Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাসপাতালের ইতিহাসের সূচনা ঘটে পুরাকালের গ্রিস, রোমান সাম্রাজ্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশের হাসপাতালগুলোর সাথে, যাদের পূর্বসূরী ছিল প্রাচীন গ্রিসের আস্ক্লেপিয়ন মন্দিরগুলো এবং প্রাচীন রোমের সামরিক হাসপাতালগুলো। খ্রিস্ট কাল অবধি কোন বেসামরিক হাসপাতালের কোন অস্তিত্ব ছিল না।[1] চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে, সিজারিয়ার বাসিল দ্বারা পূর্ব বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রথম খ্রিস্টান হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে "দ্বিতীয় মেডিকেল বিপ্লব" [2] সংঘটিত হয় এবং কয়েক দশকের মধ্যেই এই ধরনের হাসপাতাল বাইজেন্টাইন সমাজে সর্বব্যাপী হয়ে উঠে।[3] হাসপাতালটি পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী অবধি বাইজেন্টাইন, মধ্যযুগীয় ইউরোপ এবং ইসলামী সমাজ জুড়ে উন্নয়ন এবং অগ্রগতি অর্জন করে। প্রারম্ভিক আধুনিক যুগে পরিচর্যা ও নিরাময়ের বিষয়টি ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাপারে রূপান্তরিত হয়।[4]
নিরাময়ের লক্ষ্যে স্থাপিত প্রাচীনতম নথিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল প্রাচীন মিশরীয় মন্দিরগুলো। প্রাচীন ইতিহাসে, গ্রিস, রোম, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পারস্যের হাসপাতালগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রাচীন সংস্কৃতিতে, ধর্ম এবং চিকিৎসা সংযুক্ত ছিল।[5]
প্রাচীন গ্রিসে, আরোগ্য-দেবতা আস্ক্লেপিউস, যিনি আস্ক্লেপিয়া নামেও পরিচিত (প্রাচীন গ্রিক: Ἀσκληπιεῖα, গান; আস্ক্লেপিয়ন, Ἀσκληπιεῖον) এর উদ্দেশে নিবেদিত মন্দিরগুলো চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ, আরোগ্যসম্ভাবনা নির্ধারণ এবং নিরাময়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত।[6] আস্ক্লেপিয়া আরোগ্যলাভের জন্য উপযুক্ত স্থান প্রদান করত এবং নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তৈরি প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো প্রয়োজনীয়তাই পূরণ করত।[7] তাঁর রোমান নাম Æsculapius এর অধীনে, রোমের তাইবারের একটি দ্বীপে তাঁর উদ্দেশ্যে একটি মন্দির (২৯১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে) স্থাপন করা হয়, যেখানে অনুরূপ আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হত।[8]
এই মঠগুলোতে, রোগীরা এনকোইমেসিস ( ἐγκοίμησις নামের একপ্রকার আবেশিত ঘুমের স্বপ্নের মতো অবস্থায় প্রবেশ করতেন, যা অনেকটা অ্যানেস্থেশিয়ার মতই, যেখানে তারা স্বপ্নের মধ্যে দেবতার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।[9] আস্ক্লেপিয়া আরোগ্যলাভের জন্য উপযুক্ত স্থান প্রদান করত এবং নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তৈরি প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো প্রয়োজনীয়তাই পূরণ করত।[7] এপিডারাসের আস্ক্লেপিয়নে, খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ অব্দের তিনটি বৃহদাকারের মার্বেল বোর্ডে সমস্যা নিয়ে আসা ৭০ জন রোগীর নাম, রোগের বিবরণ, অভিযোগ এবং নিরাময় প্রক্রিয়ার মত বিষয়গুলো সংরক্ষিত রয়েছে। তালিকাভুক্ত কিছু কিছু শল্য চিকিৎসা পদ্ধতি, যেমন- পেটের ফোঁড়া উন্মুক্ত করা বা আঘাতমূলক বাহ্যিক বস্তু অপসারণ করার মত ঘটনা যথেষ্ট বাস্তবসম্মত, তবে সে সবই ঘটেছে আফিমের মতো নিদ্রাজনক পদার্থের সাহায্যে রোগীকে এনকোইমেসিস অবস্থায় আবেশিত করে। আস্ক্লেপিউসের উপাসনাটি রোমানরা গ্রহণ করেছিল।
রোমানরা অসুস্থ দাস, গ্ল্যাডিয়েটর এবং সৈন্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য খ্রিস্টপূর্ব ১০০ অব্দের দিকেভ্যালেটুডিনারিয়া নামক অনেকগুলো ভবন নির্মাণ করেছিল এবং এদের কিছু কিছু পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব দ্বারা চিহ্নিত হয়। যদিও তাদের অস্তিত্ব প্রমাণিত বলে ধরে নেয়া হয়, তবুও তারা একসময় যতটা বিস্তৃত ছিল বলে ভাবা হয়েছিল ততটা আদৌ ছিল কিনা তা নিয়ে কিছু সংশয় রয়েই গেছে। কারণ বহু ভবন কেবল ভগ্নাবশেষ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছিল, টিকে থাকার রেকর্ড বা খুঁজে পাওয়া চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দ্বারা নয়।
রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্ম একটি প্রচলিত ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরে পরিচর্যার বিধানগুলোর ব্যাপক প্রসার ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ অব্দে নিকায়ার প্রথম কাউন্সিল অনুসারে প্রতিটি ক্যাথেড্রাল শহরে একটি করে হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়ে যায়। গোড়ার দিকে যেসব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তন্মধ্যে রয়েছে চতুর্থ শতাব্দীর শেষ দিকে কনস্টান্টিনোপলে চিকিৎসক সেইন্ট স্যাম্পসন এবং আধুনিক তুরস্কে সিজারিয়ার বাসিল দ্বারা নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলো। ৫ম শতাব্দীর শুরুতে, ইতিমধ্যেই বাইজেন্টাইন বিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী পূর্ব অংশ জুড়ে হাসপাতাল সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে,[3] যা প্রাক-খ্রিস্টীয় যুগের রোমান সাম্রাজ্যের একটি নাটকীয় পরিবর্তন, কারণ সে যুগে সেখানে কোনও বেসামরিক হাসপাতালই ছিল না।[1] "বেসিলিয়াস" নামে পরিচিত একধরনের ব্যবস্থা ছিল, যা ছিল অনেকটা শহরের মতই এবং তাতে চিকিৎসক ও নার্সদের আবাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণীর রোগীদের জন্য পৃথক পৃথক বিল্ডিং ছিল।[10] কিছু হাসপাতাল গ্রন্থাগার ও প্রশিক্ষণ পদ্ধতি পরিচালনা করত এবং চিকিৎসকরা তাঁদের মেডিকেল ও ফার্মাকোলজিকাল পাঠগুলো পাণ্ডুলিপিতে সংকলিত করতেন। সুতরাং আজ আমরা কীভাবে একটি হাসপাতাল বিবেচনা করি সেই অর্থে রোগীর চিকিৎসা যত্ন, এটি খ্রিস্টীয় করুণা এবং বাইজেন্টাইন উদ্ভাবনের দ্বারা পরিচালিত একটি আবিষ্কার ছিল।[11] বাইজেন্টাইন হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে প্রধান চিকিৎসক (আর্কিট্রোই), পেশাদার নার্স (হাইপোরগোই) এবং আর্দালি (হাইপারেটাই) অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে, কনস্টান্টিনোপল দুটি সুসংগঠিত হাসপাতাল তৈরি হয়, যেখানে নারী এবং পুরুষ উভয় চিকিৎসকই কাজ করতেন। সুবিধার মধ্যে ছিল নিয়মানুগ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিভিন্ন রোগের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড।[12]
অসুস্থদের যত্ন নেওয়ার জন্য বিশেষ প্রতিষ্ঠানগুলো বহু আগেই ভারতীয় উপমহাদেশে নির্মিত হয়েছিল। চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু ফা-হিয়েন আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ ভ্রমণকালে তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে লিখেছেন[13] যেঃ
তাদের মধ্যে বৈশ্য (বণিক) পরিবারের প্রধানরা (উত্তর ভারতের সমস্ত রাজ্যের) দাতব্য ও ওষুধ সরবরাহের জন্য নগরীগুলোতে আশ্রম স্থাপন করেন। রাজ্যের সমস্ত দরিদ্র ও নিঃস্ব, অনাথ, বিধবা ও নিঃসন্তান ব্যক্তি, বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু ব্যক্তি এবং যারা রোগাক্রান্ত, তারা আশ্রমে গিয়ে সকল প্রকারের সহায়তা পায় এবং চিকিৎসকরা তাদের রোগ ব্যাধি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধগুলো পায় এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে; এবং সুস্থ হয়ে গেলে তারা নিজে থেকেই চলে যায়।
বর্তমান কাল পর্যন্ত টিকে থাকা সংস্কৃত ভাষায় রচিত চিকিৎসাবিদ্যার প্রাচীনতম বিশ্বকোষ হল চরক সংহিতা(মহর্ষি চরক রচিত সংকলনগ্রন্থ)। এই রচনাবলি একটি হাসপাতাল নির্মাণের বর্ণনা দেয় এবং মেডিকেল ইতিহাসবিদ ডোমিনিক উজাস্টিকের মতে তা খ্রিস্টপূর্ব ১০০ থেকে ১৫০ অব্দের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।[14] ফা-হিয়েন কর্তৃক বর্ণিত বিবরণ বিশ্বের যে কোনও জায়গায় নাগরিক হাসপাতাল ব্যবস্থার প্রাথমিক বিবরণগুলোর মধ্যে একটি। এই প্রমাণটি, পাশাপাশি চরকের কীভাবে একটি চিকিৎসালয় গড়া এবং সজ্জিত করা উচিত তার বর্ণনা, ইঙ্গিত দেয় যে, সম্ভবত ভারত ছিল বিশ্বের প্রথম অংশ যেখানে প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি সংগঠিত বিশ্বজনীন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।[15]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.