শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

কলকাতা বন্দর

ভারতের বন্দর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

কলকাতা বন্দর
Remove ads

আনুষ্ঠানিকভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী পোর্ট ট্রাস্ট নামে পরিচিত কলকাতা বন্দর (কেপিটি) ভারতের একমাত্র নদীতীরস্থ প্রধান বন্দর[] বন্দরটি সমুদ্র থেকে প্রায় ২০৩ কিলোমিটার (১২৬ মাইল) অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে হুগলী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত।[১০] এটি ভারতের প্রাচীনতম সক্রিয় বা কার্যক্ষম বন্দর[১১] এবং বন্দরটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিলে।[১২] কলকাতা একটি সাধু বা মিষ্টি জলের বন্দর এবং জলে লবণাক্ততার কোনও পরিবর্তন বা প্রকরণ নেই।[১৩] বন্দরের দুটি স্বতন্ত্র ডক ব্যবস্থা রয়েছে — কলকাতায় কলকাতা ডক ব্যবস্থা ও হলদিয়ার হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সে একটি গভীর জলের ডক।

দ্রুত তথ্য কলকাতা বন্দর, অবস্থান ...

কলকাতা বন্দর ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের প্রধান বন্দর ছিল। দাস ব্যবস্থা ১৮৩৩ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পরে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আখের চাষের শ্রমিকদের উচ্চ চাহিদা ছিল। ব্রিটিশরা ১৮৩৮ সাল থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বন্দরটিকে মাধ্যমে সমগ্র ভারত থেকে অর্ধ মিলিয়ন ভারতীয়কে পরিবহন করার জন্য ব্যবহার করেছিল — বেশিরভাগ হিন্দি বলয় (বিশেষত ভোজপুরঅবধ) থেকে — এবং তাদেরকে মরিশাস, ফিজি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো, গায়ানা, সুরিনাম এবং অন্যান্য ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলি সহ সারা বিশ্বের জুড়ে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সমগ্র বিশ্বে লক্ষ লক্ষ ইন্দো-মরিশিয়ান, ইন্দো-ফিজিয়ানইন্দো-ক্যারিবিয়ান মানুষ রয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতার পরে, বঙ্গভঙ্গ (১৯৪৭), পশ্চাৎভূমির আয়তন হ্রাস ও পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা সহ অন্যান্য কারণে বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস পায়।

এটির পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর পূর্ব পার্বত্য রাজ্য এবং নেপালভুটান নামক দুটি ভূমিবেষ্টিত প্রতিবেশী দেশ, এবং এছাড়াও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল (চীন) সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ পশ্চাদভূমি রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর পালাক্রমে, পণ্য পরিবহনের পরিমাণ আবার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের সালের মার্চ পর্যন্ত, বন্দরটি বার্ষিক ৬,৫০,০০০ টি কনটেইনার প্রক্রিয়াকরণ করতে সক্ষম, যার বেশিরভাগই নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি থেকে আসে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা বন্দর বিশ্বের ৮৫তম ব্যস্ত বন্দর (বাল্ক পণ্যের হিসাবে)।

Remove ads

অবস্থান

কলকাতা বন্দরটি হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত। পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের ব্যবস্থা হুগলী নদী তীরবর্তী তিনটি শহরে পরিচালিত হয়, যেগুলি হল কলকাতা, বজবজহলদিয়া। হুগলী নদীর পূর্ব তীরবর্তী কলকাতায় দুটি ডক ও বজবজে ৬ টি জেটি রয়েছে, এবং পশ্চিম তীরবর্তী হলদিয়ায় একটি ডক রয়েছে। হুগলী নদী কলকাতায় ৫০০ মিটার ও হলদিয়ায় ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত, কিন্তু হলদিয়ায় নদীর মাঝে নদীচর বা দ্বীপের অবস্থানের কারণে জলভাগের প্রশস্ততা কমে ১ কিলোমিটার হয়।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রারম্ভিক সময়

কলকাতা বন্দর ভারতের আধুনিক বন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীন বন্দর। ১৬তম শতকের প্রথম দিকে বাংলার সঙ্গে ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ স্থাপনকারী পর্তুগিজদের আগমণের পূর্ব থেকেই হুগলি নদীর উজানে বাণিজ্য বসতি থেকে গৃহীত শুল্ক গঙ্গার নৌ ব্যবস্থায় পরিবর্তন সূচিত করে। সরস্বতী ও ভাগীরথী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত সমৃদ্ধশালী সপ্তগ্রাম বন্দরটি সমুদ্রগামী মালবাহী জাহাজের জন্য ক্রমশ অপ্রবেশযোগ্য হয়ে পড়ছিল। ১৬তম শতকের শেষের দিকে পর্তুগিজদের বড় বড় জাহাজগুলি বেতড়ে নোঙ্গর করত। বেতড় ছিল কলকাতার উপকণ্ঠস্থ একটি স্থান। সপ্তগ্রাম (সাঁতগাও) থেকে ছোট জাহাজে করে পণ্যসামগ্রী বেতড়ে এনে বড় বড় জাহাজগুলিতে বোঝাই করা হতো। ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা তাদের বাণিজ্যকুঠি সপ্তগ্রাম থেকে সরিয়ে কয়েক মাইল ভাটিতে হুগলিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। শীঘ্রই সপ্তগ্রামের পরিবর্তে হুগলি এই অঞ্চলের সমুদ্র নির্গম পথ হিসেবে জায়গা করে নেয়।

সমগ্র সতেরো শতকে হুগলি তার গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ রাখে। কয়েক দশক পরে ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মুঘলদের দ্বারা পর্তুগিজগণ বিতাড়িত হওয়ার পরে ওলন্দাজ ও ইংরেজগণ এখানে তাদের বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। অধিকন্তু, হুগলির বাণিজ্য আরও ভাটির দিকে, বিশেষ করে সুতানুটি ও গোবিন্দপুর পর্যন্ত, ছোট বাণিজ্য কেন্দ্র ও বসতিগুলির বৃহত্তর কর্মকাণ্ডের পরিধিকে পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করে। কলকাতায় বসতি স্থাপনের পূর্ব থেকেই ইংরেজগণ জানত যে, ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল উপযোগী স্থানগুলির মধ্যে কলকাতা ছিল গোবিন্দপুর থেকে গার্ডেনরিচ পর্যন্ত পূর্ব তীর বরাবর সবচেয়ে গভীর জলরাশির এলাকা’ এবং এই অঞ্চলে অতি সহজে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম ছিল।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার আগে এটি ছিল তাঁতি ও কারিগর অধ্যুষিত ছোট একটি নদী বন্দর। ছোট তাঁতি বসতি থেকে পূর্ব ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কলকাতা নগরের রূপান্তরে হুগলি তীরস্থ বন্দরটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। আঠারো শতকের মধ্যভাগ থেকে কলকাতা বন্দরের উন্নতি মুঘল সময়ের প্রধান বন্দর হুগলি ও পশ্চিম উপকূলীয় সুরাটের অবনতির মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয়ে ছিল। পরিশেষে, ভারতীয় আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্রিটিশদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রাধান্য পেতে শুরু করে, আর এটি আবর্তিত হতে শুরু করে কলকাতা বা বম্বের মতো বন্দরগুলিকে কেন্দ্র করে।

কোম্পানি শাসন:১৭৭৩–১৮৫৭

Thumb
১৮৫২ সালের কলকাতা বন্দরের দৃশ্য

ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট কর্তৃক পরিচালিত কোম্পানির নৌ দফতরের অধীনে বন্দর প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্রগামী জাহাজগুলিতে পাইলট সার্ভিস প্রদান করা। নদীর নাব্যতা সম্পর্কে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মাস্টার অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়মিতভাবে নদী জরিপের কাজও পরিচালনা করত। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্দরের ডকিং সুবিধাদির অভাব বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কেননা জাহাজগুলিকে মেরামতের জন্য বোম্বে নেওয়া হতো। ১৭৯০ সালে বাঁকশাল ঘাটের নিকটে প্রথম ডক নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যেই ১৭৮১ সালে একটি ভাসমান ডক নির্মাণের জন্য কর্নেল ওয়াটসনকে বন্দরের দক্ষিণ সীমানায় একটি জায়গা প্রদান করা হয়। ওয়াটসন খিদিরপুরে একটি মেরিন ইয়ার্ড স্থাপন করেছিলেন এবং ১৭৮১ সালে ভাসমান ডক নির্মাণের কাজও শুরু করেছিলেন, কিন্তু গোকুল ঘোষালের পরিবারের সাথে আইনগত দ্বন্দ্ব শুরু হলে তাকে বাধ্য হয়ে এ প্রকল্প বন্ধ করতে হয়। ওয়াটসন পরবর্তীকালে শিপইয়ার্ডের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং ব্যবসা থেকে তার অবসর গ্রহণের পূর্বে এখান থেকে অল্প কয়েকটি জাহাজ নির্মিত হয়েছিল। ওয়াটসনের পরে কলকাতায় জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবে সেগুলির কোনোটিই বোম্বের পারসি এন্টারপ্রাইজের জাহাজ নির্মাণ কর্মকাণ্ডের সাথে তুলনীয় ছিল না। যাহোক, উনিশ শতকের প্রথম দিকে ব্রিটিশ পোতসমূহের জন্য ভারতীয় পোতসমূহকে স্থান ছেড়ে দিতে হয়।

১৮২০-এর দশকে কলকাতা ও ডায়মন্ড হারবারে ভাসমান ডক নির্মাণের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। ১৮৪২ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কলকাতা বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজগুলির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলে এই বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। কিন্তু কলকাতা বন্দরের আধুনিকীকরণের বিষয়টি আড়ালে পড়ে যায় ১৮৬০-এর দশকে মাতলাতে নতুন একটি বন্দর প্রতিষ্ঠার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টায়। উদ্যোগ গ্রহণকারীদের একটি বিকল্প চিন্তা থেকে পোর্ট ক্যানিং স্কিম প্রণয়ন করা হয়। ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের ধারণা ছিল নদীর পলিজনিত সমস্যা অকালেই কলকাতা বন্দরের মৃত্যু টেনে আনবে, ঠিক যেভাবে তিনশ বছর আগে হুগলির তীরবর্তী সাঁতগাও বন্দরটির মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ততদিনে কলকাতা ব্রিটিশদের কাছে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে, একে ছেড়ে যাওয়া তত সহজ ছিল না। কলকাতা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার পোর্ট ট্রাস্ট গঠনে সক্রিয় হয়, যা কিনা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাণিজ্যকে একটি শক্ত ভিত্তি প্রদান করে।

ব্রিটিশ ভারত:১৮৫৭–১৯৪৭

কলকাতা কর্পোরেশনের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে প্রথমদিককার পরীক্ষামূলক রিভার ট্রাস্টটি ব্যর্থ হওয়ার পর ১৮৭০ সালের অক্টোবর মাস থেকে পোর্ট ট্রাস্ট তার কাজ শুরু করে। সেই সময়ে কলকাতা বন্দরে জেটির সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি ও মাল খালাসের জন্য ঘাট ছিল একটি, যেখানে ৫২টি জাহাজ নোঙ্গর করতে পারত এবং তার মোট ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪৮,০০০ টন। ১৮৭১-৭২ সালের মধ্যে জেটির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬টিতে, আর সেখানে জাহাজ নোঙ্গর করতে পারত ১৪৩টি এবং মাল ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে দাড়ায় ২২২,০০০ টনে। জাহাজ ঘাটের দৈর্ঘ্যও বৃদ্ধি পায় লক্ষ্যণীয়ভাবে। এই ঘাটে প্রধানত পণ্যসামগ্রী যেমন, শষ্য, বীজ এবং কাঁচামাল ও আধ্যপ্রস্ত্তত পাটজাত দ্রব্য ওঠানামা করত। ১৮৮৬ সালে বজবজ পেট্রোলিয়াম ঘাটটি চালু হয়। আসাম ও উত্তর বাংলা থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া চা রপ্তানির কারণে ১৮৭০-এর দশকে স্ট্রান্ড ব্যাংক দ্বীপে একটি গুদাম ঘর নির্মাণ করতে হয়।

Thumb
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে খিদিরপুর ড্রাই ডক।

উনিশ শতকের শেষ ভাগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ১৮৯২ সালে খিদিরপুরে ডক নির্মাণ। এটি ছিল কলকাতার বণিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগতভাবে দাবির ফল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব বিশ বছরে কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর ক্রমোন্নতি পরিলক্ষিত হয়। উপকূলীয় বাণিজ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ঘটে, বিশেষ করে কয়লা রপ্তানিতে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলা ও আসাম সরকার কলকাতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ঘটালেও তা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে মহামন্দার প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও আধুনিক শিল্পকারখানার উন্নয়নের সাথে সাথে কলকাতা বন্দরেরও আধুনিক রূপায়ণ ঘটতে থাকে। মহামন্দা শুরুর আগে থেকেই গার্ডেনরিচ-এর কিং জর্জ ডক ১৯২৯ সাল থেকে চালু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা তুলনামূলকভাবে কলকাতা বন্দর উন্নয়নে স্থবিরতার জন্য চিহ্নিত, জাপানি সেনাবাহিনী এই সময় দুই বার বন্দরের উপর বোমাবর্ষণ করে॥

ভারত:১৯৪৭–বর্তমান

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সূতিকাগার হিসেবে কলকাতার গুরুত্ব যেমন ছিল, ঠিক তেমনি ব্রিটিশ শাসনের অবসানে এর ক্রমাবনতিও ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দর সুবিধার অবমূল্যায়ন ঘটেছিল, তবে ভারতের স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বন্দর পুনর্জীবীত হয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ভারতের অন্যান্য বন্দরের সহিত কলকাতা বন্দরের জন্য ড্রেজার, সার্ভে ভেসেল, ডক টাগ, অ্যাঙ্কর ভেসেল, লাইট ভেসেল এবং লঞ্চের মতো নতুন জাহাজ অধিগ্রহণের করা হয়েছিল। তৃতীয় পরিকল্পনায় কলকাতা বন্দরের উপর চাপ কমানোর জন্য হলদিয়া ডকের প্রকল্প শুরু করা হয়। এই সময়ে, বড় জলযানগুলির জন্য নাব্যতা তৈরির সুবিধার্থে নদীর প্রধান জল সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প নামে হুগলি নদীর উজানে একটি ব্যারেজ নির্মাণ করা। পূর্বতন বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। এরপর ১৯৬৩ সালের প্রধান বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হলে, কলকাতার বর্তমান পোর্ট ট্রাস্ট বা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। পরবর্তী পরিকল্পনাগুলিতে হলদিয়া ডক নির্মাণ এবং কন্টেইনার পার্কের উন্নয়ন, কম্পিউটারাইজড সিস্টেম স্থাপন, রেলপথের আধুনিকীকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে পুরানো প্রযুক্তির প্রতিস্থাপন এবং নতুন প্রযুক্তির প্রতিস্থাপনের জন্য প্রধান বিধান ছিল।

Remove ads

ডক ব্যবস্থা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কলকাতা বন্দরটি কলকাতা ডক ব্যবস্থাহলদিয়া ডক চত্বর, এবং সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলে উপযোগী ২৩২ কিমি দীর্ঘ নৌ-চ্যানেলের সমন্বয়ে গঠিত। ডক ব্যবস্থা দুটি হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত, যা বন্দরটিকে ভারতের একমাত্র নদী তীরস্থিত প্রধান বন্দর হিসাবে পরিচিতি প্রদান করে। বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত রয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর কর্তৃপক্ষ, যা অতীতে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট হিসাবে পরিচিত ছিল।

কলকাতা ডক ব্যবস্থা

কলকাতা ডক ব্যবস্থার অধীনে রয়েছে খিদিরপুর ডক (কেপিডি), নেতাজি সুভাষ ডক (এনএসডি), বজবজ নদী মুরিং (বিবি), ডায়মন্ড হারবার নোঙরখানা, সাগর নোঙরখানা ও স্যান্ডহেডস নোঙরখানা। এই ডক ব্যবস্থাটি মূলত কন্টেইনার জাহাজবার্জসমূহকে পরিষেবা প্রদান করে। কলকাতা ডক ব্যবস্থার ডক ও মুরিংগুলির মধ্যে খিদিরপুর ডকে সর্বনিম্ন জলের গভীরতা দেখা যায়, অপরদিকে বজবজ নদী মুরিংয়ে জলের গভীরতা সর্বাধিক। এছাড়াও, প্রায় ৮০ টি বড় জেটি ও অনেকগুলি ছোট ছোট জেটি এবং প্রচুর সংখ্যক জাহাজ ভাঙার বার্থ রয়েছে।[১৪]

জাহাজগুলি কলকাতা ডক ব্যবস্থার অন্তর্গত খিদিরপুর ডক (কেপিডি) ও নেতাজি সুভাষ ডকে (এনএসডি) প্রবেশের উদ্দেশ্যে প্রথমে গার্ডেন রিচের উত্তরে নাজিরগঞ্জ ফ্ল্যাটস্থিত নোঙ্গরখানায় জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করে। এই নোঙ্গরখানায় একসঙ্গে ৫ টি জাহাজ নোঙ্গর করতে পাড়ে। যখন নদীর জলতল জোয়ারের প্রভাবে কলকাতা ডক ব্যবস্থার (কেডিএস) জলতলের সমউচ্চায় পৌঁছায়, তখন নোঙ্গরখানায় অপেক্ষারত জাহাজগুলি জলকপাটের মাধ্যমে খিদিরপুর ডক (কেপিডি) ও নেতাজি সুভাষ ডকে (এনএসডি) প্রবেশে করে।

খিদিরপুর ডক (কেপিডি)

Thumb
খিদিরপুর ডকের পশ্চিম অংশের (কেডিপি-১) দৃশ্য।

খিদিরপুর ডকে মোট ১৮ টি বার্থ রয়েছে, যার মধ্যে বহুমুখী বার্থ ১৭ টি ও পণ্যবাহী সহ যাত্রীবাহী জাহাজের জন্য ১ টি বার্থ। বার্থগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ১ থেকে ২৯ পর্যন্ত হতে পারে।[১৪] বার্থগুলিতে জলের গভীরতা সমান নয়, যা ২৯ নং বার্থে সর্বনিম্ন ৭.৪ মিটার (২৪ ফুট) ও ৮ নং বার্থে সর্বোচ্চ ৯.২ মিটার (৩০ ফুট)[] খিদিরপুর ডকটি দুটি অংশে বিভক্ত, যেগুলি হল কেডিপি-১ (পশ্চিম) ও কেডিপি-২ (পূর্ব)। মোট ১৮ টি বার্থের মধ্যে ১০ বার্থের সমন্বয়ে কেডিপি-১ ও ৮ টি বার্থের সমন্বয়ে কেডিপি-২ গঠিত। এই দুটি অংশ — কেডিপি-১ ও কেডিপি-২ — একটি বাসকুল সেতু দ্বারা পৃথক করা হয়। ডকের জাহাজ ঘাটগুলির সম্মিলিত দৈর্ঘ্য হল ২,৯৫৬ মিটার (৯,৬৯৮ ফুট), যার মধ্যে কেডিপি-১ (পশ্চিম) ১,৭২৮ মিটার (৫,৬৬৯ ফুট) ও কেডিপি-২ (পূর্ব) ১,২২৮ মিটার (৪,০২৯ ফুট)। ডকটি একটি লক গেটের মাধ্যমে হুগলী নদী তথা জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত। লক গেটে ও কেডিপি-১ এর মধ্যবর্তী অংশটি হল "টাইডাল বেসিন", এই বেসিনের সঙ্গে ড্রাই দকগুলি সংযুক্ত রয়েছে। ডকে জাহাজগুলি একটি বদ্ধ জলকপাটের মাধ্যমে প্রবেশ করে। লক ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ১৭৬.৮ মিটার (৫৮০ ফুট) এবং প্রস্থ ২৪.৪ মিটার (৮০ ফুট)। তদনুসারে, সর্বোচ্চ ১৫৭ মিটার (৫১৫ ফুট) দৈর্ঘ্য ও সর্বোচ্চ ২১.৩৫ মিটার (৭০ ফুট) প্রস্থ বিশিষ্ট জাহাজ ডকে প্রবেশ করতে সক্ষম। ডকের মধ্যে জাহাজ চলাচলে সহায়তা প্রদানের জন্য ৬ টি বয়/মুরিং রয়েছে। খিদিরপুর ডকে বেশ কয়েকটি বাঁক রয়েছে, এবং কোন রাতে নৌ-চালনা ব্যবস্থা নেই; ফলে জাহাজগুলি কেবল দিনের বেলায় চলাচল করে।[১৪]

খিদিরপুর ডকের মধ্যে ৩ টি ড্রাই ডক রয়েছে, যা জাহাজ বা নৌযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।[১৪]

নেতাজি সুভাষ ডক (এনএসডি)

Thumb
নেতাজি ডকের কন্টেইনার ইয়ার্ড।

নেতাজি ডকে মোট ১০ টি বার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ১ টি হেভি লিফট বার্থ, ৪ টি ডেডিকেটেড কন্টেইনার বার্থ, ১ টি লিকুইড কার্গো বার্থ ও ৪ টি বহুমুখী বার্থ। বার্থগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত হতে পারে।[১৪] বার্থগুলিতে জলের গভীরতা সমান নয়, যা ১ নং বার্থে সর্বনিম্ন ৭.১ মিটার (২৩ ফুট) ও ৩ নং বার্থে সর্বোচ্চ ৯ মিটার (৩০ ফুট)[] ডকটি একটি লক গেটের মাধ্যমে হুগলী নদী তথা জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত। ডকের মধ্যে জাহাজ চলাচলে সহায়তা প্রদানের জন্য ২ টি বয়/মুরিং রয়েছে।[১৪]

এই ডকের মধ্যমে মূলত কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনা করা হয়, এবং কলকাতা বন্দরের অধিকাংশ কন্টেইনার পরিবহন করা হয়। ডকে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল রয়েছে, যা মোট ৫ টি – ৩ নং, ৪ নং, ৫ নং, ৭ নং ও ৮ নং – বার্থ নিয়ে গঠিত। টার্মিনালের অন্তর্গত বার্থগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হল ৪ নং বার্থ, যা ১৮১ মিটার (৫৯৪ ফুট) দীর্ঘ ও সর্বোচ্চ ৫৬৫ ফুট (১৭২ মিটার) দীর্ঘ জাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম; এবং সর্বাধিক দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হল ৪ নং বার্থ, যা ২২৫ মিটার (৭৩৮ ফুট) দীর্ঘ ও সর্বোচ্চ ৫০৭ ফুট (১৫৫ মিটার) দীর্ঘ জাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম।

নেতাজি ডকের মধ্যে ২ টি ড্রাই ডক রয়েছে, যা জাহাজ বা নৌযান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।[১৪]

বজবজ নদী মুরিং

বজবজ নদী মুরিং বা বজবজ তেল জেটি হুগলি নদীর উপর নির্মিত প্রথম সময়কার পণ্য পরিচালনা সুবিধাগুলির মধ্যে একটি, বা বর্তমান সময়েও চালু রয়েছে। এটি ৬ টি তেল (পেট্রোলিয়াম) জেটি নিয়ে গঠিত। জেটিগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ১ থেকে ৮ পর্যন্ত (৪ ও ৬ সংখ্যা ব্যতীত) হতে পারে। জেটিগুলিতে জলের গভীরতা সমান নয়, যা ১ নং বার্থে সর্বোচ্চ ১৩.৩ মিটার (৪৪ ফুট) ও ৮ নং বার্থে সর্বনিম্ন ৭.৯ মিটার (২৬ ফুট)

হলদিয়া ডক চত্বর

হলদিয়া ডক চত্বরটি কলকাতাস্থিত কলকাতা ডক ব্যস্থার সহযোগী বন্দর ব্যবস্থা হিসাবে গড়ে উঠেছে। এটি হলদিয়া বন্দর হিসাবে অধিক পরিচিত। এই বন্দর ব্যবস্থায় জলের সর্বোচ্চ গভীরতা হল ১২.৫ মিটার (৪১ ফুট), যা সর্বোচ্চ ২৭৭ মিটার (৯০৯ ফুট) দীর্ঘ জাহাজ নোঙরের সক্ষমতা প্রদান করে। এটি পশ্চিম চ্যানেল দ্বারা গভীর সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত, যার গড় গভীরতা ৮.৩ মিটার (২৭ ফুট); সেই কারণে ডক চত্বরে সর্বোচ্চ ২৩০ মিটার (৭৫০ ফুট) দীর্ঘ জাহাজ নোঙর করতে সক্ষম।

Thumb
হলদিয়া ডকের দৃশ্য।

হলদিয়া ডক চত্বরটি একটি ডক, তেল ও বার্জ জেটি এবং হলদিয়া নোঙরখানা নিয়ে গঠিত। ডক চত্বরে মোট ১৪ টি বার্থ ও ৩ টি তেল জেটি রয়েছে; বার্থগুলি জলকপাট বিশিষ্ট ডকের অভ্যন্তরে এবং জেটিগুলি হুগলি নদীতে অবস্থিত। ডকের অভ্যন্তরীণ বার্থগুলির মধ্যে রয়েছে – ৬ টি ড্রাই বাল্ক কার্গো বার্থ, ৩ টি লিকুইড কার্গো বার্থ, ৩ টি বহুমুখী বার্থ ও ২ টি ডেডিকেটেড কন্টেইনার বার্থ। বার্থগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যেগুলি ২ থেকে ১৩ পর্যন্ত হতে পারে। বার্থগুলিতে (ডক অভ্যন্তরীণ) জলের গভীরতা সমান নয়, যা ২ নং ও ১০ নং বার্থে সর্বনিম্ন ১০ মিটার (৩৩ ফুট) এবং ২ নং ও ১০ নং ব্যতীত অন্য বার্থগুলির সর্বোচ্চ ১২.৫ মিটার (৪১ ফুট)। ডকটি একটি লক গেটের মাধ্যমে হুগলি নদী তথা জাহাজ চলাচলকারী চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত।

হুগলী নদীস্থিত জেটিগুলি মূলত তরল পণ্য — অপরিশোধিত তেল, পিওএল পণ্য, ন্যাফথা, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এবং ভোজ্য তেল — পরিবহন করে। জেটিগুলি হলদিয়া ওয়েল জেটি হিসাবে পরিচিত, এবং এগুলি রোমান সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় তেল জেটিতে জলের গভীরতা ১০ মিটার (৩৩ ফুট) এবং ও তৃতীয় তেল জেটিতে জলের গভীরতা ১২.৫ মিটার (৪১ ফুট)। সাম্প্রতিক সময়ে ডকের অ্যাপ্রোচ জেটি ও দ্বিতীয় তেল জেটির মাঝে চতুর্থ তেল জেটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা আউটার টার্মিনাল ২ হিসাবে পরিচিত; জেটিতে জলের গভীরতা ৯ মিটার (৩০ ফুট)। শুষ্ক পণ্য পরিবহনের জন্য তৃতীয় তেল জেটির উজানে রয়েছে আউটার টার্মিনাল ১; জেটিতে জলের গভীরতা ৮.৫ মিটার (২৮ ফুট) এবং ৮ নাব্যতার নৌযান নোঙ্গর করতে সক্ষম।

ড্রাই ডক

কলকাতা বন্দরে ভারতের বৃহত্তম ড্রাই ডক সুবিধা রয়েছে। এই ড্রাই ডকগুলি ভারতের পূর্ব উপকূলস্থিত বন্দরগুলিতে চলাচলকারী জাহাজগুলির বিভিন্ন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়াও এই ড্রাই ডকসমূহে জাহাজ নির্মাণের সুবিধাও রয়েছে। সমস্ত ড্রাই ডকগুলি জলকপাট করা বদ্ধ ডক ব্যবস্থার ভিতরে রয়েছে। বন্দরে মোট পাঁচটি ড্রাই ডক রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি খিদিরপুর ডক এবং দুটি নেতাজি সুভাষ ডকে রয়েছে। খিদিরপুর ডকের ১ নং ড্রাই ডক, ২ নং ড্রাই ডক ও ৩ নং ড্রাই ডকে যথাক্রমে ১৮৪, ১৩৮ ও ১২৫ টি কিল ব্লক রয়েছে, এবং নেতাজি সুভাষ ডকের ১ নং ড্রাই ডক ও ২ নং ড্রাই ডকে যথাক্রমে ১৭০ ও ১৭৫ টি কিল ব্লক রয়েছে; কিল ব্লক জাহাজকে মেরামতের সময়ে ধরে রাখে।

ডিজেল ইঞ্জিন ওভারহলিং ইউনিট, স্ট্রাকচারাল শপ, ভারী ও হালকা যন্ত্রাংশের দোকান, ফোরজিং শপ, বৈদ্যুতিক দোকান এবং ২৫০০ কিলো নিউটন ক্ষমতার টেনসাইল কম্প্রেশন টেস্টিং মেশিন সহ একটি চেইন টেস্টিং/মেরামতকারী দোকান সহ একটি সম্পূর্ণ মেরামতের কর্মশালা রয়েছে, যাতে ডকে ডক অঞ্চলে বিভিন্ন কার্যক্রমকে সমর্থন করা যায়। খিদিরপুর ডকের ১ নং ও ২ নং ড্রাই ডকে যথাক্রমে ৫ টন ও ৭ টন ক্ষমতার ক্রেন ব্যবহার করা হয়, যেগুলির অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রম এলাকার ব্যাসার্ধ যথাক্রমে ২০ মিটার (৬৬ ফুট)২৫.৪২ মিটার (৮৩.৪ ফুট)। নেতাজি সুভাষ ডকে ৪ টি ক্রেন ব্যবহৃত হয়, যাদের মধ্যে ১ টি ইলেকট্রিক লেভেল লাফিং ক্রেন ও ৩ টি ইলেকট্রিক ক্রেন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইলেকট্রিক লেভেল লাফিং ক্রেনটির ক্ষমতার ২৫ টন এবং কার্যক্রম এলাকার ব্যাসার্ধ ১৫.২৫ মিটার (৫০.০ ফুট); অপরদিকে ইলেকট্রিক ক্রেনগুলির মধ্যে ২ টি ৩/৬ টন ও অন্যটি ৩ টন ক্ষমতা সম্পন্ন।

Remove ads

বন্দর চ্যানেল

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ইউনাইটেড কিংডম হাইড্রোগ্রাফিক অফিস দ্বারা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত সাগর পয়েন্ট থেকে কলকাতা পর্যন্ত হুগলি নদীর নৌচালনার তথ্য সংবলিত বর্ণনাচিত্র (নটিক্যাল চার্ট)।

বন্দরটি ২৩২ কিলোমিটার (১৪৪ মাইল) দীর্ঘ জাহাজ চলাচলের চ্যানেল, এবং সেইসাথে নোঙরখানা (অ্যাঙ্কোরেজ) ও বন্দর সুবিধা নিয়ে গঠিত। বেশির ভাগ জাহাজের জন্য পাইলটের প্রয়োজন হয়, এবং চ্যানেলের তীক্ষ্ণ বাঁকগুলি ও ডুবো চরের জন্য বড় জাহাজসমূহের টাগবোটের সহায়তা প্রয়োজন হয়। চ্যানেলটি বঙ্গোপসাগরের স্যান্ডহেডস অঞ্চল থেকে থেকে কলকাতা শহরস্থিত কলকাতা ডক ব্যবস্থার অন্তর্গত খিদিরপুর ডক পর্যন্ত বিস্তৃত, যার মধ্যে স্যান্ডহেডস থেকে সাগর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার (৫৪ মাইল) কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে জাহাজগুলি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। চ্যানেলে জলের গভীরতা বর্ষাকালে অধিক থাকে গ্রীষ্মকালের তুলনায়।[১৫]

কলকাতা বন্দরের সমুদ্র থেকে দুটি প্রবেশপথ রয়েছে, একটি ইস্টার্ন চ্যানেল এবং অন্যটি ওয়েস্টার্ন চ্যানেল। বর্তমানে পূর্ব চ্যানেল কলকাতাগামী নৌযানগুলির জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে পশ্চিম চ্যানেলটি হলদিয়াগামী জাহাজগুলি দ্বারা নৌচলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়। ইস্টার্ন চ্যানেলটি ওয়েস্টার্ন চ্যানেলের তুলনায় অধিক দীর্ঘ (দ্বিগুণের বেশি), ফলে এই চ্যানেলে সবচেয়ে বেশি ডুবো চর রয়েছে। ইস্টার্ন চ্যানেলের উল্লেখযোগ্য ডুবো চর হল সাঁকরাইল, বজ বজ, রয়পুর, ফলতা, নুরপুর, রাঙ্গাফালা, কোরাপাড়া, বেডফর্ড (আপার ও লোয়ার) এবং লং (আপার ও লোয়ার); ফলতায় জলের প্রাকৃতিক গভীরতা ৩ মিটার (৯.৮ ফুট)। ইস্টার্ন চ্যানেলটি কয়েকটি ছোট চ্যানেলে বিভক্ত; ছোট চ্যানেলগুলি মূলত ডুবো চর দ্বারা বিভক্ত থাকে। ইস্টার্ন চ্যানেলের যে অংশ সমুদ্রে রয়েছে সেটি গ্যাসপার চ্যানেল নামে পরিচিত, যার ন্যূনতম প্রাকৃতিক গভীরতা ৭ মিটার (২৩ ফুট), এবং হুগলি নদীর অন্তর্গত যে অংশ সাগর থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে সেটি দুটি ছোট চ্যানেলে বিভক্ত – বেডফর্ড চ্যানেল ও রাঙ্গাফালা চ্যানেল। ওয়েস্টার্ন চ্যানেলটি তিনটি প্রধান ছোট চ্যানেলে বিভক্ত, যেগুলি হল ইডেন চ্যানেল, আপার ও লোয়ার জ্যালিংহাম চ্যালেন এবং হলদিয়া চ্যানেল। হলদিয়া চ্যানেলের উজানে বলারি চ্যানেল অবস্থিত। বলারি চ্যানেলটি অতীতে সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের জন্য উপযোগী ছিল, যা ইস্টার্ন চ্যানেল ও ওয়েস্টার্ন চ্যানেলের মধ্যে সংযোগ হিসাবে কাজ করত; কিন্তু গত শতাব্দীর শেষের দিকে অধিক পলি জমার কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা নৌ-চলাচলে অযোগ্য ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।[১৬]

চ্যানেলের গভীরতা হুগলী নদীতে জল প্রবাহের উপর নির্ভর করে। ডুবো চরের উপস্থিতির কারণে চ্যানেলের গভীরতা সকল স্থানে সমান নয়। এই চ্যানেল স্যান্ডহেডসে ৫০ মিটার (১৬০ ফুট) ও সাগর রোডে ৯ মিটার (৩০ ফুট) থেকে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) গভীর। কলকাতা পর্যন্ত পূর্ব চ্যানেলের সর্বনিম্ন গভীরতা ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) এবং ন্যূনতম প্রস্থতা ৩৪৫ মিটার (১,১৩২ ফুট)। জোয়ারেরে সময়ে চ্যানেলের গভীরতা ৮.৫ মিটারের (২৮ ফু) অধিক হয়; যখন সর্বোচ্চ ৮.৫ মিটার (২৮ ফুট) ও সর্বনিম্ন ৫.৪ মিটার (১৮ ফুট) ড্রাফ্ট সম্পন্ন জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম। হলদিয়া পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার (৬৮ মাইল) দীর্ঘ চ্যানেলের সর্বনিম্ন গভীরতা ৪.৩ মিটার (১৪ ফুট) এবং ন্যূনতম প্রস্থতা ৩৪৫ মিটার (১,১৩২ ফুট)। জোয়ারেরে সময়ে চ্যানেলের গভীরতা ৯ মিটারের (৩০ ফু) অধিক হয়; যখন সর্বোচ্চ ৯ মিটার (৩০ ফুট) ও সর্বনিম্ন ৭.৬ মিটার (২৫ ফুট) ড্রাফ্ট সম্পন্ন জাহাজ চলাচল করতে সক্ষম।[১৭]

আরও তথ্য গভীরতা, কলকাতা ...

নৌযান পরিচালনা

Thumb
কলকাতাগামী কন্টেইনারবাহী এসএসএল চেন্নাই

নদীর সীমাবদ্ধতার কারণে (যেমন পলি, বালির চর ইত্যাদি) কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অভিজ্ঞ পাইলট ব্যতীত ২০০ গ্রস টনের বেশি কোনও সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই। কলকাতা ডক ব্যবস্থার (কেডিএস) মোট পাইলটেজের দূরত্ব হল ২২৩ কিলোমিটার (১৩৯ মাইল), যার মধ্যে ১৪৮ কিলোমিটার (৯২ মাইল) নদী ও ৭৫ কিলোমিটার (৪৭ মাইল) সমুদ্রে রয়েছে, এবং হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স (এইচডিসি) জন্য ১২১ কিলোমিটার (৭৫ মাইল), যার মধ্যে ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) নদী ও ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল) সমুদ্র। নদীতে জোয়ার-ভাটা বন্দরের জন্য জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বসন্তের জোয়ারে, জোয়ারের ঢেউ উচ্চতার সঙ্গে চাপ সৃষ্টি করে যা একটি জাহাজের পক্ষে নদীতে অবস্থান করা কঠিন করে তোলে। উচ্চ জোয়ার বা ভরা কটালের সময়ে জাহাজগুলোকে ডকে আশ্রয় দেওয়া হয়। নৌযান চলাচলের জন্য ইস্টার্ন চ্যানেল লাইট ভেসেলের অবস্থান হল ২১°০৩'০৩.১২" উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°১১'৩০" পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ওয়েস্টার্ন চ্যানেল লাইট ভেসেলের অবস্থান অক্ষাংশ ২১°০৫'০৩.০৯" উত্তর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ৮৭°৫০'২১৫.৯৫" পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।

ইস্টার্ন চ্যানেল লাইট ভেসেলের আশেপাশে স্যান্ডহেডের কাছে পৌঁছানো সমস্ত জাহাজ সাগর দ্বীপে অবস্থিত পাইলট স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করে, যা চ্যানেল ১৬ ও ৬৮-এ "স্যান্ডহেডস পাইলট" ও "ভিটিএমএস কন্ট্রোল" হিসাবে চিহ্নিত এবং পরামর্শ ছাড়াই ২১°০০' উত্তরের অক্ষাংশের উত্তরে জাহাজ চালানো উচিত নয়। স্যান্ডহেডস থেকে সাগর ও অকল্যান্ডের পাইলট বোর্ডিং পয়েন্ট পর্যন্ত তাদের যাত্রার জন্য, সমস্ত জাহাজকে ভিটিএমএস নির্দেশিকা দ্বারা দূরবর্তী পাইলটেজ (নৌযান পরিচালনা) প্রদান করা হয়। ২১°৩৯'০২.৯৩" উত্তর অক্ষাংশের উজানে পাইলটেজ ২০০ জিআরটি এবং আরও বেশি জিআরটি বিশিষ্ট সমস্ত জাহাজের জন্য বাধ্যতামূলক।

বন্দর সাগর রোডে একটি পাইলট ভেসেল/স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। রিভার পাইলট চ্যানেলের মিডলটন পয়েন্টে থেকে জাহাজ পরিচালনার দায়িত্বয় গেহ্ন গ্রহণ করে ও নদীপথে এগিয়ে যায়। কলকাতায় (গার্ডেন রিচ) পৌঁছানোর পর, রিভার পাইলট জাহাজ পরিচালনার দায়িত্বয় একজন হারবার পাইলট নিকট হস্তান্তর করেন, যিনি জাহাজটিকে কেপিডি বা এনএসডি-এর লকের ভিতরে বা প্রয়োজনমতো রিভার মুরিং-এ নিয়ে যান। লক থেকে, জাহাজটিকে একজন ডক পাইলট দ্বারা মনোনীত বার্থে পরিচালিত হয়। ডক থেকে সমুদ্রে পৌঁছানোর জন্য প্রক্রিয়াটি বিপরীত হয়। হলদিয়ায়, আপার অকল্যান্ড থেকে জাহাজটি নিয়ে আসা পাইলট লকের ভিতরের জাহাজটি ডক পাইলটের কাছে হস্তান্তর করেন তবে তেল জেটিগুলির জন্য সমস্ত জাহাজ একই পাইলটের দ্বারা জেটিতে মুরিং করা হয়। চ্যানেলে চলাচলকারী নৌযানের জন্য প্রস্তাবিত ড্রাফটের পরিবর্তন বসন্তের জোয়ার ও মরা কটাল (জোয়ার) মধ্যে ঘটে এবং অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী জাহাজগুলির জন্য ড্রাফটের পূর্বাভাস প্রায় চার/ছয় সপ্তাহ আগে হারবার মাস্টার (নদী) দ্বারা প্রকাশিত হয়।

লাইট ভেসেল

পাঁচটি মনুষ্যবিহীন লাইট ভেসেল রয়েছে, যেগুলি সাগর বাতিঘর থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। এই মনুষ্যবিহীন লাইট ভেসেলগুলি স্যান্ডহেডস থেকে সাগর পর্যন্ত চ্যানেলে চালাচলকারী জাহাজসমূহকে নিরাপদে চলাচল করতে সহায়তা করে।

Remove ads

পরিচালনা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বন্দর সীমা

কলকাতা বন্দরের সংরক্ষিত সীমা জঙ্গিপুরে ফিডার ক্যানেলের বহিঃপ্রবাহ থেকে (কলকাতার প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উজানে) ২০°৪৫' উত্তর অক্ষাংশে স্যান্ডহেডস পর্যন্ত প্রসারিত। বন্দরের সংরক্ষিত সীমার মধ্যে হুগলি নদীর তীরভূমিও রয়েছে, যা উভয় তীরের পাশে সর্বোচ্চ উচ্চ জলস্তর থেকে ৪৫.৭ মিটারের পর্যন্ত প্রসারিত।[১৬]

বন্দর পরিচালনা

Thumb
কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকে একটি পন্যবাহী জাহাজের মাল খালাসের দৃশ্য

কলকাতা বন্দরের বার্ষিক পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৮ কোটি ৭ লাখ টন। বজবজের ৬ টি জেটি সহ কলকাতায় ৩৪ টি ও হুগলী নদীস্থিত ৩ ওয়েল জেটি সহ হলদিয়ায় ১৭ টি[১৭] সক্রিয় বার্থ সহ মোট ৫১ টি বার্থ রয়েছে। জাহাজঘাটার মোট দৈর্ঘ্য ৯.৮৫৭ কিলোমিটার (৬.১২৫ মাইল)[১৮] এবং সর্বাধিক গভীরতা ৯.২ মিটার (৩০ ফুট)[] (কলকাতা ডক) থেকে ১২.২ মিটার (৪০ ফুট)[১৭] (হলদিয়া ডক) পর্যন্ত। এই বৈশিষ্ট্যগুলি সর্বাধিক প্রস্তাবিত ১,৫০,০০ টন ডেডওয়েটের (ডিডাব্লুটি) ট্যাংকার ও ৭৫,০০ ডিডব্লিউটি বাল্ককারিয়ারের বার্থিং ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনীয়।[১৭] তবে নৌ-চ্যানেলের স্বল্প নাব্যতার কারণে সর্বোচ্চ কলকাতায় ২০,০০০ ডিডব্লিউটি ও হলদিয়ায় ৩০,০০ ডিডব্লিউটি জাহাজ পরিচালনা করা হয়। কলকাতা বন্দর বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে হলদিয়া ডকের মাধ্যমে ৩০,০০০ মেট্রিক টনের বেশি পণ্য বহনকারী জাহাজ পরিচালনা করতে সক্ষম।

বন্দরটি একটি সামুদ্রিক ও একটি নদী বন্দর। কলকাতাহলদিয়া থেকে উত্তর ভারতের রাজ্যসমূহ ও আসাম, এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসম্ভার নদী পথে পরিবহন করা হয়।[১৭]

ট্রান্সলোডিং

কলকাতা ডক (খিদিরপুর) ও হলদিয়া ডকের নকশাকৃত জলের গভীরতা যথাক্রমে ৯.২ মিটার (৩০ ফুট)[]১২.২ মিটার (৪০ ফুট)[১৭], কিন্তু নৌ-চ্যানেলে ডুবো চরের কারণে ডক দুটিতে ৮.৫ মিটার (২৮ ফুট) এর বেশি ড্রাফটযুক্ত জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।[১৯] বন্দর কর্তৃপক্ষ গভীর সমুদ্রস্থিত স্যান্ডহেডেস নোঙ্গরখানা ও হুগলী নদীর মোহনায় সাগর নোঙ্গরখানায় ট্রান্সলোডিং-এর মধ্যমে বৃহৎ জাহাজগুলি থেকে ছোট বা বার্জে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করেছে। এই কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারা জিন্দল আইটিএফ সংস্থাকে নিযুক্ত রয়েছে। জিন্দল আইটিএফ-এর এমভি যুগলরাজএমভি ভিগনরাজ নামে দুটি ট্রান্সলোডারের দ্বারা পণ্য খালাসের কাজ পরিচালিত হয়।[২০]

অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবট পয়েন্ট বন্দর থেকে কয়লা বহনকারী এম.ভি. লেক ডি ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই জুন সাগর নোঙ্গরখানায় ট্রান্সলোডিংয়ের জন্য নোঙ্গর করেছিল, যা ছিল কলকাতার বন্দরের ইতিহাসে সাগর নোঙ্গরখানায় প্রথম কোনো কেপসাইজ জাহাজের নোঙ্গরের ঘটনা।[২১]

Remove ads

আমদানি-রপ্তানি

আরও তথ্য বছর, কার্গো ...

কলকাতা বন্দরের প্রধান আমদানি দ্রব্য হল কোক কয়লা, যন্ত্রপাতি, খনিজ তেল প্রভৃতি। বন্দর থেকে রপ্তানি করা হয় পাটজাত দ্রব্য, কয়লা, পেট্রোরাসায়নিক দ্রব্য, চা, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ আকরিক, ফ্লাই অ্যাস প্রভৃতি।বন্দরটির হলদিয়া ডক ব্যবহার করা হয় বাল্ক জাতীয় পণ্য আমদানি রপ্তানিতে এবং সামান্য কিছু কন্টেইনার পণ্য পরিবহন করে। কলকাতা ডক ব্যবস্থা প্রধানত ব্যবহার করা হয় কন্টেইনার পরিবহনে। এছাড়াও কলকাতা ডক ব্যবস্থা বাল্ক পণ্য পরিবহন করে। ২০১৫-২০১৬ সালে কলকাতা বন্দর ৫০.১৯ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৬,৬২৮৯১ টিইউএস কন্টেইনার পরিবহন করেছে। এর মধ্যে কলকাতা ডক ব্যবস্থা ১৬ মিলিয়ন টন পণ্য ও ৫ লক্ষের বেশি কন্টেইনার এবং হলদিয়া ডক ৩৪ মিলিয়ন টন পণ্য ও ১ লক্ষের বেশি কন্টেইনার পরিবহন করেছে।

Remove ads

সংযোগ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

রেল

কলকাতা ডক ব্যবস্থা রেলওয়ে

কলকাতা ডক ব্যবস্থার অন্তর্গত ডক, আশেপাশের গুদাম এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী সাইডিংয়ের জন্য ট্রাফিক চাহিদা মেটাতে কেডিএস রেলওয়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এটি ভারতীয় রেলওয়ের টার্মিনাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং পূর্ব রেলের শিয়ালদহ বিভাগের অধীনে কাজ করে। কেডিএস রেলওয়ের পূর্ব রেলওয়ের সাথে একটি চুক্তি রয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের পরিষেবা প্রদান করে। যদিও কেডিএস রেলওয়ের প্রাথমিকভাবে পূর্ব রেলওয়ে/দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে অনেক ইন্টারফেস ছিল এবং চিৎপুর, শালিমার ও গার্ডেন রিচ সহ বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পরিষেবা প্রদান ছিল, বর্তমানে এর কার্যক্রম শুধুমাত্র পূর্ব ডক জংশনের একমাত্র মার্শালিং ইয়ার্ড সহ ডক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। কেডিএস রেলওয়ের মোট ট্র্যাক দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিমি (১১ মাইল)।

মাঝেরহাট রেলওয়ে স্টেশনের মাধ্যমে এটি পূর্ব রেলওয়ের সাথে সংযুক্ত। ভারতীয় রেল তাদের লোকোমোটিভ দ্বারা পূর্ব ডক জংশনে (ইজেসি) সম্পূর্ণ পণ্য ট্রেনের (রেক) মাধ্যমে কেডিএস-এর জন্য ট্র্যাফিক নিয়ে আসে। তারপরে কেডিএস রেলওয়ে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই এবং কিছু যান্ত্রিক কাজের পরে, ট্রেনগুলিকে সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডলিং পয়েন্টে (ডক বা ব্যক্তিগত সাইডিংয়ের ভিতরে), কার্যক্রম সম্ভাব্যতা অনুযায়ী সম্পূর্ণ বা কিস্তিতে দাঁড় করানো করে। শেড/ডক/সাইডিং ইত্যাদিতে বোঝাই/খালাস কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে, রেকগুলিকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মার্শালিং ইয়ার্ডে (ইজেসি) বহির্মুখী ট্রেনগুলি তৈরি করা হয়। আবার, ডকুমেন্টেশনের পরে, বহির্মুখী রেকগুলি পূর্ব রেলওয়ে দ্বারা প্রদত্ত লোকোমোটিভ দ্বারা প্রেরণ করা হয়।

এইচডিসি রেলওয়ে

হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সের গুদাম এবং সাইডিংয়ের জন্য ট্রাফিক চাহিদা মেটাতে এইচডিসি রেলওয়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এইচডিসি রেলওয়ে ১১৫ কিলোমিটার ট্র্যাক সহ ১১.৫ কিলোমিটার রেলপথ ও ২ টি ইয়ার্ড নিয়ে গঠিত। রেলওয়ে অধীনস্থ ১২ টি লোকোমোটিভ দ্বারা রেলগাড়িগুলি পরিচালিত হয়, এবং বার্ষিক পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৩ কোটি মেট্রিক টন। এটি পাঁশকুড়া-হলদিয়া ব্রডগেজ রেলওয়ে সেকশনের দুর্গাচক স্টেশনের কাছে গৌরিচকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগকারী সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক একক লাইন বিশিষ্ট রেল করিডোরের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। এই রেলওয়ে ব্যবস্থায় জেনারেল মার্শালিং ইয়ার্ড ও বাল্ক হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড রয়েছে।[২২]

সড়ক

কলকাতা ডক সিস্টেম কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সাথে সংযুক্ত। কেডিএস-এর মধ্যে ও বাইরে যানবাহন চলাচলের সংকীর্ণ রাস্তাগুলিতে বড় যানজট ও ট্রাফিক জ্যাম দেখা যায়। কেডিপি ও এনএসডি ১৬ নং জাতীয় সড়ক ও ১৯ নং জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত। ১২ নং জাতীয় সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কের সংযোগস্থল ডক এলাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ডায়মন্ড হারবার রোড, তারাতলা রোড ও গার্ডেন রিচ রোড (পেরিফেরাল রোড) ৪-লেন বিশিষ্ট, এবং পর্যায়ক্রমে শক্তিশালী ও উন্নত করা হয়েছে, কিন্তু স্থানীয় ও পণ্যবাহী যানবাহন একই সঙ্গে চলাচলের কারণে প্রায়শই যানজটের সৃষ্টি হয়।

হলদিয়া ডক কমপ্লেক্সটি সরাসরি ১১৬ নং জাতীয় সড়কের (পুরাতন, ৪১ নং) সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। এই জাতীয় সড়কটি কোলাঘাটে সুবর্ণ চতুর্ভুজের অংশ ১৬ নং জাতীয় সড়কের (পুরাতন, ৬ নং) সঙ্গে সংযোগ প্রদান করে, যা ডক কমপ্লেক্সকে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিকে বন্দরের উপলভ্যতা তৈরি করে।[২৩]

জলপথ

কলকাতা ডক ব্যবস্থা ও হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স সরাসরি ১ নং জাতীয় জলপথের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, যা বন্দরকে জলপথে উত্তর ভারতের সঙ্গে সংযোগ প্রদান করে। এই জলপথে কলকাতা বন্দর থেকে বারাণসি ও সাহেবগঞ্জ টার্মিনালের সরাসরি পণ্য পরিবহন করা হয়। এছাড়া ৯৭ নং জলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের নদী বন্দরগুলির সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।[২৩]

Remove ads

নতুন বন্দর ও জেটি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বর্তমান কলকাতা বন্দর বা কলকাতা- হলদিয়া বন্দরের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বন্দরের পণ্য আমদানি রপ্তানি কমেছে।এই কারণে পশ্চিমবঙ্গে সাগরদ্বীপে ১০.৫ মিটার গভীরতার সাগর বন্দর গড়া হচ্ছে যেখানে কলকাতা বন্দর এর গভীরতা ৬ মিটার (২০ ফু) ও হলদিয়া বন্দরের গভীরতা ৮ মিটার (২৬ ফু)।প্রস্তাবিত সাগর বন্দর প্রকল্পটিকে আর্থিকদিক থেকে সম্ভাবনাময় করে তুলতে ৫১৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বন্দরটির উন্নয়নে গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় জাহাজ চলাচল মন্ত্রক যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে সরকারের এই অনুমোদন তারই একটি অঙ্গ। এই প্রকল্পটি রূপায়ণের কাজে যুক্ত করা হয়েছে ভোর সাগর পোর্ট লিমিটেড অর্থাৎ বিএসপিএল’কে। সমগ্র প্রকল্পটি রূপায়ণে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশীদারত্বের মাত্রা হবে যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ।

বন্দরের নতুন করে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই পিপিপি মডেলে চারটি বার্জ জেটি তৈরি করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বার্জ জেটিগুলি বেশ বড় মাপের তৈরি করা হচ্ছে বলে খবর। এই জেটিগুলির মাধ্যমে বাল্ক জাতীয় এবং লিকুইড জাতীয় কার্গো পরিবহন করা যাবে।হলদিয়া বন্দরের পাশেই হলদি নদী ও হুগলী নদীর পাড় বরাবর নতুন চারটি বার্জ জেটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। এগুলিকেই বলা হচ্ছে আউটার টার্মিনাল। ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সবচেয়ে বড় আউটার টার্মিনাল তৈরি হতে চলেছে। এই টার্মিনালটি তৈরি হবে হলদিয়া ভবনের ঠিক বিপরীতে। পাশাপাশি শালুকখালিতে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লিকুইড কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের বার্জ তৈরি হচ্ছে। ৪১৩ কোটি টাকার আউটার টার্মিনালের কাজ পেতে টেন্ডারে যোগ দিয়েছে দু’টি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বার্জ জেটি আর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংক্রিয় ফ্লোটিং ক্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার পর দক্ষিণ ভারতের বোথরা শিপিং এজেন্সি বরাত পেয়েছে।

Remove ads

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads