শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

আরবি ভাষা

ভাষা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আরবি ভাষা
Remove ads

ভাষা (العَرَبِيَّة [al ʕaraˈbijːa] (শুনুন), আল্-ʿআরাবিয়্যাহ্ বা عَرَبِيّ ʻআরাবি) সেমেটিক ভাষা পরিবারের জীবন্ত সদস্যগুলির মধ্যে বৃহত্তম। এটি একটি কেন্দ্রীয় সেমেটীয় ভাষা। হিব্রুআরামীয় ভাষার সাথে এ ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আধুনিক আরবিকে 'ম্যাক্রো ভাষা' আখ্যা দেয়া হয়; এর ২৭ রকমের উপভাষা ISO 639-3-তে স্বীকৃত।

দ্রুত তথ্য আরবি ভাষা, উচ্চারণ ...

সমগ্র আরব বিশ্ব জুড়ে এই উপভাষাগুলি প্রচলিত এবং আধুনিক আদর্শ আরবি ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র পড়া ও লেখা হয়। আধুনিক আদর্শ আরবি চিরায়ত আরবি থেকে উদ্ভূত। মধ্যযুগে আরবি গণিত, বিজ্ঞানদর্শনের প্রধান বাহক ভাষা ছিল। বিশ্বের বহু ভাষা আরবি থেকে শব্দ ধার করেছে।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগেই আরব উপদ্বীপে আরবি ভাষার উৎপত্তি ঘটে। প্রাক-ইসলামী আরব কবিরা যে আরবি ভাষা ব্যবহার করতেন, তা ছিল অতি উৎকৃষ্ট মানের। তাদের লেখা কবিতা মূলত মুখে মুখেই প্রচারিত ও সংরক্ষিত হত। আরবি ভাষাতে সহজেই বিজ্ঞান ও শিল্পের প্রয়োজনে নতুন নতুন শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং আজও তা করা যায়। ইসলামের প্রচারকেরা ৭ম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে এক বিশাল আরব সাম্রাজ্য গড়তে বেরিয়ে পড়েন এবং প্রথমে দামেস্ক পরে বাগদাদে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। এসময় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এক বিশাল এলাকা জুড়ে আরবি প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হত। ভাষাটি বাইজেন্টীয় গ্রিক ভাষাফার্সি ভাষা থেকে ধার নিয়ে এবং নিজস্ব শব্দভাণ্ডারব্যাকরণ পরিবর্তন করে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

৯ম ও ১০ম শতকে বাগদাদে এক মহান বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সম্পন্ন হয়। সেসময় বিশ্বের অপরাপর প্রাচীন ভাষা, বিশেষত গ্রিক ভাষার বহু প্রাচীন বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক লেখা আরবিতে অনুবাদ করা হয়। এগুলিতে আবার আরবি চিন্তাবিদেরা নিজস্ব চিন্তা সংযোজন করেন। পরবর্তীতে আরব স্পেনে এই জ্ঞানচর্চাই ইউরোপে মধ্যযুগের অবসান ঘটিয়ে রেনেসাঁসের সূচনা করেছিল। আরবিই ছিল ১১শ শতকে মনুষ্য জ্ঞানভাণ্ডারের বাহক ভাষা এবং এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন গ্রিকলাতিনের উত্তরসূরী। আরব সভ্যতা বলতে কেবল আরব জাতি বা ইসলামকে বোঝায় না; এই ভাষার মহিমা এই যে বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর মানুষকে এটি আকৃষ্ট করেছিল। বিস্তীর্ণ আরব সাম্রাজ্যের নানা জাতের মানুষ আরবি ভাষার ছায়ায় এক বৃহত্তর সমৃদ্ধিশীল আরব সভ্যতার অংশ হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছিল। ৮ম শতক থেকে ১২শ শতক পর্যন্ত সংস্কৃতি, কূটনীতি, বিজ্ঞান ও দর্শনের সার্বজনীন ভাষা ছিল আরবি। ঐ সময়ে যারা অ্যারিস্টটল পড়তে চাইত, বা চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করতে চাইত, বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান খুঁজত, বা যেকোন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে চাইত, তাদের জন্য আরবির জ্ঞান ছিল অপরিহার্য।

আরবি ভাষা সেমেটীয় গোত্রের ভাষাসমূহের অন্তর্গত একটি ভাষা। অন্যান্য জীবিত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে রয়েছে আধুনিক হিব্রু ভাষা (ইসরায়েলের ভাষা), আমহারীয় ভাষা (ইথিওপিয়ার ভাষা), এবং ইথিওপিয়ায় প্রচলিত অন্যান্য ভাষা। মৃত সেমিটীয় ভাষাগুলির মধ্যে আছে ধর্মগ্রন্থ তাওরাতের প্রাচীন হিব্রু ভাষা, আক্কাদীয় ভাষা (ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয়), সিরীয় ভাষাইথিওপীয় ভাষা

সব সেমেটীয় ভাষারই একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ব্যঞ্জন দিয়ে গঠিত ধাতুরূপ বা শব্দমূল। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটি মূল গঠিত হয় এবং প্রতিটির একটি মূল অর্থ থাকে। তারপর এই মূলকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে (স্বরবর্ণ যোগ করে, উপসর্গ-মধ্যসর্গ-অন্ত্যপ্রত্যয় বসিয়ে) অন্যান্য কাছাকাছি অর্থের শব্দ সৃষ্টি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ নেয়া যাক আরবি "সালিম" মূলটি, যার অর্থ নিরাপদ (আরও সঠিকভাবে সালিম মানে সে (পুরুষ) নিরাপদ ছিল।) এখান থেকে আমরা পাই সাল্লাম (সরবরাহ করা), আসলামা (সমর্পণ করা, জমা দেওয়া), ইস্তালামা (গ্রহণ করা), ইস্তাস্তালামা (আত্মসমর্পণ করা), সালামুন (শান্তি), সালামাতুন (নিরাপত্তা) এবং মুসলিমুন (মুসলিম)। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে আরবি ভাষার শিক্ষার্থী সহজেই আরবি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন।

আরবিকে সাধারণত ধ্রুপদী আরবি, আধুনিক লেখ্য আরবি এবং আধুনিক কথ্য বা চলতি আরবি --- এই তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। ধ্রুপদী আরবি ৬ষ্ঠ শতক থেকে প্রচলিত ও এতেই কুরআন মাজিদ লেখা হয়েছে। আল-মুতানাব্বিইবন খালদুন ধ্রুপদী আরবির বিখ্যাত কবি। আধুনিক লেখ্য আরবিতে আধুনিক শব্দ যোগ হয়েছে ও অতি প্রাচীন শব্দগুলি বর্জন করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও ধ্রুপদী আরবির সাথে এর পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়। আরবি সংবাদপত্র ও আধুনিক সাহিত্য আধুনিক লেখ্য আরবিতেই প্রকাশিত হয়। তাহা হুসাইনতাওফিক আল হাকিম আধুনিক লেখ্য আরবির দুই অন্যতম প্রধান লেখক ছিলেন।

Remove ads

আরবি লিখন পদ্ধতি

আরবি লিখন পদ্ধতি হলো একটি শৈল্পিক ও প্রাচীন লিপি যা মূলত আরবি ভাষা লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি আবজাদ (abjad) শ্রেণির লিপি, যেখানে প্রতিটি অক্ষর একটি ব্যঞ্জনধ্বনি নির্দেশ করে। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও বহুল ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতির মধ্যে এটি একটি।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য

আরবি লিপি ডান থেকে বামে লেখা হয়।

এটি একটি সংযুক্ত বা যুক্তলিপি, অর্থাৎ বেশিরভাগ বর্ণ একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি ধারাবাহিক রেখার মতো গঠিত হয়।

বর্ণমালায় ২৮টি মৌলিক ব্যঞ্জনবর্ণ রয়েছে।

স্বরধ্বনির জন্য ব্যবহৃত হয় স্বরচিহ্ন বা হরকাত (ḥarakāt), যেমন:

◌َ (ফাতহা) = সংক্ষিপ্ত "a"

◌ِ (কাসরা) = সংক্ষিপ্ত "i"

◌ُ (দাম্মা) = সংক্ষিপ্ত "u"


দীর্ঘ স্বরধ্বনি প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয় নির্দিষ্ট বর্ণ, যেমনঃ

ا (আলিফ) = দীর্ঘ "ā"

و (ওয়াও) = দীর্ঘ "ū"

ي (ইয়া) = দীর্ঘ "ī"


অবস্থানভেদে অক্ষরের রূপ

আরবি প্রতিটি বর্ণ চারটি ভিন্ন রূপে দেখা যেতে পারে, নির্ভর করে বর্ণটি শব্দের কোন স্থানে অবস্থান করছে:

একক (isolated)

শুরু (initial)

মধ্য (medial)

শেষে (final)


উদাহরণস্বরূপ, বর্ণ "ع" (আইন)–

عـ (শুরুতে), ـعـ (মধ্যে), ـع (শেষে), ع (একক)

মূল বর্ণমালা

আরবি বর্ণমালায় ২৮টি বর্ণ রয়েছে, যার মধ্যে প্রতিটি একটি ব্যঞ্জনধ্বনি প্রকাশ করে:

أ، ب، ت، ث، ج، ح، خ، د، ذ، ر، ز، س، ش، ص، ض، ط، ظ، ع، غ، ف، ق، ك، ل، م، ن، هـ، و، ي

সংখ্যা লিখন পদ্ধতি

আরবি লিখন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি (০-৯), যদিও আধুনিক ব্যবহারকারীরা পশ্চিমা সংখ্যা (1-9) গ্রহণ করেছেন। আরবি ভাষাভাষীরা এখনো ডান থেকে বামে লেখেন, তবে সংখ্যা লেখেন বাম থেকে ডানে।

ক্যালিগ্রাফি ও শৈলী

আরবি লিখন পদ্ধতির একটি বিশিষ্ট দিক হলো এর ক্যালিগ্রাফি শিল্প। নিচে কয়েকটি প্রধান শৈলীর নাম দেওয়া হলো:

নাসখ (Naskh) – সহজপাঠ্য, সাধারণ ছাপাখানায় ব্যবহৃত

সূলুস (Thuluth) – আলংকারিক লেখার জন্য

রুকআ (Ruqʿah) – দৈনন্দিন হাতের লেখা

দিওয়ানি (Diwani) – রাজকীয় ও নান্দনিক শৈলী

কুফি (Kufic) – প্রাচীনতম ও গঠনমূলক


ডিজিটাল যুগে ব্যবহার

বর্তমানে আরবি লিপি বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যারে ব্যবহৃত হয়। ইউনিকোড-এ আরবি লিপির জন্য পৃথক ব্লক নির্ধারিত রয়েছে। অনেক ফন্ট ও টাইপফেস, যেমনঃ Amiri, Traditional Arabic, এবং Scheherazade, এই পদ্ধতিতে লেখা সমর্থন করে।

ব্যবহারকারী ভাষাসমূহ

য虽然 এই লিখন পদ্ধতি মূলত আরবি ভাষার জন্য, তবে এটি নিম্নলিখিত ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়ঃ

ফার্সি ভাষা

উর্দু ভাষা

পশতু ভাষা

সিন্ধি ভাষা

কুর্দি ভাষা

উইঘুর ভাষা

হাউসা ভাষা (আরবি লিপির এক সংস্করণে)

মাপিলা মালায়ালম


দেখুন আরও

আরবি ভাষা

আরবি ক্যালিগ্রাফি

আবজাদ

ইউনিকোডে আরবি


উৎস

Daniels, Peter T.; Bright, William (1996). The World's Writing Systems. Oxford University Press.

Unicode Arabic block

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads