সত্যজিৎ রায়ের প্রাপ্ত পুরস্কার এবং মনোনয়ন তালিকা
উইকিমিডিয়ার তালিকা নিবন্ধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
সত্যজিৎ রায় (উচ্চারণ)ⓘ; (২ মে, ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল, ১৯৯২) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক এবং লেখক যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে বিবেচিত।[1][2][3] রায় ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৪) এবং ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন (১৯৯২) সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। তিনি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পদক ন্যাশনাল অর্ডার অব দ্য লেজিওঁ অফ অনারের (১৯৮৭) কমান্ডার সম্মাননা এবং ৬৪তম একাডেমি পুরস্কারে একটি সম্মানসূচক পুরস্কারে ভূষিত হন।[4]
সত্যজিৎ রায়ের একটি প্রতিকৃতি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
তাঁকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে গণ্য করা হয়,[5] রায় ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক হিসাবে তার অভিষেক ঘটান।[6][7] চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা পায় এবং বিভিন্ন পুরস্কার অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে, তন্মধ্যে ৩য় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৫), ৭ম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৫৭), ১ম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৫৭) উল্লেখযোগ্য। পথের পাঁচালী ৯ম কান চলচ্চিত্র উৎসবে (১৯৫৬) "শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল" (প্রিক্স দু দকুমেন্ট হুমাইন) পুরস্কারে ভূষিত হয়। রায় তার চার দশকের কর্মজীবনে মোট পঁয়ত্রিশটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার — পথের পাঁচালী, অপুর সংসার (১৯৫৯), চারুলতা (1964), গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৮), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), ও আগন্তুক (১৯৯১) — এ ছয়টি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। তিনটি চলচ্চিত্র — জলসাঘর (১৯৫৮), অভিযান (১৯৬২), ও প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০) — এ তিনটি চলচ্চিত্র দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্রের পুরস্কার এবং মহানগর (১৯৬৩) চলচ্চিত্রটি তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ফিচার চলচ্চিত্র হিসাবে সাব্যস্ত হয়। ১৯৬১ সালে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর নির্মিত তাঁর তথ্যচিত্র লোকার্নো ও মন্টেভিডিও চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার এবং নন-ফিচার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। তাঁর হিন্দি চলচ্চিত্র শতরঞ্জ কে খিলাড়ি (১৯৭৭) হিন্দি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং সেরা পরিচালকের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিল। রায়ের অপু ত্রয়ী (১৯৫৫-৫৯),- পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) এবং অপুর সংসার (১৯৫৯), ২০০৫ সালে টাইম পত্রিকার সর্বকালের ১০০ চলচ্চিত্র তালিকায় স্থান পেয়েছিল।[8]
রায় তাঁর পরিচালনার জন্য ২১ টি পুরস্কার জিতেছিলেন, এর মধ্যে রয়েছে সাতটি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (বিএফজেএ), ছয়টি ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি সিলভার বিয়ার এবং সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি গোল্ডেন গেট পুরস্কার। পরিচালনার পাশাপাশি রায় একজন সংগীত রচয়িতা ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, গীত এবং সংলাপও লিখেছিলেন।[6] চিত্রনাট্য রচনার জন্য, ১৯৯৪ সালে একটি মরণোত্তর পুরস্কার সহ, তিনি বারোটি পুরস্কার জিতেছিলেন। এছাড়াও তিনি মূল গল্প ধারণার জন্য একটি পুরস্কার, সংলাপ রচনার জন্য সাতটি পুরস্কার, সংগীত রচনার জন্য পাঁচটি পুরস্কার এবং গীতি রচনার জন্য দুটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
রায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। পুরস্কারের মধ্যে ৯ম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৩), ২৮তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৮), ১১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৭৯), ৩৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৮২), ৩৯তম ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৮২), ৪র্থ টোকিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯১), এবং ৩৫তম সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯২) উল্লেখযোগ্য। তিনি রয়েল কলেজ অফ আর্ট থেকে একটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (১৯৭৪), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডক্টর অফ লেটারস (১৯৭৮), ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট ফেলোশিপ (১৯৮৩), এবং দুইটি সংগীত নাটক একাডেমি (১৯৫৯, ১৯৮৬) পুরস্কারে ভূষিত হন।