শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

কোতোয়াল

কোতোয়াল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

Remove ads

কোতোয়াল মধ্যযুগীয় ভারতে দুর্গের নেতা বা সেনাপতির জন্য ব্যবহৃত একটি উপাধি ছিল।[] শব্দটি কোট (অর্থ.দুর্গ) ও পাল (অনু. রক্ষক) হতে উদ্ভুত। তুর্ক-আফগান ও মুঘল আমলে নগরের পুলিশব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কোতোয়াল বলা হতো।[] কোতোয়ালরা প্রায়শই কোনও বড় শাসকের পক্ষে বড় শহর বা ছোট শহরগুলোর একটি অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করত। এটি ব্রিটিশ ভারতে ব্যবহৃত জেলাদার উপাধির সমকক্ষ।[] মুঘল আমল থেকে উপাধিটি একটি বড় শহর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের স্থানীয় শাসককে দেওয়া হয়েছিল। তবে উপাধিটি ছোট ছোট গ্রামের নেতাদের জন্যও ব্যবহার হতো।[] ব্রিটিশ আমলে কোতোয়ালরা খাজনা আদায়ে কালেক্টরদের সাথে আইনি দায়িত্বে থাকতেন। বাংলাদেশ ও ভারতে কোতোয়ালদের কিংবদন্তি এখনো টিকে আছে। কোতোয়ালী ঐতিহ্যের জন্য বাংলাদেশে এখনো অনেক পুলিশ থানা কোতোয়ালী থানা নামে পরিচিত। ভারতে কোলী জনগোষ্ঠী তাদের নামের শেষে কোতোয়াল উপাধি ব্যবহার করে।

Remove ads

ক্ষমতা ও দায়িত্ব

মোঘল শাসকদের প্রশাসনবিধি সমৃদ্ধ আইন-ই-আকবরিতে কোতোয়ালদের ক্ষমতা ও দায়িত্বের সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। কোতোয়াল শাহী সনদের মাধ্যমে নিযুক্ত হওয়ায় তারা দায়িত্ব পালনে স্বাধীন ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ভারতীয় বা বিদেশি অন্যান্য সমসাময়িক বিবরণে কোতোয়ালদের দায়িত্বের পরিধি ও ক্ষমতা সম্পর্কে আরো বিবরণ পাওয়া যায়।[]

মুঘল কোতোয়ালের ক্ষমতায় নগর প্রহরা, টহল ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নগরবাসীদের নিরাপত্তা বিধান, সান্ধ্য আইন আরোপ, নগরের বাড়িঘর ও সড়কের তথ্য সংরক্ষণ, সময়ে সময়ে বাড়ির বাসিন্দাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, নগরবাসীর আয়-ব্যয়ের তদারকি, সন্দেহভাজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারী, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, জনগণের নৈতিকতার ওপর নজরদারি, বাজার ও দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ, পশু জবাই ও শবদাহের শ্মশান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল।[]

Remove ads

ইতিহাস

মুঘল আমলে কোতোয়াল সগৌরবে তার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোতোয়ালরা স্বাধীনভাবে নগর রক্ষকের কাজ করেছেন। ১৭৬০ হতে নায়েব নাজিম (মুঘল পদ) পদটি ক্ষমতা ও দায়িত্বের দিক থেকে গুরুত্ব হারাতে শুরু করে। ১৭৯৩ সালে নায়েব নাজিমের নিজামত সংক্রান্ত দায়িত্বের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটলে কোতোয়াল পদটিও বিলুপ্ত হয়। তবে ১৮৪৩ সালে নামমাত্র নায়েব নাজিমের পদের চূড়ান্ত বিলুপ্তি পর্যন্ত প্রতীক স্বরূপ কোতোয়াল পদটি টিকে ছিল।[]

ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশের জমিদারি, হাট-বাজারের ইজারা, কৃষি, বন্দর বা ঘাট ইজারা থেকে ডেপুটি কালেক্টর খাজনা, রাজস্ব কিংবা রেয়াত উত্তোলন করতেন। এ সময় তার অধীনে রাজস্ব সংগ্রহের জন্য নিয়মিত পুলিশ বাহিনী ছাড়াও দাঙ্গা পুলিশের মতো কোতোয়াল বাহিনীও অনেক থানায় দায়িত্ব পালন করত। কোতোয়লের অধীনস্থ থানাকে কোতোয়ালি থানা বলা হতো। কোতোয়াল ছিলেন সেই বাহিনী ও সেই থানার প্রধান। তার বাহিনীতে দারোগা, জমাদার, হাবিলদার, নায়েক, কনস্টেবল ইত্যাদি বিভিন্ন পদের জনবল থাকতো। কোতোয়াল বাহিনী খাজনা দিতে ব্যর্থ নাগরিকদের ধরে এনে থানায় রাখত।[]

Remove ads

কিংবদন্তি

ব্রিটিশ আমলে গঠিত বাংলাদেশের পুরনো জেলা ও জেলাশহর, বিভাগীয় শহরে ‘কোতোয়ালি থানা’ দেখা যায়, বা সেইসকল পুরনো থানার সাথে সেই নামটি এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে।[] বাংলাদেশে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী দলের প্রাচীন ঐতিহ্যকে স্মরণীয় রাখতে ঢাকায় কোতোয়াল ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।[]

ভারতের কোলি জনগোষ্টি গুজরাতে মুঘল শাসনের সময় থেকে কোতোয়াল ছিলেন[] এবং রাজকোট, মোরভি এবং ভাবনগর রাজ্যের রাজপ্রাসাদের বংশগত কোতোয়াল ছিলেন।[] মহারাষ্ট্রের কোলি ব্যক্তিরা আহমেদনগর সালতানাতে কোতোয়াল হিসাবে কাজ এবং দুর্গ নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।[] 'কোতোয়াল' শব্দটিকে তারা তাদের শেষনাম বা উপাধি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই জনগোষ্টির অনেকেই দূর্গের রক্ষক অথবা গ্রাম্য নেতা থাকাকালীন উপাধিটি নিজেদের নামের সাথে যুক্ত করেন।[][] একজন কোলি ব্যক্তি কোতোয়াল হিসাবে অবসর গ্রহণের পরে তার বংশধররা "কোতোয়াল" উপাধি হিসাবে ব্যবহার করতেন কারণ এটি তাদের প্রতিপত্তিকে নির্দেশ করে।[১০]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads