Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবু বিশর আমর ইবনে উসমান ইবনে কানবার আল বিসরি (আনুমানিক ৭৬০-৭৯৬) (আরবি: أبو بشر عمرو بن عثمان بن قنبر البصري), সাধারণভাবে সিবাওয়েহ বা সিবাওয়াইহ নামে পরিচিত (سيبويه) (তার মূল ফারসি নাম ছিল سیبویه Sēbōē), ছিলেন আরবি ভাষার একজন প্রভাবশালী ভাষাবিদ ও ব্যাকরণবিদ। তার লেখা আল কিতাব আরবি ভাষার প্রথম লিখিত ব্যাকরণ।[3] আরবি ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বে তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকলেও তিনি ছিলেন একজন পারসিক এবং তার মাতৃভাষা আরবি ছিল না। তিনি পরবর্তী জীবনে আরবি শেখেন। তাকে আরবি ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের অন্যতম ধরা হয়।[4]
তিনি আধুনিক ইরানের হামাদান শহরে আনুমানিক ৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।[5]
প্রথম জীবনে তিনি হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রবিদদের সংস্পর্শে ছিলেন । হাম্মাদ ইবনে সালামার নিকট বেশ কিছুদিন অধ্যয়ন করেছিলেন । উঁচু জ্ঞান তৃষ্ণার দরুন তাকে এখান থেকে প্রস্থান করতে হলো ।এরপর তিনি আল খলিল ইবনে আহমদ আল ফারাহিদির সাহচর্যে সম্পৃক্ত হন ।[6] সিবাওয়েহ প্রখ্যাত ব্যাকরণবিদ আল খলিল ইবনে আহমদ আল ফারাহিদি ও ইউনুস ইবনে হাবিবের ছাত্র ছিলেন।[7][8][9] তিনি যখন "আমি প্রশ্ন করলাম" বা "তিনি বললেন" বাক্যদ্বয় বলতেন তখন তিনি আল ফারাহিদিকে নিয়েই বলতেন।[10][11] আবু আমর ইবনুল আলার সাথে কখনো দেখা না হলেও তিনি তার কিতাবে ৫৭ বার তার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন, বিশেষত ইবনে হাবিব ও আল ফারাহিদির অনুবাদ ব্যবহার করে।[12] সিবাওয়েহ হারুন ইবনে মুসারও ছাত্র ছিলেন। তবে তিনি তার কিতাবে তার কথা শুধু ৫ বার উল্লেখ করেন।[13]
১৮০ হিজরি (৭৯৬/৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) সনে তিনি ফারসের শিরাজে মৃত্যুবরণ করেন।
বাগদাদে আব্বাসীয় উজির ইয়াহিয়া ইবনে খালিদ প্রমিত আরবির ব্যবহার নিয়ে সিবাওয়েহর সাথে বিতর্ক করেন। বসরার শিক্ষালয় ও কুফার প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষালয়ের আলকিসাই আলকুফির প্রতিনিধিত্বে এই বিতর্ক হয়।[14]
এই ঘটনাটি মাসালাত আল জুনবুর বা "ভ্রমরের প্রশ্ন" নামে পরিচিত কারণ বিতর্কে একটি কথা ছিল, যার অনুবাদ এরূপ “আমি সবসময় ভেবেছি যে কাকড়াবিছের হুল ভ্রমরের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক এবং এ বিষয়ে নিশ্চিত”।[15] সিবাওয়েহ প্রস্তাব করেন:[16]
...ফাইদা হুয়া হিয়া, ইংরেজিতে ... sure-enough he she
অর্থাৎ “sure-enough he (the scorpion, masc.) is she (the most painful one, fem)”, আরবিতে এধরনের অবস্থায় is নামক কোনো ক্রিয়াপদ ব্যবহার করতে হয় না। অন্যদিকে কিসাই যুক্তি তুলে ধরেন:
…ফাইদা হুয়া ইয়াহা, ইংরেজিতে ... sure-enough he her
অর্থাৎ “he is her”।[lower-alpha 1]
সিবাওয়েহ তত্ত্বীয় ব্যাকরণে তার অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরেন এবং বলেন যে বিধেয় এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিভক্তি কার্যকর নয়। কিন্তু আল কিসাই চারজন বেদুইনকে উৎকোচ দিয়ে নিয়ে আসেন যাতে তার বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়।[15][17] তারা তার বক্তব্যকে সমর্থন করে সিবাওয়েহর বক্তব্য ভুল প্রতিপন্ন করে এবং তিনি এরপর বিতর্ক স্থান থেকে চলে আসেন।[16]
কিছু সূত্রমতে সিবাওয়েহ বিতর্কের পর শিরাজে ফিরে আসেন ও অত্যধিক রাগের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদের মতে তিনি রোগে মারা যান। তবে যেকোনো মতানুসারেই ঘটনাটি বিখ্যাত। ইবনে কুতায়বাহ তার লেখায় সিবাওয়েহ সম্পর্কে বলেন:
তিনি হলেন আমর ইবনে উসমান এবং তিনি প্রধানত ব্যাকরণবিদ। তিনি বাগদাদ ফিরে আসেন, স্থানীয় ব্যাকরণবিদদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে হেনস্তা হন ও ফারসের কোনো শহরে চলে যান এবং তখনও যুবক হওয়া সত্ত্বেও সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।[18]
তার অকালমৃত্যুতে তার অন্যতম শিক্ষক আল আখফাশ আল আকবর সিবাওয়েহর অখ্যাত লেখা কিতাব পান্ডুলিপি আকারে লেখেন।[19] সিবাওয়েহ ইউনুস ইবনে হাবিবের অধীনে পড়াশোনা করলেও আল খলিফ ইবনে আহমদ আল ফারাহিদির কাছে অধিক ঋণী ছিলেন। আল আখফাশ সিবাওয়েহর কাজকে আরবি ব্যাকরণের ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।[19][20] সিবাওয়েহর অন্যতম ছাত্র আল আখফাশ আল আসগর শিক্ষকের মৃত্যুর পর আল কিসাইয়ের সাথে আলোচনা শুরু করেন ও তাকে ১০০টি ব্যাকরণ সংক্রান্ত প্রশ্ন করে প্রমাণ করেন যে আল কিসাইয়ের উত্তর প্রতিবার ভুল ছিল। যখন তিনি নিজের পরিচয় দেন এবং কী ঘটেছে তা তুলে ধরেন তখন আল কিসাই খলিফা হারুনুর রশিদের কাছে যান এবং সিবাওয়েহর মৃত্যুতে ভূমিকা আছে বলে শাস্তি দিতে অনুরোধ জানান।[21]
অনারবদের মধ্যে সিবাওয়েহ সর্বপ্রথম আরবি ব্যাকরণ লেখেন এবং অনারব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আরবি ব্যাকরণকে দেখা তিন প্রথম ব্যক্তি। সিবাওয়েহ ও তার শিক্ষক আল ফারাহিদি দুজনেই আরবি ভাষার নিয়মতান্ত্রিক লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে দুজন খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।[22]
সিবাওয়েহর মৃত্যুর পর পরবর্তী আরব ব্যাকরণবিদদের অল্পই তার সাথে তুলনা করা হয়। নিফতাওয়েহ তার নাম গ্রহণ করেন তার শরীরের কালো বর্ণের জন্য “নিফত” ও সিবাওয়েহর কাজের প্রতি ভালবাসার কারণে “ওয়েহ” শব্দদ্বয় ব্যবহার করে।[23] আবু তুরাব আল জাহিরি আধুনিক যুগের সিবাওয়েহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও ইনি আরব বংশোদ্ভূত না এবং আরবি তার মাতৃভাষা না।[24]
সিবাওয়েহর লেখা আল কিতাব আরবি ভাষার প্রথম লিখিত ব্যাকরণ।[25] বইটি পদ্য আকারে না লিখে তিনি গদ্য হিসেবে লেখেন। অন্যান্য ব্যাকরণবিদদের মত শুধু নিয়মের উল্লেখ না করে এতে ব্যাখ্যা করার নিয়ম লিপিবদ্ধ রয়েছে।[5] তিনি বাক্যতত্ত্ব দিয়ে শুরু করেন এবং রূপমূলতত্ত্ব ও ধ্বনিবিজ্ঞান দিয়ে শেষ করেন এবং একটি নির্ঘণ্ট যোগ করেন।[26] প্রত্যেকটি অধ্যায় নতুন বিষয়ের সংজ্ঞা দিয়ে শুরু হত।[27] তিনি আরবি ক্রিয়াপদকে তিনটি কালে ভাগ করেন (অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত) কিন্তু দুইটি ভাগে তুলে ধরেন, এগুলোর মধ্যে অতীত একভাবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত অন্যভাগে।[28]
সিবাওয়েহ অধিকাংশ সময় তার দাবির সপক্ষে আরবি কবিতা থেকে পঙতি ব্যবহার করতেন। অধিকাংশ উদ্ধৃতি প্রাচীন আরবের কবিতা হলেও তিনি সাম্প্রতিক কালের উমাইয়া খিলাফতের সময়কার কবিতার উদ্ধৃতিও ব্যবহার করতেন।[29]
ব্যাকরণের বই হলেও সিবাওয়েহ এতে আরবি ধ্বনিতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। তিনি আরবি লিপির প্রমিত উচ্চারণ থেকে সরে আসায় নিষেধ করেন।[25] প্রথম আরবি অভিধানের (কিতাব আল আইন) সংকলক তার শিক্ষক আল ফারাহিদির সাথে দ্বিমত পোষণ করে তিনি আরবি বর্ণমালাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার বিরোধিতা করেন।[30] তিনি নীতিশাস্ত্র নিয়েও আলোচনা করেছেন। সিবাওয়েহর মতে বক্তব্য অন্যান্য মানব আচরণের অন্যতম তাই একে সঠিক ও বেঠিকের যাচাইয়ে যেতে হবে। সঠিক ও বেঠিক ব্যাকরণের নিয়মগুলো তিনি নৈতিকতার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একই “সঠিক” ও “বেঠিক” পদ দ্বারা বর্ণনা করেন।[31]
আরবি ব্যাকরণের প্রাথমিক গ্রন্থ বলে কিতাব গ্রন্থটি ভাষাবিদদের কাছে খুবই গুরুত্ববহ। আবু হায়ান আল গারনাতি যিনি তার সময়কার অবিসংবাদিত ব্যাকরণবিদ ছিলেন, তিনি কিতাব গ্রন্থটি ব্যাকরণের জন্য হাদিসের মত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখস্থ করেন।[32]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.