Loading AI tools
বাংলার একটি ঐতিহাসিক পরিবার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাংলার একটি ঐতিহাসিক পরিবার। এই পরিবার কয়েকটি পরগণার জায়গিরদার ছিলেন, তার একটি বড় অংশ এবং প্বার্শবর্তী এলাকা নিয়ে ইংরেজরা পরবর্তীতে প্রাথমিকভাবে কলকাতা শহর নির্মাণ করেন। ১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির প্রজাসত্ত্ব সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইজারা নেয়।[1] এই পরিবার সাবর্ণ চৌধুরী পরিবার নামেও পরিচিত।
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের আদিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার আমাটি বা আমাটিয়া অঞ্চলে ছিল৷ এই বংশের ১৯তম পুরুষ পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় আমাটি ত্যাগ করে হুগলি জেলার গোহট্ট-গোপালপুরে (গোঘাট) বসতি স্থাপন করেন৷[2] তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের পাঠান বাহিনীতে যুদ্ধ কৌশলবিদ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন এবং তাঁর বীরত্বের জন্য ‘খান’ উপাধি লাভ করেন। তিনি পাঁচু শক্তিখান নামেও পরিচিত ছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে হালিশহরে তিনি একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। হালিশহর থেকেই এই পরিবার ক্রমে নিমতা-বিরাটি, বড়িশা, উত্তরপাড়া[3][4] ও পশ্চিম মেদিনীপুরের খের্পুতে ছড়িয়ে পড়ে।
বংশের ২১ তম পুরুষ জিয়া গঙ্গোপাধ্যায় ১৫৩৫, মতান্তরে ১৫৩৮ খ্রীষ্টাব্দে হুগলি জেলার গোহট্ট-গোপালপুরে জন্মগ্রহণ করেন৷[5] ইনিই পরবর্তীকালে সন্ত কামদেব ব্রহ্মচারী নামে পরিচিত হন। তাঁর অন্যতম শিষ্য ছিলেন রাজা মানসিংহ। তিনি কামদেব ব্রহ্মচারীকে গুরুদক্ষিণা হিসাবে ১৬০৮ সালে এক বিরাট ভূসম্পত্তি নিষ্কর জায়গির দেন। এই সম্পত্তির জায়গিরদারী কামদেব ব্রহ্মচারীর পুত্র লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় (মজুমদার) উপর ন্যস্ত ছিল।[2][4]
ক্রমে ‘রায় চৌধুরী’ তাঁদের পদবিতে পরিণত হয়। লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের সময় থেকে এই পরিবার সাবর্ণগোত্রীয় রায় চৌধুরী পরিবার নামে পরিচিতি পায়। লক্ষ্মীকান্ত হালিশহরে একাধিক মন্দির এবং গোঘাট ও আমাটিয়ায় পারিবারিক বসতবাটী নির্মাণ করেন। তিনি হালিশহর থেকে বড়িশা পর্যন্ত একটি তীর্থপথও নির্মাণ করেছিলেন।[3][6] এই তীর্থপথটি "পিলগ্রিমস রোড" নামে পরিচিতি পায়।
সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলিকাতা গ্রাম তিনটি ছিল মুঘল সম্রাটের খাসমহলের অন্তর্গত। এই গ্রামত্রয়ের জায়গিরদারি সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের হাতে ন্যস্ত ছিল। ব্রিটিশ বসতি অন্যান্যদের অধীনে থাকা আরও আটত্রিশটি গ্রাম দ্বারা বেষ্টিত ছিল। ১৭১৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে এই সকল গ্রামের জমিদারি সত্ব কেনার অধিকার অর্জন করলেও, তৎকালীন জমিদারদের কাছ থেকে তারা এই গ্রামগুলি ক্রয় করতে পারেনি।[7]
সাবর্ণ রায়চৌধুরীরাও ব্রিটিশদের এই তিনটি গ্রাম ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। জানা যায়, ব্রিটিশরা মুঘল রাজদরবারে ঘুষ দিয়ে এই গ্রাম তিনটির ইজারা কেনার অনুমতি আদায়ে সমর্থ হন।[6] ১৬৯৮ সালে সাবর্ণরা ইংরেজদের হাতে গ্রাম তিনটি তুলে দেন।[4] ইংরেজরা বার্ষিক ১,৩০০ টাকা রাজস্বের বিনিময়ে গ্রাম তিনটির ইজারা ক্রয় করে নেন। চুক্তিপত্রটি ফার্সি ভাষায় লেখা হয়েছিল। এর একটি নকল বড়িশার সাবর্ণ সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে।[8]
কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অধুনা বিবাদীবাগের লালদিঘির নিকটে সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের কাছারি ও গৃহদেবতা শ্যাম রায়ের (কৃষ্ণ) মন্দির অবস্থিত ছিল। মনে করা হয়, কাছারির দোল উৎসবের আবিরে দিঘির রং লাল হয়ে যেত বলে এই দিঘির নাম হয়েছিল লালদিঘি। জন অ্যান্টনি নামে এক পর্তুগিজ ভাগ্যান্বেষী সাবর্ণদের কাছারিতে কাজ করতেন। তাঁর পৌত্র অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি পরবর্তীকালে এক স্বনামধন্য কবিয়াল হয়েছিলেন।[3]
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে এই কাছারিটি ভাড়া নেন ও পরে কিনে নেন। এখানেই বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচিবালয় মহাকরণ অবস্থিত।
ইংরাজী ১৬১০ সাল থেকে বড়িশার পারিবারিক বাড়িতে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি বাংলার প্রাচীনতম দুর্গোৎসবগুলির মধ্যে একটি এবং সম্ভবত কলকাতা অঞ্চলের প্রথম দুর্গাপূজা। বর্তমানে সাবর্ণ পরিবারে মোট সাতটি দুর্গাপূজা হয়। এগুলির মধ্যে ছয়টি হয় বড়িশায় এবং সপ্তমটি হয় বিরাটিতে। বড়িশার পূজাগুলি হল আটচালা, বড়োবাড়ি, মেজোবাড়ি, বেনাকি বাড়ি, কালীকিংকর ভবন ও মাঝের বাড়ি। দুর্গাপূজা ছাড়াও সাবর্ণ পরিবারে চণ্ডীপূজা, জগদ্ধাত্রী পূজা, অন্নপূর্ণা পূজা, দোলযাত্রা ও রথযাত্রা উৎসব প্রচলিত।[8]
২০০১ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে দাবি করা হয় যে, জব চার্নক সত্যই কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হোক। হাইকোর্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৩ সালের ১৬ মে রায় দেন যে, জব চার্নক কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা নন এবং ২৪ অগস্ট, অর্থাৎ যে তারিখটিতে জব চার্নক সুতানুটিতে উপনীত হয়েছিলেন, কলকাতার জন্মদিনও নয়।[9][10]
সাবর্ণ সংগ্রহশালা দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার পরিষদ এটি পরিচালনা করে। এই সংগ্রহশালায় কলকাতা তথা সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষীত হয়েছে।[1] এই মিউজিয়ামে বহু দুষ্প্রাপ্য দলিল দস্তাবেজ, মানচিত্র, মুঘল আমলের কাবুলতিপত্র, পুরোনো দিনের আসবাব সহ কলকাতা-সুতানুটি-গোবিন্দপুরের ফার্সি ভাষায় লেখা ১৬৯৮ সালের প্রজাসত্ব হস্তান্তরের দলিলের নকল রয়েছে।[11] এছাড়াও কলকাতার প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় ২০০৩ সালে হাইকোর্টের রায়ের দলিল ও দস্তাবেজ এই সংগ্রহশালায় রয়েছে। ২০১৬ সালে এই সংগ্রহশালায় একটি অফলাইন ডিজিটাল পাঠাগার চালু হয়েছে।[12] প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংগ্রহশালায় একটি আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব আয়োজিত হয়।[13] এই উৎসব উপলক্ষে সপ্তর্ষি নামক হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশিত হয়।[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.