সিলেটি রন্ধনশৈলী
সিলেটি রন্ধনশৈলী হচ্ছে সিলেটিদের খাদ্য সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
সিলেটি রন্ধনশৈলী (সিলেটি: ꠍꠤꠟꠐꠤ ꠞꠣꠘꠗꠣ) মুলত সিলেটিদের খাদ্য সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে, যার মধ্যে মশলাদার মুরগির টিক্কা মশলা থেকে শুরু করে টক জাতীয় হাতকরা, নুনর বড়া থেকে শুরু মিষ্টান্নজাতীয় তুশা শিন্নি এবং হুটকি শিরা অন্তর্গত। সিলেটি রন্ধনশৈলীতে হাতকরা একটি সাধারণ পদ যা মাছ এবং মাংসের সাথে বিভিন্ন খাবার রান্নায় ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হাতকরা তরকারি, ভাত দিয়ে খেতে সবথকে ভালো লাগে।[1] সিলেটিরা মূলত ভাত ও মাছ খেয়ে থাকলেও তাদের রন্ধনশৈলী সিলেটের বহিরাগতদের থেকে বেশ স্বতন্ত্র।[2][3] সিলেটি রান্নায় যেমন তেল ছাড়া তরকারি রয়েছে,[4] তেমনি প্রচুর টক (টেঙ্গা) স্বাদের তরকারিও রয়েছে। বরাক উপত্যকা থেকে সুরমা উপত্যকার বহু সংস্কৃতির লোক,[5] ও সিলেটি প্রবাসীরা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সিলেটি খাবার এবং আস্বাদনকে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে খাসি, কুকি এবং অন্যান্য উপজাতির রন্ধনশৈলী লক্ষণীয়।[6] এই অঞ্চলে প্রাপ্ত শাকসবজি এবং পশুপাখির উপর নির্ভর করে সিলেটের রন্ধনশৈলী সমৃদ্ধ হয়েছে। মূলত দেশীয় কিছু বৈচিত্র্য সহ, সিলেটিদের খাদ্য সংস্কৃতি পরিবেশিত হয় যেখানে কিছু বাহ্যিক প্রভাবও রয়েছে। শাহ জালালের ৩৬০জন সফর সঙ্গী এই অঞ্চলে কেবল তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিই নিয়ে আসেনি, তাদের নিজস্ব রান্নার স্বতন্ত্র ধরনও নিয়ে আসে। যার মধ্যে মুরগী, গরুরমাংস এবং ছাগল দিয়ে রান্না করা মুঘলীয়, মধ্য-প্রাচ্য এবং উত্তর ভারতীয় শৈলীর অনেকগুলি মাংসের খাবার রয়েছে। মুঘলাই পরোটা, পোলাও, কোরমা, কালিয়া, রোস্ট, বিরিয়ানী এবং কোফতা তরকারি হিসেবে, এবং জরদা, ফিরনি এবং পায়েস মিষ্টান্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ঊননবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, ইউরোপীয় এবং মুসলমানরা সিলেট অঞ্চলে বিস্কুট এবং ব্রেডের প্রচলন করেছিল যা মুসলিম সম্প্রদায়কে অত্যন্ত আকর্ষণ করে।[7] এটি হিন্দুদের দ্বারা অনেক পরে জনপ্রিয়তা পায়।[8] লন্ডনে, ১৯৪০-এর দশকে কিছু উদ্যোগী সিলেটি ক্যাফে স্থাপন শুরু করে এবং মেনুতে তরকারি এবং ভাত রাখে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে বাংলাদেশীরা তাদের খাবারকে ভারতীয় হিসাবে উল্লেখ করে।[9] যুক্তরাজ্যে, ১০টিরও বেশি ভারতীয় রেস্তোরাঁর ৮টিই বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন,[10] যার ৯৫% সিলেটি।[11] ৮০% থেকে ৯০% ব্রিটিশ কারি-হাউস সরাসরি সিলেটের সাথে সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও সিলেট তার রন্ধনশৈলী জন্য পরিচিতি পায় নি।[12][13] সিলেট অঞ্চলের রাঁধুনিরা ১৯৬০-এর দশক থেকে ব্রিটিশ তরকারিকে আরও বেশি পরিমাণে বিকশিত করেছে।[14] সিলেটিদের দ্বারা উদ্ভাবিত চিকেন টিক্কা মশলাকে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র সচিব রবিন কুক ২০০১ সাল ব্রিটেনের জাতীয় খাবার হিসাবে ঘোষণা দেন।[15][16] বাংলাদেশি রেস্তোঁরায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের কন্যার জন্মদিন উদ্যাপন সিলেটি রন্ধনশৈলীর জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়।[17] ইতিহাসবিদ লিজি কলিংহাম তাঁর ২০০৫ সালের বই কারি: এ বায়োগ্রাফি-তে লিখেছেন যে সিলেটি কারি রান্না "অবিকশিত ব্রিটিশ থালাকে" একটি নতুন স্বাদের বর্ণালীতে রূপান্তর করেছে।[18]