Loading AI tools
নবম উসমানীয় সুলতান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রথম সেলিম (উসমানীয় তুর্কি:سليم اوّل বা সেলিম-ই-আউওয়াল, আধুনিক তুর্কি: Yavuz Sultan Selim বা ইয়াভুজ সুলতান সেলিম, ডাকনাম ইয়াভুজ (১০ অক্টোবর ১৪৬৫/১৪৬৬/১৪৭০ – ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০) ছিলেন প্রথম উসমানীয় খলিফা এবং নবম উসমানীয় সুলতান। ১৫১২ থেকে ১৫২০ সাল পর্যন্ত উসমানীয় সুলতান ছিলেন।[2]
প্রথম সেলিম سليم اوّل | |||||
---|---|---|---|---|---|
ইসলামের খলিফা আমিরুল মুমিনিন খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন উসমানীয় সুলতান ইয়াভুজ (ভয়ানক) | |||||
প্রথম উসমানীয় খলিফা | |||||
খিলাফত | ২২ জানুয়ারি ১৫১৭ – ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০ | ||||
পূর্বসূরি | তৃতীয় আল-মুতাওয়াক্কিল (আব্বাসীয় খলিফা) | ||||
উত্তরসূরি | প্রথম সুলাইমান | ||||
৯ম উসমানীয় সুলতান (বাদশাহ) | |||||
রাজত্বকাল | ২৪ এপ্রিল ১৫১২ - ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০ | ||||
পূর্বসূরি | দ্বিতীয় বায়েজিদ | ||||
উত্তরসূরি | প্রথম সুলাইমান | ||||
ত্রাবজোন সানজাকের গভর্নর | |||||
শাসনকাল | ১৪৯৪ - ১৫১১Hanefi Bostan, XV-XVI. Asırlarda Trabzon Sancağında Sosyal ve İktisadi Hayat, p. 67 | ||||
জন্ম | ১০ অক্টোবর ১৪৬৫/১৪৬৬/১৪৭০ আমাসিয়া | ||||
মৃত্যু | ২২ সেপ্টেম্বর ১৫২০ (বয়স ৪৯-৫৪) তেকিরদাগ, চোরলু | ||||
সমাধি | |||||
স্ত্রী | হাফসা সুলতান আয়শে হাতুন | ||||
বংশধর | প্রথম সুলাইমান শাহজাদা ওরহান শাহজাদা মুসা শাহজাদা করকুত হেতিজা সুলতান বেহান সুলতান শাহ সুলতান ফাতমা সুলতান হাফসা সুলতান শাহজাদা সুলতান গেভহেরহান সুলতান | ||||
| |||||
রাজবংশ | অটোমান | ||||
পিতা | দ্বিতীয় বায়েজীদ | ||||
মাতা | গুলবাহার হাতুন | ||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) | ||||
তুগরা |
সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য তার শাসনামল পরিচিত।১৫১৪ সালে মুসলিম সাম্রাজ্য শিয়া ফেতনা থেকে মুক্ত করার জন্য শিয়া সাফাভি ইসমাইল শাহকে পরাজিত করেন। তৎকালীন মিশরীয় মামুলোকেরা ইউরোপে খৃষ্টানদের সাথে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ও তৎকালীন সময়ে পর্তুগাল মক্কা-মদিনা ধ্বংসের হুমকি দিলে তারা তা প্রতিরোধ করতে অপারগ থাকায় সুলতান প্রথম সেলিম ১৫১৬ থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে উসমানীয়রা মিশরের মামলুক সালতানাত জয় করে নেয় এবং পর্তুগিজ নৌবাহিনীকে জেদ্দা উপকূলে প্রতিরোধে করে। মামলুকদের শাসন শেষ হলে তাদের অঞ্চলসমূহ লেভান্ট সিরিয়া, ফিলিস্তিনি, হেজাজ, তিহামাহ ও মিশর উসমানীয়দের অধিকারে আসে। তিনি ১৫১৭ সালে খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন উপাধি ধারণ করেন। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল জয় এবং একীভূত করার মাধ্যমে সেলিম মক্কা ও মদিনার রক্ষক ও খাদেম হয়ে উঠেন।
মিশরীয় মামুলুকদের কাছে আশ্রিত নামে মাত্র ক্ষমতা বিহীন আব্বাসীয় খলিফা কে বন্দি করে রাজধানী ইস্তাম্বুলের নিয়ে আসেন।আব্বাসীয় খিলাফত এর খলিফা সুলতান প্রথম সেলিম এর কাছে খেলাফত হস্তান্তর করে সুলতান প্রথম সেলিম মুসলিম বিশ্বের নতুন খলিফা মনোনীত হলে তৎকালীন শক্তিশালী এই উসমানীয় সাম্রাজ্য হয়ে ওঠে উসমানীয় খিলাফত। মুসলিম বিশ্ব এই প্রথম আরব কুরাইশ বংশের বাইরে অন্য তুর্কি জাতির খেলাফত প্রত্যক্ষ করে।
মধ্যপ্রাচ্যে সেলিমের রাজ্যবিস্তারের ফলে সাম্রাজ্যের সম্প্রাসরণ নীতিতে পরিবর্তন আসে। সেলিমের পূর্বে সাম্রাজ্য মূলত বলকান এবং এশিয়া মাইনরে কেন্দ্রীভূত ছিল।[3] ১৫২০ সালে তার মৃত্যুর সময় সাম্রাজ্য ৪০,০০,০০০ কিমি২ (১৫,০০,০০০ মা২) জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদের সন্তান শাহজাদা সেলিম ১৪৭০ সালে আমাসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সেলিমের মা গুলবাহার খাতুন ছিলেন মারাশের দুলকাদির বাইলিকের শাহজাদী।[4][5][6]
সেলিমের পিতা সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ তার পুত্র শাহজাদা আহমেদকে যুবরাজ মনোনীত করেছিলেন। সেলিম এতে অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ করেন। সেলিম তার পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হন এবং ১৫১২ সালে মসনদে বসেন। তার নির্দেশে ভাইদের হত্যা করা হয়েছিল।
১৪৯৪ সালে সেলিম প্রথম মেনিল গিরাইয়ের কন্যা আয়েশা হাফসা সুলতানকে বিয়ে করেন।
শাহ ইসমাইল পারস্য সাফাভি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে ইরানে সুন্নি মতাদর্শের পরিবর্তে দ্বাদশবাদি শিয়া মতাদর্শ রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। ইসমাইল ১৫১০ সাল নাগাদ ইরান, আজারবাইজান,[7] দক্ষিণ দাগেস্তান, মেসোপটেমিয়া, আর্মেনিয়া, খোরাসান, পূর্ব আনাতোলিয়াসহ বিভিন্ন স্থান জয় করেন।[8][9] ইসমাইল তার সুন্নি প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন এবং ১৫১১ সালে তিনি আনাতোলিয়ায় সংঘটিত শাহকুলু বিদ্রোহে মদদ দেন।
ইতিপূর্বে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত চিঠি চালাচালির পর উসমানীয় সাম্রাজ্যে শিয়া মতবাদের বিস্তারের কারণে সেলিম ১৫১৪ সালে সাফাভিদের উপর আক্রমণ করেন। ১৫১৪ সালে চালদিরানের যুদ্ধে সেলিমের কাছে ইসমাইল পরাজিত হন।[10] ইসমাইলের বাহিনী উত্তমরূপে প্রস্তুতি নিলেও উসমানীয়রা কামান, মাস্কেটের মত আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতার কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ৫ সেপ্টেম্বর সেলিম বিজয়ী হিসেবে রাজধানী তাবরিজে প্রবেশ করেন।[11]
মামলুকদের পরাজিত করে সেলিম মামলুক সালতানাতকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলে মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেভান্ট, হেজাজ, তিহামাহ উসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ হয়। ইতঃপূর্বে মামলুক শাসনের অধীনে থাকা মক্কা ও মদিনা উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মক্কা ও মদিনার শাসনভার লাভ করার পর সেলিম খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন উপাধি ধারণ করেন।[12][13]
মিশর এবং মক্কা ও মদিনা জয়ের পর সেলিম আব্বাসীয় খলিফা তৃতীয় আল-মুতাওয়াক্কিলের কাছ থেকে খলিফা পদ গ্রহণ করেন। ১২৬১ সালের পর থেকে আব্বাসীয় খলিফারা মিশরে অবস্থান করতেন এবং আনুষ্ঠানিক খলিফা ছিলেন।[14]
সেলিম ১৫২০ সালে ৫৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘকাল ঘোড়ায় চেপে অভিযানের ফলে সিরপেন্স নামক চামড়ার ইনফেকশনে তার মৃত্যু হয় এমনটা আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হলেও কিছু ইতিহাসবিদের মতে তিনি ক্যান্সার বা তার চিকিৎসকের দ্বারা বিষপ্রয়োগে মারা যান।[15] কিছু ইতিহাসবিদের মতে সেলিমের মৃত্যুর সময় সাম্রাজ্যে যে প্লেগ দেখা দিয়েছিল তিনি তাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।[16]
সেলিমের উপাধি ছিল মালিক উল-বারেইন, ওয়া খাকান উল-বাহরাইন, ওয়া কাসির উল-জাইশাইন, ওয়া খাদিমুল হারামাইন অর্থাৎ দুই ভূখন্ডের (ইউরোপ ও এশিয়া) বাদশাহ, দুই সমুদ্রের (ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগর) খাগান, দুই বাহিনীর বিজেতা (ইউরোপীয় ও সাফাভি সেনাবাহিনী), এবং দুই পবিত্র মসজিদের (মক্কা ও মদিনা) সেবক।
অনেক মতানুযায়ী সেলিম উগ্র মেজাজের ব্যক্তি ছিলেন। লর্ড কিনরোস তার রচিত উসমানীয় ইতিহাসে লিখেছেন যে সুলতান সেলিমের দরবারে প্রচুর সুযোগ ছিল এবং উচ্চপদস্থ অফিসে সবসময় অসংখ্য আবেদন জমা হত।
সেলিম কঠোর পরিশ্রমী এবং অন্যতম সফল ও সম্মানিত উসমানীয় সুলতান ছিলেন। স্বল্প সময়ের শাসনকালে তিনি ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছিলেন। অনেক ইতিহাসের মতে তিনি তার পুত্র সুলাইমানের অধীনে সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সমৃদ্ধির জন্য সাম্রাজ্যকে প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন।[17]
সেলিম তুর্কি ও ফার্সি ভাষার একজন কবি ছিলেন। মাহলাস সেলিমি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন।[17] একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন:
দুইজন সুফির জন্য একটি গালিচা যথেষ্ট, কিন্তু দুইজন বাদশাহর জন্য পৃথিবী যথেষ্ট বড় নয়।
লোদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেলিম মুঘল সম্রাট বাবরকে সহায়তা কামান ব্যবহারের জন্য গোলন্দাজ বিশারদ উস্তাদ আলি কুলি, ম্যাচলক রাইফেল বিশারদ মুস্তাফা রুমি এবং আরও অনেক উসমানীয় তুর্কিকে প্রেরণ করেছিলেন। প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে বাবর ইবরাহিম লোদির তুলনামূলক বৃহৎ বাহিনীকে পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম হন।তার এই সহায়তায় ভারতবর্ষে প্রথম কামান ব্যবহার করা হয়েছিল,এবং ভারত বড় মুসলিম মুঘল সম্রাজের সূচনা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.