শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
কলকাতার হকার
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কলকাতার হকার ২০০৫ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী, কলকাতার হকারদের সংখ্যা ২৭৫,০০০ এবং তাদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ৮,৭৭২ কোটি টাকা (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।[১] কলকাতা শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ ফুটপাথ হকার ও বেআইনি দখলদারদের কুক্ষিগত।[২] পৃথিবীর অনেক দেশেই হকাররা ফুটপাথ ও অন্যান্য প্রকাশ্য স্থান দখল করে নিজেদের ব্যবসা চালান। কিন্তু কলকাতায় হকারদের সংখ্যাধিক্য প্রশাসন ও আদালতের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।



Remove ads
পটভূমি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯০১ সালে কলকাতা মহানগরীয় অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ১,৫১০,০০০। এই জনসংখ্যা ১৯৫১ সালে বেড়ে হয় ৪,৬৭০,০০০। আবার ১৯৮১ সালে কলকাতার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৯,১৯৪,০০০।[৩] ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে কলকাতা উন্নততর জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রামের মানুষদের আকর্ষণ করেছিল। কিন্তু ভারতের অন্যান্য শহরের মতো কলকাতাতেও অভিনিবেশকারীরা দারিদ্র্যকে গ্রামীণ অবস্থার মতোই ভীষণ ও অমানবিক রূপে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তবে শহুরে অর্থনীতিতে দ্রুত আয়ের নতুন ধরনের সুযোগও কলকাতায় উপস্থিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর কলকাতা ও দিল্লি শহর পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের স্রোতে প্লাবিত হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিতে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের কাজ দ্রুত ও কার্যকরী পন্থায় করতে সমর্থ হলেও, কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করতে পুরোপুরি সমর্থ হননি। অধিকাংশ উদ্বাস্তুরা অনন্যোপায় হয়ে নিজেরাই ধীরে ধীরে কলকাতার শহুরে অর্থনীতিতে নিজেদের আর্থিক নিরাপত্তা খুঁজে নেন।[৩]
১৯৫১ সালের জনগণনায় দেখা যায়, কলকাতার বাসিন্দাদের মাত্র ৩৩.২ শতাংশ শহরে জাত, অবশিষ্টাংশ কলকাতায় অভিনিবেশকারী: এদের মধ্যে ১২.৩ শতাংশ ছিলেন পশ্চিমবঙ্গেরই অন্যান্য অংশের বাসিন্দা, ২৬.৬ শতাংশ ছিলেন ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে আগত মানুষ, এবং ২৬.৯ শতাংশ এসেছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে। ১৯৮১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল ৮,০০০,০০০; যা ছিল রাজ্যের সেই সময়কার জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ।[৪] লক্ষাধিক উদ্বাস্তু কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বসতি স্থাপন করে।[৫]
১৯৫০-এর দশক থেকে কলকাতার জনসংখ্যায় অভিনিবেশকারীদের শতকরা হার কমতে শুরু করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন আগত শরণার্থীরা শহরের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ অধিকার করে থাকে। কলকাতা ধীরে ধীরে একটি পরিপৃক্ত অবস্থা ধারণ করতে থাকে।[৬] এর ফলে আর্থিক অবক্ষয় ঘটে এবং শিল্পব্যবস্থা রুগ্ন হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালে, পশ্চিমবঙ্গ ছিল দেশের রুগ্ন শিল্পতালিকার এক নম্বরে।[৫] কলকাতার ফুটপাথবাসীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাও শহরের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দিকটি তুলে ধরেছিল। ১৯৭১ সালে কলকাতায় ফুটপাথবাসীদের সংখ্যা ছিল ৪৮,৮০২। জনগণনা ও কেএমডিএ সূত্র অনুযায়ী এই সংখ্যা ১৯৮৫ সালে বেড়ে হয় ৫৫,৫৭১। এদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিল পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা এবং অবশিষ্টাংশ অন্য রাজ্য থেকে আগত।[৬]
কিন্তু অর্থনীতির বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কলকাতা পিছিয়ে পড়তে শুরু করলেও, রিয়েল এস্টেট, তথ্য প্রযুক্তি ও পাইকারি ব্যবসার মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে শহরের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়। বড়ো বড়ো বাজার স্থাপিত হয় এবং ছোটো দোকান ও ফুটপাথের দোকানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।[৫][৭]
Remove ads
রাজনৈতিক কার্যকলাপ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হকারেরা কলকাতার অধিকাংশ ফুটপাথ দখল করে নিলে ১৯৬০-এর দশকে জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার কলকাতার রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদের জন্য অপারেশন হকার নামে একটি উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সেই সময়কার বিরোধী দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) হকারদের সংগঠিত করে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। অনতিবিলম্বে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং সিপিআই(এম) পরিচালিত বামফ্রন্ট দুই দশকেরও সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে শাসনক্ষমতো ভোগ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে তারাও অপারেশন সানশাইন নামে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এই সময় কলকাতা পৌরসংস্থার আধিকারিকবৃন্দ ও সিপিআই(এম)-এর ক্যাডারেরা পুলিশ ব্যাটেলিয়ানের সহায়তায় সহস্রাধিক হকারের দোকান ভেঙে দেয়। এই সব দোকানের অনেকগুলিই শহরের রাস্তায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করছিল। এই সময় শহরের হকারেরা বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। কিন্তু সরকার হকারদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।[৮] অবশ্য প্রতিবাদের মুখে পৌরসংস্থা ও পুলিশ উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনরায় ফুটপাথ দখলের সুযোগ করে দেন। উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বেই কলকাতার ৩২টি স্থানীয় হকার সংগঠন একজোট হয়ে কলকাতা হকার সংগ্রাম কমিটি স্থাপন করে হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে।[৯] কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারের মতে, কলকাতার ফুটপাথগুলির ৮০ শতাংশই এখন হকার ও বেআইনি দখলদারদের দখলে। ফলত, মানুষ ফুটপাথ ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় তারা অনেকেই ফুটপাথ খালি থাকলেও সেখান দিয়ে হাঁটা বন্ধ করে দিয়েছেন।[২] কোনো কোনো মতে, ২০০০-২০০৫ সময়কালে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পৌরসংস্থায় ক্ষমতায় থাকাকালীন কলকাতার ফুটপাথগুলি আবার হকারদের দখলে চলে যায়।[১০]
Remove ads
আইনি পদক্ষেপ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হকার উচ্ছেদ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলতে থাকলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কলকাতা হাইকোর্টে এই নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে ফুটপাথ বেদখল নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। ১৯৯৮ সালে হকারদের পুনর্বাসন চেয়ে হাইকোর্টে আর একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৩ সালে হাইকোর্ট হকারদের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চান। ২০০৫ সালে সরকার হাইকোর্টকে জানায়, হকার পুনর্বাসনের জন্যে একটি অভিন্ন নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। ২০০৭ সালে কোর্ট জানতে পারে যে ১৯৯৬ সালে অধ্যাদেশটি আদৌ কার্যকর করা হয়নি।[১১]
২০০৪ সালে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের দায়ের করা একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে, ২০০৬ সালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জাস্টিস ভি. এস. সিরপুরকার ও জাস্টিস সৌমিত্র সেনের একটি ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করেন, হকার সমস্যা ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে; শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে, ফুটপাথ তো দূরের কথা।[১২]
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টকে জানান যে সরকার হকার সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করে ফেলেছে। এই পরিকল্পনার প্রধান দিকগুলি ছিল হকারমুক্ত ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করা, হকার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা, হকারদের ব্যবসার সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া, স্থায়ী ইমারত গঠনে নিষেধাজ্ঞা জারি, ফুটপাথের দুই-তৃতীয়াংশ হকারমুক্ত রাখা, পলিথিন আচ্ছাদনের পরিবর্তে রঙিন ছাতা ব্যবহার, বিভিন্ন ক্রসিং-এর ৫০ গজের (৪৬ মিটার) মধ্যে হকারদের বসতে না দেওয়া এবং নতুন হকারদের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করে দেওয়া।[১৩]
পৌরসংস্থার পদক্ষেপ
১৯৯৬ সালে গড়িয়াহাট ও শ্যামবাজার থেকে হকার উচ্ছেদ করার জন্য কলকাতা পৌরসংস্থা অপারেশন সানশাইন অভিযানের আয়োজন করেছিল। এরপর কলকাতার পুর কমিশনার অসীম বর্মণ, শহরের ২১টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় হকারদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি নোটিশ জারি করেন।[১৪]
পরবর্তীকালে কলকাতার মহানাগরিক বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, হকাররা শহরের যেকোনো রাস্তাতেই বসতে পারবে এবং ফুটপাথের এক-তৃতীয়াংশ দখল করতেও পারবে। তবে তারা কোনো ক্রসিং-এর ৫০ মিটারের মধ্যে বসতে পারবে না, এবং স্থায়ী ইমারতও গড়তে পারবে না।[১০]
হকার সংগ্রাম কমিটির মতে, “ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, পুর কাউন্সিলর সকলেই হকারদের ব্যবহার করে থাকেন। হকারদের নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য পয়সা খরচ করতে হয়।” প্রতি বছর হকারদের ২৬৫ কোটি টাকা বিভিন্ন সংস্থাকে ঘুষ হিসেবে দিতে হয়, যা তাদের ব্যবসার প্রায় তিন শতাংশ। কমিটির মতে, “আমরা ব্যবসার অধিকার পেতে পুর কর্তৃপক্ষকে ভাড়া বা অন্যান্য রকমের কর দিতেও রাজি। পরিচয় পত্র থাকলে আমরা বিভিন্ন সংস্থার করা অর্থ দাবি থেকেও মুক্ত হব।”[১]
উল্লেখ্য, হকারদের একাধিক নিজস্ব সংগঠন রয়েছে। যথা: কলকাতা হকার্স মেন ইউনিয়ন ও বেঙ্গল হকার্স অ্যাসোসিয়েশন।
Remove ads
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads