প্রাগ
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রাগ (/prɑːɡ/PRAHG, চেক: প্রাহা, [praɦa], জার্মান: Prag, উচ্চারণঃ [pʁaːk], ল্যাটিন: Praga) চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৩তম বৃহত্তম শহর। এছাড়াও বোহেমিয়ার ঐতিহাসিক রাজধানী। ভুলটাভা (Vltava/ˈvʊltəvə, ˈvʌl-/ VU(U)L-tə-və) নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরে ১.৩ মিলিয়ন মানুষের বাস, যখন তার নগর জোনগুলোতে প্রায় ২.৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাস বলে অনুমান করা হয়। শহরে নাতিশীতোষ্ণ মহাসাগরীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে গ্রীষ্মকাল অপেক্ষাকৃত উষ্ণ এবং শীতকাল অপেক্ষাকৃত শীতল।
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
প্রাগ Praha (চেক) | |
---|---|
Capital city | |
Panorama with Prague Castle National Theatre Pankrác district Old Town Square Malá Strana | |
স্থানাঙ্ক: ৫০°০৫′ উত্তর ১৪°২৫′ পূর্ব | |
দেশ | চেক রিপাবলিক |
প্রতিষ্ঠিত | আনু. ৮৮৫ |
সরকার | |
• মেয়র | Bohuslav Svoboda (ওডইএস) |
আয়তন[1] | |
• Capital city | ৪৯৬ বর্গকিমি (১৯২ বর্গমাইল) |
সর্বোচ্চ উচ্চতা | ৩৯৯ মিটার (১,৩০৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১-০৯-৩০)[2][3] | |
• Capital city | ১২,৬২,১০৬ |
• জনঘনত্ব | ২,৫০০/বর্গকিমি (৬,৬০০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ২৩,০০,০০০ |
সময় অঞ্চল | CET (ইউটিসি+১:০০) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | CEST (ইউটিসি+২:০০) |
ডাক সূচক সংখ্যা | ১xx xx |
NUTS code | CZ01 |
GDP/capita (PPP) | € 42,800(PPS) (2007)[4] |
ওয়েবসাইট | praha.eu |
Statistics statnisprava.cz |
প্রাগ মধ্য ইউরোপের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র, এক সমৃদ্ধ ইতিহাস যাকে পূর্ণতা দিয়েছে। রোমানেস্ক (Romanesque) স্থাপত্য যুগে প্রাগ শহর প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং গথিক, রেনেসাঁ ও বারোক স্থাপত্য যুগে এর বিকাশ ঘটে। প্রাগ বোহেমিয়া রাজ্যের রাজধানী এবং কয়েকজন পবিত্র রোমান সম্রাটের বাসস্থান ছিল। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাজা চতুর্থ চার্লস (শা. ১৩৪৬-১৩৭৮ খ্রি)। এটি হ্যাব্সবার্গ রাজ্যের এবং অস্ট্রো-হাংগেরীয় সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। দুই বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর কমিউনিস্ট আমলের মধ্যবর্তীকালে চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী হিসাবে বোহেমীয় ও প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার, ত্রিশবর্ষীয় যুদ্ধ এবং বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে এটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রাগ কিছুসংখ্যক বিখ্যাত সাংস্কৃতিক আকর্ষণের কেন্দ্র, যাদের অনেকগুলো বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের সহিংসতা ও ধ্বংসের পরেও টিকে রয়েছিল।
প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে 'প্রাগ ক্যাসল' (প্রাগ দুর্গ), চার্লস ব্রিজ, (প্রাগ জ্যোতির্বিদ্যা ঘড়িযুক্ত) ওল্ড টাউন স্কয়ার, ইহুদি কোয়ার্টার, পেট্রিন পাহাড় (Petřín Hills) ও দুর্গ (vyšehrad, উচ্চারণঃ ভিশেরাদ)।
১৯৯২ সাল থেকে প্রাগের বিস্তীর্ণ ঐতিহাসিক কেন্দ্র ইউনেস্কোর 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শহরটিতে দশটির অধিক বড় বড় জাদুঘর, অসংখ্য নাট্যশালা, গ্যালারি, সিনেমা এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।
একটি সম্প্রসারিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা শহরটিকে সংযুক্ত করেছে। এখানে বহু সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় আছে। প্রাগের 'চার্লস ইউনিভার্সিটি' মধ্য ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। গ্লোবাল এন্ড ওয়ার্ল্ড সিটিজ রিসার্চ নেটওয়ার্ক (Global and World Cities (GaWC) Research Network) এর গবেষণা অনুযায়ী প্রাগ আলফা-গ্লোবাল সিটি (Alpha- global city) হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ। ২০১৯ সালে মারসার (Mercer) কর্তৃক শহরটি পৃথিবীর ৬৯তম সর্বাধিক বাসযোগ্য শহরের মর্যাদা লাভ করে। একই বছর পিকসা ইন্ডেক্স (PICSA Index) প্রাগকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য ১৩তম শহরের স্থান দেয়। শহরটির সমৃদ্ধ ইতিহাস তাকে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী শহরটিতে প্রতি বছর ৮.৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক দর্শনার্থী ভ্রমণে আসে। ২০১৭ সালে প্রাগ লন্ডন, প্যারিস, রোম, ইস্তানবুলের পর সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীগ্রহণকারী ৫ম ইউরোপীয় শহর হিসাবে তালিকাবদ্ধ হয়।
উৎস ও নামসমূহ
চেক নাম Praha এসেছে প্রাচীন স্ল্যাভিক শব্দ práh থেকে যার অর্থ 'হাঁটু জলের নদী' অথবা 'সরু খরস্রোতা নদী'। 'ভুলটাবা' নদী যেখানে অগভীর বা সরু খরস্রোত ধারায় পরিণত হয়েছিল, প্রাগ শহরটি তার নিকটে গড়ে উঠেছিল বলেই হয়তো এ নাম। ওয়ারস'র (Warsaw) প্রাগা জেলার (Praga district) সাথেও প্রাগ শহরের নামকরণের সংযোগ খোঁজা হয়। আরেকটি মত হলো, চেক শব্দ práh থেকে নামটির উৎপত্তি, , যার অর্থ চৌকাঠ, দোরগোড়া, প্রবেশপথ। প্রাগ নামের উৎসের সঙ্গে একটি কিংবদন্তির সংযোগও পাওয়া যায়। এ কিংবদন্তিতে লেবুশা নামে এক নারী ভবিষ্যদ্বক্তার উপস্থিতি রয়েছে, যিনি ছিলেন প্রেমিস্লিড রাজবংশের পৌরাণিক প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী। কথিত আছে যে, ওই রানি বা নারী ভবিষ্যদ্বক্তা এমন স্থানে একটি নগর তৈরি করার আদেশ করেন, যেখানে একজন লোককে ঘরের চৌকাঠ (práh) চাঁছতে দেখা যাবে। চেক শব্দ 'প্রাহ্' এভাবেই হয়তো নদীর অগভীর সরু অংশকে ইংগিত করছে, যার কিনারা থেকে হেঁটে ওপারে যাওয়া যায়--একইভাবে যা দুর্গের চৌকাঠও বোঝাচ্ছে।
প্রাহা শব্দটির উৎপত্তি na prazě থেকে হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হয়, যার অর্থ মসৃণ পাথরের পাহাড়ঢাল। এ পাহাড়ের ওপরই মূল দুর্গ (Prague Castle) নির্মিত হয়েছিল। প্রাগ দুর্গ (Prague Castle) বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির অফিস ভবন। একসময় এ দুর্গের চারপাশ ঘিরে বন ছিল। এ বনে ঢাকা নয়টি পাহাড় ছিল ভবিষ্যৎ নগরের ভিত্তি, যে নগর পুরনো শহর (Old Town) নামে পরিচিত। ভুলটাবা নদীর ডান বা পূর্ব পাশে এর অবস্থান। নদীর পশ্চিম পাশে পরে গড়ে ওঠে ছোট শহর (Lesser Town), যা দুর্গের নিচে অবস্থিত।
প্রাগ শহরের নামের ইংরেজি বানান ফরাসি ভাষা থেকে গৃহীত। উনিশ শতকে ও বিশ শতকের প্রথম দিকে ইংরেজি vague শব্দের সঙ্গে মিল রেখে Prague শহরের নাম উচ্চারিত হতো 'প্রেগ'। ১৯৬৯ সালে লেডি ডায়না কুপার বিবিসি রেডিও ৪ (BBC Radio 4) এর ডেজার্ট আইল্যান্ড ডিস্কস (Desert Island Discs) অনুষ্ঠানে নামটি এভাবেই উচ্চারণ করতেন। Longfellow (1839) তাঁর The Beleaguered City শীর্ষক কবিতায় vague শব্দের সঙ্গে মিল দিয়ে Prague শব্দের ব্যবহার করেন। Edward Lear (1846) তাঁর There was an Old Lady of Prague নামক লিমারিকেও এরূপ উচ্চারণে শব্দটির ব্যবহার করেন।
১৯ শতকের গণিতজ্ঞ Bernard Bolzano এর হিসাবের ওপর ভিত্তি করে প্রাগকে 'শত সূক্ষাগ্র মিনারের শহর' (City of a Hundred Spires) বলা হয়। প্রাগ তথ্য সেবা'র (Prague Information Service) হিসাবমতে এ সংখ্যা এখন ৫০০।
ইতিহাস
হাজার বছরের অস্তিত্বকালে প্রাগ উত্তরে 'প্রাগ দুর্গ' (Prague Castle) থেকে দক্ষিণে 'ভিসেরাড দুর্গ' পর্যন্ত বিস্তৃত জনবসতিতে পরিণত হয়ে একটি আধুনিক ইউরোপীয় রাষ্ট্রের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।
আদি ইতিহাস
এ অঞ্চলে বসতি আরম্ভ হয় প্রাচীন পাথরের যুগে। ইতিহাসবিদ ডেভিড সলোমন গ্যাঞ্জ সিরিয়াকাস স্প্যানজেনবার্গের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছিলেন যে, শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৬ সালে প্রাচীন রাজা বঈয়া কর্তৃক বয়হ্যাম নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম বা ৪র্থ শতকের দিকে এ অঞ্চলে একটি কেলটিক উপজাতির আবির্ভাব ঘটে। পরে তাদের হাতে জেভিস্টের ওপিডামের মতো বিভিন্ন বসতি গড়ে ওঠে। জেভিস্ট বর্তমান প্রাগের একটি উপশহর। এ কেল্টিক উপজাতির নামে-যাদের বইই জনগোষ্ঠি বলা হতো-বোহেমিয়া অঞ্চলের নামকরণ হয়। খ্রিস্টপূর্ব শেষ শতকে জার্মান উপজাতিরা (মার্কোম্যানি, কোয়াদি, লমবার্ডজ এবং সম্ভবত সোয়েবি) বাল্টিকদের বিতাড়িত করে। এর ফলে দক্ষিণ প্রাগের জেভিস্ট উপশহরে মার্কোম্যানি রাজার রাজ্য মরোবডুস স্থাপিত হয়। বর্তমান প্রাগ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে টলেমির আঁকা ২য় শতকের মানচিত্রে তার আশপাশেকাসুরগিস নামে এক জার্মানিক শহরের উল্লেখ করা হয়েছে।
খ্রিস্টীয় ৫ম শতকের শেষের দিকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর মহা অভিবাসনকালে (great Migration Period) জার্মানিক উপজাতিগুলো বোহেমিয়া থেকে পশ্চিম দিকে সরে যায়, এবং সম্ভবত ৬ষ্ঠ শতকে স্ল্যাভিক উপজাতিরা (ভেনেদি) মধ্য বোহেমিয়া অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। পরের তিন শতাব্দীতে, চেক উপজাতিরা এলাকায় বেশ কয়েকটি সুরক্ষিত বসতি তৈরি করেছিল, বিশেষ করে শারকা উপত্যকা, বুটোভিস এবং লেভি হারাদেক।
প্রাগ দুর্গ নামে যা পরিচিতি লাভ করে তার নির্মাণ শুরু হয়েছিল ৯ম শতাব্দী সমাপ্তির কাছাকাছি সময়ে, যা একটি সুরক্ষিত বসতিস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ বসতি ৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঐ স্থানে টিকে রয়েছিল। প্রাগ দুর্গের ভবন নির্মাণের কাজ প্রথম শুরু হয় খুব বেশি হলে ৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে। প্রাগের আরেকটি বিখ্যাত দুর্গ প্রেমিস্লিড দুর্গ ভিসেরাড নির্মিত হয়েছিল ১০ম শতাব্দীতে, প্রাগ দুর্গের প্রায় সত্তর বছর পরে। প্রাগ দুর্গ ক্যাথেড্রাল দ্বারা প্রভাবিত, যার নির্মাণ ১৩৪৪ সালে শুরু হয়, কিন্তু ২০ শতকের আগে শেষ হয়নি।
প্রাগ শহরের উৎপত্তি সম্পর্কিত কিংবদন্তিগুলো এর ভিত্তি স্থাপনের কৃতিত্ব আরোপ করে চেক ডাচেস ও ভবিষ্যদ্বক্তা লেবুশা ও তাঁর স্বামী প্রেমিসলের ওপর, যিনি প্রেমিস্লিড রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কিংবদন্তি বলে, লেবুশা ভুলটাবা নদী থেকে উচ্চে অবস্থিত একটি পাথুরে পাহাড়ের ওপর এসে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: "আমি একটি মহান শহর দেখছি যার মহিমা তারকাদের স্পর্শ করবে।" তিনি ওই স্থানে একটি প্রাসাদ এবং প্রাহা নামে একটি শহর নির্মাণের আদেশ দেন।
অঞ্চলটি ডিউকদের এবং পরে বোহেমীয় রাজাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। বোহেমীয় ডিউক ২য় বোলেস্লস দ্য পায়াস এর অধীনে অঞ্চলটি ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বিশপের এখতিয়ারভুক্ত হয়। ১৩৪৪ সালে প্রাগ আর্চ বিশপের এখতিয়ারাধীন না হওয়া পর্যন্ত তা মেইঞ্জ আর্চ বিশপ এর এখতিয়ারাধীন অঞ্চল ছিল।
প্রাগ ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে সারা ইউরোপের ব্যবসায়ীরা বসতি গড়ে তুলত। এদের মধ্যে অনেক ইহুদি ছিল, যাদের ৯৬৫ সালে হিস্পানো ইহুদি ব্যবসায়ী বলে পুনর্নামকরণ করা হয়েছিল। পর্যটক আব্রাহাম বেন জ্যাকবও এদের মধ্যে ছিলেন। ১২৭০ সালের ওল্ড নিউ সিনাগগ (Old New Synagogue) এখনও এ শহরে বিদ্যমান। প্রাগে এককালে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীতদাস বাজার ছিল। ভুলটাবা নদীর অগভীর স্থানে রাজা ১ম ভ্লাদিস্লস ১১৭০ সালে ১ম সেতু নির্মাণ করিয়েছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী জুডিথ অব থুরিংগিয়া-র সম্মানে এর নামকরণ করেছিলেন জুডিথ সেতু। ১৩৪২ সালে এক বন্যায় সেতুটি ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু এর কয়েকটি ভিত্তিপ্রস্তর নদীর মধ্যে থেকে যায়। সেতুটি পুনর্নির্মাণ করে 'চার্লস ব্রিজ' নামকরণ করা হয়।
১২৫৭ সালে রাজা ২য় অটোকার এর অধীনে প্রাগের অপেক্ষাকৃত পুরনো এক গ্রামে 'মালে স্ত্রানা' (ছোট চত্বর) প্রতিষ্ঠিত হয় যা 'হ্রাচানি' (প্রাগ কাসল) অঞ্চল হয়ে ওঠে। এটা ছিল জার্মান জনগণের জেলা, যাদের 'ম্যাগডেবার্গ অধিকার' (Magdeburg Rights) অনুসারে স্বাধীনভাবে আইন পরিচালনার অধিকার ছিল। পুরানো শহর 'স্টারে মিয়েস্টো' (Staré Město) ভুলটাবা নদীর যে পাড়ে অবস্থিত, নতুন জেলাটি তার বিপরীত পাড়ে ছিল। এটি বরৌ (Borough /ˈbɝː.oʊ/) মর্যাদার অধিকারী ছিল, এবং এর সীমান্তে দেয়াল ও দুর্গের একটি সারি ছিল।
মধ্য যুগের শেষ ভাগ
প্রাগের সমৃদ্ধি ঘটেছিল ১৪শ শতকে পবিত্র রোম সম্রাট ৪র্থ চার্লস (শা. ১৩৪৬-১৩৭৮) এবং নতুন লুক্সেমবার্গ রাজবংশের বোহেমীয় রাজার শাসনামলে। বোহেমিয়ার রাজা এবং পবিত্র রোমান সম্রাট হিসাবে প্রাগকে একটি সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন, এবং আয়তনের দিক দিয়ে সে সময় এটি ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ছিল (রোম ও কনস্ট্যানটিনোপলের পরে)। রাজা চার্লস পুরানো শহর লাগোয়া নতুন শহর (চেক ভাষায়ঃ Nové Město, নভে মায়েস্টো) নির্মাণের আদেশ দেন এবং নিজেই এর নকশা তৈরি করেন। তাঁর শাসনকালের অল্প আগে বন্যায় বিধ্বস্ত জুডিথ ব্রিজের স্থলে চার্লস ব্রিজ তৈরি করা হয় পূর্ব পাড়ের জেলাগুলোকে মালে স্ত্রানা ও দুর্গ এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য। ১৩৫৭ সালের ৯ জুলাই সকাল ৫.৩১ মিনিটে রাজা ৪র্থ চার্লস ব্যক্তিগতভাবে চার্লস ব্রিজের ভিত্তি স্থাপন করেন। প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় কারণ প্যালিন্ডমিক সংখ্যা ১৩৫৭৯৯৭৫৩১ পুরানো শহর ব্রিজের ওপর খোদাই করা ছিল। রাজকীয় জ্যোতিষবিজ্ঞানী ও সংখ্যাবিজ্ঞানী ব্রিজ নির্মাণের শ্রেষ্ঠ প্রারম্ভিক সময় হিসেবে এটি পছন্দ করেছিলেন। ১৩৪৭ সালে তিনি চার্লস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা মধ্য ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি গথিক সেইন্ট ভিটাস ক্যাথেড্রাল এর নির্মাণ শুরু করেছিলেন প্রাগ দুর্গের সবচেয়ে বড় প্রাঙ্গণে সেখানকার রোমানেস্ক রটুন্ডার স্থলে। রোমানেস্ক রটুন্ডা হলো এক গম্বুজ বিশিষ্ট গোলাকার ভবন। ১৩৪৪ সালে ক্যাথেড্রালটি শুরু হলে প্রাগ আর্চবিশপরিকে (আর্চবিশপের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল) উন্নীত হয়।
এ শহরে একটি মিন্ট (ধাতব মুদ্রা উৎপাদনাগার) ছিল, এবং শহরটি জার্মান ও ইতালীয় ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। হস্তশিল্পীদের সমিতিগুলোর শক্তি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধির দরুন (অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেরা ছিন্নভিন্ন হতো) এবং গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে সামাজিক শৃঙ্খলা উত্তাল হয়ে ওঠে।
১৩৬০ এর দশকে দুর্ভিক্ষ চলাকালে মালে স্ত্রানা ও দুর্গ অঞ্চলের দক্ষিণে হাংগার ওয়াল নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মিত হয়। কথিত আছে, রাজা ৪র্থ চার্লস শ্রমিকদের ও তাদের পরিবারের কর্মসংস্থানের জন্যে ও তাদের খাদ্যাভাব দূর করার জন্যে এ দেয়ালটি নির্মাণের আদেশ দেন।
৪র্থ চার্লস ১৩৭৮ সালে মারা যান। তাঁর ছেলে রাজা ৪র্থ উয়েনচেস্লসের শাসনকালে (১৩৭৮-১৪১৯) কিছুটা সময় তীব্র বিশৃঙখলা ঘটে। ১৩৮৯ সালে ইস্টারের সময় প্রাগের পুরোহিত সমাজের সদস্যরা ঘোষণা করেন যে, ইহুদিরা যিশুখ্রিষ্টের শেষ নৈশভোজকে অপবিত্র করেছে, এবং পুরোহিতদের প্ররোচনায় উচ্ছৃঙ্খল জনতা ইহুদি এলাকায় লুটপাট, ভাংচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এতে প্রাগের প্রায় সব ইহুদি (৩০০০ জন) জনগণ নিহত হন।
জ্যান হাস নামক একজন ধর্মতাত্ত্বিক ও চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর প্রাগে ধর্ম প্রচার করেন। ১৪০২ সালে তিনি বেথলেহেম চ্যাপেলে সারমন দেয়া শুরু করেন। জন উইক্লিফের অনুপ্রেরণায় এসব সারমন দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জার আমূল সংস্কারের ওপর আলোকপাত করতো। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্যে অত্যধিক বিপজ্জনক হয়ে ওঠার কারণে হাসকে কাউন্সিল অব কনস্ট্যান্সে (বিশপদের সাধারণ সভা) ডেকে পাঠানো হয়, প্রচলিত ও প্রথগত ধর্মবিশ্বাস থেকে প্রবল বিচ্যুতির জন্যে তার বিচার হয় এবং ১৪১৫ সালে তাকে কন্সট্যান্সে খুঁটিতে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হয়।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.