শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ওড়িশি

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ওড়িশি
Remove ads

ওড়িশি পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যের একটি শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী। এটি ভারতের আটটি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলীরও অন্যতম। ভারতীয় নৃত্যের আদিগ্রন্থ নাট্যশাস্ত্র এই নৃত্যশৈলীটিকে ওড্র-মাগধী নামে অভিহিত করেছে। ভুবনেশ্বরের নিকটস্থ উদয়গিরি পর্বতে প্রাপ্ত খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে নির্মিত একটি খোদাইচিত্র থেকে এই নৃত্যের প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। অনুমিত হয়, ব্রিটিশ আমলে এই নৃত্যশৈলীটি কিছুটা অবদমিত হয়েছিল; কিন্তু স্বাধীনতার পর আবার এর পুনরুজ্জীবন ঘটে। ওড়িশি নৃত্যে ত্রিভঙ্গি (মাথা, বুক ও শ্রোণীর স্বতন্ত্র সঞ্চালনা) [] এবং চৌকা (মৌলিক চতুষ্কৌণিক ভঙ্গিমা) – এই দুয়ের উপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ ওড়িশিকে অন্যান্য শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী থেকে পৃথক করেছে।

Thumb
নৃত্যের শেষে উপস্থাপিত একটি প্রথাগত ভঙ্গিমা যেটি শ্রীকৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় প্রদর্শিত করে
Thumb
ওড়িশি নৃত্য উপস্থাপনা
Remove ads

ঘরানা ও নৃত্যশিল্পীগণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
কৃষ্ণ-বিরহাতুর রাধা চরিত্রের উপস্থাপনারত এক নর্তকী

ওড়িশি সংস্কৃতিতে তিনটি ঘরানার উপস্থিতি লক্ষিত হয়: মহারি, নর্তকীগোতিপুয়া। ওড়িশার মন্দিরগুলিতে দেবদাসীদের মহারি নামে অভিহিত করা হত। শব্দটির উৎস মহানারী শব্দদ্বয়; দুয়ে মিলে মহারি বা নির্বাচিত কথাটি এসেছে। এই দেবদাসীরা মূলত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নর্তকী ছিলেন। প্রাচীন মহারিগণ মন্ত্রশ্লোকের ভিত্তিতে নৃত্য (বিশুদ্ধ নৃত্য) ও অভিনয় (কাব্যপাঠ) উপস্থাপনা করতেন। পরবর্তীকালের মহারিগণ জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দম্ কাব্যের গীতিকবিতাগুলির সঙ্গতে নৃত্য উপস্থাপনা শুরু করেন। ভিতরি গৌণী মহারি-রা মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারেন। কিন্তু বাহারি গৌণী মহারি-রা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেও গর্ভগৃহে তাদের প্রবেশাধিকার নেই।

গোতিপুয়া ঘরানার উদ্ভব হয় খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে। এই ঘরানার উদ্ভবের অন্যতম কারণ ছিল বৈষ্ণবধর্মে নারীর নৃত্য স্বীকৃত ছিল না। গোতিপুয়ারা ছিল ছোটো ছোটো ছেলে; যাদের মেয়ে সাজিয়ে দেবদাসীদের দ্বারা নৃত্যশিক্ষা দেওয়া হত। এই সময় বৈষ্ণব কবিরা ওড়িয়া ভাষায় অনেক রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক পদ রচনা করেন। গোতিপুয়ারা এই সকল পদের সঙ্গতে মন্দিরের বাহির প্রাঙ্গনে নৃত্য করত।

নর্তকী নৃত্যশৈলীটির উদ্ভব প্রাক-ব্রিটিশ যুগে। ওড়িশার রাজপ্রাসাদে এই নৃত্য উপস্থাপিত হত। এই সময় দেবদাসীপ্রথার অবমূল্যায়ণ ভীষণভাবে সমালোচিত হয়। এই কারণে মন্দির থেকে দেবদাসী প্রথার উচ্ছেদ করা হয় এবং রাজসভাতেও এই প্রথা অপ্রচলিত হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র গোতিপুয়া ঘরানার কিছু উদাহরণ টিকে যায়। এই নৃত্যর পুনরুজ্জীবনের সময় প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক উপাদানগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে বর্তমানে এই নৃত্যশৈলীতে শুদ্ধতাবাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়।[]

Remove ads

ওড়িশির বিভিন্ন প্রকার নৃত্যশৈলী

Thumb
জগন্নাথ প্রণাম

সনাতন ওড়িশি নৃত্য নিম্নলিখিত অঙ্গ ও শৈলীগুলির সমন্বয়ে গঠিত:

মঙ্গলাচরণ: একটি সম্ভাষক নৃত্যাঙ্গ। জগন্নাথ প্রণামের পর দেবদেবীর স্তবগানবাচক একটি শ্লোক গাওয়া হয়, যার অর্থ উপস্থাপনা করা হয় সমগ্র নৃত্যের মাধ্যমে। মঙ্গলাচরণে ভূমিপ্রণাম করা হয়, মাতা বসুমতীর কাছে তাকে পদদলিত করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এছাড়া করা হয় ত্রিখণ্ডী প্রণাম বা তিন অঙ্গের প্রণাম। এই প্রণামে মস্তক দ্বারা ঈশ্বরকে, মুখাগ্র দ্বারা গুরুদের এবং বক্ষাগ্র দ্বারা দর্শকদের প্রণাম করা হয়।

বাট্টু নৃত্য: এটি ওড়িশির একটি বিশেষ নৃত্যশৈলী যা নটরাজ শিবের বটুকভৈরব রূপটিকে উদ্দেশ্য করে নিবেদন করা হয়।

পল্লবী: এটি একটি বিশুদ্ধ নৃত্যশৈলী যা কোনো একটি রাগকে চক্ষুসঞ্চালন, দেহভঙ্গিমা ও জটিল পদচালনা দ্বারা ফুটিয়ে তোলে।

অভিনয়: এই শৈলীটিতে কবিতার মাধ্যমে কোনো একটি কাহিনি দর্শকের সামনে উপস্থাপনা করা হয় এবং নৃত্যশিল্পী মুদ্রা বা হস্তভঙ্গিমা, মুখাভিব্যক্তি ও দেহচালনা দ্বারা সেই কাহিনিটির নৃত্যায়ন ঘটান।

দশাবতার: এটি একটি নৃত্যশৈলী যার মাধ্যমে জয়দেব রচিত গীতগোবিন্দম্ কাব্যের বিষ্ণুর দশাবতার বর্ণনাটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়।

মোক্ষ: এটিকে মুক্তির নৃত্য বলে অভিহিত করা হয়। এটি একটি বিশুদ্ধ নৃত্যশৈলী যা মাদল ও পাখোয়াজের সঙ্গতে উপস্থাপিত হয়ে থাকে।

Remove ads

আজকের ওড়িশি

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
নৃত্যশিল্পী নন্দিনী ঘোষাল

পদ্মবিভূষণ সম্মানপ্রাপ্ত কেলুচরণ মহাপাত্র, পঙ্কজচরণ দাস ও দেবপ্রসাদ দাস পুনরুজ্জীবিত ওড়িশি নৃত্যের শীর্ষস্থানীয় নৃত্যশিল্পী। ওড়িশি শিল্পী সংযুক্তা পাণিগ্রাহী গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র দ্বারা পুনরুজ্জীবিত এই নৃত্যধারার এক বিশিষ্ট শিল্পী। গুরু সুরেন্দ্রনাথ জেনা এবং ঊষা ছেত্তুর, রাধিকা ঝা প্রমুখ তার শিষ্যরা ওড়িশির বিভিন্ন ধরন, মুদ্রা ও ভঙ্গিমাকে বিস্তারিত করেছেন। এই নৃত্যশৈলীটি ধীর এবং গভীর সামঞ্জস্য ও নিয়ন্ত্রণের দাবিদার।

আজকের ওড়িশি গুরুরা উচ্চ প্রতিভাসম্পন্ন একটি নতুন প্রজন্মের জন্ম দিয়েছেন। তারা প্রথম জীবনে ছিলেন গোতিপুয়া নর্তক এবং সারা ভারতে আজ তারা এই ধারাটিকে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন। ১৯৫০-এর দশকের প্রথম ভাগ থেকে বহির্জগতে ওড়িশির পরিচিতির সূত্রপাত হয়। একটি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নৃত্য উৎসবে শাস্ত্রীয় নৃত্য বিভাগে প্রিয়ম্বদা মোহান্তি ওড়িশার প্রতিনিধিত্ব করেন। ডক্টর চার্লস ফ্যাব্রি একে একটি মহান নৃত্যশৈলী আখ্যা দিয়ে ইন্দ্রাণী রেহমানকে এই নৃত্য সম্পর্কে গবেষণার সুযোগ করে দেন। কেলুচরণ মহাপাত্র, পঙ্কজচরণ দাস, দেবপ্রসাদ দাস, মায়াধর রাউত, সংযুক্তা পাণিগ্রাহী কুমকুম মোহান্তি, সোনাল মানসিং, মাধবী মুদগলপ্রতিমা গৌরী এই নৃত্যের বিকাশে বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বর্তমান কালের অগ্রগণ্য ওড়িশি নৃত্যশিল্পীরা হলেন গঙ্গাধর প্রধান, দুর্গাচরণ রণবীর, রামলি ইব্রাহিম, কিরণ সেগাল, অরুণা মোহান্তি, সুজাতা মহাপাত্র, দক্ষ মাশরুওয়ালা, অলকা কানুনগো, সুরুপা সেন, বিজয়িনী শতপথী, জ্যোতি রাউত, মনোরঞ্জন প্রধান, শ্রেয়সী দে, লীনা মোহান্তি, মধুমিতা পট্টনায়ক, নন্দিতা বেহেরা, ডোনা গাঙ্গুলি প্রমুখ।

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads