শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
কণিষ্ক
কুষান সাম্রাজ্যের রাজা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কণিষ্ক (ইংরেজি: Kanishka)(ব্যাক্ট্রিয়: Κανηϸκι) (রাজত্বকাল ৯৫ - ১৫১ খ্রিষ্টাব্দ) চতুর্থ কুষাণ সম্রাট ছিলেন, যিনি তার সামরিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক কার্যকলাপের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ছিলেন কুষাণ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কুজুল কদফিসেস -এর উত্তরসূরি। তার রাজত্ব তারিম দ্রোণীর তুরফান অঞ্চল থেকে গাঙ্গেয় সমতলভূমির পাটলিপুত্র পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পুরুষপুর, কপিশা ও মথুরা তার রাজ্যের রাজধানী ছিল। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম গান্ধার থেকে চীন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সুদীর্ঘ ৫৬ বছর কুষাণ সাম্রাজ্যে রাজত্ব করেন। তিনি কুষাণ সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে পরিচিত।
এরপর হুবিষ্ক হলেন কুষাণ সাম্রাজ্যের ৫ম সম্রাট। যদিও তাঁর কথা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তিনি ১৫০ থেকে ১৮০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ৩০ বছর সাম্রাজ্য শাসন করেন।
Remove ads
রবাতক শিলালিপি
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে আফগানিস্তানের রবাতক নামক স্থান থেকে আবিষ্কৃত ব্যাক্ট্রিয় ভাষায় গ্রিক লিপিতে উৎকীর্ণ একটি শিলালিপি কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া যায়। এই লিপির শুরুতেই লেখা রয়েছে যে, নানা প্রভৃতি দেবতার ইচ্ছেয় কণিষ্ক একটি নতুন কালপঞ্জীর সূচনা করেন। কণিষ্ক গ্রিক ভাষা পরিত্যাগ করে ব্যাক্ট্রিয় ভাষারও প্রবর্তন করেন। এই লিপি অনুসারে, উজ্জয়িনী, সাকেত, কৌশাম্বী, পাটলিপুত্র ও শ্রী চম্পা নগরী পর্য্যন্ত তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই লিপির শেষে কণিষ্কের পিতৃপুরুষদের নাম পাওয়া যায়। এই লিপি থেকেই জানা যায় যে, কণিষ্কের প্রপিতামহ ছিলেন কুজুল কদফিসেস, পিতামহ ছিলেন ভীম তক্তো এবং পিতা ছিলেন ভীম কদফিসেস।[১] বি.এন. মুখার্জি এই লিপির একটি অনুবাদ করেন, যেখানে তিনি কণিষ্কের পিতামহের নাম হিসেবে সদষ্কণের নামের উল্লেখ করেন[২], কিন্তু সিমস-উইলিয়ামস রবাতক শিলালিপি পাঠ করে এই নাম খুঁজে পাননি।[১][৩]
Remove ads
মুদ্রা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
কণিষ্কের মুদ্রায় ভারতীয়, গ্রিক, ইরানীয়, সুমের ও ইলেম সংস্কৃতির পৌরাণিক চরিত্রগুলি স্থান পেয়েছে, যা কণিষ্কের সর্ব ধর্ম সহিষ্ণুতার প্রমাণ। তার রাজত্বের প্রথম দিকের মুদ্রায় গ্রিক পৌরাণিক চরিত্রের চিত্র সহ গ্রিক হরফ উৎকীর্ণ হয়েছে। এরপর তার মুদ্রাগুলিতে গ্রিক সংস্কৃতির বদলে ইরানীয় পৌরাণিক চরিত্র ও গ্রিক লিপির বদলে ব্যাক্ট্রিয় ভাষা স্থান পায়। এই সমস্ত মুদ্রায় "ষ" বর্ণটিকে ব্যবহার করতে "Ϸ" বর্ণটি সৃষ্টি করা হয়। কণিষ্কের সকল মুদ্রায় তার শ্মশ্রুযুক্ত প্রতিকৃতি দেখা যায়। এই সকল চিত্রে তার পরণে লম্বা কোট ও বড় গোল জুতো, কোমরে লম্বা তরোয়াল এবং কাঁধ থেকে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ দেখা যায়।
গ্রিক মুদ্রা
কণিষ্কের গ্রিক মুদ্রাগুলির এক পিঠে তার প্রতিকৃতি সহ গ্রিক লিপিতে বাসিলেউস বাসিলেওন কানিষ্কোউ (ব্যাক্ট্রিয়: ΒΑΣΙΛΕΥΣ ΒΑΣΙΛΕΩΝ ΚΑΝΗϷΚΟΥ) কথাটি উৎকীর্ণ রয়েছে। মুদ্রাগুলির অপর পিঠে হেলিয়স (গ্রিক: ΗΛΙΟΣ), সেলেনে (গ্রিক: ΣΑΛΗΝΗ), আনেমোই (গ্রিক: ΑΝΗΜΟΣ) ও হেফাইস্তোস (গ্রিক: ΗΦΑΗΣΤΟΣ) প্রভৃতি গ্রিক পূরাণিক দেবদেবীর চিত্র ও নাম উৎকীর্ণ রয়েছে।
ইরানীয় মুদ্রা
কণিষ্কের পরবর্তী মুদ্রাগুলিতে গ্রিক দেব-দেবীর বদলে ইরানীয় দেব-দেবী স্থান পেয়েছে। তার মুদ্রায় যে সকল ইরানীয় পৌরাণিক চরিত্র স্থান পেয়েছে, তারা হলেন, অশি ভঙ্ঘুহি (ব্যাক্ট্রিয়: ΑΡΔΟΧϷΟ; আর্দোখষো), দ্র্বস্প (ব্যাক্ট্রিয়: ΛΡΟΟΑΣΠΟ; ল্রুউআস্পো), অতর (ব্যাক্ট্রিয়: ΑΘϷΟ; আদষো), খ্বরেনহ (ব্যাক্ট্রিয়: ΦΑΡΡΟ; ফাররো), মাহ (ব্যাক্ট্রিয়: ΜΑΟ; মাও), মিথ্র (ব্যাক্ট্রিয়: ΜΙΘΡΟ; মিথ্রো), মাজদা (ব্যাক্ট্রিয়: ΜΟΖΔΟΟΑΝΟ; মাজদাউআনো), ভোহু মানাহ (ব্যাক্ট্রিয়: ΜΑΝΑΟΒΑΓΟ; মানাওবাগো), বাতা-বায়ু (ব্যাক্ট্রিয়: ΟΑΔΟ; ওআদো), ভেরেথ্রগ্ন (ব্যাক্ট্রিয়: ΟΡΑΛΑΓΝΟ; ওরালাগ্নো) প্রভৃতি।
ভারতীয় মুদ্রা


কণিষ্কের আবিষ্কৃত মুদ্রাগুলির মধ্যে বৌদ্ধ মুদ্রাগুলির সংখ্যা অত্যন্ত দুর্লভ। এই সকল মুদ্রাগুলির এক পিঠে কণিষ্কের চিত্র ও শাওনানোশাও কানিষ্কি কোষানো (ব্যাক্ট্রিয়: ϷΑΟΝΑΝΟϷΑΟ ΚΑΝΗϷΚΙ ΚΟϷΑΝΟ) কথাটি ও অপর পিঠে গৌতম বুদ্ধ বা মৈত্রেয় বুদ্ধের চিত্র স্থান পেয়েছে। কণিষ্কের অন্য সকল মুদ্রায় দেব-দেবীর প্রতিকৃতি পাশ থেকে খোদাই করা হলেও গৌতম বুদ্ধ বা মৈত্রেয় বুদ্ধের প্রতিকৃতি সামনে থেকে মুদ্রিত করা হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের দণ্ডায়মান প্রতিকৃতিগুলির মাথায় উষ্ণীষ ও দেহে কষায় পরিধাণরত অবস্থায় এবং বাম হাত চীবর ধারণরত ও ডান হাত অভয় মুদ্রার ভঙ্গীতে রয়েছে। এই সকল মুদ্রায় গৌতম বুদ্ধের কান অত্যন্ত লম্বা করে মুদ্রিত হয়েছে। তার ডান হাতে চক্র চিহ্ন, কপালে ঊর্ণ ও দেহের চারিদিকে এক, দুই বা তিনটি রেখায় রশ্মিচ্ছটা দেখানো হয়েছে। এই সকল মুদ্রায় গৌতম বুদ্ধের প্রতিকৃতির সাথে বোদ্দো (ব্যাক্ট্রিয়: ΒΟΔΔΟ) কথাটি উৎকীর্ণ রয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের দণ্ডায়মান প্রতিকৃতিযুক্ত অন্য কয়েকটি তাম্র মুদ্রায় শাকামানো বোদ্দো (ব্যাক্ট্রিয়: ϷΑΚΑΜΑΝΟ ΒΟΔΔΟ) কথাটি উৎকীর্ণ রয়েছে। এই সকল মুদ্রায় গৌতম বুদ্ধের শরীরের অংশ স্পষ্ট ভাবে পরিস্ফূট হয়েছে, তার কষায় আগের মুদ্রাগুলির তুলনায় স্বচ্ছ এবং চীবরের অংশ বাম হাতে ভাঁজ করা রয়েছে। তার মাথার চারপাশে এক বা দুইটি রেখায় রশ্মিচ্ছটা দেখানো হয়েছে।
কণিষ্কের যে সকল তাম্র মুদ্রায় মৈত্রেয় বুদ্ধের চিত্র স্থান পেয়েছে, সেই মুদ্রাগুলিতে মেত্রাগো বোদ্দো (ব্যাক্ট্রিয়: ΜΕΤΡΑΓΟ ΒΟΔΔΟ) কথাটি উৎকীর্ণ রয়েছে। এই মুদ্রালিতে মৈত্রেয় বুদ্ধ কারুকার্য্যমণ্ডিত সিংহাসনে হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছেন। তার হাতে একটি জলের পাত্র রয়েছে ও হাতটি অভয় মুদ্রার ভঙ্গীতে রয়েছে এবং বাহুতে বাহুবন্ধ রয়েছে।
Remove ads
সাহিত্যে
বাংলা ভাষায় সম্রাট কনিষ্ককে কবন্ধ অর্থে প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত তার মস্তকহীন মূর্তির জন্যে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কাকাবাবু সিরিজের 'ভয়ংকর সুন্দর' উপন্যাসে কনিষ্কের মাথা কাটা যাওয়ার রোমাঞ্চকর কল্পকাহিনীর লিখেছেন।
তথ্যসূত্র
আরো পড়ুন
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads