প্রাণিবিজ্ঞানে যৌনমিলন হল প্রাণীর এক প্রকার যৌন আচরণ যার মধ্যে পুরুষ প্রাণীটি স্ত্রী প্রাণীর শরীরের ভেতর অর্থাৎ প্রজননতন্ত্রের ভেতর বিশেষ প্রক্রিয়ায় সরাসরি বীর্য প্রবেশ করায়।[1][2] এটা মিলনেরই একটা রূপ। অনেক প্রাণী যারা জলে বসবাস করে তারা বহিঃনিষেক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, কিন্তু বিলম্বিত অর্ডোভিসিয়ান অবস্থায় তরল মাধ্যমে জননকোষকে ঠিক রাখার জন্যে অন্তঃনিষেক প্রক্রিয়া বিকশিত হয়। অনেক মেরুদণ্ডী প্রাণী (যেমন- সরীসৃপ, কিছু মাছ এবং অধিকাংশ পাখি) অন্তঃনিষেক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ক্লোয়েকাল মিলনের (আরও দেখুন হেমিপেনিস) মাধ্যমে, যেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণী যোনিপথের মাধ্যমে যৌনমিলন ঘটায় এবং অনেক ব্যাসাল মেরুদণ্ডী প্রাণী বহিঃনিষেক প্রক্রিয়ায় যৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। [3][4]
নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (তীক্ষ্ণদন্তযুক্ত প্রাণী, কুকুর-জাতীয় প্রাণী, বিড়াল-জাতীয় প্রাণী, গবাদী পশু এবং ঘোড়া-জাতীয় প্রাণী) প্রজনন অঙ্গের শারীরতত্ত্ব এবং স্নায়ুতন্ত্রের কিছু সার্কিট (বর্তনী) বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীদের সাথে যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে নির্মিত হয়। [5] অন্যদিকে মানুষের যৌন আচরণ কিছু জৈব (বায়োলজিক্যাল) উপাদান দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় যা এই স্তন্যপায়ী জীবের যৌনমিলন নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে। [6]
মাকড়শা এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের মধ্যে
মাকড়শা এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু এরা (মাকড়সা) সাধারণ কীট-পতঙ্গ নয়, বরং এরা অ্যারাকনিডা/এরাকনিডা শ্রেণীর প্রাণী। [7][8] মাকড়সার মধ্যে পৃথক পুরুষ এবং স্ত্রী প্রাণী আছে। একত্রিত হওয়া এবং যৌনমিলনের পূর্বে পুরুষ মাকড়সা একটি ছোট জাল বুনে এবং এর মধ্যে বীর্যস্খলন ঘটায়। এরপর সে তার বৃহৎ পেডিপাল্প এর আধারে বীর্য সংরক্ষণ করে এবং যার থেকে স্ত্রী প্রাণীর যৌনাঙ্গে বীর্য স্থানান্তর করে। স্ত্রী প্রাণী অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে এই বীর্য সংরক্ষণ করতে পারে। [9]
উঁচুস্তরের কীট-পতঙ্গে পুরুষ প্রাণী কোন স্তরের উপর অথবা মাঝে মাঝে কোন কাঠামোর মধ্যে শুক্রানু জমা রাখে এবং কোর্টশিপের মাধ্যমে মিলন ছাড়াই স্ত্রী প্রাণী তাদের যৌনাঙ্গের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে বীর্যের থলে নিয়ে নিতে পারে, আর এজন্যে এখানে প্রকৃত যৌনমিলন ঘটে না। [10][11] ফড়িং গোত্রীয় প্রাণীদের প্রজননের ধরনের সাথে মাকড়সার মিল রয়েছে, এদের পুরুষ প্রাণী এক ধরনের সেকেণ্ডারি (মাধ্যমিক) থলে জাতীয় কাঠামোতে বীর্যস্খলিত করে এবং স্ত্রী প্রাণীর মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য জননছিদ্র দিয়ে বের করে দেয়। ফড়িং গোত্রীয় প্রাণীতে এটা উদরের দ্বিতীয় অংশে (segment) অবস্থিত একটা স্টারনাইটের সেট। [12] আরও উঁচুস্তরের কীট-পতঙ্গে পুরুষ প্রাণী এদের উদরের প্রান্তীয় অংশ থেকে সৃষ্ট উপাঙ্গগুলো স্ত্রী প্রাণীর জননতন্ত্রে সরাসরি বীর্য (যদিও অনেকসময় ক্যাপসুলে আবদ্ধ থাকে যা স্পার্মাটোফোর নামে পরিচিত) জমা করার কাজে ব্যবহৃত হয়। [13]
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে
নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে
কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় যে, নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্রের গঠন বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীদের সাথে যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে নকশা করা থাকে।[14] সহজভাবে বলা যায়, তিনটি প্রধান স্বয়ংক্রিয় এবং স্থায়ী জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) সার্কিট রয়েছে যেগুলো হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়: ক) অলফ্যাক্টরি সার্কিট (লাল তীর চিহ্ন, নিচের চিত্রে) যা যৌন উত্তেজনা এবং যৌন অনুভূতির জন্যে দায়ী; খ) সেক্সুয়াল (যৌন) রিফ্লেক্স (প্রতিবর্তী ক্রিয়া) এর সার্কিট (লর্ডোসিস বা যৌন মিলনের সময় শরীরের বাঁকানো অবস্থান, ইরেকশন, বীর্যস্খলন......কমলা তীর চিহ্ন) যা যৌন মিলন ঘটায়; গ) সেক্সুয়াল (যৌন) রিওয়ার্ড এর সার্কিট (রিওয়ার্ডতন্ত্র শিশ্ন/ভগাঙ্কুরের সাথে যুক্ত (বিশেষত যৌন প্ররোচনা)। [15]
নির্দিষ্টভাবে স্ত্রী প্রাণীদের মধ্যে লর্ডসিসের মোটর সেক্সুয়াল রিফ্লেক্সসহ (যৌন প্রতিবর্তী ক্রিয়া) আরও কিছু জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) পদ্ধতির মাধ্যমে যৌন মিলন নিয়ন্ত্রিত হয় [17] (নিচের চিত্রে দেখুন)।
সহজভাবে বলা যায়, স্ত্রী প্রাণী লর্ডসিস ছাড়া অন্যকোন যৌন কার্যক্রমে তেমন অংশ নেয় না।
পুরুষ প্রাণীতে যৌনমিলনের অনুভূতি আরও জটিল কারণ এদের ক্ষেত্রে কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা জরুরী। তাসত্ত্বেও প্রকৃতিজাত পদ্ধতিগুলো (যোনিতে শিশ্ন প্রবেশের সময় বিপরীতমুখী নিয়ন্ত্রণ, পেলভিস বা শ্রোণীর ছন্দময় নড়াচড়া, স্ত্রী প্রাণীর ফোরেমন সনাক্তকরণ.....) যৌনমিলনের জন্যে নির্দিষ্ট। [24]
যদিও এই প্রক্রিয়ায় এভাবে হরমোন, ফোরেমন এবং সেক্সুয়াল রিফ্লেক্সের সমন্বয় হয়ে থাকে, তবুও নিচুস্তরের প্রাণীতে এটাই প্রকৃত যৌন আচরণ।
হোমিনিডে যৌনমিলন নিয়ন্ত্রণের বিবর্তন
অত্যন্ত উন্নত মস্তিষ্কযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (শিম্পাঞ্জি, বনোবো, ওরাংওটাং, ডলফিন) ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক-সম্পর্কিত (cerebral) অঙ্গগুলোর গঠনও উন্নত হয়। এইসব উদ্ভূত পার্থক্যের ফলস্বরূপ মানুষের যৌনমিলন (সহবাস) অন্য ধরনের জৈবস্নায়বিক নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করেঃ [6]
- হোমিনিডায়ে স্ত্রী লর্ডসিসের আচরণ সেকেণ্ডারি বা মাধ্যমিক হয়ে থাকে এবং মানুষের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। [25] যৌন উদ্দীপনা পশ্চাদ্দেশকে নিশ্চল করতে বা উত্তোলিত করে বাঁকাতে তরান্বিত করে না। যখন কোন স্ত্রী মেঝেতে উপুড় হয়ে থাকে এবং তার পশ্চাদ্দেশকে বাঁকাইয় এবং স্থির রাখে, তখন এটা যৌন উদ্দীপক দ্বারা প্রতিফলিত (রিফ্লেক্স) গতিবিধিকে আর নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং এটাকে ঐচ্ছিক গতিবিধি (নড়াচড়া) বলা যেতে পারে। [15]
- ফোরেমন সেকেণ্ডারি বা মাধ্যমিক হয়ে থাকে। ৯০% যৌন ফোরেমনের রিসিপ্টর জিনগুলি সিউডোজিন হয়ে থাকে,[26] এবং ভোমেরোনাসাল অঙ্গগুলো (অর্গান) পরিবর্তিত হতে পারে। [27]
- বিশেষ করে বোবোন (pan paniscus) [28] এবং মানুষের যৌন কার্যক্রমগুলো ক্রমান্বয়ে হরমোনের হরমোনের চক্রগুলো [25] থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
- যৌনশিক্ষা যৌন রিওয়ার্ড এবং রিওয়ার্ড সিস্টেম দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং হোমিনিডের ক্ষেত্রে অনেক বড় ফ্যাক্টর (ব্যাপার) হয়ে থাকে। [14][29]
- হোমিনিডের কর্টেক্সের (বহি:আবরণ) ক্রমবিকাশ জটিল শিক্ষা ক্ষমতার ক্রমোন্নতি ঘটায় যা মানব প্রজাতির সভ্যতা চর্চার উন্নতি ঘটায় [30]।
এভাবে হোমিনিডের যৌনমিলন কার্যক্রম সম্পর্কিত আচরণ কিছু উপায়ে বিশেষায়িত হয়ে থাকে: প্রজনন সংক্রান্ত আচরণ সাধারণত যৌন আচরণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। [6] মানুষের মধ্যে যোনিপথে যৌনমিলন এখনো বহুলভাবে চর্চিত হয়, কিন্তু এটা রিফ্লেক্স মোটরের কোন কার্যক্রম নয় বরং হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ফোরেমনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটা বরং এক ধরনের যৌন আঐচ্ছিকভাবেচরণ যা অন্যদের মধ্যে সেরেব্রাল রিওয়ার্ড (যৌন প্রমোদ[29]) অর্জন করার জন্যে ঐচ্ছিকভাবে সম্পন্ন হয়।[15]
আরও পড়ুন
- Peter J Chenoweth; Steven Lorton (৩০ এপ্রিল ২০১৪)। Animal Andrology: Theories and Applications। CABI। আইএসবিএন 978-1-78064-316-8।</ref>
- Møller, A. P., and T. R. Birkhead. "Copulation behaviour in mammals: evidence that sperm competition is widespread." Biological Journal of the Linnean Society 38.2 (1989): 119-131.
- Birkhead, Timothy R., L. Atkin, and A. P. Møller. "Copulation behaviour of birds." Behaviour 101.1 (1987): 101-138.
- Anders Agmo Functional and dysfunctional sexual behavior Elsevier 2007
- (ফরাসি) Wunsch S. (2014) To understand the origins of human sexuality. Neurosciences, ethology, anthropology. Comprendre les origines de la sexualité humaine. Neurosciences, éthologie, anthropologie. L'Esprit du Temps.
- Richard Sadleir (২ ডিসেম্বর ২০১২)। The Reproduction of Vertebrates। Elsevier Science। আইএসবিএন 978-0-323-15935-7।
- Broom, D.M.; Fraser, A.F.। Domestic Animal Behaviou...। CABI। পৃষ্ঠা 155–। আইএসবিএন 978-1-78064-053-2।
- P. Bateson (২৯ জুন ২০১৩)। Perspectives in Ethology। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 12–। আইএসবিএন 978-1-4615-7572-6।
- Roger L. Gentry (১৪ জুলাই ২০১৪)। Behavior and Ecology of the Northern Fur Seal। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 172–। আইএসবিএন 978-1-4008-6472-0।
- Richard Estes (১৯৯১)। The Behavior Guide to African Mammals: Including Hoofed Mammals, Carnivores, Primates। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-08085-0।
- Carlson, Debra A. Reproductive biology of the coyote (Canis latrans): integration of behavior and physiology. Utah State University, 2008.
- Castro, Ana Mafalda Lopes Sardica Velez. Mexican gray wolf courtship and mating: behavior & basic endocrinology during breeding season. Diss. Universidade de Lisboa. Faculdade de Medicina Veterinária, 2016.
- Szykman, Micaela, et al. "Courtship and mating in free-living spotted hyenas." Behaviour 144.7 (2007): 815-846.
- Dixson, Alan F. "Baculum length and copulatory behavior in primates." American Journal of Primatology 13.1 (1987): 51-60.
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.