Loading AI tools
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ডোনাল্ড ট্রাম্প, সিনিয়র (জন্ম: জুন ১৪, ১৯৪৬) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি।[3] এছাড়াও তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব, লেখক হিসেবে আলোচিত।[4][5][6][7] তিনি দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যানের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনম্যান্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প | |
---|---|
৪৫ তম যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি | |
দায়িত্ব গ্রহণ জানুয়ারি ২০,২০১৭ | |
উপরাষ্ট্রপতি | মাইক পেন্স |
যার উত্তরসূরী | বারাক ওবামা |
উত্তরসূরী | জো বাইডেন |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ডোনাল্ড জন ট্রাম্প ১৪ জুন ১৯৪৬ কুইন্স, নিউ ইয়র্ক সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
জাতীয়তা | মার্কিন |
রাজনৈতিক দল | রিপাবলিকান (২০১২-বর্তমান; ২০০৯-১১; ১৯৮৭-৯৯)[1] পূর্ববর্তী দল অধিভুক্ত::
|
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সম্পর্ক |
|
সন্তান | জেলনিকোভার সাথে: ডোনাল্ড ট্রাম্প, সিনিয়র ইভাঙ্কা ট্রাম্প এরিক ট্রাম্প ম্যাপেলসের সাথে: টিফ্যানি ট্রাম্প নসের সাথে: ব্যারন ট্রাম্প |
পিতামাতা |
|
বাসস্থান | |
শিক্ষা |
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী |
|
পেশা |
|
ধর্ম | প্রেসবিট্যারিয়ান |
স্বাক্ষর | |
ওয়েবসাইট | www The Trump Organization |
ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রেড ট্রাম্পের ছেলে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে নিজের কর্মজীবন হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার পিতার যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল। ট্রাম্প পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধীন হোয়ারটন স্কুলে অধ্যয়নের সময় তার পিতার 'এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সান' প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি তার পিতার প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেন। ১৯৭১ সালে ট্রাম্প তার পিতার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে ''দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যান'' রাখেন। ট্রাম্প বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল স্টেট ব্যবসা এবং মিডিয়া তারকাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।
ট্রাম্প জুন ১৬, ২০১৫ তারিখে রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার পূর্বের প্রচারণা কর্মকাণ্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। জুলাই ২০১৫ থেকে রিপাবলিকান পার্টির জনমত নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে পছন্দের দিক থেকে তিনি ধারাবাহিকভাবে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৩০৬টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
২০২৩ সাল পর্যন্ত, ট্রাম্প ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ওই বছরের মার্চে ম্যানহাটনের একটি গ্র্যান্ড জুরি জালিয়াতির ৩৪টি অভিযোগে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে। যার ফলে তিনিই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগের সম্মুখীন হন। তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।.[8][9]
ডোনাল্ড জন ট্রাম্প সিনিয়র ১৯৪৬ সালের ১৪ই জুন নিউ ইয়র্ক শহরের কুইন্সে জন্মগ্রহণ করেন।[10][11][12] তার মা ম্যারী অ্যানী একজন গৃহিণী ও লোকহিতৈষী[13] এবং তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প (১৯০৫-১৯৯৯) ছিলেন একজন রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। তার মা ম্যারী অ্যানি স্কটিশ দ্বীপ লিউয়িসের টং গ্রামের বাসিন্দা।[14] ১৯৩০ সালে ১৮ বছর বয়সে তার মা ম্যারী অ্যানী যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং সেখানে তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের সাথে তার মার পরিচয় হয়। তারা ১৯৩৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ট্রাম্পের এক ভাই, রবার্ট (জন্ম: ১৯৪৮) এবং দুই বোন: ম্যারীঅ্যানী (জন্ম: ১৯৩৭) এবং এলিজাবেথ (জন্ম: ১৯৪২) রয়েছে। ট্রাম্পের বোন ম্যারীঅ্যানি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডেরাল আদালতের একজন বিচারপতি।[15] ট্রাম্পের আরেক ভাই ফ্রেড জুনিয়রের মৃত্যু হয়েছিল (১৯৩৮-১৯৮১) অতিরিক্ত মদ্যপানের দরুণ।[16]
ট্রাম্পের পিতামহ জার্মানির অভিবাসী ছিলেন।[17] তার দাদা ফ্রেডেরিক ট্রাম্পের জার্মানিতে নিজের "ক্লোনডিক গোল্ড রাশ" নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।[18][19] তার দাদা যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসেন ১৮৮৫ সালে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবারের আসল পদবি ছিল মূলত "ড্রাম্পফ্" কিন্তু ১৭ শতাব্দিতে এটি অপভ্রংশ হয়ে ট্রাম্প হয়ে যায়।[20] ট্রাম্প লিখিত ১৯৮৭ সালের একটি বই, দ্য আর্ট অব দ্য ডিল গ্রন্থে ট্রাম্প ভুলবশত উল্লেখ করে ছিলেন যে তার দাদু ফ্রেডেরিক ট্রাম্প একজন সুইডিশ বংশোদ্ভূত।[21] মূলত এই দাবি ছিল তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের। কিন্তু ট্রাম্প পরবর্তীকালে স্বীকার করেছিলেন যে তার পূর্ব-পুরুষরা আসলে জার্মান বংশোদ্ভুত এবং তারা ১৯৯৯ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে জার্মান-আমেরিকান স্টুবেন প্যারেডে সেনাবাহিনীর গ্র্যান্ড মার্শাল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।[22]
ট্রাম্প পরিবারের দো-তলা বিশিষ্ট মক ট্যুডোর রিভাইভাল আদলে একটি বাড়ি ছিল যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প কিউ-ফরেস্ট স্কুলে অধ্যয়নের সময় বসবাস করতেন।[23] কিউ-ফরেস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্প সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৮৩ সালের এক সাক্ষাৎকারে তার বাবা ফ্রেড ট্রাম্প বলেছিলেন যে "ট্রাম্প ছেলেবেলায় ছিলেন খুবই দুরন্ত প্রকৃতির" যার দরুন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমীতে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে তৎপর হতে হয়েছিল। ট্রাম্প তার অষ্টম শ্রেণী এবং হাইস্কুল জীবন নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমীতেই শেষ করেন।[24] ২০১৫ সালে ট্রাম্প এক বায়োগ্রাফারকে বলেছিলেন যে, নিউ ইয়র্ক মিলিটারি একাডেমী তাকে অন্যান্য ছেলেদের চেয়েও বেশি সামরিক প্রশিক্ষণ শিখিয়েছিল।[25]
ট্রাম্প দুই বছর অব্দি ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। ট্রাম্প পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধীন হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেসেও অধ্যয়ন করেছেন। হোয়ার্টনে অধ্যয়নের সময় ট্রাম্প তার বাবার প্রতিষ্ঠান "এলিজাবেথ ট্রাম্প অ্যান্ড সান" কোম্পানীতে কাজ করতেন। ট্রাম্প ১৯৬৮ সালে হোয়ার্টন বিজনেস স্কুল থেকে অর্থনীতির উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[26][27]
ট্রাম্প স্ব-বিরোধী পন্থায় বিভিন্ন সময়ে তার রাজনৈতিক বিষয়ক পাণ্ডিত্য এবং অবস্থান বর্ণনা করেছেন।[28][29][30][31] পলিটিকো ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন "সারগ্রাহী, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনকারী এবং প্রায়শ স্ব-বিরোধী" হিসেবে।[31] ট্রাম্প পূর্বে তার রাজনৈতিক দলকে তালিকাভুক্ত ও সম্মিলিত করেছেন রিপাবলিকান পার্টি, ইনডিপেন্ডেস পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে।[31]
ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তাকে তার শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল।[32] তার প্রস্তাবিত নীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাজ্যসমূহ নিয়ে তার বিবৃতি তাকে জনমত বিচারে রিপাবলিকান ফ্রন্ট-রানারে তাকে এগিয়ে রেখেছে।[33] তার কিছু বক্তব্য বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং মূলধারার সংবাদ-মাধ্যম কর্তৃক বিতর্কিত বলে বিবেচিত হয়েছিল।[34] রাজনৈতিক শুদ্ধতা (পলিটিক্যাল কারেক্টন্যাস) থেকে নিবৃত্তিই হলো তার প্রচারকার্যের মূল বিষয়।[35] ট্রাম্পের বেশিরভাগ বক্তব্যই হলো অভিবাসন এবং সীমান্ত রক্ষা, অবৈধ অভিবাসীদের নির্বাসন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ এবং অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে।[36] অধিকাংশ অবৈধ অভিবাসীরা মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে বলে তার অভিমত।[37][38] রিপাবলিক পার্টিতে তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেক বিরোধিতা ও মতবিরোধ থাকলেও ট্রাম্পের মনোনয়ন প্রার্থিতা সফল হয়েছে মূলত ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজে ও প্রচারের দরুন।[39] তিনি বেশ অনেকবার উদ্ধত এবং বিতর্কিতমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন যা মূলত তার শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের আকর্ষিত করেছিল।[40] ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে "বিভেদ সৃষ্টিকারী",[41] "দায়িত্বজ্ঞানহীন"[42] এবং "উৎপীড়ক" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[43]
ট্রাম্প অনেক গণ্যমান্য সাংবাদিক,[44] রাজনীতিবিদ[45] এবং মনোনয়নপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের[46] বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। যারা ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন কিংবা ট্রাম্প যাদের সাথে মতানৈক্যে পৌঁছাতে পারেন না, তাদের নিয়ে ট্রাম্পকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে বাগাড়ম্বরপূর্ণ টুইট করতে দেখা যায়।[47]
ট্রাম্প তার অভিবাসন নীতির মাধ্যমে আনুমানিক ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা এবং মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে একটি সু-দৃঢ় দেওয়াল নির্মাণের প্রস্তাবনা রাখেন।[48] এরই পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালডেরন বলেন যে, "এরকম গো-মূর্খ দেওয়াল নির্মাণের জন্য আমরা এক পয়সাও খরচ করতে আগ্রহী নয়। এবং এই ধরনের প্রস্তাবনা সম্পূর্ণই অর্থহীন।"[49]
ট্রাম্প মধ্য-প্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইসিসের উপর আক্রমণাত্মক বোমাবর্ষণের আহ্বান জানিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মসজিদে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির উপর পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছে।[50]
ধর্ম নিয়ে ট্রাম্পের বহু দৃঢ় বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। সন্ত্রাস এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে একাত্ম করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এমনকি বেন কার্সন এবং টেড ক্রুজের খ্রীষ্ট ধর্মে তাদের বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।[51] এছাড়াও তিনি যুদ্ধরত মার্কিন সেনা সদস্যদের দেখাশোনা,[52] যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে সুদৃঢ়করণ[53] এবং বাণিজ্যিক চুক্তিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের অনুকূলে আনার বিষয় নিয়েও বক্তব্য রেখেছিলেন।[54]
সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা উপলব্ধি করতে পারছে আসলেই কি হচ্ছে, ততদিন অব্দি মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে"। তার এই ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তেও সমালোচনা কুড়িয়েছিল। তার এই বক্তব্যে প্রতিবাদে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন,[55] ফরাসী প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস্,[56] সৌদি রাজপুত্র আল-ওয়ালিদ বিন তালাল[57] এবং কানাডার বিদেশ মন্ত্রী স্টিফেনি ডিয়ন[58] এবং পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির সভাপতি রেইন্স প্রিবাস, রিপাবলিকান হাউস স্পিকার পল রায়ান, রিপাবলিকান সিনেট ম্যাজোরিটি নেতা মিচ ম্যাককোনেল প্রমুখ আরো অন্যান্য নেতারা নিন্দা জানিয়েছিল।[59] যুক্তরাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি পেটিশ্যানের আয়োজন করা হয় যেখানে ৫,৪০,০০০ মানুষ সেখানে স্বাক্ষর করেন। খোদ ট্রাম্পের দল রিপাবলিক পার্টির অনেক সদস্যরা এই বলে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিল যে, মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবনা রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল মূল্যবোধ, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সু-প্রাচীন অভিবাসী ঐতিহ্য নীতির পরিপন্থী। ট্রাম্পের সমালোচকরা তার বিরোধিতা করে কিছু জিনিস নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, তার প্রস্তাবনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম জোটভূক্ত দেশগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং তার এই বক্তব্য বরং আইসিসকে সহায়তা করতে পারে মুসলিম বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অপপ্রচার চালানোর জন্য।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকেই ট্রাম্প ইসরায়েলে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন।[60][61] ইসরায়েলেও তার কিছু জমি রয়েছে।[62] ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও উন্মোচন করেছিলেন যেখানে ট্রাম্পকে ২০১৩ সালে ইসরায়েলের নির্বাচনে বেনজামিন নেতানিয়াহুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছিল।[63][64] কিন্তু মুসলিমদের নিয়ে ট্রাম্পের ঐ বিতর্কিত বক্তব্যে নেতানিয়াহুসহ বহু ইহুদি নেতাও এর বিরোধিতা করেছিলেন।[65] ৮৪ জন নেসেট (ইসরায়েলের পার্লামেন্ট)সদস্য যাদের অনেকেরই মুসলিম ছিল, তারা একটি পেটিশ্যানে স্বাক্ষর করে নেতানিয়াহুকে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল।[66] নেতানিয়াহুর উপর রাজনৈতিক চাপ বেড়ে যাবে ভেবে পরবর্তীতে ট্রাম্প নিজেই ইসরায়েলে ভ্রমণ এবং নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ মুলতবি করেন।[65]
ফক্স নিউজের এক বিতর্কানুষ্ঠানে যখন ট্রাম্পকে তার মুসলিম প্রবেশ বিরোধী প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় (আনুমানিক ১,০০,০০০ মুসলিম অভিবাসী প্রতি বছর প্রবেশানুমতি দেওয়া হয়),[67] ট্রাম্প তখন উল্লেখ করেন, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের অবনতির জন্য তাদের মুসলিম অভিবাসন দায়ী। ট্রাম্প আরো বলেছেন যে, ব্রাসেলসে বাস করা "নরকে" বাস করার সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের এই ভয়ানক অবস্থার জন্য মুসলিম অভিবাসন অন্যতম কারণ।[68][69]
মুসলিম অভিবাসনের উপর ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ই-পেটিশ্যান ওয়েবসাইটে "ব্লক ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফ্রম ইউকে এন্ট্রি" নামের একটি পেটিশ্যান খোলা হয়।[70] ডিসেম্বর ১১ সকাল ৫ টার মধ্যেই স্বাক্ষর সংখ্যার সর্বোমোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫,০০,০০০ এর চেয়েও বেশি।[71]
জানুয়ারির ১৮ তারিখে যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে ট্রাম্পের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় কি না এ নিয়ে বিতর্কের আয়োজন করা হয়[72] কিন্তু সেই বিতর্ক ফলপ্রদ হয় নি কেননা যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের আইন পাস করার কোনরূপ ক্ষমতা নেই। তবে তিন ঘণ্টার চেয়েও বেশি চলা এই বিতর্কে সংসদের উভয় পক্ষের সদস্যদের ট্রাম্পকে "পাগল" এবং "জঘন্য" হিসেবে আখ্যায়িত করতে শোনা যায়।[73]
আমেরিকার কংগ্রেসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়ে দুইটি প্রস্তাব জমা পড়েছে। ২০ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষেই আগে যাতে তাঁকে হটানো যায়, তার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন ডেমোক্র্যাট সেনেটররা। প্রথমত, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর আওতায় ক্যাবিনেটের কাছে যাতে এই প্রস্তাব তোলেন এবং ভোটাভুটির মাধ্যমে ট্রাম্পকে সরাতে উদ্যোগী হন, তার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। [74]
মার্কিন ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি দুইবার অভিশংসিত হন।[75] ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি-কে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার ফোনালাপ ফাঁস হলে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি প্রথমবার ২৩০-১৯৭ ভোটে অভিশংসিত হন। সে সময় রিপাবলিকান পার্টির কোন আইনপ্রণেতা তাকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেননি। বরঞ্চ ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতা জেফ ভ্যান ড্রু (যিনি পরবর্তীতে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হন), জ্যারেড গোল্ডেন ও কলিন পিটারসেন এর বিরোধিতা করেন। তবে সিনেটর মিট রমনি তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। তবে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় বার ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা করলে অভিশংসন প্রস্তাবের উপর ভোট আয়োজিত হয়। ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট (২৩২-১৯৭) দেন। এরা হলেন- জন কাটকো, টম রাইস, পিটার মেহিয়ার, ফ্রেড আপটন, লিজ চেনি (সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ডিক চেনির মেয়ে ও তৃতীয় শীর্ষ রিপাবলিকান প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য), ডেভিড ভালাদাও, অ্যাডাম কিনজিঙ্গার, অ্যান্থনি গঞ্জালেস, ড্যান নিউহাউস ও জাইমে হেরেরা বিউটলার। কোনো ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতাই এর বিরোধিতা করেননি। [76]
ট্রাম্পের রাজনৈতিক দলীয় সদস্যপদ বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে তিনি রিপাবলিকান পার্টির সদস্য ছিলেন, পরবর্তী ১৯৯৯ সালে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের রিফর্ম পার্টির সদস্য হন, ২০০১ সালে ডেমোক্র্যাট[77] ২০০৯ সালে রিপাবলিকান, ২০১১ সালে স্বতন্ত্র এবং ২০১২ সালে পুনরায় রিপাবলিকান হন।[78] ১৯৮৭ সালে ট্রাম্প তার পররাষ্ট্র নীতি এবং ফেডারেল বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার বিষয়ে মতামত প্রকাশ করে তিনটি প্রধান পত্রিকায় পুরো পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন দেন।[79][80] তিনি স্থানীয় আসনের জন্য প্রার্থী হতে অস্বীকার করেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে লড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন।[79] ১৯৮৮ সালে তিনি লি অ্যাটওয়াটারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের সহ-প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। বুশ এই অনুরোধকে "অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য" বলে মন্তব্য করেন।
২০০০ সালে ট্রাম্প, ক্যালিফোর্নিয়া ও মিশিগান প্রাইমারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০০০-এ প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান।[81][82][83]
২০১১ সালে ট্রাম্প, ২০১২ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে বিবেচনা করেন।[84][85] মে ২০১১-তে তিনি ঘোষণা করেন যে তিনি প্রার্থী হবেন না।[86] এবং ফেব্রুয়ারি ২০১২-তে মিট রোমনিকে সমর্থন দেন। তখন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষা সাধারণত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি।[87][88]
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৬ জুন ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল পূর্বে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান-এর ব্যবহৃত "Make America Great Again" স্লোগানটি।[89] তিনি তার প্রচারণার জন্য প্রতি সপ্তাহে ২ মিলিয়ন ডলার খরচ করার ঘোষণা দেন।[90] তিনি তার সহ-প্রার্থী হিসেবে মাইক পেন্স-কে বেছে নেন এবং তা টুইটার-এ ঘোষণা করেন।[91] তার প্রচারণার সময় রোলিং স্টোনস ব্যান্ডের কিছু গান ব্যবহার করেন, যা ব্যান্ডের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।[92] প্রার্থীতার সময় তার সম্পদ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে অস্বীকার করেন। পরে তিনি জানান যে তার সম্পদ ১০ বিলিয়ন ডলার।[93] অতীতে তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন-এর সাথে বিতর্কে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি ফেডারেল সরকারের কাছে ২০ বছর কর দেননি। এরপর তিনি ক্লিনটনকে দোষারোপ করেন যে তিনি তার সেনেটর অবস্থানে আইন পরিবর্তন করেননি কেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি মুসলমান এবং অভিবাসী বিরোধী ভাষা ব্যবহার করেন।[94][95][96] এই কারণে তিনি রাজনীতি, শিল্প, ক্রীড়া, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা সমালোচিত হন।[97] তিনি মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার ব্যয় মেক্সিকোকে বহন করার কথা বলেন। মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, "তারা দেশটিতে মাদক, অপরাধ নিয়ে আসে, তারা ধর্ষক।"[98] তার অভিবাসী বিরোধী মন্তব্য ক্যাথলিক চার্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস-কেও প্রভাবিত করে, পোপ তাকে বলেন, "যে ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রাচীর নির্মাণের কথা ভাবে, সে খ্রিস্টান হতে পারে না।"[99] ক্যালিফোর্নিয়া-তে এক মুসলমান যুবক ছয়জনকে আহত করার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন যে মুসলমানরা আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করে। এরপর তিনি বলেন যে পর্যটক বা অভিবাসী হিসেবে আসতে ইচ্ছুক মুসলমানদের অস্থায়ীভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা উচিত।[100] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলো পর্যবেক্ষণের অধীনে রাখার এবং মুসলমানদের পুলিশ দ্বারা জাতিগতভাবে প্রোফাইল করার প্রস্তাব দেন।[101] তিনি সিরিয়ান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন।[102] তিনি আইএসআইএসকে "নরকে পাঠানোর" প্রতিশ্রুতি দেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের এই সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে তার মতো কঠোর হতে অক্ষম বলে উল্লেখ করেন। তিনি সন্ত্রাসীদের তেল সংযোগ কেটে দিয়ে তাদের দুর্বল করার প্রতিশ্রুতি দেন।[103] আগস্ট মাসে ফ্লোরিডায় তার দলের একটি সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তিনি ওবামাকে আইএসআইএসের প্রতিষ্ঠাতা এবং ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বলে অভিযুক্ত করেন।[104] ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে, তার শক্তি-ভিত্তিক শান্তির তত্ত্বকে র্যাডিক্যাল ইসলামপন্থী আইএসআইএস, পারমাণবিক হুমকি ইরান এবং সাম্যবাদী চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহারের কারণে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।[105]
ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী মন্তব্য শুধুমাত্র মুসলমানদের লক্ষ্য করে ছিল না, বরং যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ১১ মিলিয়ন লোকের প্রতিও ছিল। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই লোকদের বহিষ্কারের প্রস্তাব দেন, যা তাকে বিদেশি বিরোধীতা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় খরচ সম্পর্কে সমালোচনার সম্মুখীন করে।[106] তিনি অভিবাসীদের জন্মগত নাগরিকত্ব সম্পর্কেও বিরোধিতা করেন।[107] তিনি রাশিয়া এবং ভ্লাদিমির পুতিন-এর সাথে ওবামা আমলের চেয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার দাবি করেন।[108] যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেন।[109]
ট্রাম্প জীবনে তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[110] তার ব্যক্তিগতজীবন ব্যাপকভাবে মিডিয়া কাভারেজ অর্জন করেছিল।[111]
ট্রাম্প মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে এপ্রিল ৭, ১৯৭৭ সালে নিউ ইয়র্ক শহরের মার্বেল কলেজিয়েট চার্চে বিয়ে করেন।[112] তাদের তিন সন্তান: ডোনাল্ড ট্রাম্প, জুনিয়র (জন্ম: ডিসেম্বর ৩১, ১৯৭৭) এবং এরিক ট্রাম্প (জন্ম: জানুয়ারী ৬, ১৯৮৪) এবং কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প (জন্ম: অক্টোবর ৩০, ১৯৮১) রয়েছে। ট্রাম্পের স্ত্রী ইভানা ১৯৮৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।[113] তার স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প ১৯৮৯ সালে স্পাই ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে "দ্য ট্রাম্প" হিসেবে সম্বোধন করার পর থেকেই ট্রাম্পের এই নামটি ব্যাপকভাবে মিডিয়া জগতে আলোড়ন ফেলে।[114] ১৯৯০ এর প্রথম দিকে ইভানার সাথে ট্রাম্পের বৈবাহিক সম্পর্ক সামান্য উত্থান-পতন দেখা দেয় কেননা সেই সময় ট্রাম্প অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল।[115] শেষে ১৯৯১ সালে ইভানা আর ট্রাম্পের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।[116]
ট্রাম্প আর অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস্ অক্টোবর ১৩, ১৯৯৩ সালে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয়।[117] এর দুই মাস পরে ডিসেম্বর ২০, ১৯৯৩ সালে তারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ১৯৯৭ সালের মে মাসে তারা আলাদা হয়ে যায় এবং ১৯৯৯ সালের জুন মাসে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।[118]
ট্রাম্প ১৯৯০ এর মাঝামাঝি সময়ে মডেল কারা ইয়ঙ্গের সাথেও প্রণয়ে জড়িয়ে পরেন।[119] এছাড়া রাজকুমারী ডায়ানার প্রতিও ট্রাম্পের অনুরক্তি ছিল। ট্রাম্প ১৯৯৭ সালে তার বই "দ্য আর্ট অব কামব্যাক"-এ লিখেছিলেন, "আমার শুধু একটি অনুতাপই রয়েছে যে আমি কখনও ডায়ানা স্পেন্সারকে প্রণয় প্রার্থনা করার সুযোগ পায় নি"। তিনি আরও বলেন, "তাঁর (ডায়ানা) সাথে আমার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ হয়েছিল... তিনি একজন প্রকৃত রাজকুমারী- একজন স্বপ্ন বালিকা (ড্রিম ল্যাডি)"[120]
ট্রাম্প ১৯৯৮ সালে স্লোভেনিয়ান-বংশোদ্ভুত মডেল মেলানিয়া নসের সাথে প্রণয় সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন[121] এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারীর ২২ তারিখে ফ্লোরিডার পাম বিচ দ্বীপে বেথেসডা-বাই-দ্য-সি এপিসকোপাল চার্চে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[122] ২০০৬ সালে ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন[121] এবং একই বছর ২০০৬ সালে মিলেনিয়া এবং ট্রাম্প, ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।[123]
ট্রাম্পের সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ জন হলো তার পুত্র ডোনাল্ড জুনিয়রের (কাই ম্যাডিসন, ডোনাল্ড জন ৩য়, ট্রিস্টান মিলস, স্পেন্সার ফ্রেডেরিক এবং ক্লো সোফিয়া)[124][125][126] এবং বাকি দু'জন হলো তার কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্পের (অ্যারাবেলা রোজ এবং জোসেফ ফ্রেডেরিক)।[127][128]
ট্রাম্প হলেন একজন প্রেসবিট্যারিয়ান।[129] ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ৭০০ ক্লাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, "আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন প্রেসবিট্যারিয়ান। এবং অনেক বছর ধরে গির্জার সাথে আমার একটি ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি ধর্ম একটি বিস্ময়কর জিনিস। আমি মনে করি আমার ধর্ম অপরূপ"।[130] নির্বাচনী প্রচারকার্যের ডোনাল্ড তার শ্রোতাবৃন্দদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তার বই "দ্য আর্ট অব দ্য ডিল" হলো তার দ্বিতীয় পছন্দের গ্রন্থ এবং তিনি আরো বলেন, "তোমরা কী জানো আমার প্রথম পছন্দের বই কোনটি? বাইবেল! কোন কিছুই বাইবেলের সমতুল্য নই"।[131]
ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, হলি কম্যুনিয়নে অংশগ্রহণ করার সময় তিনি ঈশ্বরের কাছে তার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন নি। তিনি আরো বলেন, "আমি মনে করি.. আমি যদি কোন ভুল করি, আমি চেষ্টা করবো সেই ভুল শোধরানোর জন্য। আমার ভুল সংশোধনের জন্য আমি কখনও ঈশ্বরের শরণাপন্ন হই না"।[132]
ট্রাম্পের সাথে টনি পারকিন্স এবং রালফ্ রিডের মত বহু ইভাঞ্জেলিক্যাল এবং খ্রীষ্টান নেতার সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কির যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদে প্রচারের সময় তিনি গ্রীক অর্থোডোক্স পাদ্রী ইমান্যুয়েল লেমেলসনের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন।[133]
কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস দাবি করেছেন যে, অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্পের মতাদর্শ খ্রীষ্টীয় শিক্ষার পরিপন্থী:[134] "একজন ব্যক্তি যে সম্পর্কের সেতু নির্মাণের পরিবর্তে শুধু বিভেদের দেওয়াল নির্মাণের কথা চিন্তা করে, সে কখনও সত্যিকারের খ্রীষ্টান হতে পারে না। এটি গসপেল পরিপন্থী"। তাকে নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সমালোচনাকে ট্রাম্প "মর্যাদাহানিকর" হিসেবে উল্লেখ করে আরো বলেছেন যে, মেক্সিকান সরকার তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পোপকে ব্যবহার করছেন।[135] ট্রাম্প আরো বলেন, "কারণ তারা (মেক্সিকান সরকার) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শেষ করে দেওয়ার পন্থা অবিরত রাখতে চায়"।[136] ট্রাম্প আরো বলেন যে, যদি কখনও আইসিস ভ্যাটিকান আক্রমণ করে তবে পোপ এই বলে তার অনুতাপ প্রকাশ করবেন যে যদি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রার্থনা করতাম, তবে এই ধরনের ঘটনা কখনও হতো না।[136]
ইহুদি-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সাথেও ট্রাম্পের সু-সম্পর্ক রয়েছে।[137] ২০১৫ সালে একটি ইহুদি দৈনিক পত্রিকা অ্যালজেমেইনার জার্নালের এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে "অ্যালজেমেইনার লিবার্টি অ্যাওয়ার্ড" পুরস্কার গ্রহণকালে ট্রাম্প বলেন, "শুধু ইহুদি নাতি-নাতনিই নয়, আমার ইহুদি কন্যাও রয়েছে (ইভাঙ্কা তাঁর স্বামী জ্যারেড কুশনারের সাথে বিয়ের পূর্বে ইহুদি ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন) এবং আমি খুবই গর্বিত এটি নিয়ে... তাঁর (ইভাঙ্কার) ইহুদি হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু তবুও আমি খুশি যে সে ইহুদি হয়েছে"।[138]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.