শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
আতেন
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আতেন (নামান্তরে: আতোন, আতোনু, বা ইৎন (মিশরীয়: jtn, পুনর্নির্মিত রূপ: [ˈjaːtin]) ছিলেন প্রাচীন মিশরের অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগের ফ্যারাও আখেনাতেন (পূর্বনাম: চতুর্থ আমেনহোতেপ) প্রবর্তিত এক ধর্মবিশ্বাস আতেনবাদের কেন্দ্রবিন্দু। অষ্টাদশ রাজবংশের সঠিক তারিখ বিতর্কের বিষয়। তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, এই রাজবংশ খ্রিস্টপূর্ব ১৫৫০ থেকে ১২৯২ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কার।[১] এই অষ্টাদশ রাজবংশের মধ্যে আমারনা পর্যায় (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩৫৩-১৩৩৭ অব্দ) নামে যে সময়কালটিকে চিহ্নিত করা হয় তার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল আতেনের উপাসনা এবং তৎসহ আখেনাতেনের শাসনকার্য।[১]
আখেনাতেনের মৃত্যুর পর আতেনবাদ ও প্রাচীন মিশরের একমাত্র দেবতা হিসেবে আতেনের রাষ্ট্রীয় উপাসনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তার মৃত্যুর অনতিকালের মধ্যেই অষ্টাদশ রাজবংশে আখেনাতেনের উত্তরসূরি তুতানখামুন অন্যান্য দেবদেবীদের মন্দিরগুলির দরজা খুলে দেন এবং প্রধান সৌরদেবতা হিসেবে আমুনকে পুনঃমর্যাদা প্রদান করেন।[২]
Remove ads
নাম-ব্যুৎপত্তি

পুরনো রাজ্যের আমলে বিশেষ্য পদ হিসেবে আতেন শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় "চাকতি" অর্থে। সেই সময় যা কিছু চ্যাপ্টা ও বৃত্তাকার তা বোঝাতেই এই শব্দটি ব্যবহৃত হত এবং সূর্যকে বলা হত "দিনের চাকতি", যার মধ্যে রা অবস্থান করেন।[৩] সাদৃশ্যের দিক থেকে "রুপোর আতেন" বলতে কখনও কখনও চাঁদকে বোঝানো হত।[৪] আতেনের উচ্চ ও নিম্ন খোদাইচিত্রগুলিতে এটির একটি বক্রতল লক্ষিত হয়। তাই পরবর্তীকালের গবেষক হিউজ নিবলি মনে করেন যে, শব্দটির সঠিকতর অনুবাদ হতে পারে গোলাকার বস্তু, গোলক বা বর্তুল; ঠিক চাকতি নয়।[৫]
Remove ads
উৎস
আতেন ছিল সৌরচাকতি এবং আদিতে প্রথাগত মিশরীয় ধর্মের সূর্যদেবতা রা-এর একটি রূপবিশেষ। ফ্যারাও তৃতীয় আমেনহোতেপের আমলে আতেন পূজিত হতেন বটে, কিন্তু তার উত্তরসূরি আখেনাতেনের শাসনকালেই একমাত্র দেবতা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কাল্ট উপাসনার মর্যাদা লাভ করেন তিনি। যদিও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ফ্যারাও অন্যান্য মিশরীয় দেবদেবীদের রাষ্ট্রীয় মন্দিরগুলি বন্ধ করে দিলেও মিশরীয়রা নিজ গৃহে প্রথাগত দেবদেবীদের পূজা বন্ধ করে দেয়নি।[৬] আখেনাতেনের রাজত্বকালে বিভিন্ন মন্দিরে ও সমাধিসৌধে গ্রেট হিম টু দি আতেন ইত্যাদি যে লেখগুলি স্থাপিত হয়েছিল, তাতে আতেনকেই সৃষ্টিকর্তা, জীবনদাতা এবং জগতের আত্মাকে প্রতিপালনকারীর মর্যাদা প্রদান করা হয়েছিল।[৭] কোনও সৃষ্টিপুরাণে আতেনের নাম পাওয়া যায় না। তার কোনও পরিবারবর্গের কথাও জানা যায় না। তবে মৃতের বইতে তার কথা উল্লিখিত হয়েছে।
সৌরচাকতি আতেন এক দেবতা হিসেবে প্রথম উল্লিখিত হল দ্বাদশ রাজবংশের দ্য স্টোরি অফ সিনুহে-তে।[৮] এই গল্পে দেখা যায়, এক মৃত রাজ দেবতা হিসেবে স্বর্গে উন্নীত হচ্ছেন এবং "সৌরচাকতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে দিব্য দেহকে তার স্রষ্টার সঙ্গে সম্মিলিত করছেন"।[৯]
Remove ads
ধর্ম
সারাংশ
প্রসঙ্গ

তৃতীয় আমেনহোতেপের রাজত্বকালে সৌরদেবতা হিসেবে আতেনের পূজা বহুল প্রচার লাভ করেছিল। সেই সময় তাঁকে রা-এর মতো বাজপাখির মস্তক-বিশিষ্ট দেবতা হিসেবে চিত্রিত করা হত। তার রাজত্বকালে আতেনকে প্রাচীন মিশরীয় দেবমণ্ডলীতে সর্বাগ্রগণ্য সৃষ্টিকর্তা দেবতার মর্যাদা দেওয়া হলেও, রাষ্ট্রীয় উপাসনার মাধ্যমে একমাত্র দেবতা স্বীকৃতি আতেন তৃতীত আমেনহোতেপের উত্তরসূরি আখেনাতেনের রাজত্বকালের আগে পাননি।[১০] আখেনাতেনের পূর্বনাম ছিল চতুর্থ আমেনহোতেপ। তার রাজত্বকালে যখন আতেন মিশরীয় রাষ্ট্রধর্মে একমাত্র দেবতার মর্যাদা লাভ করেন, তখন সর্বোচ্চ দেবতার সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতা প্রতিফলিত করার জন্যও চতুর্থ আমেনহোতেপ নিজের নাম পরিবর্তিত করে রাখেন আখেনাতেন।[৮] আতেনের একক উপাসনাকেই আতেনবাদ নামে অভিহিত করা হয়। আখেনাতেন আখেতাতেন (অধুনা আমারনা, এল-আমারনা বা তেল এল-আমারনা) নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের রাজবংশীয় সরকারকে সেই শহরে স্থানান্তরিত করেন। এই অঞ্চল থেকে আতেনবাদের অনেক মৌল আদর্শ আবিষ্কৃত হয়েছে।
আতেনবাদে রাত্রিকে ভয়ের সময় মনে করা হত।[১১] কাজ করার আদর্শ সময় মনে করা হত যখন সূর্য অর্থাৎ আতেন উপস্থিত থাকেন। কথিত ছিল, আতেন সকল দেশ ও জাতি সৃষ্টি করেছেন এবং সকল জীবকে রক্ষা করেন। মিশরীয় লিপিতে উল্লিখিত হয়েছে যে, আতেন আকাশে (বৃষ্টি রূপে) নীল নদকে সৃষ্টি করেছেন সিরিয়ানদের জন্য।[১২] সৌরচাকতির রশ্মি শুধুমাত্র রাজপরিবারকেই জীবন প্রদান করেন। সেই কারণেই রাজপরিবার-বহির্ভূত ব্যক্তিবর্গ আখেনাতেন ও নেফারতিতির (পরে নেফারনেফারুয়াতেনের) থেকে জীবন লাভ করেন আতেনের প্রতি আনুগত্যের বিনিময়ে।[১৩] আতেন ও রাজার উদ্দেশ্যে রচিত স্তোত্রগুলির মতো লিপিগুলিতেও আতেনকে আখেনাতেনের মাধ্যমে জনগণের রক্ষণাবেক্ষণকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এর ফলে রাজপরিবার আতেনের পূজায় মধ্যস্থতাকারীর স্থান অর্জন করে।[১৪] একটি মাত্র ক্ষেত্রেই এমন উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে আতেন কথা বলছেন।[১৫]
আতেনের উদ্দেশ্যে রচিত একটি স্তোত্রে আতেনের মুদ্রাদোষ হিসেবে মানবজাতি ও পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শিত হয়েছে:
"নিজের সৃষ্টিকে দেখার জন্য আতেন নিচে পৃথিবীর দিকে ঝোঁকেন; একই উদ্দেশ্যে তিনি আকাশে নিজের স্থান গ্রহণ করেন; তিনি সকল জীবের ভরণপোষণের ভার স্বয়ং গ্রহণ করেন; তিনি তাদের সকলের জন্য উজ্জ্বল হন; তিনি তাদের দেন সূর্য ও প্রেরণ করেন বৃষ্টি। গর্ভস্থ শিশু ও ভূমিষ্ঠ ছোটো শিশুর যত্নের প্রয়োজন হয়; এবং আখেনাতেন তার দিব্য পিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেন তার নিজের জন্যই জীবগণকে 'তুলে নেওয়ার' জন্য, যাতে তারা তার পিতা আতেনের নিখুঁত অবস্থার অভিকাঙ্ক্ষী হতে পারে।"[১৬]
আখেনাতেন নিজেকে আতেনের পুত্র রূপে দাবি করতেন। এই দাবি তার অনেক পূর্বসূরির দৈব জন্ম এবং হোরাসের প্রতিরূপ রূপে তাঁদের পদমর্যাদার দাবির প্রতিচ্ছবি ছিল। আখেনাতেন নিজেকে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসেবে স্থাপন করেছিলেন, যিনি আতেনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এবং প্রধান দেবতা হিসেবে আতেনের আধিপত্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।[১৭] এই কারণেই গবেষকরা আলচনা করেন আতেনবাদকে একেশ্বরবাদী ধর্ম বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে কিনা, এবং সেক্ষেত্রে আতেনবাদই হল একেশ্বরবাদের প্রথম উদাহরণ।[৩]
আতেন ছিলেন একাধারে এক স্বতন্ত্র দেবতা এবং প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের এক সূর্যদেবতার প্রথাগত ধারণার অনুবর্তিত রূপ। রা প্রমুখ পূর্ববর্তী সৌরদেবতাদের শক্তি ও প্রতিনিধিত্বের ধারণার থেকে অনেক কিছু আতেনের মধ্যে অধিভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু রা ও তার অনেক সমসাময়িকের শক্তির উপর তাঁকে স্থাপন করা হয়েছিল। আতেন ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে জগতের জীবনদায়ী আলোকশক্তির প্রতীক এবং সেই সঙ্গে ধারণাটির এবং দেবী মাতের সঙ্গে মিশে আলোকের শক্তিরও উর্ধ্বে আতেনের এক দায়িত্ব স্থাপিত হয়েছিল।[১৬]
Remove ads
পূজা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আতেনের কাল্ট-কেন্দ্র ছিল আখেনাতেন প্রতিষ্ঠিত রাজধানী শহর আখেতাতেন।[১] যদিও থিবস ও হেলিওপোলিসেও আতেনের অন্যান্য কাল্ট স্থল পাওয়া গিয়েছে। আমারনা অঞ্চলটিকে রাজধানী শহর ও ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার অষ্টাদশ রাজবংশের রাজত্বকালে খুব কম সময়ের জন্যই করা হয়েছিল। কারণ, আখেনাতেনের মৃত্যুর অল্পকাল পরেই এই শহর পরিত্যক্ত হয়।[১৮] একটি সীমানা-ফলকে প্রাপ্ত অভিলিখন অনুযায়ী, আখেনাতেন শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আতেনকে পূজা করার ইচ্ছা নিয়ে এবং শহরটিকে তিনি দেবতার উদ্দেশ্যেই উৎসর্গিত করেছিলেন এবং রাজপরিবারের বাসিন্দাদের পূজায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করার জন্য জোর দিয়েছিলেন।[১৯] আতেনের কাল্ট পূজা সম্পর্কিত প্রধান প্রধান নীতিগুলি নথিবদ্ধ হয়েছিল সমসাময়িক কালের মন্দির ও সমাধির অভিলিখনে। প্রাচীন মিশরের প্রথাগত মন্দিরগুলি ছিল অন্তরিত স্থান। মন্দিরের গর্ভগৃহে যেতে পূজককে অনেকটা ভিতরে যেতে হত। সেই তুলনায় আতেনের মন্দিরগুলি ছিল উন্মুক্ত এবং সেগুলির ছাদ থাকত না, যাতে সূর্যের আলো ভিতরে পৌঁছাতে পারে।[৬] আতেনের কোনও মূর্তি পূজা করা হত না। কারণ মূর্তিপূজাকে পৌত্তলিকতা জ্ঞান করা হত।[২০] যদিও তার পরিবর্তে থাকত আখেনাতেন ও তার পরিবার আতেনের পূজা করছেন এবং আতেনের থেকে আঙ্খ অর্থাৎ জীবনের শ্বাস প্রাপ্ত হচ্ছেন, তার চিত্র। আমারনা যুগের আগের ও পরের পর্যায়গুলিকে তুলনা করলে দেখা যায় যে আরমানা যুগে পুরোহিতের ভূমিকা অনেক হ্রাস পেয়েছিল, কারণ ফল, ফুল, পিঠে উৎসর্গ অনেক কমে গিয়েছিল এবং ওর্যাকলগুলিরও আর প্রয়োজন ছিল না।[২১]

আতেনের পূজার ক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয় উপাসনাপদ্ধতির মধ্যে যে দেববিগ্রহ শুদ্ধিকরণ, তৈলাভিষেক ও বস্ত্রসজ্জার মতো নিত্যক্রিয়া সম্পাদিত হত, তা দেখা যেত না। তার পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচের বেদিতে ধূপ এবং মাংস, মদ্য ও ফলের মতো খাদ্যসামগ্রী উৎসর্গ করা হত।[২২] আখেনাতেনের খোদাইচিত্রগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ফ্যারাও রাজদণ্ড হাতে নিয়ে আতেনের উদ্দেশ্যে বলিদান প্রদান করছেন।[২৩] বজরা-শোভাযাত্রার পরিবর্তে রাজপরিবার উৎসবের দিনগুলিতে রথে আরোহণ করতেন।[৬] জানা যায় যে, আখেনাতেনের রৌদ্রনিবারিত মন্দিরগুলিতে অভিজাত রমণীরা পূজা দিতে আসতেন।[২৪]
Remove ads
মূর্তিতত্ত্ব
আতেন সূর্যের আলোক ও জগতের শক্তি বলে তিনি সর্বত্র বিরাজমান ও দুরধিগম্য মনে করা হত। এই কারণেই অন্যান্য প্রথাগত প্রাচীন মিশরীয় দেবদেবীদের মতো তার কোনও মূর্তিরূপ ছিল না। পরিবর্তে তাঁকে একটি সৌরচাকতি ও তার থেকে উদ্গত আলোকরশ্মি রূপে চিত্রিত করা হত।[১৬] আতেনকে কেন পূর্ণাঙ্গ রূপে চিত্রায়িত করা হত না, তার ব্যাখ্যা ছিল এই যে তিনি সৃষ্টির সীমা অতিক্রম করে অবস্থান করেন। এই জন্য ইতিপূর্বে পশুপাখি ও মানুষের আকারে দেবদেবীদের চিত্রের অভিলিখনের পরিবর্তে আতেনকে দেখানো হত রাজতুল্য এক ব্যক্তির প্রতি প্রসারিত জীবনদায়ী রশ্মিযুক্ত গোলকের আকারে। এই শক্তি ছিল মানব বা পশুপাখির আকারের শক্তির ঊর্ধ্বে।[২৫]
পরবর্তীকালে মূর্তিধ্বংসকরণের কাজ কার্যকরী করা হয় এবং আতেনের চিত্রের সৌরচাকতিটিকেও আখেনাতেনের জারি করা একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। এই অধ্যাদেশে তিনি ঘোষণা যে, আতেনের নামটির বানান বাচনধ্বনির মাধ্যমে লেখা হবে।[২৬][২৭]
Remove ads
স্থাপত্য

আখেতাতেন শহরের কেন্দ্রীয় মন্দির ছিল দু’টি। বৃহত্তর মন্দিরটি ছিল একটি "শহর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত ছাদবিহীন স্থাপনা, যার আয়তন ছিল প্রায় ৮০০ গুণিত ৩০০ মিটার (২,৬০০ x ১,০০০ ফুট)"।[২৮] দরজায় ছিল ভাঙা সরদল এবং উত্থিত গোবরাট। আতেনের মন্দিরগুলি ছিল খোলা আকাশের নিচে নির্মিত স্থাপনা। সূর্যালোক যাতে অধিক পরিমাণে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে সেই কারণে এই মন্দিরগুলিতে ছাদের অংশ প্রায় থাকত না বললেই চলে। এই কারণেই অন্যান্য মিশরীয় মন্দিরগুলির থেকে এগুলিকে স্বতন্ত্র প্রকৃতির বলা চলে। ঝুল বারান্দায় অঙ্কিত চিত্রে দেখা যায় আখেনাতেন ও রাজপরিবার আতেনের রশ্মিকে আলিঙ্গন করছেন সিঁড়ির দেওয়াল, ঢালু পথ ও বেদিতে। এই খণ্ডাংশগুলিকে প্রথমে ফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও পরবর্তীকালে দুই ধারেই এই চিত্রগুলির উপস্থিতি লক্ষ্য করে এগুলি ঝুল বারান্দা হিসেবে পুনরায় চিহ্নিত করা হয়।[২৯]
Remove ads
রাজকীয় সত্ত্বাধিকার

আমারনা যুগের সমাধি ও মন্দিরগুলির অভিলিখনে আতেনকে প্রায়শই এক রাজকীয় সত্ত্বাধিকার প্রধান করা হয়েছিল এক দ্বৈত কার্তুশের মাধ্যমে বন্ধনীযুক্ত করে। কেউ কেউ এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, এর অর্থ আখেনাতেন ছিলেন আতেনের মূর্তরূপ এবং আতেনের পূজা হল প্রত্যক্ষভাবে আখেনাতেনের পূজা; কিন্তু অন্যরা মনে করেন যে, এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয় যে আতেন ছিলেন সর্বোচ্চ শাসক, এমনকি সমসাময়িক শাসনকারী রাজারও উপরে তার স্থান।[৩০][৩১]
উপাধিটির দু’টি আকার ছিল; প্রথমটিতে অন্যান্য দেবতাদের নাম ছিল এবং দ্বিতীয়টিতে ছিল অধিকতর 'একক' একজনের নাম এবং তা স্বয়ং আতেনকেই নির্দেশ করেছিল। আদি রূপটি ছিল রে-হোরাখতি, যিনি আকাশকে আহ্লাদিত করেন, তার নামে শু, যিনি হলেন আতেন।[১৭] দ্বিতীয় আকারটি ছিল রে, দুই দিগন্তের শাসক, যিনি দিগন্তকে আহ্লাদিত করেন, যাঁর নামে আলোক, যিনি হলেন আতেন।[৩২]
Remove ads
একেশ্বরবাদের প্রশ্ন
রা-হোরাস ছিলেন অন্য দুই দেবতার সমন্বয়। তাঁকে অধিকতর ক্ষেত্রে রা-হোরাখতি (রা যিনি হলেন দুই দিগন্তের হোরাস) নামে উল্লেখ করা হত। এই দুই দেবতাই প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসের একেবারে আদি যুগ থেকে প্রত্যায়িত করা হত। আমারনা যুগে এই সমন্বয়কে দেখা হত সূর্যদেবতার শক্তির অদৃশ্য উৎস হিসেবে, যার থেকে আতেন অর্থাৎ সৌরচাকতির দৃশ্যমান প্রকাশটি উৎসারিত হয়।[৬] এই কারণেই রা-হোরাস-আতেন ধারণাটি ছিল পুরনো ধারণার ক্রমবিকাশ। প্রকৃত পরিবর্তন তখনই আসে যখন রাষ্ট্রীয় স্তরে অন্যান্য সকল দেবতা (বিশেষত আমুন-রা) পরিত্যক্ত হন, মূর্তিমূজা নিষিদ্ধ হয় এবং আখেনাতেন কর্তৃক একটি তারিখায়ন-যোগ্য দৃশ্যত-একেশ্বরবাদ প্রবর্তিত হয়।[৩৩] এই সমন্বয়বাদ অবলীলায় স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় আতেনের প্রতি রচিত মহাস্তোত্রে, যাতে রা-হোরাখতি, শু ও আতেন একত্রে মিশে যান সৃষ্টিকর্তা দেবতা হিসেবে।[৭] অন্যরা আখেনাতেনকে আতেন মনোল্যাট্রির অনুশীলনকারী মনে করেন।[৩৪] কারণ তিনি সক্রিয়ভাবে অন্যান্য দেবতাদের অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি; বরং শুধুমাত্র আতেন ভিন্ন অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা নিষিদ্ধ করেছিলেন। অন্যান্য গবেষকেরা এই ধর্মটিকে বলেন হেনোথেইস্টিক।[২৬]
Remove ads
আতেনবাদের সমাপ্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ফ্যারাও হিসেবে আখেনাতেনকে আতেনের 'মহাপুরোহিত' অথবা এক প্রেরিত পুরুষ জ্ঞান করা হত। নিজের রাজত্বকালে তিনিই ছিলেন মিশরে আতেনবাদের প্রধান প্রচারকদের অন্যতম। আখেনাতেনের মৃত্যুর পর তুতানখামুন আমুনের কাল্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং প্রথাগত প্রাচীন মিশরীয় দেবমণ্ডলীকে ফিরিয়ে আনার জন্য অ-আতেনবাদী দেবদেবীর পূজার উপর থেকে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।[২] পরিবর্তনের এই অবস্থানটি লক্ষিত হয় তুতানখআতেন থেকে তুতানখআমুন-এ নিজের নাম পরিবর্তনে। এর থেকেই তার রাজত্বকালে আতেনের উপাসনা গুরুত্ব হারাতে থাকে।[১৬] আখেনাতেনের মৃত্যুর পরে আতেনের কাল্টটি তৎক্ষণাৎ বিলুপ্ত না হলেও, আতেনের উপাসনা আরও দশ বছরের মতো সময় মিশরে প্রচলিত ছিল। তারপর এই কাল্ট বিলীন হতে শুরু করে। তুতানখামুন যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন তার ধর্মীয় রাজত্বটিতে দেখা যায় ধর্মক্ষেত্রে সহিষ্ণুতা। এটিই ছিল তার রাজত্বকালের প্রধান পার্থক্য। কারণ, তখন আর আতেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় একমাত্র দেবতা হিসেবে পূজিত হতেন না।[৩] আখেনাতেনের রাজত্বকালে যে রাষ্ট্রীয় মন্দিরগুলি ধ্বংস করা হয়েছিল, সেগুলি পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করেন তুতানখামুন এবং প্রথাগত দেবদেবীদের পুনঃস্থাপিত করেন। এটিকে মনে করা হয়েছিল "মিশরের দুঃখকষ্টের কারণ যে সরাসরি দেবদেবীদের অবহেলা করা এবং দেবতাদের পরিত্যাগ করার মতবাদটিকে" জনসাধারণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করার জন্য।[৩]
আতেন শব্দটি থেকে উৎসারিত নামসমূহ
- আখেনাতেন: "আতেনের কার্যকরী আত্মা"।
- আখেতাতেন: "আতেনের দিগন্ত", আখেনাতেনের রাজধানী। আমারনা নামে পরিচিত প্রত্নক্ষেত্র।
- আঙ্খেসেনপাতেন: "যে নারীর জীবন আতেনের"।
- বেকেতাতেন: "আতেনের নিত্য-পরিচারিকা"।
- মেরিতাতেন: "আতেনের প্রিয়া"।
- মেকেতাতেন: "আতেনকে দেখো" বা "আতেন কর্তৃক রক্ষিতা"।
- নেফারনেফারুয়াতেন: "আতেনের সৌন্দর্যসমূহের সৌন্দর্র"।
- পাতেনেমহেব: "জয়ন্তীতে আতেন"।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
- তুতানখাতেন: "আতেনের জীবন্ত চিত্র" (তুতানখামুনের পূর্বনাম)।
- রুপোর আতেন: চাঁদ।
চিত্রকক্ষ
- খোদাইচিত্রের খণ্ডাংশে একটি রাজমস্তক (সম্ভবত আখেনাতেনের), আতেন কার্তুশের আদি রূপ এবং আতেন মূর্তিটির দিকে আঙ্খ এগিয়ে দিচ্ছেন। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- চুনাপাথরের স্তম্ভের অংশে শরের কলম ও আতেন কার্তুশের আদি রূপ। আখেনাতেনের রাজত্বকাল। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- আখেনাতেন ও নেফারতিতির মুণ্ডহীন আবক্ষ মূর্তি, সঙ্গে আতেন কার্তুশের আদি রূপে চারটি যুগল, একদা একটি সম্মিলিত লাল কোয়ার্টজাইট মূর্তির অংশ, পরে ইচ্ছাকৃত ধ্বংসকরণের চিহ্ন সম্বলিত। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- আতেন কার্তুশের আদি রূপ "দ্য লিভিং রা হোরাখতি"-সম্বলিত অভিলিখিত চুনাপাথরের খণ্ডাংশ। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- ফলকের খণ্ডাংশে আতেনের কার্তুশের তিনটি শেষদিকের রূপ, এর মধ্যে একটি দেবতার নামের একটি দুষ্প্রাপ্য মধ্যস্থতাকারী রূপকে বর্ণনা করেছে।আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- ডান দিকের কাঁধে আবৃত আতেন কার্তুশের শেষদিকের রূপ সম্বলিত মূর্তির একটি সিলিসেয়াস চুনাপাথর টুকরো। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। পেট্রি মিউজিয়াম অফ ইজিপশিয়ান আর্কিওলজি, লন্ডন।
- প্রাকার-খোদাইচিত্রে আদিকালীন কার্তুশের আকারে আতেনের নাম। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। নেউয়েস জাদুঘর, বার্লিন, জার্মানি।
- আখেনাতেনের সিংহাসন নামের একটি কার্তুশ-যুক্ত ব্রোঞ্জের পাত (বাঁদিকে) এবং পরবর্তীকালের আতেনের দু’টি কার্তুশ (মধ্যে ও ডানদিকে)। আমারনা, মিশর। নতুন রাজ্য, অষ্টাদশ রাজবংশের শেষভাগ। নিউয়েস মিউজিয়াম, বার্লিন, জার্মানি।
Remove ads
আরও দেখুন
- প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম
- সৌরদেবতার তালিকা
- আমুন
- রা
- আখেনাতেন
- নেফারতিতি
- আঙ্খেসেনামুন
- মেরিয়াতেন
- দি ইজিপশিয়ান
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads