শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

চ্যানেল টানেল

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

চ্যানেল টানেল
Remove ads

চ্যানেল টানেল (ইংরেজি: Channel Tunnel; ফরাসী: Le tunnel sous la Manche) একটি ৫০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল সুড়ঙ্গ যা সাগরের তলদেশ দিয়ে বিস্তৃত। এটি যুক্তরাজ্যের ফোকস্টোনকে ফ্রান্সের কোকুয়েলসের সাথে যুক্ত করেছে। ইংলিশ চ্যানেলের উপসাগরের মধ্যে দিয়ে চ্যানেল টানেলটি নির্মিত হয়েছে। এর সর্বনিম্ন পয়েন্টের দৈর্ঘ্য ৭৫ মিটার।[][][] ৩৭.৯ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে টানেলটির সমুদ্রতলে যে পরিমাণ দৈর্ঘ্য তা বিশ্বের দীর্ঘতম। টানেলে তিনটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যার দুটি দিয়ে ট্রেণ চলাচল করে এবং তৃতীয়টি মেরামত-সংরক্ষণ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়।

দ্রুত তথ্য সংক্ষিপ্ত বিবরণ, অবস্থান ...

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এই টানেল রেল চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হয়। এই টানেল দিয়ে ইউরোস্টার নামীয় রেল পরিষেবা চালু রয়েছে। এছাড়া ইউরোটানেল শাটল রয়েছে যেটা দিয়ে মোটরগাড়ী ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। সমুদ্রতলে এধরনের সেবার দিক থেকে এটাই বিশ্বের সর্ববৃহৎ। টানেলের দুই প্রান্তে দুটি রেলস্টেশান রয়েছে; টানেল পাড়ি দিয়ে এক স্টেশান থেকে অন্যটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৩৫ মিনিট সময় লাগে। []

Remove ads

নির্মাণ ইতিহাস

ইংলিশ চ্যানেলের তল দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার ধারণা ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উত্থাপিত হয়।[][] ব্রিটিশ রাজনৈতিক উদ্যোগ ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে এই কাজ বিলম্বিত হয়। অবশেষে ইউরোটানেল নির্মাণের কাজ ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় এবং নির্মাণ শেষে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ৪.৬৫০ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হলেও এই অর্থে প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণের পর থেকে টানেল বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। একবার টানেলে আগুন লাগলে এবং আরেকবার ঠান্ডা আবওহাওয়ার কারণে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।[][] অবৈধ অভিবাসীরা এই টানেল দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছে।[১০] একারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক মতভেদের সৃষ্টি হলেও ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার অবসান ঘটে।[১১]

Remove ads

প্রকৌশল

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ন্যাশনাল রেলওয়ে মিউজিয়ামে চ্যানেল টানেলের প্রদর্শনী।

নির্মাণ শুরুর ২০ বছর আগে সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষায় জানা যায় যে মাটির চক মার্ল স্তর ভেদ করে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা সম্ভব। মাটির এই স্তর সুড়ঙ্গ নির্মাণের উপযোগী। এই স্তরের সুবিধা হল এটা বেশ অভেদ্য, গর্ত করার জন্য সহায়ক এবং শক্ত। যুক্তরাজ্যের অংশে সুড়ঙ্গটির পুরো অংশ এই চক মার্ল মাটির ভেতর দিয়ে নির্মিত। চ্যানেল টানেল তিনটি প্যাসেজের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে দুইটির ব্যাস ৭.৬ মিটার, যেগুলো ৩০ মিটার ব্যবধানে অবস্থিত। আরেকটি ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এবং এর ব্যাস ৪.৮ মিটার। একটি সার্ভিস টানেল আছে যেটি মূল টানেলটি নির্মাণের আগেই নির্মিত হয়েছিল ভূ-গর্ভের অবস্থা পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে। ফ্রান্সের অংশে চ্যানেল টানেল নির্মাণের জন্য পাচটি মেশিন ব্যবহৃত হয়, অপরদিকে ইংল্যান্ডের অংশে ছয়টি। সার্ভিস টানেলটি সার্ভিস টানেল ট্রান্সপোড়্রট সিস্টেম এবং লাইট সার্ভিস টানেল ভেহিকেল ব্যবহার করে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল এই টানেল নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু।

ইংল্যান্ডের ক্যাসেল হিলে এবং ফ্রান্সের বয়সিংগে এলাকায় টানেলটি সমুদ্র হতে প্রবেশ করেছে। এই দুই প্রবেশ অঞ্চলের মাঝে টানেলের দৈর্ঘ্য ৫০.৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩.৩ কিলোমিটার ফ্রান্সে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে, ৯.৩ কিলোমিটার ইংল্যান্ডের ভূ-পৃষ্ঠের নিচে এবং ৩৭.৯ কিলোমিটার সমুদ্রের নিচে অবস্থিত।[] জাপানের সেইকান টানেলের পরে এটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল টানেল। তবে এর সমুদ্র তলের অংশ বিশ্বে সর্ববৃহৎ।[১২] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে টানেলটির গড় গভীরতা ৪৫ মিটার।

Remove ads

কার্যক্রম

সারাংশ
প্রসঙ্গ

চ্যানেল টানেল বর্তমানে নিম্নোক্ত সেবাগুলি প্রদান করে থাকেঃ

  • ইউরোটানেল শাটল, এটা দিয়ে যানবাহন চলাচল করে
  • ইউরোস্টার রেল সেবা
  • মালামাল পরিবহন[১৩]

মালামাল ও যাত্রী পরিবহনের যে পরিমাণ টানেল নির্মাণের পূর্বে ধারণা করা হয়েছিল, তা বাস্তব প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ছিল। পরবর্তিতে পূর্বপরিকল্পনার চেয়ে কম যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের দরুন আর্থিক লাভের পরিমাণ হ্রাস পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রেল পরিবহনে বিমুক্তকরণ নীতি গ্রহণ করায় রেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য চ্যানেল টানেল এবং হাই স্পিড ১ রেলওয়ে লাইন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি রেল সেবা প্রদানকারী সংস্থা লন্ডন থেকে চ্যানেল টানেল অবধি এবং চ্যানেল টানেল হয়ে ফ্রান্স পর্যন্ত রেল সার্ভিস চালুর জন্য সাড়া দেয়। ২০১৩ এর জুনে জার্মান রেলকোম্পানি দয়চে বান ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে লন্ডন পররন্ত রেল সার্ভিস চালুর জন্য লাইসেন্স লাভ করে। কিন্তু বিশেষ ধরনের ট্রেনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এই লন্ডন থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট পর্যন্ত এই সার্ভিস চালু হতে ২০১৬ লাগবে।[১৪]

যাত্রী পরিবহণ

১৯৯৮ সালে চ্যানেল টানেল দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ১৮.৪ মিলিয়ন ছিল যা ২০০৩ সালে হ্রাস পেয়ে ১৪.৯ মিলিয়নে দাঁড়ায়। ২০১০ সালে তা আবার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ মিলিয়ন হয়। চ্যানেল টানেল নির্মাণের পূর্বে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা ১৫.৯ মিলিয়ন ধারণা করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে যাত্রী সংখ্যা ছিল এর চেয়ে ২.৯ মিলিয়ন বেশি। ২০০০ সালে তা প্রায় ৭.১ মিলিয়ন বেশি ছিল। তবে যুক্তরাজ্যের কেন্ট থেকে (যেখানে ইউরোস্টার যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে) লন্ডন পর্যন্ত দ্রুতগতির রেলসেবা না থাকায় যাত্রী পরিবহন আশানুরূপ হচ্ছিল না। পরবর্তিতে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে হাই স্পিড ১ রেললাইন দুই ধাপে নির্মাণের ফলে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সালে ইউরোস্টার ৯১১৩৩৭১ যাত্রী পরিবহন করে, যা ২০০৮ সালে টানেলে অগ্নি দুর্ঘটনা সত্ত্বেও আগের বছরের তুলনায় ১০% বেশি।[১৫] পরের বছরগুলিতেও যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে যা ২০১০ সালে এসে ৯৫২৮৫৫৮ এ দাঁড়ায়। [১৬]

Aশুধু যেসব যাত্রী ইউরোস্টার দিয়ে চ্যানেল টানেল পার হয়েছে

আরও তথ্য বছর, যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা... ...

মালামাল পরিবহণ

চ্যানেল্ট টানেল দিয়ে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ অনিয়মিত, কখনো বৃদ্ধি পায় আবার কখনো হ্রাস পায়। অগ্নি দুর্ঘটনায় ১৯৯৭ সাল জুড়ে মালামাল পরিবহন বন্ধ ছিল। তবে পরবর্তিতে পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। চ্যানেল টানেল চালুর প্রথম বছরে মালামাল পরিবহনের ধারণা করা হয়েছিল প্রায় ৭.২ মিলিয়ন টন, তবে প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৫ সালে এই পরিমাণ ছিল ১.৩ মিলিয়ন টন। ১৯৯৮ সালে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল, যা প্রায় ৩.১ মিলিয়ন টন। ২০০৭ সালে এটি কমে ১.২১ মিলিয়নে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ১.২৪ মিলিয়নে পরিণত হয়। ২০০৮ সালের অগ্নি দুর্ঘটনা পরবর্তি সময়ে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছিল।

আরও তথ্য বছর, পরিবহনকৃত মালামালের পরিমাণ... ...
Remove ads

আঞ্চলিক প্রভাব

১৯৯৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চ্যানেল টানেলের ট্রাফিকের কারণে যুক্তরাজ্যের কেন্ট এবং ফ্রান্সের নর্দ-পাস দে ক্যালাইস এলাকায় ট্রাফিকের পরিমাণ বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দু’টি এলাকা দিয়ে সমুদ্র হতে চ্যানেল টানেল যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে প্রবেশ করেছে। কেন্ট থেকে লন্ডন অবধি একটি দ্রুত গতির রেললাইন নির্মাণের ফলে এই যানবাহনের চাপ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কেন্টের আঞ্চলিক উন্নতিতে এই টানেলের প্রভাব থাকলেও পার্শ্ববর্তি শহর লন্ডনের কারণে তা যথাযথ পরিমাণে প্রভাব রাখতে পারছে না। নর্দ-পাস দে ক্যালাইস এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি, বিশেষ করে উৎপাদন খাতে চ্যানেল টানেলের অবদান উল্লেখযোগ্য।

Remove ads

তথ্যসূত্র

নোট

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads