফিকেশন বা আর্ডেন বাক সূত্রের মাধ্যমে (যা একটি চতুর্থ চলক d ব্যবহার করে), Ps(T) (তথা γ(T, RH)) পরিবর্তন করে আরো নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যেতে পারে:
যেখানে,
a = ৬.১১২১ মিলিবার, b = ১৮.৬৭৮, c = ২৫৭.১৪° সেলসিয়াস, d = ২৩৪.৫° সেলসিয়াস।
একটি খুব সরল পদ্ধতিও রয়েছে যার মাধ্যমে তাপমাত্রা, শিশিরাঙ্ক ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার রূপান্তর সম্ভব। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫০% এর ওপর থাকলে এই পদ্ধতি ± ১° সেলসিয়াস পর্যন্ত নির্ভুল:
এটি আঙ্গুলের মাধ্যমে পরিমাপের একটি সহজ নিয়ম হিসাবে প্রকাশ করা যেতে পারে:
শিশিরাঙ্ক ও শুষ্ক বাল্ব তাপমাত্রা সমান হলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা = ১০০% থেকে শুরু করে প্রতি ১° তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫% হ্রাস পায়।
আমেরিকান মেটেরোলজিকাল সোসাইটির বুলেটিনে এই পদ্ধতির বিবৃতি, এর নির্ভুলতার আলোচনা, অন্যান্য পদ্ধতির সাথে তুলনা এবং শিশিরাঙ্কের ইতিহাস ও প্রয়োগ সম্পর্কিত আরও তথ্য দেওয়া হয়েছে।[12]
ফারেনহাইট এককে তাপমাত্রার হিসাবের ক্ষেত্রে:
উদাহরণ স্বরূপ, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% বলতে বোঝায় শিশিরাঙ্ক বায়ুর তাপমাত্রার সমান। ৯০% মানে, শিশিরাঙ্ক বায়ুর তাপমাত্রা থেকে ৩° ফারেনহাইট কম। প্রত্যেক ১০% হ্রাসের জন্য, শিশিরাঙ্ক ৩° ফারেনহাইট করে কমতে থাকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.