Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
১৯৪০–১৯৪০ সালের চেচেন–ইঙ্গুশ বিদ্রোহ ছিল চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিদ্রোহ। ১৯৪১ সালের জুনে খাসান ইসরাইলভের নেতৃত্বে এটি শুরু হয়ে ১৯৪২ সালে উত্তর ককেশাসে জার্মান আক্রমণের সময়ে এটি চরমে পৌঁছে এবং ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ চেচেন ও ইঙ্গুশদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত করলে বিদ্রোহের অবসান ঘটে। তবে আরো বেশ কয়েক বছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ চলতে থাকে।
১৯৪০–১৯৪৪ সালের চেচেন-ইঙ্গুশ বিদ্রোহ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং রুশ–চেচেন সংঘর্ষ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
সোভিয়েত ইউনিয়ন |
চেচনিয়া-ইঙ্গুশেতিয়ার জনগণের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার সমর্থক: জার্মানি | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
ইওসিফ স্তালিন ভ্যাসিলি খোমেঙ্কো |
খাসান ইসরাইলভ † মাইরবেক শারিপভ † | ||||||
শক্তি | |||||||
১,১০,০০০ |
৫,০০০ (নভেম্বর ১৯৪১) ৬,৫৪০–১৮,০০০ (ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩)[1] ৫০[2][3] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
২৬৯[4]–~১২,০০০[3] সৈন্য নিহত |
৬৫৭ যোদ্ধা নিহত ৩,৮৭৫ যোদ্ধা যুদ্ধবন্দি[4] অথবা ৪,৩৬৮ যোদ্ধা নিহত[2] |
১৯৩৯ সালের শেষদিকে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সোভিয়েতদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে উৎসাহিত হয়ে প্রাক্তন কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী খাসান ইসরাইলভ এবং তাঁর ভাই হুসেইন দক্ষিণ-পূর্ব চেচনিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে একটি গেরিলা ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের উদ্দেশ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ গেরিলা আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। ১৯৪০ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে ইসরাইলভের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা শাতোয়স্কি জেলার কিছু অঞ্চল দখল করে নেয়। ইসরাইলভের জন্মস্থান গালাঞ্চোঝ গ্রামে একটি বিদ্রোহী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়[3]। বিদ্রোহীদের শাস্তি প্রদানের জন্য সোভিয়েত গোয়েন্দা পুলিশ সংস্থা এনকেভিডি কর্তৃক প্রেরিত দলগুলো তাদের হাতে পরাজিত হয় এবং বিদ্রোহীরা তাদের কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেয়[5]।
ইসরাইলভ যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর মতামত বর্ণনা করেন:
"আমি আমার নিজের জনগণের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি এটি বুঝি যে, কেবল চেচেনো-ইঙ্গুশেতিয়ায়ই নয়, ককেশাসের সকল জাতির জন্যই লাল সাম্রাজ্যবাদের ভারী জোয়াল থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন হবে। কিন্তু ন্যায়বিচারে আমাদের দৃঢ় আস্থা এবং ককেশাস ও সমগ্র বিশ্বের মুক্তিপ্রিয় জনগণের সমর্থের ওপর বিশ্বাস আমাকে এই কাজে পরিচালিত করেছে, যেটি আপনাদের দৃষ্টিতে অপরিণামদর্শী ও গুরুত্বহীন, কিন্তু আমার বিচারে একটি সঠিক ঐতিহাসিক ধাপ। বীর ফিনরা এখন প্রমাণ করছে যে মহা দাসত্বস্থাপনকারী এই সাম্রাজ্য ক্ষুদ্র কিন্তু স্বাধীনতাপ্রিয় জনসাধারণের বিরুদ্ধে ক্ষমতাহীন। ককেশাসে আপনারা আপনাদের দ্বিতীয় ফিনল্যান্ড খুঁজে পাবেন, এবং অন্যান্য নির্যাতিত জাতি আমাদের অনুসরণ করবে"[6]।
"বিশ বছর ধরে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ আমার জনগণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা প্রথমে কুলাকদের, তারপর মোল্লাদের ও দস্যুদের এবং তারপরে বুর্জোয়া-জাতীয়তাবাদীদের এভাবে দলে দলে আমাদের ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। আমি এখন নিশ্চিত যে এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা। এজন্যই আমি আমার জনগণের মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি"[7][8]।
১৯৪১ সালে জার্মানি কর্তৃক সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণের পর দুই ভাই ১৯৪১ সালের গ্রীষ্মে "চেচেনো-ইঙ্গুশেতিয়ার অস্থায়ী জনপ্রিয় বিপ্লবী সরকার" নাম ধারণ করে ৪১টি ভিন্ন ভিন্ন বৈঠক আহ্বান করে স্থানীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে গ্রোজনি, গুদের্মেস ও মাল্গোবেক জুড়ে ৫টি সামরিক জেলায় তাঁরা ৫,০০০-এর বেশি গেরিলা যোদ্ধা এবং কমপক্ষে ২৫,০০০ সমর্থক জোগাড় করতে সক্ষম হন। কিছু কিছু অঞ্চলে ৮০ শতাংশের বেশি লোক বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কার্পেট বম্বিং-এর কৌশল অবলম্বন করে বলে জানা যায়, যার ফলে প্রধানত সাধারণ জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়[3]। ১৯৪২ সালের বসন্তে চেচেন-ইঙ্গুশ পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সোভিয়েতরা দুইবার প্রচণ্ড বিমান হামলা চালায়। এর ফলে বেশ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয় এবং প্রচুর শিশু ও বৃদ্ধসহ এসব গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসীই নিহত হয়[5]।
১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ইসরাইলভ ককেশাস ভ্রাতৃবৃন্দের বিশেষ দল গঠন করে চেচেন ও ইঙ্গুশ ছাড়াও ককেশাসের আরো ১১টি জাতির মধ্যে 'বলশেভিক বর্বরতা' ও 'রুশ আধিপত্যে'র বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। খাসান গেরিলা যোদ্ধাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য একটি সংকেত উদ্ভাবন করেন, যেটিতে বলা ছিল:
ককেশাসের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা, শত্রুর প্রতি আমাদের জাতভাইদের রক্তের জন্য নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নাও; গুপ্তচর, চর এবং এনকেভিডির অন্যান্য তথ্য সরবরাহকারীদের নির্দয়ভাবে নিশ্চিহ্ন করো; বিশ্বস্ত রক্ষীদের নিরাপত্তা ছাড়া গেরিলাদের বাড়ি বা গ্রামে রাত কাটাতে নিষেধ করো[6]।
১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরেক চেচেন প্রাক্তন কমিউনিস্ট মাইরবেক শেরিপভ শাতোয়-এ একটি বিদ্রোহ সংগঠিত করেন এবং ইতুম-কালে দখলের চেষ্টা করেন। জার্মান সৈন্যদের সম্ভাব্য আগমনের ওপর ভিত্তি করে তাঁর বাজিনী ইসরাইলভের বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। প্রতিবেশী দাগেস্তানেও বিদ্রোহীরা নভোলাকস্কোয়ে এবং দিলিম নামে দুইটি গ্রাম দখল করে নেয়। এই বিদ্রোহটি লাল ফৌজের অনেক চেচেন ও ইঙ্গুশ সৈন্যকে দলত্যাগ করতে উৎসাহিত করে। কিছু সূত্রের দাবি অনুযায়ী, লাল ফৌজ থেকে ৬২,৭৫০ জন ককেশীয় পাহাড়ি সৈন্য দলত্যাগ করেছিল, যদিও সংখ্যাটি ছিল প্রকৃতপক্ষে লাল ফৌজে থাকা ককেশীয় পাহাড়ি সৈন্যদের মোট সংখ্যার চেয়েও বেশি[2]।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.