সাংখ্য
প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু দর্শন / From Wikipedia, the free encyclopedia
সাংখ্য (সংস্কৃত: सांख्य, IAST: sāṅkhya) হল প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু দর্শনের আস্তিক শাখার ছয়টি দর্শনের মাঝে অন্যতম। বেদের প্রতি আস্থা থাকায় এই দর্শনটি আস্তিক্য দর্শন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়। হিন্দু পৌরাণিক ঋষি কপিলকে এই দর্শন শাখার সমন্বায়ক বা প্রবর্তক মনে করা হয়। সাংখ্য দর্শন ভারতের প্রাচীনতম দর্শন শাখাগুলির একটি।[1] এই দর্শনকে ভারতীয় অন্যান্য দর্শন অপেক্ষা সর্বপ্রাচীন বলে মনে করা হয়।
গণনামূলক এ দর্শন কঠোরভাবে দ্বৈতবাদী।[2][3][4] এ দর্শনের মতে, জগৎ দু'টি সত্যের দ্বারা গঠিত; পুরুষ (সাক্ষ্য-চৈতন্য) ও প্রকৃতি (আদি-পদার্থ)।[5] এখানে পুরুষ হচ্ছে চৈতন্যময় সত্ত্বা যা পরম, স্বাধীন, মুক্ত এবং ইন্দ্রিয়ের উপলব্ধির বাইরে। যাকে যেকোনো অভিজ্ঞতা অথবা শব্দের দ্বারা বর্ণনা করা অসম্ভব।[6][7][8] আর প্রকৃতির সত্ত্বা হচ্ছে জড় রূপা। এটি নিষ্ক্রিয় বা অচেতন এবং সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ -এই ত্রিগুণের সাম্যবস্থা।[8][9]
প্রকৃতি পুরুষের সংস্পর্শে আসলে প্রকৃতিতে ত্রিগুণের এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, এবং প্রকৃতির প্রকাশ পায় বা অস্তিত্বমান হয়। একে বলা হয় বিকৃতি। বিকৃতির ফলে সৃষ্টিতে আরও তেইশ তত্ত্বের বিকাশ লাভ করে।[8] প্রকৃতি, পুরুষ এবং তেইশ তত্ত্ব সহ মোট পঁচিশ তত্ত্ব হচ্ছে সাংখ্য দর্শনের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
"জীব" হচ্ছে সেই অবস্থা, যেখানে পুরুষ প্রকৃতিতে আবদ্ধ হয়।[10] আর এই বন্ধনের অবসানকে বলা হয় মোক্ষ বা মুক্তি বা কৈবল্য অবস্থা।[11] মোক্ষলাভের পরে কী হয় তা এদের দার্শনিক চর্চায় ব্যাখ্যা করা হয় নি। এই দর্শনে ঈশ্বরের কথা উল্লেখ না করার কারণ হিসেবে বলা হয় মোক্ষলাভের পর ব্যক্তি ও পরম পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।[12]
সাংখ্য দর্শনকে আস্তিক এবং নাস্তিক উভয় দর্শন হিসেবে দেখা হয়, কারণ এই দর্শনের সাংখ্যপ্রবচন সূত্র ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করে না। যদিও অনেক পণ্ডিত ধারণাটিকে সঠিক বলে মনে করেন না। কারণ, এই দর্শনে "ঈশ্বর" বলতে “পুরুষ” বুঝানো হয় বলে তারা মনে করেন।[13]
সাংখ্য দর্শন জ্ঞান অর্জনের ছয়টি প্রামাণিক উপায়ের মাঝে তিনটিকে নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। এই তিনটি প্রমাণ হচ্ছে, প্রত্যক্ষ প্রমাণ, অনুমান প্রমাণ এবং শব্দ প্রমাণ (আপ্তবচন)।[14][15][16]