Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ডন টলন ১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বিখ্যাত ইংল্যান্ড সফরে অন্যতম সদস্য ছিলেন। ঐ সফরে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলটি তাদের ৩৪ খেলায় অপরাজিত ছিল। ইংল্যান্ড সফরে একটি টেস্ট দলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে তাদেরকে ‘অপরাজেয়’ বা ‘অজেয়’ ডাকনামে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | ডোনাল্ড টলন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | বুন্দাবার্গ, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪ ৬৮) বুন্দাবার্গ, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | ডিফি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৮ মিটার (৫ ফুট ১১ ইঞ্চি) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি লেগ স্পিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | উইকেট-রক্ষক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক | ১০ জুন ১৯৪৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৪ আগস্ট ১৯৪৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
রন স্যাগার্সকে পিছনে ঠেলে দলের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক টলন পাঁচ টেস্টের চারটিতেই খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, আঘাতের কারণে চতুর্থ টেস্ট খেলতে পারেননি। গ্লাভস হাতে অগ্রাধিকারী টলন এ সফরে স্যাগার্সের তুলনায় উচ্চ গড়ে বাই রান আটকিয়েছিলেন।
ব্র্যাডম্যান এ সফরে দুইজন গ্লাভস হাতের অধিকারীকে পর্যায়ক্রমে খেলিয়েছিলেন এবং ৩১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলার মধ্যে ১৪টিতে অংশ নিয়ে ২৯ ক্যাচ ও ১৪ স্ট্যাম্পিং করেছিলেন। ওভালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টেস্টে লেন হাটন টলনের হাতে ক্যাচে পরিণত হওয়াকে উইজডেন বছরের সেরা ক্যাচ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এছাড়াও, ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে কঠিন ক্যাচ লুফে নিয়ে জর্জ এমেটকে ফেরৎ পাঠান যা ইয়র্কার লেন্থ হিসেবে তার পায়ের কাছে পড়েছিল ও বলটি ক্যাচে পরিণত হয়। তাস্বত্ত্বেও টলন কিছু ভুল-ভ্রান্তি করেছিলেন। আঙ্গুলের আঘাতের কারণে ক্যাচ উপযোগী বলকে সঠিকভাবে ধরতে পারেননি। ব্যাট হাতে বেশ কম সুযোগ পেয়েছেন। ১৩টি প্রথম-শ্রেণীর ইনিংসে দুই অর্ধ-শতক সহযোগে ২৫.৭২ ব্যাটিং গড়ে ২৮৩ রান তোলেন। টেস্টে ২৮.০০ গড়ে ১১২ রান তোলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় টেস্টে মাঝারি সারিতে ধ্বস নামলে ইংল্যান্ডের দিকে খেলা ঝুঁকে পড়াবস্থায় তিনি ৫৩ রান করেন ও প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৩৫০ রান করে। টেস্টগুলোয় তিনি সর্বসাকুল্যে ১২ ক্যাচ নিয়েছিলেন।
তার অসম্ভব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৯ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজনরূপে ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট-রক্ষক হিসেবে টলনের অবস্থান বেশ তুঙ্গে থাকায় ১৯৪৮ সালের অ্যাশেজ সফরে দলের সদস্যরূপে তাকে মনোনীত করা হয়। দলটি পরবর্তীকালে ক্রিকেট ইতিহাসে ‘অপরাজেয়’ বা ‘অজেয়’ দলরূপে পরিচিতি পায়। দলের প্রথম পছন্দের উইকেট-রক্ষক ছিলেন টলন, যাতে স্যাগার্স তার সহকারী ছিলেন।[1] তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই রৌদ্রোজ্জ্বল কুইন্সল্যান্ডে ব্যয় করেন এবং উষ্ণমণ্ডলীয় বুন্দাবার্গে বেড়ে উঠায় ইংরেজ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় টলন বেশ কাবু হয়ে যান। তাপমাত্রার কারণে নিজ পোশাক ভিজে গেলেও তার অভ্যন্তরীণ গ্লাভস ভিজতে দেননি।[2] প্রতি ৫৫ ওভারে নতুন বল লাভের বিষয়ে ইংল্যান্ডের রাজী হবার ফলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ফাস্ট বোলিংয়ের উপযোগী অধিক সুইংয়ে সক্ষমতা পায়।[3] ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলিয়া পেস-সমৃদ্ধ কৌশল গ্রহণ করে এবং টেস্ট খেলাগুলোয় কেবলমাত্র ইয়ান জনসন নিয়মতিভাবে অংশ নিতে পেরেছেন। কলিন ম্যাককুল সফরে কোন টেস্টে খেলেননি। তার সান্নিধ্য বঞ্চিত হবার ফলে স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে টলন তার স্ট্যাম্পিংয়ের সক্ষমতা দেখানোর সুযোগ ঘটে যা তার কুইন্সল্যান্ডীয় দলীয় সঙ্গীর সাথে টেস্টে করেছিলেন।[4]
প্রচলিত ধারা মোতাবেক এ সফরের উদ্বোধনে প্রথম পছন্দ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দল হিসেবে ফিল্ডিংয়ে নামে যা ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয়।[5] সে মোতাবেক ঐ খেলায় টলন উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতে নামেন। স্বাগতিক দল ব্যাটিংয়ে নামলে ইংরেজ ভূমিতে ওরচেস্টারশায়ারের অধিনায়ক অ্যালান হোয়াইটকে কিথ মিলারের বোলিংয়ে ক্যাচ নিয়ে তার প্রথম ডিসমিসাল ঘটান। এরপর তিনি সাবেক ইংরেজ অধিনায়ক বব ওয়াটকে ম্যাককুলের বলে স্ট্যাম্পিং করেন। স্বাগতিকদের ২৩৩ রানের জবাবে টলন ৬ নম্বরে নামেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সংগৃহীত ৪৬২/৮ ডিক্লেয়ারের পূর্বে ৩৮/৪ ধ্বস নামে যাতে তিনি মাত্র ছয় রান তুলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি আরও তিনটি ডিসমিসালে অংশগ্রহণ করেন, যাতে ম্যাককুলের বোলিংয়ে করেছিলেন দুইটি। স্বাগতিক দলকে ইনিংস ও ১৭ রানের বিরাট ব্যবধানে পরাজিত করে অস্ট্রেলিয়া দল। খেলায় টলন ১১ বাই দিয়েছিলেন।[6][7][8]
লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে সফরের দ্বিতীয় খেলায় টলন বিশ্রাম নেন। তার পরিবর্তে স্ট্যাম্পের পিছনে স্যাগার্স অবস্থান করেন ও অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ব্যবধানে জয়ী হয়।[9]
ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে পরবর্তী খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিজয়ে টলন প্রধান ভূমিকা রাখেন যাতে পোতানো উইকেটে ধীর বোলিংয়ের উপযোগী ছিল।[7][10] ৮৬/৭ থাকাকালে তিনি মাঠে নামেন ও প্রথম ইনিংসে ১০ করলে ইয়র্কশায়ারের ৭১ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া ১০১ রান তোলে। ঐ ইনিংসে টলন কোন বাই রান দেননি।[11] কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে টলন তেমন চৌকুষতা দেখাতে পারেননি, ১১ বাই রান দেয়ায় স্বাগতিক দল ৮৯ রান তোলে। এ খেলায় তিনি কোন ডিসমিসাল করতে পারেননি। জয়ের জন্য ৬০ রানের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩১/৬ দাঁড়ালে টলন মাঠে নামেন। পরিস্থিতি আরও করুণ হয়ে দাঁড়ায় যখন স্যাম লক্সটন আহত থাকায় ব্যাট করতে অক্ষম ছিলেন। ফলে, অস্ট্রেলিয়ার কেবলমাত্র তিন উইকেট বাকী থাকে। ১৯১২ সালের পর অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো ইংরেজ কাউন্টি দলের কাছে সমূহ পরাজয়ের মুখোমুখি হয়।[11][12] মাঠে নেমেই লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন থেকে রক্ষা পান এবং একটি শট ফিল্ডারের সামনে পড়ে। এরপর তিনি অপরাজিত ১৭* রান করলে অস্ট্রেলিয়া চার উইকেটে জয় পায়।[11][13]
ওভালে সারের বিপক্ষে খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া দল লন্ডন ভ্রমণ করে। অস্ট্রেলিয়ার ৫৫৩/৬ সংগ্রহকালীন টলন মাঠে নামেন ও একপ্রান্ত আগলে রাখেন। অপরাজিত ৫০* রান করলেও তার জুটির সঙ্গীরা বিদায় নেন ও অস্ট্রেলিয়া ৬৩২ রানে অল-আউট হয়।[14] ইংরেজ পরিবেশে টলন কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। রে লিন্ডওয়ালের বাউন্সারে তার মুখ বাঁচাতে ডানহাতের আঙ্গুলে আঘাত হানে ও চারটি বাই রান সংগৃহীত হয়।[3] দ্বিতীয় ইনিংসে টলন দুই ক্যাচ নেন যাতে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। কিন্তু তিনি সারের ৩৩৬ রানের মধ্যে ২৪ বাই রান দিয়েছিলেন।[14]
আঙ্গুলের আঘাত থেকে রক্ষাকল্পে টলন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, এসেক্স ও অক্সফোর্ড - এ তিনটি খেলা থেকে বিশ্রাম নেন।[6][7] অস্ট্রেলিয়া এ খেলাগুলোর প্রত্যেকটিতেই ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। তার পরিবর্তে স্যাগার্স অন্তর্ভুক্ত হন ১১০ রান তোলেন। তন্মধ্যে এসেক্সের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৪* রানসহ পাঁচটি ডিসমিসাল করেন।[15] স্যাগার্স চার খেলায় কেবলমাত্র ৩৪ বাই দিয়েছিলেন; কিন্তু টলন তিন খেলায় দিয়েছিলেন ৪৬।দ্রষ্টব্য-[১]
লর্ডসে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে পরবর্তী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্টে প্রতিনিধিত্বকারী সাতজন খেলোয়াড় এমসিসি’র পক্ষে ফিল্ডিংয়ে নামে ও মূলতঃ পূর্ণাঙ্গ শক্তির টেস্ট দলরূপে দেখা হচ্ছিল।দ্রষ্টব্য-[২] অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম একাদশকে মাঠে নামায়। এটি মানসিকভাবে সুবিধা লাভের সুযোগ ছিল এবং সফরের পূর্ববর্তী খেলাগুলোয় উচ্চ গড়ের বাই রান দেয়া স্বত্ত্বেও টলন খেলার জন্য মনোনীত হন। ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ রান তোলেন যাতে জিম লেকারের বলে একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। অস্ট্রেলিয়া ৫৫২ রান তোলে।[16] প্রথম ইনিংসে জ্যাক রবার্টসন, বিল এডরিচ এবং ডেনিস কম্পটন - এ তিনজনের ক্যাচ একহাতে নিয়ে প্রথম তিন উইকেট পতনে সহায়তা করেন। তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি দুই স্ট্যাম্পিং করেন যাতে স্বাগতিক দলকে ফলো-অন করতে হয়। কিন্তু ২৬ বাই রান দিলেও অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[6][7][17] চার খেলায় টলন ও স্যাগার্স যথাক্রমে ৭২ ও ৩৪ বাই রান দেন।দ্রষ্টব্য-[১]
এমসিসি‘র বিপক্ষে খেলার পর ও প্রথম টেস্টের পূর্বে ল্যাঙ্কাশায়ার, নটিংহ্যামশায়ার, হ্যাম্পশায়ার ও সাসেক্স - এ চারটি কাউন্টি দলের বিপক্ষে খেলা হয়। প্রথম দুই খেলায় ড্র করলেও অস্ট্রেলিয়া দল পরের দুই খেলায় যথাক্রমে আট উইকেট এবং ইনিংস ও ৩২৫ রানে জয়ী হয়।[6] টলন কেবলমাত্র নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে খেলেন।[7] প্রথম ইনিংসে দুই ক্যাচ এবং উভয় ইনিংসে দু’টি করে স্ট্যাম্পিং করেন। ক্যাচগুলো লিন্ডওয়ালের এবং স্ট্যাম্পিংগুলো ডগ রিংয়ের কাছ থেকে আসে। খেলায় টলন ১৮ বাই রান দেন ও সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে আউট হন। তিনি যখন মাঠে নামেন তখন দলের রান সংখ্যা ৩৫৫/৬ ছিল ও দলকে ৪০০ রানে নিয়ে যান।[18] অন্যদিকে স্যাগার্স তিন খেলায় ৩৬ বাই রান দেন ও ছয় ডিসমিসাল করেন।[19][20][21]
প্রস্তুতিমূলক খেলায়দ্রষ্টব্য-[৩] স্যাগার্সের তুলনায় ইনিংস প্রতি গড়পড়তা বাই রান প্রদানের হার বেশি থাকা স্বত্ত্বেও টলনকে টেস্ট দলে নেয়া হয়। ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে টলন চার ক্যাচ নিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে কিথ মিলারের বোলিংয়ে জিম লেকারের ক্যাচ নেন। এরফলে ইংল্যান্ডের ইনিংস ১৬৫ রানে থেমে যায়। ৭৪/৮ হবার পর তিনি ও অ্যালেক বেডসার জুটি গড়েছিলেন।[22]
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং চলাকালে ৩৩৮/৬ হলে টলন মাঠে নামেন ও লিন্ডসে হ্যাসেটকে সঙ্গ দেন। ৩৯ মিনিট ব্যাটিং করে ১০ রান করার পর বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার জ্যাক ইয়ংয়ের ফিরতি ক্যাচে ধরা পড়েন।[22] খেলার ধারাবাহিকতায় রান সংগ্রহ বেশ ধীরগতিতে হচ্ছিল। ইয়াং ধারাবাহিকভাবে ১১ মেইডেন ওভার দেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যবহৃত লেগ থিওরিতে তিনি তার ২৬ ওভারের স্পেলে মাত্র ১৪ রান রান দিয়েছিলেন।[23]
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৫০৯ রানে শেষ হয় ও ৩৩৪ রানে এগিয়ে যায়।[22] ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে দু‘টি কঠিন ক্যাচ নিয়ে প্রধান দুই ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন।[24] মিলারের বলে হুক শটে এক রান করে টলনের হাতে সিরিল ওয়াশব্রুক ফিরে যান।[25] জনসনের অফ স্পিন বলকে কাট করতে গিয়ে বিল এডরিচ কট হন। সোজা আসা আর্ম বলটি তিনি বুঝতে পারেননি এবং বলটি বাইরের প্রান্তে লাগলে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাড়ায় ৩৯/২।[22][23][26] ইংল্যান্ড চমৎকার শুরু করলেও তারপর তিনি অস্ট্রেলিয়াকে সহায়তা করেন। কিন্তু তারা রুখে দাড়ায়। পরবর্তীতে গডফ্রে ইভান্সকে ৫০ রানে জনসনের বলে আউট করলে ইংল্যান্ড ৪৪১ রানে আউট হয়। ৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রায় অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে ও আট উইকেটে জয় পায়।[24] টলন উভয় ইনিংসে যথাক্রমে ৫ ও ১২ বাই রান দেন।[22]
টেস্টের মাঝখানে নর্দাম্পটনশায়ার ও ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া অংশ নেয়। টলন উভয় খেলা থেকে বিশ্রামে যান। প্রথম খেলায় তার দল ইনিংসের ব্যবধানে জয় পায় ও দ্বিতীয়টি ড্রয়ে পরিণত হয়।[6][7] স্য্যাগার্স ৪ ও ২২ রান করেন ও চার ইনিংসে ২৪ রান বাই দেন।[15][27][28]
দলটি দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য লর্ডসে যায় ও অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৩৫০ রান তোলে। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২২৫/৬ হবার পর টলন ক্রিজে আসেন। হ্যাসেট ও বিল ব্রাউন দ্রুত বিদায় নেন। এরপর জনসনের সাথে জুটি গড়েন। জনসন রান সংগ্রহের জন্য সংগ্রাম করতে থাকেন। কিন্তু টলন শেষ ঘণ্টায় সাবলীল ভঙ্গীমায় রান করতে থাকেন। জনসন চার রান করে আউট হলে দলের সংগ্রহ দাড়ায় ২৪৬/৭।[29] তারপর লিন্ডওয়াল টলনের সাথে জুটি গড়ে খেলাকে বিলম্বিত করেন। দিনশেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৫৮/৭ করে। ইংল্যান্ড সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও টলন ২৫* রানে অপরাজিত ছিলেন।[30][31] দিনের শেষদিকে টলন আধিপত্য বিস্তার করেন। ৩৩ রানের ২৫ রানই তার ছিল।[29] ইংল্যান্ডের অবস্থানে দর্শকেরা অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে এবং কেউ কেউ মাঠের বাইরে চলে যাবার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।[31]
দ্বিতীয় দিনের সকালে অস্ট্রেলিয়ার নিচের সারির ব্যাটসম্যানেরা খেলাটিকে সফরকারীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়।[31] লিন্ডওয়াল ১৫ রানে আউট হলে দলের সংগ্রহ ২৭৫/৮ হলেও টলন শান্তমেজাজে ব্যাটিং চালিয়ে যেতে থাকেন। জনস্টন ও আর্নি তোশ্যাক তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। তারা উভয়েই নিজেদের সর্বোচ্চ টেস্ট রান করেন।[32] উভয় ব্যাটসম্যানই বলের দিকে ব্যাট চালালেও প্রায়শইঃ তা ভিন্ন দিকে যাচ্ছিল।[31] ২৯ রানে আউট হওয়া জনস্টনের সাথে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ও নিজে করেন ৫৩ রান।[29] অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৩৫০ রানে শেষ হলে চালকের আসনে যায়, সকালের ৬৬ মিনিটে ৯২ রান সংগ্রহ করে।[30][31]
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ২১৫ রানের মধ্যে টলন কোন বাই রান দেননি এবং লাফিয়ে প্রায় ৪০ রান রক্ষা করেন।[24] লিন্ডওয়ালের বলে ওয়াশব্রুকের কট নিলে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাড়ায় ১৭/১। পরে জনসনের বলে লেকারের বলে কট নেন।[29] দ্বিতীয় ইনিংসে টলনের ব্যাটিংয়ের প্রয়োজন পড়েনি। দ্রুত রান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিগ-হিটার লিন্ডওয়ালকে টলনের সামনে আনা হয়। অস্ট্রেলিয়া ৪৬০/৭ ডিক্লেয়ার করলে ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাড়ায় ৫০৯।[29]
ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৬৫/২ থাকাকালে[29] তোশ্যাকের ফুল টসের বল ওয়াশব্রুকের ব্যাটের ভিতরের প্রান্ত স্পর্শ করে সরাসরি টলনের গোড়ালিতে আসে। ব্র্যাডম্যান ক্যাচটিকে অত্যাশ্চর্য্যরূপে অভিহিত করেন। কেননা অত্যন্ত নিচে ও দ্রুতগতিতে ক্যাচ নেবার উদ্দেশ্যে টলন তা করেছিলেন।[24] লেগ গ্ল্যান্সের আরেকটি ডাইভ থামাতে গিয়ে বামহাতের কনিষ্ঠা মারাত্মকভাবে আঘাতগ্রস্ত হয়।[33] টলন দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ বাই দেন যা ইংল্যান্ডের মোট রানের ৮%।[29] টেস্ট অস্ট্রেলিয়া ৪০৯ রানের ব্যবধানে জয়ী হয়।[29] আঙ্গুলের সুশ্রুসার জন্যে টেস্টের মাঝখানে সারে ও গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলাগুলোয় তিনি অংশ নেননি। উভয় খেলায় দল যথাক্রমে দশ উইকেট ও ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[6][7] স্যাগার্স তার স্থলাভিষিক্ত জনসন ও ১২ রান করেন, নয় ডিসমিসাল ও চার ইনিংসে ৩১ বাই দেন।[15][34][35]
ম্যানচেস্টারে দলটি ড্র হওয়া বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় টেস্টে অংশ নেয়। এ টেস্টে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করতে নামে।[36] প্রথম দিনে লিন্ডওয়ালের বলে এডরিচের গ্লাভস স্পর্শ করলে টলন তাকে ৩২ রানে কট করেন। এ সময় ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১১৯/৫।[36][37] এডরিচের উইকেট পতনের পর লিন্ডওয়ালের বাউন্সারে মাথায় রক্তাক্ত হয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া কম্পটন পুনরায় মাঠে ফিরে আসেন। স্ট্যাম্প আগলে রেখে ৫০ রানে একহাতে ক্যাচ ও দিনের শেষদিকে জনস্টনের বলে ৬৪ রানে ক্যাচ হাতছাড়া করেন টলন।[38] ইংল্যান্ড দিনশেষে ২৩১/৭ করে যাতে কম্পটন ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।[36] দ্বিতীয় দিন সকালে কম্পটনের ৭৩ রানে থাকাবস্থায় টলন পুনরায় ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন।[39] ইংল্যান্ড ৩৬৩ রান করলেও কম্পটন ১৪৫* রানে অপরাজিত ছিলেন। টলন ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় দলকে ৯৫ রান বেশি দিতে হয়। পাশাপাশি কম্পটন একপ্রান্ত আগলে রাখেন ও তার সঙ্গীরা রান করতে সক্ষম হন। এছাড়াও টলন সাতটি বাই রান দেন।[36]
অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১৩৫/৩ হবার পর মিলার ও আর্থার মরিস খুব দ্রুত ফিরে যান। উরুতে টান পড়ায় সিড বার্নস রিটায়ার্ড হার্ট হন।[36][40] ১৩৯/৫ হলেও তা ছিল কার্যত ছয় উইকেট পতনের পর টলন ব্যাট করতে নামেন। আধা ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ১৮ রান নিয়ে বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাড়ায় ১৭২/৬। এরপর দল ২২১ করলে ফলো-অন থেকে নিরাপদ দূরে থাকে।[36]
ইংল্যান্ড পুনরায় ব্যাটিংয়ে নামে ও লিন্ডওয়ালের বলে একহাতে ক্যাচ নিয়ে জর্জ এমেটকে বিদায় করেন।[33][41] লিন্ডওয়ালের আউটসুইঙ্গারে অফ স্ট্যাম্প বরাবরে বল ফেলেন ও এমেটের ব্যাট স্পর্শ করে উইকেট-রক্ষক টলন ডান হাত বাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন ও ইংল্যান্ডের রান সংখ্যা দাঁড়ায় ১/১।[36][42] তারপর ইংল্যান্ড ১৭৪/৩ করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। টলন নয়টি বাই রান দেন ও একদিনের বেশি বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়। শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নামলেও ড্র হবার কারণে টলনকে ব্যাট ধরার প্রয়োজন পড়েনি।[36][40]
তৃতীয় টেস্টের পর টলনের বামহাতের আঙ্গুলের ক্ষত থাকা স্বত্ত্বেও মিডলসেক্সের বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় তা বাড়তে থাকে।[41] এ খেলায় তিনি ১৭ রান করেন, দুই ক্যাচ নেন ও প্রথম ইনিংসে এক স্ট্যাম্পিং করেন। পুরো খেলায় সাত বাই রান দেন যাতে অস্ট্রেলিয়া দশ উইকেটে জয় পায়।[43]
হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে বাম আঙ্গুলের আঘাতের কারণে খেলতে পারেননি তিনি।[41] তার পরিবর্তে স্যাগার্স অন্তর্ভুক্ত হন। অস্ট্রেলিয়া সফলভাবে ৪০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমণের মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ও সাত উইকেটে জয় পায়। এরফলে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া দল।[44] খেলায় অস্ট্রেলিয়া ২৯৯.১ ওভারে ৮৬১ রান দিলেও স্যাগার্স গ্লাভস হাতে ছয়টি বাই রান দেন।[44] এ সফরে যে-কোন অস্ট্রেলীয় উইকেট-রক্ষক হিসেবে কোন খেলায় সর্বনিম্ন ০.৬৯৭% ভাগ বাই রান দেন।দ্রষ্টব্য-[৪]
গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে খেলতে নামলেও টলন ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ইনিংস বিজয়ে দলের সাথে ছিলেন না।[6][7][45] আঘাত থেকে ফিরে প্রথম খেলায় অংশ নিয়ে টলন একটি ক্যাচ ও দুই স্ট্যাম্পিং করেন। স্বাগতিক দল ১৯৭ করলেও তিনি ১৯ বাই রান দেন। কোন খেলায় বাই রানের দিক দিয়ে ৯.৬৪% গ্রীষ্মে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষে এটি সর্বোচ্চ।দ্রষ্টব্য-[৪] অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২১৫/৩ থাকাকালে বৃষ্টি নামলে তিনি ব্যাট করতে নামেননি।[7][46] ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে নয় উইকেটে জয়ী হওয়া খেলায় তিনি বিশ্রামে ছিলেন।[47] অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় খেলায় ফিরে আসেন এবং ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে তার দল ড্র করে।[6][7] দলের রান সংখ্যা ২৩২/৭ হবার পর টলন মাঠে নামেন ও ৩৩ রান সংগ্রহ করেন। ইয়ান জনসনের সাথে ৬৩ রান যোগ করলে দল ৩২১ রান তোলে। দুই ক্যাচ ও দুই স্ট্যাম্পিং করলেও ২৩ বাই দেন।[48] ডারহামের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীবিহীন খেলায় টলন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন, অন্যদিকে স্যাগার্স উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ব্যাটিং উদ্বোধনে নামলেও এক রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যান। অস্ট্রেলিয়া ২৭৩ রানের জবাবে স্বাগতিক দল ৭৩/৫ করলে বৃষ্টিতে খেলা শেষ হয়ে যায়।[49]
ওভালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম টেস্টে টলন ফিরে আসেন। বৃষ্টিস্নাত পিচে টস জয়ী ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নামে।[50] মিলারের বোলিংয়ে জ্যাক ক্রাপের ব্যাটের বাইরের দিকে স্পর্শ করলে শূন্য রানে টলনের কট আউটের শিকার হন। মধ্যাহ্ন ভোজনের পূর্বে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩/৪।[51][52] ঘূর্ণায়মান বলের বিপক্ষে লড়াইয়ে ব্যস্ত ইংল্যান্ড দল অধিবেশনের মাঝামাঝি সময়ে ৫২ রানে অল-আউট হয়। লেগ সাইডে বামহাতে লেন হাটনের অ্যাক্রোবেটিক ক্যাচ নিয়ে টলন ইনিংস শেষ করে দেন। উইজডেন এটিকে মৌসুমের সেরা ক্যাচরূপে আখ্যায়িত করে।[33][41][53] এ ইনিংসে টলন ছয় বাই রান দেন।[51]
প্রথম বিকেলেই অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের সংগ্রহকে অতিক্রম করে। দ্বিতীয় দিন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩৩২/৭ হলে টলন ব্যাট করতে নামেন। এ সময় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মরিস দেড় শতাধিক রান করে ফেলেছেন।[51] রান আউটের মাধ্যমে মরিসের ইনিংস শেষ হয়। থার্ড ম্যান অঞ্চলে বল ঠেলে দিয়ে দ্রুতগতিতে রান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে টলনকে সঙ্কেত দিলে অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের থ্রোতে উইকেট ভেঙ্গে যায়।[50] এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ৩৫৯/৮। ৩১ রান সংগ্রহকারী টলন ডগ রিংয়ের সাথে আরও ৩০ রান তোলেন। তারা উভয়েই ৩৮৯ রানে বিদায় নেন ও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হয়।[54][55] দ্বিতীয় ইনিংসে টলন মিলারের বলে হাটনকে কট করেন এবং নয় বাই রান দেন যাতে ইংল্যান্ড ১৮৮ রানে অল-আউট হয়। এরফলে স্বাগতিক দল ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত জয় ও অস্ট্রেলিয়া ৪-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়লাভ করে।[51]
পরাজয়বিহীন অবস্থায় ইংল্যান্ড সফর শেষ হতে ব্র্যাডম্যানের দলের আর মাত্র সাত খেলা বাকী ছিল।[6] কেন্ট,[56] জেন্টলম্যান অব ইংল্যান্ড[57] ও সমারসেট[6][7] - ধারাবাহিকভাবে এ তিনটি খেলা থেকে টলনকে বিশ্রামে রাখা হয়। সবগুলো দলের বিপক্ষেই অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[6][7] স্যাগার্স তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিন খেলার ছয় ইনিংসে সাতটি ডিসমিসাল ঘটান ও ২৯ বাই রান দেন।[56][57][58]
পরবর্তী খেলা হিসেবে সাউথ অব ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলে ফিরে আসেন। অস্ট্রেলিয়া ৫২২/৭ ডিক্লেয়ার করার প্রেক্ষিতে তাকে ব্যাট করার প্রয়োজন পড়েনি। এরপর তিনি তিন ক্যাচ নেন ও ১৩ বাই রান দেন। স্বাগতিক দল ২৯৮ করার পর বৃষ্টির কারণে খেলাটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।[6][7][59]
টেস্টের পর প্রস্তুতিমূলক খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল লেভসন-গাওয়ার একাদশের বিপক্ষে। ১৯৩৮ সালের সর্বশেষ সফরে এ দলটি ছিল কার্যত পূর্ণাঙ্গ শক্তির ইংল্যান্ড দল। কিন্তু এবার ব্র্যাডম্যান কেবলমাত্র বর্তমান ইংল্যান্ড দলের ছয় টেস্ট খেলোয়াড়কে স্বাগতিক দলের পক্ষে অংশগ্রহণের অনুমোদন দেন।[60][61] তারপর ব্র্যাডম্যান পূর্ণাঙ্গ শক্তির দলকে মাঠে নামান।[60] পঞ্চম টেস্টের দল থেকে একমাত্র পার্থক্য ছিল ডগ রিংয়ের পরিবর্তে জনসনের অন্তর্ভুক্তি। অস্ট্রেলিয়া ৪৮৯/৮ করে যাতে টলনের অংশগ্রহণ ছিল দুই রান। তিনি সাতটি বাই রান দেন ও কোন ডিসমিসাল করতে পারেননি। বেশ কয়েকবার বৃষ্টির কারণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[51][62]
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীবিহীন খেলায় অংশগ্রহণ শেষে সফরটি শেষ হয়। প্রথম খেলায় টলন ব্যাটসম্যান হিসেবে ও স্যাগার্স উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার ২৩৬ রানের মধ্যে টলন মাত্র ছয় রান তোলেন এবং স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ০/১০ বোলিং করেন। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পেলেও তিনি কোন ক্যাচ নিতে পারেননি।[63] অ্যাবরদিনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় খেলায় টলন উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। ২৬ বাই রান দেন, কোন ডিসমিসাল করতে পারেননি এবং তার ব্যাটিংয়েরও প্রয়োজন পড়েনি।[64] স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয ইনিংস চলাকালীন অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ অবস্থানে থাকার ফলে ব্র্যাডম্যান টলনকে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে লেগ স্পিন বোলিং করান।[65] টেস্ট জীবনে টলন কখনও বোলিং করেননি এবং কেবলমাত্র কদাচিৎ প্রথম-শ্রেণীর ৩০১ বল করেছেন যেখানে একজন বিশেষজ্ঞ বোলারই একটি খেলায় সমসংখ্যক বোলিং করে থাকেন।[66] টলন ২/১৫ লাভ করেন যাতে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়ে সফরটি শেষ করে।[7]
টেস্ট সিরিজে ব্যাটিং করে মাঝারি ধরনের সফলতা পেয়েছেন। ২৮.৫০ গড়ে ১১৪ রান তুলেছেন টলন।[67] সচরাচর ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামতেন এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শক্তিমত্তায় তাকে মাত্র চার ইনিংস খেলতে হয়েছে।[22][29][36][51] কোন টেস্টেই তাকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে হয়নি।[67] অস্ট্রেলীয় দলের কৌশল মূখ্যতঃ ফাস্ট বোলিংয়ের উপর নির্ভরশীল থাকায় টলন ১২ ক্যাচ নিয়েছেন ও টেস্টে কোন স্ট্যাম্পিং করতে পারেননি।[67] তাস্বত্ত্বেও ব্র্যাডম্যান মিলার ও লিন্ডওয়ালের ন্যায় শীর্ষ পেস বোলারদেরকে টেস্টের উপযোগী শক্তি ধরে রাখার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক খেলা থেকে দূরে রাখেন এবং কাউন্টি খেলাগুলোয় ইয়ান জনসনের অফ স্পিন ও ম্যাককুল এবং ডগ রিংয়ের লেগ স্পিনের ব্যবহার অতিমাত্রায় প্রয়োগ করেন।[68] ফলশ্রুতিতে এ সফরের প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় টলন ২৯ ক্যাচ ও ১৪ স্ট্যাম্পিং করেন। মৌসুমে ২৫.৭২ গড়ে ২৮৩ রান তোলেন যা স্যাগার্সের ২৩.২২-এর তুলনায় বেশি।[69] সফরের সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ৫৩৩১ রানের বিপরীতে টলন বাই রান দেন ২৪৯ যা ৪.৬৭%। অন্যদিকে স্যাগার্স অস্ট্রেলিয়ার ৬১৯০ রানের বিপরীতে দেন ২২১ যা ৩.৫৭%।দ্রষ্টব্য-[৪]
এ সফরে টলন খুব কমই ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সচরাচর তিনি ৮ কিংবা ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামতেন।দ্রষ্টব্য-[৪] কেননা, রে লিন্ডওয়াল, কলিন ম্যাককুল, ইয়ান জনসন এবং ডগ রিংয়ের ন্যায় অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষসারির বোলাররা সকলেই ব্যাটিংয়ে দক্ষ ছিলেন। লিন্ডওয়াল তার খেলোয়াড়ী জীবনে দুই টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন, অন্যদিকে ম্যাককুল এক টেস্ট সেঞ্চুরিসহ ১৮টি প্রথম-শ্রেণীর সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম-শ্রণীর ক্রিকেটে জনসন এবং রিং উভয়েই ২০-এর অধিক অর্ধ-শতক করছেন।[70] প্রায়শইঃ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে ও প্রায়শইঃ প্রথম ইনিংসে ডিক্লেয়ার করেছে। টলন প্রথম-শ্রেণীর ১৪ খেলার মাত্র ১৩ ইনিংস খেলতে পেরেছেন এবং দুইবার অপরাজিতসহ দুইবার রান-আউটের শিকার হয়েছিলেন।[7]
ইংরেজ গ্রীষ্মে টলনের সুন্দর ক্রীড়াশৈলীর প্রেক্ষিতে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে পাঁচজন ক্রিকেটারের একজনরূপে ঘোষণা করে।[68]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.