শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ওডিসি

মহাকবি হোমার রচিত গ্রিক মহাকাব্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ওডিসি
Remove ads

ওডিসি (/ˈɒdəsi/;[] প্রাচীন গ্রিক: Ὀδύσσεια Odýsseia, গ্রিক উচ্চারণ: [o.dýs.seː.a]) হল প্রাচীন গ্রিসের দুই প্রধান মহাকাব্যের অন্যতম (অপরটি হল ইলিয়াড)। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, এই দুই মহাকাব্যই হোমারের রচনা। প্রাচীনকালে রচিত সে সকল সাহিত্যকীর্তি আজও সুলভ ও বহুল পঠিত, ওডিসি সেগুলির অন্যতম। ইলিয়াডের মতো ওডিসিও ২৪টি সর্গে বিভক্ত। ট্রোজান যুদ্ধের পর ইথাকার রাজা গ্রিক বীর ওডিসিউসের ঘরে ফেরার কাহিনিই এই মহাকাব্যের মূল উপজীব্য। দশবর্ষব্যাপী যুদ্ধের পর ওডিসিউসের প্রত্যাবর্তন যাত্রাও চলেছিল আরও দশটি বছর ধরে। পথে বহু বাধাবিপত্তির মুখোমুখি হন, এমনকি নিজের জাহাজ ও সহযাত্রীদেরও খোয়ান। এদিকে ওডিসিউসের অনুপস্থিতিতে ইথাকায় সবাই ধরে নেয় যে তিনি মৃত। তাই ওডিসিউসের পত্নী পেনেলোপি ও পুত্র টেলামেকাসকে অবিরাম যুঝতে হয় পেনেলোপিকে বিবাহ করতে উৎসুক একদল উচ্ছৃঙ্খল পরস্পর-বিবদমান পাণিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে।

দ্রুত তথ্য ওডিসি, রচনা ...

হোমারীয় গ্রিক ভাষায় রচিত মূল ওডিসি রচিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম বা সপ্তম শতাব্দী নাগাদ। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগেই ইলিয়াড ও ওডিসি গ্রিক সাহিত্যের প্রামাণ্য রচনা হিসেবে স্থান পোক্ত করে নেয়। ওডিসি যে হোমারেরই রচনা, প্রাচীনকালে তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু আধুনিক গবেষকদের অধিকাংশই অনুমান করেন যে, ইলিয়াড ও ওডিসি আলাদা আলাদা ভাবে রচিত হয়েছিল এবং এই দুই মহাকাব্যের আখ্যানভাগ এক দীর্ঘকালীন মৌখিক প্রথার ফসল। সেযুগের মানুষ বেশিরভাগই ছিল নিরক্ষর। তাই হোমারের মহাকাব্য আইডস বা র‍্যাপসোডি নামে এক শ্রেণির চারণকবির দ্বারা উপস্থাপিত হত। খুব সম্ভবত, এগুলি রচিত হয়েছিল শোনার জন্য, পাঠের জন্য নয়।

ওডিসির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে নোসটোস (νόστος; "প্রত্যাবর্তন"), পরিভ্রমণ, জেনিয়া (ξενία; "অতিথি-পরায়ণতা"), পরীক্ষা ও শুভ বা অশুভ সংকেতের ধারণাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আধুনিক গবেষকেরা এই মহাকাব্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণির মানুষের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেন। যেমন, ওডিসিতে নারী ও ক্রীতদাসের যে গুরুত্ব প্রতীয়মান হয়, তা প্রাচীন সাহিত্যের অন্যান্য রচনায় দুর্লভ। ইলিয়াডের সঙ্গে তুলনা করলে এই পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়; কারণ ইলিয়াডের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল ট্রোজান যুদ্ধে সৈন্য ও রাজন্যবর্গের কীর্তিকলাপ।

ওডিসি পাশ্চাত্য সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকীর্তিগুলির অন্যতম। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে এই মহাকাব্য প্রথম ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমে এই মহাকাব্য অভিযোজিত ও পুনঃউপস্থাপিত হয়ে আসছে। ২০০৮ সালে বিবিসি কালচার সারা বিশ্বে একটি সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পারে যে, ওডিসি সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী আখ্যায়িকার তালিকার একেবারে গোড়ার দিকে স্থান করে নিয়েছে।[]

Remove ads

আখ্যানভাগ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ব্যাখ্যাকরণ (১ম-৪র্থ সর্গ)

Thumb
চিত্রোপলশিল্পে ওডিসিউস, লা ওলমেডা ভিলা, পেডরোসা ডে লা ভেগা, স্পেন, খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতাব্দী

দশবর্ষব্যাপী ট্রোজান যুদ্ধের (ইলিয়াড মহাকাব্যের বিষয়বস্তু) সমাপ্তির পর সমুদ্রদেবতা পসেইডনের কোপে পড়ে ইথাকার রাজা ওডিসিউস (লাতিন নামান্তরে "ইউলিসিস") গৃহে প্রত্যাবর্তনে বাধা পান। এখানেও ওডিসি মহাকাব্যের আখ্যান আরম্ভ। ওডিসিউসের পুত্র টেলামেকাসের বয়স তখন প্রায় কুড়ি। পিতার অনুপস্থিতিতে রাজপ্রাসাদে মা পেনেলোপির সঙ্গেই বাস করছিল সে। পেনেলোপি পাণিপ্রার্থী ১০৮ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক ইথাকার রাজপ্রাসাদে ঘাঁটি গেড়ে নিত্য হৈচৈ করত এবং রাজকোষের ব্যয়েই প্রতিপালিত হতে শুরু করেছিল।

অলিম্পাস পর্বতে পসেইডনের অনুপস্থিতির সুযোগে ওডিসিউসের রক্ষয়িত্রী আথিনা দেবতাদের রাজা জিউসের কাছে ওডিসিউসের হয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি প্রার্থনা করেন। তারপর মেন্টেস নামে এক গোষ্ঠীপতির ছদ্মবেশ ধারণ করে আথিনা দেখা করেন টেলামেকাসের সঙ্গে এবং তাকে প্ররোচিত করেন পিতার সংবাদ সংগ্রহের কাজে। টেলামেকাস আথিনাকে আতিথ্য প্রদান করেন। সেই রাতে দু’জনে দেখেন যে, পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীরা নৈশাহারে বসে হৈচৈ করছে এবং চারণকবি ফেমিউস তাদের একটি আখ্যানকাব্য পাঠ করে শোনাচ্ছেন।

সেই রাতে আথিনা টেলামেকাসের ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজপুত্রের জন্য জাহাজ ও নাবিক দল খুঁজে আনেন। পেনেলোপির অভব্য পাণিপ্রার্থীদের নিয়ে কী করা যায় তা স্থির করার জন্য পরদিন সকালে টেলামেকাস ইথাকার নাগরিকদের একটি সভা আহ্বান করে। পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের কাছে এই কারণে উপহাসের পাত্র হয় সে। মেন্টরের ছদ্মবেশধারিণী আথিনাকে সঙ্গে নিয়ে টেলামেকাস গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ট্রোজান যুদ্ধের সর্বাপেক্ষা সম্মানীয় গ্রিক যোদ্ধা নেস্টরের সঙ্গে দেখা করার জন্য। যুদ্ধের পর নেস্টর বাস করছিলেন পাইলোসে

পাইলোস থেকে টেলামেকাস অশ্বারোহণে উপস্থিত হয় স্পার্টায়, তার সঙ্গে যায় নেস্টরের পুত্রও। পত্নী হেলেনের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার পর মেনালেয়াস সপত্নী সেখানেই বাস করছিলেন। এই দম্পতি টেলামেকাসকে জানান যে, মিশর ঘুরে এক দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তবে স্পার্টায় এসে পৌঁছেছেন দু’জনে। মিশরে ফেরোস দ্বীপে মেনালেয়াসের সঙ্গে প্রাচীন সমুদ্রদেব প্রোটিয়াসের সাক্ষাৎ হয়েছিল। প্রোটিয়াস মেনালেয়াসকে জানিয়েছিলেন যে, ওডিসিউস কালিপসো নামে এক উপদেবীর হাতে বন্দী হয়েছেন। মেনালেয়াসের ভ্রাতা অ্যাগামেমননের (মাইসিনিয়ার রাজা তথা ট্রয়ে গ্রিকদের নেতা) দুর্ভাগ্যের কথাও জানতে পারে টেলামেকাস: গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর পত্নী ক্লিটেমনেস্ট্রো ও পত্নীর প্রেমিক এজিস্থানের হাতে খুন হয়েছিলেন তিনি।

এরপর সংক্ষেপে আলোচিত হয় ইথাকায় পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের কথা। টেলামেকাস ওডিসিউসের সন্ধানে গিয়েছে বুঝতে পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে তারা পরিকল্পনা করতে থাকে প্রত্যাবর্তনের সময় অতর্কিতে তার জাহাজ আক্রমণ করে টেলামেকাসকে হত্যা করবে তারা। এই কথা পেনেলোপির কর্ণগোচর হওয়ায় তিনি পুত্রের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

ফিয়েশীয়দের আশ্রয়লাভ (৫ম-৮ম সর্গ)

Thumb
চার্লস গ্লেয়ার অঙ্কিত অডিসিউস অ্যান্ড নউসিকিয়া

ওজিজিয়া দ্বীপে ওডিসিউস সাত বছর কালিপসোর হাতে বন্দী ছিলেন। কালিপসো ওডিসিউসের প্রেমে পড়ে বিবাহের পরিবর্তে অমরত্ব দানের প্রস্তাব রাখলেও ওডিসিউস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন এবং ঘরে ফেরার জন্য আকুলতা প্রকাশ করতে থাকেন। আথিনার প্রার্থনা শুনে জিউস বার্তাবাহী দেবতা হার্মিসকে প্রেরণ করেন ওজিজিয়ায়। ওডিসিউসকে মুক্তিদানের আদেশ দেন তিনি। ওডিসিউস একটি ভেলা তৈরি করেন। পাথেয় হিসেবে কালিপসো এনে দেন বস্ত্র, খাদ্য ও পানীয়। সেই খবর পেয়ে পসেইডন ভেঙে দেন ওডিসিউসের ভেলাটি। কিন্তু সমুদ্রের উপদেবী ইনোর দেওয়া একটি আবরণের সাহায্যে সাঁতরে ফিয়েশীয়দের দ্বীপ স্কিয়ারিয়ার উপকূলে উপস্থিত হন ওডিসিউস। উলঙ্গ অবস্থায় পত্রগুচ্ছের আড়ালে আত্মগোপন করেন তিনি এবং পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়েও পড়েন।

পরদিন সকালে এক বালিকার কলহাস্যে ঘুম ভাঙে ওডিসিউসের। এই বালিকাই ছিল নউসিকিয়া। রাতে আথিনার স্বপ্নাদেশ পেয়ে সকালে সে দাসীদের নিয়ে এসেছিল সমুদ্রতটে। ওডিসিউস তার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করেন। নউসিকিয়া ওডিসিউসকে বলে তার পিতা অ্যালসিনোয়াস ও মাতা আরিটির আতিথ্য গ্রহণের জন্য। ওডিসিউসের পরিচয় না জেনেই অ্যালসিনোয়াস গৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য অতিথিকে একটি জাহাজ দিতে প্রতিশ্রুত হন। ওডিসিউস সেখানে বেশ কিছুদিন থেকে যান। একবার তিনি ডেমোডোকাস নামে এক অন্ধ গায়ককে বলেন ট্রোজান ঘোড়ার গল্পটি শোনাতে। ট্রোজান যুদ্ধে শত্রুদের ঠকানোর এই বিশেষ কৌশলে অডিসিউসই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এই পর্বের উপস্থাপনার সময় নিজের আবেগ সংযত রাখতে না পেরে অডিসিউস শেষপর্যন্ত নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। তারপর তিনি ট্রয় থেকে প্রত্যাবর্তনের কাহিনি শোনান।

ওডিসিউস কর্তৃক নিজের অভিযানের বিবরণ প্রদান (৯ম-১২শ স্কন্ধ)

Thumb
ডিমোডোকাসের গানে আচ্ছন্ন ওডিসিউস, ফ্রান্সেসকো হায়েজ অঙ্কিত, ১৮১৩-১৫

ফিয়েশীয়দের কাছে ওডিসিউস নিজের কাহিনি শোনালেন। একটি ব্যর্থ আক্রমণের পর ওডিসিউস ও তাঁর বারোটি জাহাজ ঝড়ের মুখে পড়ে ভেসে যায়। ওডিসিউসের সঙ্গে পদ্মভুকদের দেখা হয়। পদ্মভুকেরা ওডিসিউসের লোকজনদের নিজেদের ফল খেতে দেয়। তা খেয়ে তারা বাড়ি ফেরার কথা ভুলে যায়। ওডিসিউস তাদের বলপূর্বক টেনে এনে জাহাজে তোলেন।

তারপর ওডিসিউস ও তার দলবল সাইক্লপসের দেশের কাছে একটি আরামদায়ক জনশূন্য দ্বীপে অবতরণ করেন। ওডিসিউসের লোকজন পলিফিমাসের গুহায় ঢুকে নিজেদের ইপ্সিত পনির ও মাংস পায়। গুহায় ফিরে পলিফিমাস একটি প্রকাণ্ড প্রস্তুরখণ্ড দিয়ে গুহার মুখটি বন্ধ করে দেয় এবং ওডিসিউসের দলবলকে খেতে যায়। ওডিসিউস পালাবার একটি পরিকল্পনা করেন। নিজেকে তিনি "কেউ-না" বলে পরিচয় দিয়ে পলিফিমাসকে মদ্য পরিবেশন করেন এবং একটি কাঠের সূচ্যগ্র দণ্ড দিয়ে তাকে অন্ধ করে দেন। পলিফিমাস চিৎকার করে উঠলে তার প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। পলিফেমাস বলেন তাকে আক্রমণ করেছে "কেউ-না"। ওডিসিউস ও তাঁর দলবল শেষপর্যন্ত ভেড়ার পেটের তলায় নিজেদের বেঁধে বেরিয়ে পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়ার সময় অবশ্য ওডিসিউস পলিফিমাসকে বিদ্রুপ করেন এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করে দেন। সাইক্লপসরা তাদের পিতা পসেইডনের কাছে প্রার্থনা করেন, যাতে পসেইডন ওডিসিউসকে দশ বছর উদ্দেশ্যহীনভাবে ভ্রমণ করার অভিশাপ দেন। পলায়নের পর এওলাস ওডিসিউসকে একটি থলি দেন। সেই থলির মধ্যে পশ্চিমা বায়ু ছাড়া আর সকল বায়ু ছিল। এই থলিই ওডিসিউসকে নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনছিও। কিন্তু ইথাকা দৃশ্যমান হয়েই নাবিকেরা সেই থলিতে সোনা আছে ভেবে তা খুলে ফেলে। ওডিসিউস তখন ঘুমাচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সকল বায়ু একসঙ্গে ঝড় তুলে বেরিয়ে আসে এবং সেই ঝড়ে জাহাজ বহু দূরে চলে যায়। এওলাস বুঝতে পারেন যে ওডিসিউস দেবতাদের কোপে পড়েছেন। তাই তিনি আর সহায়তা করতে অস্বীকার করেন।

নরখাদক লেস্ট্রিগোনিয়ানরা ওডিসিউসের নিজের জাহাজটি বাদে আর সব জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়ার পরও তিনি যাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং এয়াইয়া দ্বীপে উপনীত হন। সেখানে থাকতেন জাদুকরী-দেবী সার্সি। ঔষধ-মিশ্রিত পনির ও মদ খাইয়ে সার্সি ওডিসিউসের অর্ধেক দলকে শূকরে রূপান্তরিত করেন। হার্মিস ওডিসিউসকে সার্সির ব্যাপারে সাবধান করে দেন এবং মলি নামে একটি ঔষধি প্রদান করেন। এই ঔষধির প্রভাবে তিনি সার্সির জাদুর হাত থেকে নিস্তার লাভ করেন। ওডিসিউস সার্সিকে বাধ্য করেন তাঁর দলকে আবার মানুষের আকারে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু সার্সি কর্তৃক প্রলুব্ধ হয়ে তাঁরা এক বছর সার্সির কাছেই থেকে যান। শেষে সার্সিরই নির্দেশ মতো ওডিসিউস ও তাঁর দলবল মহাসাগর পার হয়ে জগতের পশ্চিম সীমায় উপনীত হন। সেখানে ওডিসিউস মৃতদের উদ্দেশ্যে পূজা উৎসর্গ করেন। ওডিসিউস ভষিষ্যদ্বক্তা টায়ারেসিয়াসের প্রেতাত্মাকে আবাহন করেন এবং জানতে পারেন যে যদি তিনি ও তাঁর দলবল থ্রিনাশিয়া দ্বীপে হেলিয়সের পবিত্র গবাদি পশু ভক্ষণ থেকে বিরত থাকেন, তাহলে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারবেন। অন্যথায় তিনি তাঁর জাহাজ ও সমগ্র নাবিকদলকে খোয়াবেন।

Thumb
ওডিসিউস ও সাইরেনগণ, সাইরেন চিত্রকর নির্মিত ফুলদানি, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৮০-৪৭০ অব্দ (ব্রিটিশ মিইউজিয়াম)

এয়াইয়াতে ফিরে তাঁরা এলপিনরকে সমাহিত করেন এবং সার্সি তাঁদের যাত্রাপথের অবশিষ্ট পর্যায়গুলি সম্পর্কে পরামর্শ দেন। তাঁরা সাইরেনদের দেশের প্রান্ত ঘেঁষে চলে যান। সকল নাবিকের কান ওডিসিউস মৌমাছির দেহনিঃসৃত মোম দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শুধু নিজে তিনি সাইরেনদের গান শুনতে চাইছিলেন বলে নাবিকদের দিয়ে নিজেকে বেঁধে রেখেছিলেন। নাবিকদের তিনি বলেছিলেন তাঁকে যেন না খুলে দেওয়া হয়, খুলে দিলি তিনি জলে ঝাঁপ দেবেন। তারপর তাঁরা ছয় মাথাওয়ালা দৈত্য সিলা ও ঘূর্ণিস্রোত কারিবডিসের মধ্য দিয়ে যান। সিলা ওডিসিউসের ছয় জন লোককে গ্রাস করে।

এরপর তাঁরা থ্রিনাশিয়া দ্বীপে অবতরণ করেন। ওডিসিউস দ্বীপটির থেকে দূরে থাকতে চাইলেও তাঁর লোকজন সেই ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে। জিউস একটি ঝড় তুলে তাঁদের দ্বীপে থেকে যেতে বাধ্য করেন। সার্সি তাদের যে খাদ্য দিয়েছিলেন এর ফলে তা শেষ হয়ে যায়। ওডিসিউস যখন প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর লোকজন টাইরিসিয়াস ও সার্সির সাবধানবাণী উপেক্ষা করে পবিত্র গবাদি পশু শিকার করে। হেলিওস জিউসের কাছে প্রার্থনা করেন এই অধর্মাচরণের জন্য তাদের শাস্তি দিতে। তাঁদের জাহাজডুবি হয়। সবাই ডুবে মারা যায়, একমাত্র ওডিসিউস একটি ফিগ গাছ ধরে ভাসতে থাকেন। ভাসতে ভাসতে তিনি আসেন ওজিজিয়ার উপকূলে এবং সেখানে কালিপসোর প্রেমিক হয়ে থেকে যান।

ইথাকায় প্রত্যাবর্তন (১৩শ-২০শ স্কন্ধ)

Thumb
আথিনা রিভিলিং ইথাকা টু ইউলিসিস, গিসেপি বোটানি (অষ্টাদশ শতাব্দী)
Thumb
ওডিসিউস আবিষ্কার করেন যে পেনেলোপি তাঁর পাণিপ্রার্থীদের ঠেকিয়ে রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন: পেনেলোপি অ্যাণ্ড দ্য সুইটরস, জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউস

ওডিসিউসের গল্প শুনে ফিয়েশীয়রা তাঁকে ট্রয় লুণ্ঠনের ফলে অর্জিত সম্পদের থেকে অধিকতর সম্পদ প্রদানে রাজি হয়। রাতে যখন ওডিসিউস গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন ফিয়েশীয়রা তাঁকে ইথাকার এক গোপন পোতাশ্রয়ে রেখে আসে। ঘুম ভেঙে ওডিসিউস প্রথমে ভাবেন যে তিনি কোনও দূর দেশে এসে উপস্থিত হয়েছে। তারপর আথিনা আবির্ভূত হয়ে তাঁর সামনে প্রকাশ করেন যে তিনি প্রকৃতই ইথাকায় এসে উপস্থিত হয়েছেন। আথিনা ওডিসিউসের সম্পদ নিকটবর্তী এক গুহায় লুক্কায়িত রাখেনে এবং ওডিসিউসকে সাজিয়ে দেন এক বৃদ্ধ ভিখারির বেশে, যাতে তিনি তাঁর গৃহের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পারেন। ওডিসিউস তাঁর অন্যতম ক্রীতদাস তথা শূকরপালক ইউমেয়াসের কুটিরে যান। ইউমেয়াস তাঁকে আতিথ্য দান করে এবং ওডিসিউসের সপক্ষে কথা বলেন। নৈশাহারের পর ছদ্মবেশী ওডিসিউসের খামারের মজুরদের কাছে নিজের সম্পর্কে একটি মন-গড়া গল্প শোনান।

স্পার্টা থেকে জাহাজে করে গৃহে ফেরেন টেলামেকাস। পথে হামলা করার জন্য ওত পেতে থাকা পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের হাত কৌশলে এড়িয়ে আসেন তিনি। ইথাকার উপকূলে অবতরণ করার পর টেলামেকাসের সঙ্গে ওডিসিউসের দেখা হয়। ইউমেয়াসের কাছে নিজের পরিচয় গোপন করলেও টেলামেকাসের কাছে আত্মপ্রকাশ করেন ওডিসিউস। দু’জনে স্থির করেন যে পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের হত্যা করতে হবে। টেলামেকাস আগে বাড়ি যান। ইউমেয়াসকে সঙ্গে নিয়ে ওডিসিউসও ভিখারির ছদ্মবেশেই নিজের বাড়িতে যান। পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীরা, বিশেষত অ্যান্টিনোয়াস ওডিসিউসকে তাঁর নিজ গৃহেই উপহাস করেন। ওডিসিউস পেনেলোপির সঙ্গে দেখা করেন এবং ওডিসিউসের সঙ্গে একবার ক্রিটে তাঁর দেখা হয়েছিল বলে তিনি পেনেলোপির উদ্দেশ্য যাচাই করতে যান। আরও প্রশ্ন করার সময় তিনি যোগ করেন যে, সম্প্রতি তিনি থেসপ্রোশিয়ায় ছিলেন এবং সেখানে ওডিসিউসের সাম্প্রতিক ভ্রমণ সম্পর্কে কিছু জ্ঞান অর্জন করেছেন।

ওডিসিউসের পা ধুইয়ে দেওয়ার সময় একটি পুরনো ক্ষতচিহ্ন দেখে পরিচারিকা ইউরিক্লিয়া তাঁকে শনাক্ত করে। ভিক্ষুকের প্রকৃত পরিচয় সে পেনেলোপির কাছে ব্যক্ত করতে চায়, কিন্তু পেনেলোপি যাতে তার কথা শুনতে না পায় সেই ব্যবস্থা করেন আথিনা। ওডিসিউস ইউরিক্লিয়াকে দিয়ে শপথ করিয়ে নেয় যে সে তাঁর পরিচয় গোপন রাখবে।

পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের হত্যাকাণ্ড (২১শ–২৪শ খণ্ড)

Thumb
ইউলিসিস অ্যান্ড টেলামেকাস কিল পেনেলোপি’জ সুইটরস, টমাস ডিজর্জ অঙ্কিত (১৮১২)

পরদিন আথিনার পরামর্শক্রমে পেনেলোপি তাঁর পাণিপ্রার্থীদের ওডিসিউসের ধনুক ব্যবহার করে এক তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাঁকে জয় করার আহ্বান জানান। যে ধনুকে জ্যা সংযোজন করে বারোখানি কুঠারের মাথার মধ্য দিয়ে তির চালাতে পারবে সেই জিতবে। ওডিসিউস এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তিনিই একমাত্র ধনুকে জ্যা সংযোজন করে বারোখানি কুঠারের মাথার মধ্য দিয়ে তির চালাতে সক্ষম হন এবং জয়লাভ করেন। তারপর তিনি নিজের জীর্ণ বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলেন এবং পরের তিরটি দিয়ে অ্যান্টোনিয়াসকে হত্যা করেন। অন্যান্য পাণিপ্রার্থীদেরও ওডিসিউস প্রথমে অবশিষ্ট তির ও তারপর তরবারি ও বর্শা দিয়ে হত্যা করেন। এই যুদ্ধে জয়লাভের পর টেলামেকাস বারো জন পরিচারিকাকে ফাঁসিতে ঝোলায়। এদের ইউরিক্লিয়া চিহ্নিত করেছিল হয় পেনেলোপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা অথবা তাঁর পাণিপ্রার্থীদের অঙ্কশায়িনী হওয়ার অভিযোগে। ওডিসিউস পেনেলোপির কাছে প্রথম আত্মপরিচয় প্রদান করেন। পেনেলোপি প্রথমে ইতস্তত করলেও, ওডিসিউস যখন বলেন যে তিনি তাঁদের শয্যা এক জীবন্ত অলিভ গাছ দ্বারা প্রস্তুত করেছিলেন, তখন তিনি স্বামীকে চিনতে পারেন।

Remove ads

গঠন

ওডিসি মহাকাব্যটি ১২,১০৯ চরণবিশিষ্ট এবং ড্যাকটিলিক হেক্সামিটার (যা হোমারীয় হেক্সামিটার নামেও পরিচিত) ছন্দে রচিত।[][] এই কাব্যের আখ্যানভাগ শুরু হয়েছে ঘটনাপ্রবাহের মাঝখানে, অর্থাৎ সামগ্রিক আখ্যানভাগের মধ্যবর্তী এক জায়গায়; পূর্ববর্তী ঘটনাবলি বর্ণিত হয়েছে অতীতচারণ ও গল্পকথনের মাধ্যমে।[] ২৪টি স্কন্ধ শুরু হয়েছে গ্রিক বর্ণমালার এক-একটি অক্ষর দ্বারা; সম্ভবত কাব্যরচনা সম্পূর্ণ হওয়ার পর হোমারের পরিবর্তে অন্য কেউ এটিকে ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিভাজিত করেছেন। তবে এই বিভাজন সর্বজনস্বীকৃত।[]

ধ্রুপদি যুগে কয়েকটি স্কন্ধ (স্বতন্ত্রভাবে অথবা গুচ্ছ আকারে) সাধারণভাবে পৃথক পৃথক শিরোনাম দ্বারা অভিহিত হত:

  • স্কন্ধ ১–৪: টেলিম্যাসি —কাহিনির এই অংশ টেলেমেকাসের দৃষ্টিকোণ থেকে কথিত হয়েছে[]
  • স্কন্ধ ৯–১২: আপোলোগোই—ফিএশীয় আশ্রয়দাতাদের অভিযানের কথা স্মরণ করছেন অডিসিউস।[]
  • স্কন্ধ ২২: নেস্টারোফোনিয়া ('পাণিপ্রার্থীদের হত্যা'; প্রাচীন গ্রিক: Mnesteres + প্রাচীন গ্রিক: phónos).[]

২২শ খণ্ডেই গ্রিক মহাকাব্য চক্রের সমাপ্তি; যদিও টেলিগনি নামে অভিহিত এক ধরনের "বিকল্প সমাপ্তি" কয়েকটি খণ্ডাংশে পাওয়া যায়। টেলিগনি অংশটি ছাড়াও ওডিসি মহাকাব্যের শেষ ৫৪৮টি চরণ নিয়ে ২৪শ স্কন্ধটি রচিত। অনেক গবেষকেরই ধারণা এটি সামান্য পরবর্তীকালের কোনও এক কবির দ্বারা এই মহাকাব্যে প্রক্ষিপ্ত হয়।[১০]

Remove ads

ভূগোল

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কথিত আছে, ওডিসি-র প্রধান পর্যায়ের ঘটনাগুলি (নিজের ভ্রমণ সম্পর্কে অডিসিউসের নিহিত গল্পকথন সহ) ঘটেছিল পেলোপোনেসিতে এবং বর্তমানে যা আইনিয়ান দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত সেই অঞ্চলে।[১১] অডিসিউসের নিজের দেশ ইথাকাকে আপাতভাবে সহজে শনাক্ত করা কঠিন। অধুনা যে দ্বীপটি প্রাচীন গ্রিক: Ithakē (আধুনিক গ্রিক: প্রাচীন গ্রিক: Ιθάκη) নামে পরিচিত, হোমারের ইথাকা সেই দ্বীপ হতেও পারে, আবার নাও পারে।[১১] ফিএশীয়দের কাছে বর্ণিত অডিসিউসের ভ্রমণবৃত্তান্ত এবং এই ফিএশীয়দের নিজস্ব স্কাইরিয়া দ্বীপের অবস্থান নির্ণয়ে অধিকতর মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যদি তার মধ্যে ভূগোলকে যুক্ত করা হয়: প্রাচীন ও আধুনিক উভয় যুগের গবেষকদের মধ্যেই এই ব্যাপারে মতদ্বৈধ আছে যে অডিসিউস যে সব স্থানে গিয়েছিলেন (ইসমারোস ও ইথাকায় প্রত্যাবর্তনের আগে) সেগুলি বাস্তব কিনা।[১২] উভয় যুগের গবেষকেরাই অডিসিউসের যাত্রাপথের মানচিত্র অঙ্কন করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে অধিকাংশই মনে করেন এই স্থানগুলির (বিশেষত আপোলোজিয়া অর্থাৎ নবম থেকে একাদশ স্কন্ধে বর্ণিত স্থানগুলি) মধ্যে পৌরাণিক বৈশিষ্ট্যগুলি এমনভাবে মিশে গিয়েছে যে, তা যথাযথভাবে মানচিত্রায়িত করা অসম্ভব।[১৩] ধ্রুপদি ইতিহাসবিদ পিটার টি. স্ট্রাক পারস্পরিকভাবে সক্রিয় একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন, যার মধ্যে অডিসিউসের যাত্রাপথ বর্ণিত হয়।[১৪] এই মানচিত্রে বায়ুথলি দ্বারা প্রতিহত অডিসিউসের প্রায়-প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিও ধৃত হয়েছে।[১৩]

প্রভাব

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
পোড়ামাটির ফলকে মেসোপটেমীয় ওগার হুমবাবার উৎকীর্ণ চিত্র; মনে করা হয় যে পলিফেমাসের আকৃতিটি সম্ভবত হুমবাবার আকৃতি থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

গবেষকদের মতে, ওডিসি-তে নিটক প্রাচ্যের পুরাণ ও সাহিত্যের প্রভাব অত্যন্ত শক্তিশালী।[১৫] মার্টিন ওয়েস্ট গিলগামেশের মহাকাব্যওডিসি-র মধ্যে অসংখ্য সাদৃশ্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।[১৬] ওডিসিউস ও গিলগামেশ দু’জনেই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করেন এবং যাত্রাপথে তাঁরা মৃতের দেশে উপস্থিত হয়েছিলেন।[১৭] পাতাললোকে যাত্রার সময় ওডিসিউস সার্সির দেওয়া নির্দেশ অনুসরণ করেন। এই সার্সি পৃথিবীর শেষ প্রান্তে বাস করতেন এবং সূর্যের একটি মূর্তির মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।[১৮] ওডিসিউসের মতো, গিলগামেশও মৃতদের রাজ্যে যাওয়ার পথনির্দেশ পেয়েছিলেন এক দৈব সহায়তাকারিণীর থেকে: দেবী সিদুরি, যিনি সার্সিরই মতো পৃথিবীর শেষ প্রান্তে সমুদ্রে বাস করতেন এবং যাঁর গৃহও সূর্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গিলগামেশ সাদুরির গৃহে উপনীত হয়েছিলেন মাশু পর্বতের তলায় অবস্থিত একটি সুড়ঙ্গপথ ধরে। সুউচ্চ এই পর্বত থেকেই সূর্য আকাশে উঠতেন বলে মনে করা হত।[১৯] ওয়েস্ট মনে করেন যে, পৃথিবীর শেষ প্রান্তে ওডিসিউস ও গিলগামেশের যাত্রাপথের মধ্যে এই সাদৃশ্যের কারণ হল ওডিসি-র উপর গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রভাব।[২০]

১৯১৪ সালে জীবাশ্মবিজ্ঞানী ওথেনিও আবেল অনুমান করেন যে, গ্রাচীন গ্রিকরা একটি হাতির করোটি খুঁজে পেয়েছিল; তারই ফলশ্রুতিতে সাইক্লপসের ধারণাটির উদ্ভব ঘটে। যারা কোনওদিন জীবন্ত হাতি দেখেনি তাদের কাছে কপালের মধ্যস্থলে প্রকাণ্ড নাসাছিদ্রটি সম্ভবত এক দৈত্যের অক্ষিগোলকের ন্যায় মনে হয়েছিল। অপর পক্ষে, ধ্রুপদি গবেষকেরা দীর্ঘকাল ধরেই জানতেন যে সাইক্লপসের কাহিনি আদিতে ছিল একটি রূপকথা, যা ওডিসি মহাকাব্যের বাইরেও স্বতন্ত্রভাবে প্রচলিত ছিল এবং পরবর্তীকালে তা ওডিসি-র অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমগ্র ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে অনুরূপ কাহিনি পাওয়া যায়।[২১] এই ব্যাখ্যা ধরলে সাইক্লপস আদিতে ছিল সাদামাটাভাবে এক দৈত্য বা ওগর্, অনেকটা গিলগামেশ মহাকাব্যের হুমবাবার মতো।[২১] গ্রাহাম আন্ডারসন মনে করেন যে, এই ধারণার সঙ্গে একটি মাত্র চক্ষুর ধারণাটি আবিষ্কার করা হয় এই জীবটিকে যে সহজেই অন্ধ করে দেওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করতে।[২২]

Remove ads

বিষয়বস্তু ও গঠনবৈশিষ্ট্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

গৃহে প্রত্যাবর্তন

Thumb
ওডিসি (১৭৯৪)

ওডিসি মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় বিষয়টি হল গৃহে প্রত্যাবর্তন (প্রাচীন গ্রিক: νόστος, nostos)।[২৩] কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানা বোনিফাজি লিখেছেন যে, হোমারে নোসটোস হল "সমুদ্রপথে ট্রয় থেকে গৃহে প্রত্যাবর্তন"।[২৪] আগাথা থর্নটন নোসটোস-এর ধারণাটিকে ওডিসিউস ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রের প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষণ করেছেন ওডিসি-র সমাপ্তির পর কী ঘটতে পারে তার একটি বিকল্প প্রদান করার জন্য।[২৫] যেমন, অ্যাগামেমননের গৃহে প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষিতে ওডিসিউসের গৃহে প্রত্যাবর্তনের পার্থক্যটি একটি উদাহরণ। গৃহে ফিরে স্ত্রী ক্লাইটিমনেস্ট্রা ও স্ত্রীর প্রেমিক এজিস্থাসের হাতে খুন হন অ্যাগামেমনন। অ্যাগামেমননের পুত্র ওরেস্টেস পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধকল্পে এজিস্থাসকে হত্যা করে। ওডিসিউসের পত্নী পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এজিস্থাসের হত্যাকাণ্ডের সাদৃশ্য এখানেই এবং তা ওরেস্টেসকে টেলামেকাসের আরেক প্রতিরূপে পরিণত করেছে।[২৫] তাছাড়া ওডিসিউস যেহেতু ক্লাইটেমনেস্ট্রার বিশ্বাসঘাতকতার কথা আগেই জানতে পেরেছিলেন, সেই হেতু তিনি নিজের পত্নী পেনেলোপির বিশ্বস্ততা পরীক্ষা করার জন্য ছদ্মবেশে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন।[২৫] পরে ওডিসিউসকে হত্যা না করার জন্য অ্যাগামেমনন পেনেলোপির প্রশংসা করেছেন। পেনেলোপির জন্য ওডিসিউস খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং গৃহে প্রত্যাবর্তনে সফল হয়েছিলেন। আকিলিসের পক্ষে গৃহে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়নি, তিনি খ্যাতি অর্জন করলেও যুদ্ধে নিহত হন। আবার অ্যাগামেমননের গৃহে প্রত্যাবর্তনকে সফল প্রত্যাবর্তন বলা চলে না, কারণ, গৃহে ফিরেই তিনি খুন হয়েছিলেন।[২৫]

দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা

ওডিসিউসের দু’টি মাত্র অভিযান কথক কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। অন্যান্য অভিযানগুলির সব ক’টিই ওডিসিউস নিজে পুনর্কথন করেন। কথক কর্তৃক বর্ণিত দৃশ্য দু’টি হল কালিপসোর দ্বীপে ওডিসিউস এবং ফিয়েশীয়দের সঙ্গে ওডিসিউসের সাক্ষাতের ঘটনাটি। কবি নিজে এই দৃশ্যগুলির বর্ণনা দিয়েছেন ওডিসিউসের যাত্রাপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটিকে ইঙ্গিত করার জন্য: আত্মগোপন করে থাকা থেকে গৃহে প্রত্যাবর্তনের পথ ধরা।[২৬]

কালিপসোর নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ প্রাচীন গ্রিক: kalúptō (প্রাচীন গ্রিক: καλύπτω) থেকে, যার অর্থ ‘আবরণ করা’ বা ‘গোপন করা’; নামটি যথাযথ, কারণ, ওডিসিউসকে তিনি গোপন করেই রেখেছিলেন।[২৭] কালিপসো ওডিসিউসকে জগতের থেকে গোপন করে রেখেছিলেন বলেই তিনি গৃহে ফিরতে পারছিলেন না। কালিপসোর দ্বীপ ত্যাগ করার পর কবি ফিয়েশীয়দের সঙ্গে ওডিসিউসের সাক্ষাতের কথা বর্ণনা করেছেন। এই ফিয়েশীয়রা "সকল মানুষকে নিরাপত্তা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান"[২৮]—যা গৃহে না ফেরা থেকে গৃহে ফেরার মধ্যে যে পরিবর্তন তার ইঙ্গিতবাহী।[২৬]

এছাড়াও যাত্রাপথে ওডিসিউসের সঙ্গে এমন অনেক সত্ত্বার সাক্ষাৎ হয় যারা দেবতাদের খুব নিকটবর্তী। ওডিসিউস যে মানুষের অগম্য এল লোকে অবস্থান করছিলেন এবং সেটাই তাঁকে গৃহে প্রত্যাবর্তনে বাধা দিচ্ছিল – এই বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করে এই সাক্ষাতের ঘটনাগুলি।[২৬] দেবতাদের নিকটবর্তী এই সত্ত্বাগুলির অন্যতম হল ফিয়েশীয়রা। এরা সাইক্লপসদের বাসস্থানের নিকটেই অবস্থান করত।[২৯] ফিয়েশীয়দের রাজা অ্যালসিনোয়াস হলেন দৈত্যদের রাজা ইউরিমিডনের প্রপৌত্র এবং পসেইডনের পৌত্র।[২৬] অন্যান্য যে চরিত্রগুলির সঙ্গে ওডিসিউসের দেখা হয় তাদের মধ্যে সাইক্লপস পলিফিমাস হলেন পসেইডনের পুত্র; মানুষকে পশুতে পরিণত করার ক্ষমতার অধিকারিণী জাদুকরী সার্সি এবং লেস্ট্রিগনিয়ান নামে এক ধরনের নরখাদক দৈত্য।[২৬]

অতিথি-পরায়ণতা

সমগ্র মহাকাব্য জুড়েই দেখা যায় ওডিসিউসের সঙ্গে জেনিয়া-র ("অতিথি-পরায়ণতা") বেশ কয়েকটি উদাহরণের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই ঘটনাগুলি আতিথি সৎকারকারীর কর্তব্য ও অকর্তব্যের নীতিগুলি স্থির করে দেয়।[৩০] ফিয়েশীয়রা আদর্শ অতিথি-পরায়ণতার নিদর্শন স্থাপন করেছিল ওডিসিউসকে খাদ্য, নিদ্রার স্থান, বহু উপহার ও নিরাপদে গৃহে প্রত্যাবর্তনের জন্য জাহাজ প্রদান করে। এগুলি আদর্শ অতিথি-পরায়ণের কর্তব্য জ্ঞান করা হত। অন্যদিকে পলিফিমাস আদর্শ অতিথি-পরায়ণের বিপরীত ধারণা। ভবিষ্যতে সে ওডিসিউসকে গ্রাস করবে, এই কথাটিই ওডিসিউসকে দেওয়া তার একমাত্র "উপহার"।[৩০] কালিপসোও আদর্শ অতিথি-পরায়ণতার উদাহরণ নন, কারণ তিনি ওডিসিউসকে তাঁর দ্বীপ ত্যাগ করতে দেননি।[৩০] অতিথি-পরায়ণতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রাজপদ উদারতার প্রতীক। বোঝা যায় যে, রাজাকে এক উদার আশ্রয়দাতা হতে হত এবং নিজের সম্পদ দান করে অতিথিকে সহায়তা করতে হত।[৩০] এই বিষয়টি সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায় যখন ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে ওডিসিউস পেনেলোপির অন্যতম পাণিপ্রার্থী অ্যান্টিনোয়াসের কাছে খাদ্য প্রার্থনা করেন এবং অ্যান্টিনোয়াস তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। ওডিসিউস তাৎপর্যপূর্ণভাবে মন্তব্য করেন যে, অ্যান্টোনিয়াসকে রাজার মতো দেখতে হতে পারে, কিন্তু তিনি উদান নন বলে তিনি রাজা হওয়া থে অনেক দূরে আছেন।[৩১]

জে. বি. হেইনসওয়ার্থের মতে, অতিথি-পরায়ণতার একটি সুনির্দিষ্ট ধরন রয়েছে:[৩২]

  1. নিজে এসে অতিথির অভ্যর্থনা।
  2. অতিথিকে স্নানের উপাদান ও নতুন বস্ত্র প্রদান।
  3. অতিথির জন্য খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা।
  4. অতিথির সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যেত এবং আশ্রয়দাতাকেই অতিথির বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হত।
  5. অতিথিকে নিদ্রার জন্য স্থান দিতে হত, এবং রাতের জন্য অতিথি ও আশ্রয়দাতা বিশ্রাম নিতেন।
  6. অতিথি ও আশ্রয়দাতা উপহার আদান-প্রদান করতেন, অতিথিকে নিরাপদে গৃহে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হত এবং অতিথি যাত্রা শুরু করতেন।

অতিথি-পরায়ণতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অতিথির যতদিন ইচ্ছা তার বেশি তাঁকে আটকে না রাখা এবং যতদিন অতিথি আশ্রয়দাতার গৃহে অবস্থান করেন ততদিন তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।[৩৩]

পরীক্ষা

Thumb
পেনেলোপি প্রশ্ন করে ওডিসিউসের পরিচয় নিশ্চিত করছেন।

সমগ্র ওডিসি জুড়ে অপর আরেকটি যে বিষয় দেখা যায় তা হল পরীক্ষা।[৩৪] এই পরীক্ষা দুই প্রকারের। ওডিসিউস অন্যদের বিশ্বস্ততা পরীক্ষা করেছেন এবং অন্যেরা নিয়েছেন ওডিসিউসের আত্মপরিচয়ের যথার্থতার পরীক্ষা। গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর ওডিসিউস কর্তৃক সবার বিশ্বস্ততার পরীক্ষাগ্রহণ এরই একটি উদাহরণ।[৩৪] আগেই আত্মপরিচয় না দিয়ে তিনি ভিখারির ছদ্মবেশে নিজগৃহে প্রবেশ করেন এবং সকলের বিশ্বস্ততার পরীক্ষার পাশাপাশি পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের সহায়তাকারীদেরও চিনে নেন। আবার আত্মপরিচয় ঘোষণার পর অন্যরাও ওডিসিউসের দাবির যথার্থতা পরীক্ষায় অগ্রসর হয়।[৩৪] যেমন, ওডিসিউসকে পরীক্ষা করতে পেনেলোপি বলেছিলেন যে, তিনি ওডিসিউসের জন্য অন্য ঘরে শয্যা স্থানান্তরিত করতে চান। কাজটি বিশেষ কঠিন ছিল। কারণ, শয্যাটি প্রস্তুত করা হয়েছিল একটি জীবন্ত গাছে এবং সেটিকে স্থানান্তরিত করতে হলে গাছটিকেই কেটে ফেলতে হত। একমাত্র প্রকৃত ওডিসিউসই এই রহস্য জানতেন। এইভাবেই তিনি নিজের পরিচয় প্রমাণ করলেন।[৩৪]

ওডিসি-তে এক ধরনের সুনির্দিষ্ট নমুনা দৃশ্য পরীক্ষাগুলির সঙ্গে যুক্ত। সমগ্র মহাকাব্যে আগাগোড়াই একে অপরকে পরীক্ষা করার বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে চলে এসেছে:[৩৪][৩৩]

  1. অন্যদের বিশ্বস্ততার পরীক্ষা নিতে ইস্ততত করেন ওডিসিউস।
  2. অন্যদের প্রশ্ন করে তাদের বিশ্বস্ততার পরীক্ষা নেন ওডিসিউস।
  3. অন্যরা ওডিসিউসের প্রশ্নের উত্তর দেন।
  4. ওডিসিউস আত্মপরিচয় ঘোষণা করেন।
  5. অন্যরা ওডিসিউসের দাবির যথার্থতা পরীক্ষা করেন।
  6. ওডিসিউসকে শনাক্ত করার পর আবেগের যে বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, তা মূলত বিলাপের ও আনন্দের।
  7. শেষপর্যন্ত বিশ্বস্তদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়ে ওডিসিউস একযোগে কাজ করতে থাকেন।

সংকেত

Thumb
ওডিসিউস ও ইউরিক্লিয়া, ক্রিস্টিয়ান গটলব হাইনে অঙ্কিত

ওডিসি মহাকাব্যের সমগ্র অংশ জুড়েই অনেক শুভ বা অশুভ সংকেতের কথা উল্লিখিত হয়েছে। প্রায়শ ক্ষেত্রে এই সংকেতগুলির সঙ্গে পাখির সম্পর্ক দেখা গিয়েছে।[৩৫] থর্নটনের মতে, প্রতিটি সংকেত কে পাচ্ছেন এবং কী উপায়ে সংকেতগুলি প্রকাশিত হচ্ছে সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, টেলামেকাস, পেনেলোপি, ওডিসিউস ও পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীদের কাছে সংকেত প্রকাশিত হয়ে পাখির আকারে;[৩৫] টেলামেকাস ও পেনেলোপি শব্দ, হাঁচি ও স্বপ্নের আকারেও সংকেত লাভ করেছেন;[৩৫] একমাত্র ওডিসিউসই সংকেত লাভ করেছেন বজ্রপাত বা বিদ্যুতের ঝলকানির মাধ্যমে।[৩৬][৩৭] থর্নটন এই বিষয়টির এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী তাৎপর্যের দিকে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, বজ্র জিউসের প্রতীক হওয়ায় তা একাধারে ওডিসিউসের রাজপদেরও প্রতীক হয়ে উঠেছে।[৩৫] ইলিয়াডওডিসি দুই মহাকাব্যেই আগাগোড়া জিউস জড়িয়ে রয়েছেন ওডিসিউসের কাহিনির সঙ্গে।[৩৮]

সংকেতগুলি ওডিসি-তে নমুনা দৃশ্যের আরেক উদাহরণ। একটি সংকেতের দু’টি অংশ: সেটির শনাক্তকরণ এবং তারপর সংকেতের ব্যাখ্যা[৩৫] এই মহাকাব্যে পাখির সংকেতগুলিতে (শুধু প্রথমটি বাদে) বড়ো পাখিদের ছোটো পাখি আক্রমণ করতে দেখা যায়।[৩৫][৩৩] প্রতিটি সংকেত দেখা মাত্র একটি ইচ্ছাও প্রকাশ্যে বা ইঙ্গিতে ব্যক্ত হতে দেখা যায়।[৩৫] যেমন, টেলামেকাস প্রতিশোধের ইচ্ছা প্রকাশ করে,[৩৯] ওডিসিউস গৃহে প্রত্যাবর্তনের,[৪০] পেনেলোপি ওডিসিউসের ফিরে আসার,[৪১] এবং পেনেলোপির পাণিপ্রার্থীরা টেলামেকাসের মৃত্যু কামনা করে।[৪২]

Remove ads

মূল পাঠের ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

রচনা

ওডিসি-র রচনাকাল নিয়ে ধ্রুপদি ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিছু মতানৈক্য রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে গ্রিসের অধিবাসীরা তাদের নিজেদের ভাষা লিপিবদ্ধ করার জন্য ফিনিশীয় লিপির একটি সংশোধিত রূপ ব্যবহার করতে শুরু করেছিল।[৪৩] সম্ভবত সাক্ষরতার সেই আদি যুগের প্রথম দিকের ফসলগুলির অন্যতম ছিল হোমারের মহাকাব্যগুলি। তাই যদি হয়, তাহলে এগুলিকে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগের রচনা বলে ধরতে হবে।[৪৪] ইতালির ইশিয়াতে প্রাপ্ত একটি মাটির পাত্রে খোদিত আছে "নেস্টরের পাত্র, এ থেকে পান করলে ভালো লাগবে।"[৪৫] ক্যালভার্ট ওয়াটকিনস প্রমুখ কয়েকজন গবেষক এই কথাগুলিকে ইলিয়াড-এ উল্লিখিত রাজা নেস্টরের স্বর্ণপাত্রের দ্যোতক বলে উল্লেখ করেন।[৪৬] এই পাত্রটি যদি ইলিয়াড-এর একটি পরোক্ষ উল্লেখ হয়, তাহলে কাব্যটির রচনাকাল অন্ততপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-৭৫০ অব্দ।[৪৩]

হোমারের মহাকাব্যগুলি বা সেগুলির অংশবিশেষ প্রথম দিকে কয়েকশো বছর ধরে নিয়মিত "র্যাপসোডি" অর্থাৎ চারণকবিদের দ্বারা উপস্থাপিত হয়ে এসেছিল বলেই এগুলির তারিখ নির্ণয় করা বিশেষ কঠিন কাজ।[৪৩] ওডিসি-র বর্তমান পাঠটি সম্ভবত এর আদি পাঠের থেকে খুব একটা ভিন্নতর নয়।[৪৪] ছোটোখাটো ফারাকগুলি বাদ দিলে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যেই এথেন্সের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে হোমারের মহাকাব্যগুলি প্রামাণ্য গ্রন্থের স্বীকৃতি অর্জন করেছিল।[৪৭] খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৬ অব্দে পিসিস্ট্রেটাস প্যানাথেনাইয়া নামে একটি সাধারণ ও ধর্মীয় উৎসব প্রবর্তন করেন। এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল হোমারীয় মহাকাব্যের উপস্থাপনা।[৪৮] উৎসবের সময় মহাকাব্যগুলির এক "সঠিক" পাঠের উপস্থাপনা বাধ্যতামূলক ছিল বলেই এই বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। এর থেকেই অনুমিত হয় যে, মহাকাব্যগুলির একটি নির্দিষ্ট পাঠ প্রামাণ্য বলে স্বীকৃত হত।[৪৯]

মূল পাঠ-সংক্রান্ত প্রথা

Thumb
গ্রিক নবজাগরণ বিশারদ ডোমেনিকো গারল্যান্ডিওর প্রতিকৃতি, ইতালীয় চিত্রকর ডিমেট্রিওস ক্যালকোকোন্ডাইলস অঙ্কিত। ১৪৮৮ সালে গারল্যান্ডিও প্রথম ওডিসি-র মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ করেন।

প্রাচীনকালে যে সব দেশে গ্রিক ভাষা কথিত হত, সেখানেই ইলিয়াডওডিসি-র প্রতিলিপিকরণ এবং বিদ্যালয় পাঠ্যপুস্তক হিসেবে এই দুই গ্রন্থের ব্যবহার ছিল সাধারণ ঘটনা।[৫০][৫১] সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে অ্যারিস্টটলের সময়কাল থেকেই গবেষকেরা এই মহাকাব্যগুলির উপর টীকা রচনা শুরু করেছিলেন।[৫০] খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত গবেষকেরা (বিশেষত জেনোডোটাসসামোথ্রেসের অ্যারিস্টারকাস) হোমারীয় মহাকাব্যগুলি সম্পাদনা করেন, সেগুলির উপর টীকা রচনা করেন এবং সেগুলিকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেন।[৫২]

মধ্যযুগে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যেও ইলিয়াডওডিসি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল এবং বিদ্যালয়ের পাঠ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছিল।[৫০][৫১] বাইজেনটাইন গ্রিক পণ্ডিত ও আর্চবিশপ থেসালোনিকার ইউস্টেথিয়াস (আনু. ১১১৫-১১৯৫/৬ খ্রিস্টাব্দ) হোমারের দুই মহাকাব্যের উপরেই অনুপূঙ্খ টীকা রচনা করেন, যা পরবর্তী প্রজন্মগুলির কাছে প্রামাণ্য বলে গৃহীতও হয়।[৫০][৫১] ওডিসি-র ইউস্টেথিয়াস রচিত টীকা বিংশ শতাব্দীর সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় ২,০০০ বৃহদাকার পৃষ্ঠায়।[৫০] ১৪৮৮ সালে গ্রিক পণ্ডিত ডিমেট্রিওস ক্যালকোকোন্ডাইলস ওডিসি-র প্রথম মুদ্রিত সংস্করণটি (যা এডিশিও প্রিন্সেপস নামে পরিচিত) প্রকাশ করেন। ক্যালকোকোন্ডাইলস এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং পড়াশোনা করেছিলেন কনস্ট্যানটিনোপলে।[৫০][৫১] অ্যান্টনিওস ড্যামিলাস নামে এক গ্রিক মুদ্রক কর্তৃক মিলান থেকে এই সংস্করণটি মুদ্রিত হয়েছিল।[৫১]

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে মিশরে ওডিসি-র খণ্ডাংশ সম্বলিত অনেক প্যাপিরাই আবিষ্কৃত হতে থাকে। এগুলির মধ্যে কোনও কোনওটির পাঠ মধ্যযুগের শেষভাগের পাঠের থেকে আলাদা।[৫৩]

২০১৮ সালের গ্রিসের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রক অলিম্পিয়ায় জিউসের মন্দিরের কাছ থেকে ওডিসি-র চতুর্দশ সর্গ থেকে তেরোটি চরণের খোদাই-সম্বলিত একটি মৃৎফলক আবিষ্কারের কথা জানায়। প্রথমে এই ফলকটি খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর বলে জানানো হলেও, গবেষকেরা এটির সঠিক সময়কাল সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেননি।[৫৪][৫৫]

ইংরেজি অনুবাদ

১৬১৪ সালে কবি জর্জ চ্যাপম্যান প্রথম ওডিসি মহাকাব্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ইংরেজি অনুবাদ করেন আয়াম্বিক পেন্টামিটার ছন্দের অন্ত্যমিলযুক্ত দ্বিপদীতে।[৫০] পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ল্যাসিকাল বিদ্যার গবেষক এমিলি উইলসন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষভাগে দেখিয়েছেন যে, গ্রিক ও রোমান সাহিত্যের প্রায় সকল প্রধান অনুবাদকেরাই ছিলেন পুরুষ।[৫৬] নিজের হোমার অনুবাদের অভিজ্ঞতাকে তাই উইলসন বলেছেন অন্যতম "অন্তরঙ্গ বিচ্ছিন্নতা"-র অভিজ্ঞতা।[৫৬] তিনি লিখেছেন, ওডিসি-র চরিত্র ও ঘটনাবলি সম্পর্কে জনপ্রিয় ধারণাগুলিও এই কারণে প্রভাবিত হয়েছিল;[৫৭] ফলে মূল পাঠে অনুপস্থিত ধ্যানধারণাও গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল: "উদাহরণস্বরূপ, যে দৃশ্যে টেলামেকাস পেনেলোপির পাণিপার্থীদের অঙ্কশায়িনী ক্রীতদাসীদের ফাঁসির তদারকি করছে, সেখানে অধিকাংশ অনুবাদেই নিন্দাসূচক শব্দ প্রযুক্ত হয়েছে ("বেশ্যা"-জাতীয় শব্দ) […] মূল গ্রিক পাঠে যদিও ক্রীতদাসীদের এই ধরনের নিন্দাসূচক শব্দ দ্বারা অভিহিত করা হয়নি।"[৫৭] মূল গ্রিকে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল স্ত্রীলিঙ্গবাচক হাই শব্দটি, যার অর্থ "সেই সব স্ত্রীলোকেরা"।[৫৮]

Remove ads

প্রভাব

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
জেমস জয়েসের ইউলিসিস উপন্যাসের প্রচ্ছদ

হোমারের মহাকাব্যগুলি জনসাধারণের কল্পনার জগৎ ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে কতখানি প্রভাবিত করেছিল তা সংক্ষেপে বলা কঠিন।[৫৯] প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় সমাজের সদস্যদের শিক্ষার মূল ভিত্তিটি রচনা করে ওডিসিইলিয়াড। পাশ্চাত্য মানবতাবাদীরাও এই শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করেছিলেন।[৬০] এর থেকেই বোঝা যায় যে পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক কাঠামোয় এই দুই মহাকাব্যের প্রভাব ঠিক কতখানি।[৬১] এককভাবে ওডিসি-ও হাজারেরও বেশি বছর ধরে সাহিত্যের মধ্য দিয়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বিবিসি কালচার কর্তৃক আয়োজিত বিশেষজ্ঞদের একটি সমীক্ষায় এই কাব্য সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী কথাবস্তুর তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল।[] পাশ্চাত্যের সাহিত্য সমালোচকদের একটি বৃহৎ অংশ এই মহাকাব্যটিকে এক যুগোত্তীর্ণ ধ্রুপদি সাহিত্য মনে করেন[৬২] এবং সেই সঙ্গে এটি পাশ্চাত্য পাঠকসমাজে বহুল পঠিত প্রাচীনতম তথা অধুনা লভ্য সাহিত্যের অন্যতম রচনার মর্যাদা ধরে রেখেছে।[৬৩]

সাহিত্য

আইরিশ সাহিত্যিক জেমস জয়েসের আধুনিক উপন্যাস ইউলিসিস-এর (১৯২২) উপর ওডিসি-র প্রভাব বেশ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। চার্লস ল্যাম্ব রচিত শিশুপাঠ্য পুনর্কথন অ্যাডভেঞ্চারস অফ ইউলিসিস-এর সঙ্গে জয়েস সুপরিচিত ছিলেন। মনে করা হয়, এই বইটির দৌলতেই ওডিসিউসের লাতিন নামটি জয়েসের মনে গেঁথে গিয়েছিল।[৬৪][৬৫] ইউলিসিস উপন্যাসটি আসলে ডাবলিনের প্রেক্ষাপটে ওডিসি-র এক পুনর্কথন। আঠারোটি অংশে (পর্ব) বিভক্ত এই উপন্যাসটিকে ওডিসি-র চব্বিশটি সর্গের মধ্যে মোটামুটিভাবে ভাগ করে নেওয়া যায়।[৬৬] জয়েস হোমারীয় গ্রিকে রচিয় মূল পাঠটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন বলে দাবি করলেও কয়েকজন গবেষক বিপরীত প্রমাণ হিসেবে সেই ভাষায় জয়েসের দুর্বলতার দিকটি তুলে ধরেন।[৬৭] এই উপন্যাসটিকে (বিশেষত এটির চেতনা প্রবাহ শৈলীর গদ্যরীতিটিকে) আধুনিক সাহিত্যের ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়। [৬৮]

আধুনিক লেখিকারা ওডিসি-র নারী চরিত্রগুলির প্রেক্ষিতেও এই মহাকাব্যের পুনর্মুল্যায়ন করেন। কানাডিয়ান লেখিকা মার্গারেট অ্যাটউড দ্য পেনেলোপিয়াড (২০০৫) নামক উপন্যাসিকায় ওডিসি-র অংশবিশেষ গ্রহণ করেছেন। মূল মহাকাব্যে পেনেলোপির যে বারো জন ক্রীতদাসীকে ওডিসিউস ফাঁসি দেন, তাদের নিয়েই এই উপন্যাসিকাটি রচিত।[৬৯] ফাঁসির সেই বিবরণ অ্যাটউডের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করত। [৭০] ইথাকায় ওডিসিউসের সফল প্রত্যাবর্তনকে অ্যাটউড দেখিয়েছেন পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতীক রূপে।[৭০] অনুরূপভাবে ম্যাডেলাইন মিলারের সার্সি (২০১৮) উপন্যাসে ইয়িয়ায় ওডিসিউস ও সার্সির সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে।[৭১] পাঠিকা হিসেবে মূল মহাকাব্যে সার্সির উদ্দেশ্যহীনতা মিলারকে পীড়া দিয়েছিল, সেই কারণেই তিনি সার্সির অস্থিরমতিত্ব ব্যাখ্যায় উদ্যোগী হন।[৭২] মিলার লিখেছেন যে, আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার জন্য অন্য কোনও প্রকার অতিলৌকিক ক্ষমতা না থাকার কারণেই সার্সি নাবিকদের শূকরে পরিণত করেছিলেন।[৭৩]

চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন

  • ইউলিসিস (১৯৫৪) চলচ্চিত্রে ইউলিসিসের ভূমিকায় অভিনয় করেন কার্ক ডগলাস, পেনেলোপি ও সার্সির ভূমিকায় অভিনয় করেন সিলভানা ম্যানগানো এবং অ্যান্টিনোয়াসের ভূমিকায় অভিনয় করেন অ্যান্টনি কুইন[৭৪]
  • দি ওডিসি (১৯৬৮) হল একটি ইতালীয়-ফরাসি-জার্মান-যুগোস্লাভীয় টেলিভিশন মিনিসিরিজ। মূল মহাকাব্যের মূলানুগ চিত্রায়নের জন্য এটি প্রশংসিত হয়।[৭৫]
  • ইউলিসিস ৩১ (১৯৮১) হল একটি জাপানি-ফরাসি অ্যানিমে, যা প্রাচীন প্রেক্ষাপটটিকে একত্রিংশ শতাব্দীর একটি স্পেস অপেরায় উন্নীত করেছে।
  • নোসটোস: দ্য রিটার্ন (১৯৮৯) হল ওডিসিউসের গৃহে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা অবম্বনে নির্মিত একটি ইতালীয় চলচ্চিত্র। ফ্র্যাংকো পিয়াভোলি পরিচালিত এই ছবিটি দৃশ্যগত গল্পকথনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে এবং প্রকৃতির উপর বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করেছে।[৭৬]
  • ইউলিসিসেস’ গেজ (১৯৯৫); থিও অ্যাঙ্গেলোপলাস পরিচালিত; তৎকালীন ও পূর্ববর্তী বলকান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিতে ওডিসি-র অনেক উপাদান বিদ্যমান।[৭৭]
  • দি ওডিসি (১৯৯৭) হল আন্দ্রেই কোনক্যালোভস্কি পরিচালিত একটি টেলিভিশন মিনিসিরিজ। এটিতে ওডিসিউসের ভূমিকায় আর্মান্ড অ্যাসান্টে ও পেনেলোপির ভূমিকায় গ্রেটা শাশি অভিনয় করেন।[৭৮]
  • ও ব্রাদার, হোয়ার আর্ট দাউ? (২০০০) হল একটি অপরাধ-বিষয়ক কমেডি ড্রামা চলচ্চিত্র। কোয়েন ভ্রাতৃগণ রচিত, প্রযোজিত, সহ-সম্পাদিত ও পরিচালিত এই ছবিটি হোমারের মহাকাব্যের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত।[৭৯]

অপেরা ও সংগীত

  • ইল রিটোর্নো ডি’ইউলিসিস ইন প্যাট্রিয় (প্রথম উপস্থাপিত হয় ১৬৪০ সালে) হল হোমারের ওডিসি-র দ্বিতীয়ার্ধের ভিত্তিতে ক্লডিও মন্টেভার্ডি রচিত একটি অপেরা।[৮০]
  • রলফ রেইম এই অতিকথার ভিত্তিতে সিরেনেন – বিল্ডার ডেস বেগেহরেন্স আন্ড ডেস ভার্নিশতেন (সাইরেনগণ – কামনা ও ধ্বংসের চিত্রাবলি) নামে একটি অপেরা রচনা করেন। ২০১৪ সালে অপার ফ্র্যাংকফুটে এটির প্রিমিয়ার আয়োজিত হয়।[৮১]
  • কনসার্ট ব্যান্ডের জন্য রবার্ট ডব্লিউ. স্মিথের দ্বিতীয় সিম্ফনি দি ওডিসি রচনাটির চারটি মুভমেন্টে কাহিনির চারটি প্রধান অংশকে তুলে ধরেছে: "দি ইলিয়াড", "দি উইন্ডস অফ পসেইডন", "দি আইল অফ কালিপসো" ও "ইথাকা"।[৮২]
Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads