সাংস্কৃতিক বিপ্লব
১৯৬৬–১৯৭৬ সালে চীনের সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন / From Wikipedia, the free encyclopedia
সাংস্কৃতিক বিপ্লব, আনুষ্ঠানিক নাম মহান প্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ১৯৬৬ সালে মাও সেতুং দ্বারা সূচিত গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (গণচীন) একটি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল যা ১৯৭৬ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।[1] এই বিপ্লবের উল্লিখিত লক্ষ্য ছিল চীনা সাম্যবাদকে রক্ষা করা এবং চীনা সমাজ থেকে পুঁজিবাদী ও প্রথাগত উপাদানের অবশিষ্টাংশ নির্মূল করা। বিপ্লবটি মাও-নেতৃত্বাধীন গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড বিপর্যয় এবং চীনের মহাদুর্ভিক্ষের (১৯৫৯-১৯৬১) পর আত্মসংযম এবং স্বল্প উগ্র নেতৃত্বে অর্পণের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে মাও-এর কার্যকর নেতৃত্বস্থানীয় প্রত্যাবর্তনকে নির্দেশ করে–যিনি তখনও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সভাপতি ছিলেন। যাইহোক, বিপ্লবটি তার মূল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।
অবস্থান | গণপ্রজাতন্ত্রী চীন |
---|---|
উদ্দেশ্য | পুঁজিবাদী ও প্রথাগত উপাদানগুলোকে নির্মূল করে সাম্যবাদ সংরক্ষণ এবং মাওবাদী ও বাস্তববাদীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই। |
ফলাফল | অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের ধ্বংস। |
মৃত | দশ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ বেসামরিক নাগরিক, রেড গার্ড এবং সৈন্যের মৃত্যু (সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি) |
সংগঠক | মাও সেতুং (চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি) |
ক্ষয়ক্ষতি | কনফুসিয়াসের সমাধি, স্বর্গমন্দির, মিং সমাধিসমূহ |
গ্রেপ্তার | চিয়াং চিং, চাং ছুনছিয়াও, ইয়াও ওয়েনইউয়ান, এবং ওয়াং হংওয়েন |
সাংস্কৃতিক বিপ্লব | |||||||||||||||||||||||
চীনা | 文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আক্ষরিক অর্থ | "সাংস্কৃতিক বিপ্লব" | ||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||
Formal name | |||||||||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 無產階級文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 无产阶级文化大革命 | ||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | "মহান প্রলেতারীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব" | ||||||||||||||||||||||
|
১৯৬৬ সালের মে মাসে সাংস্কৃতিক বিপ্লব দলের সহায়তায় আন্দোলনটির সূচনা করে, মাও অভিযোগ তোলেন যে পুঁজিবাদ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বুর্জোয়া উপাদানগুলো সরকার ও সমাজে অনুপ্রবেশ করছে। মাও যুবকদেরকে "সদরদপ্তরে বোমাবর্ষণ" করার আহ্বান জানান এবং ঘোষণা করেন যে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে "বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত"। যুবকরাও সারা দেশে বিভিন্ন রেড গার্ড গঠন করে সাড়া প্রদান করে। মাও-এর বাণীগুলোর একটি নির্বাচিন লিটল রেড বুক-এর মধ্যে সংকলিত হয়, যা মাও-এর ব্যক্তি পূজার জন্য একটি পবিত্র পাঠ্য হয়ে উঠে। রেড গার্ড নিয়মিত সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে "নিন্দা সমাবেশ" করে এবং স্থানীয় সরকার ও সিসিপি শাখা থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয়, অবশেষে ১৯৬৭ সালে বিপ্লবী কমিটিগুলো প্রতিষ্ঠা করে। কমিটিগুলো প্রায়শই প্রতিদ্বন্দ্বী দলে বিভক্ত হয়ে "হিংসাত্মক সংগ্রাম" নামে পরিচিত সশস্ত্র লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তো এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী পাঠাতে হতো। পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন কর্মকর্তা লিন পিয়াও সামরিক হস্তক্ষেপের পর সহ-সভাপতি এবং মাও-এর উত্তরসূরি হিসেবে পদোন্নতি পান, কিন্তু মাওয়ের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত। ১৯৭২ সালে, গ্যাং অফ ফোর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৬ সালে মাও-এর মৃত্যু ও গ্যাং অফ ফোর গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লব অব্যাহত ছিল।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব কেবল সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দ্বারা বৈশিষ্ট্যযুক্ত। বিপ্লবে মৃতের সংখ্যার দাবি নিয়ে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে, যাঁরা প্রাণ হারান তাঁদের সংখ্যা দশ হাজার থেকে কয়েক লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে। বেইজিংয়ের রেড আগস্ট থেকে শুরু করে দেশব্যাপী গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে গুয়াংশি গণহত্যা, যেখানে ব্যাপক নরমাংস ভক্ষণের ঘটনাও ঘটেছিল; আন্তঃমঙ্গোলিয়ার ঘটনা; গুয়াংদং গণহত্যা; ইউনান গণহত্যা; এবং হুনান গণহত্যা। রেড গার্ডরা ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ও শিল্পকর্ম ধ্বংস করে ফেলে, সেইসাথে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্থানগুলোতেও লুটপাট করে। ১৯৭৫ সালের বানছিয়াও বাঁধ ধ্বস বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে একটি, যা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ই ঘটেছিল। অপরদিকে, বিপ্লবে এক লক্ষাধিক মানুষ নির্যাতিত হয়: বিশেষ করে চীনা রাষ্ট্রপতি লিউ শাওছি, তেং শিয়াওফিং, ফেং তেহুয়াই এবং হে লং-এর মতো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্মূল বা দেশছাড়া করা হয়; লক্ষাধিক মানুষকে পাঁচটি কালো শ্রেণীর সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, যাঁরা জনসাধারণের অবমাননা, কারাবাস, নির্যাতন, কঠোর শ্রম, সম্পত্তি দখল, এবং কখনো কখনো মৃত্যুদণ্ড বা হয়রানিতে আত্মহত্যার শিকার হয়; বুদ্ধিজীবীদের "নবম দুর্গন্ধযুক্ত বৃদ্ধ" হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং ব্যাপকভাবে নির্যাতনের শিকার হত–লাও শে, ফু লেই, ইয়াও থোংপিন এবং চাও চিউহাং-এর মতো উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত ও বিজ্ঞানীরা নির্যাতনের ফলে নিহত হন বা আত্মহত্যা করেন। কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ডাউন টু দ্য কান্ট্রিসাইড আন্দোলনে ১ কোটিরও বেশি শহুরে বুদ্ধিজীবী যুবকদের গ্রামাঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে, হুয়া কুওফেং-এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে তেং শিয়াওফিং চীনের নতুন সর্বপ্রধান নেতা হন এবং "পোলুয়ান ফানচেং" কার্যক্রম চালু করেন যা ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত মাওবাদী নীতিগুলোকে চূর্ণ করে দেয় এবং দেশটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে।[2][3] অতঃপর তেং তাঁর মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক সংস্কার ও উন্মুক্তিকরণ কার্যক্রম চালু করে চীনে একটি নতুন যুগের সূচনা করেন। ১৯৮১ সালে, সিসিপি ঘোষণা করে এবং স্বীকার করে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব ভুল ছিল এবং এটি চীনে "গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণ, দেশ ও দলের জন্য সবচেয়ে গুরুতর আঘাত এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতির জন্য দায়ী।"[4][5][6] সমসাময়িক চীনে, সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত বিদ্যমান। কেউ কেউ একে "বিশৃঙ্খলার দশ বছর" (চীনা: শি নিয়ান তোংলুয়ান, 十年动乱; অথবা শি নিয়ান হাওচিয়ে, 十年浩劫) হিসেবে উল্লেখ করেন।[7]