শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

টেকসই কৃষি

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

টেকসই কৃষি
Remove ads

টেকসই কৃষি (Sustainable agriculture) হল এমন একটি কৃষি পদ্ধতি, যা বর্তমান সমাজের খাদ্য ও বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করেই পরিচালিত হয়। এটি পরিবেশগত সেবা (ecosystem services) সম্পর্কে সম্যক বোঝার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হতে পারে। কৃষিকে আরও টেকসই করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা (sustainable food systems) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নমনীয় ব্যবসায়িক পদ্ধতি ও চাষাবাদের কৌশল তৈরি করা জরুরি।

Thumb
ছায়ায় জন্মানো কফি (shade-grown coffee), যা একটি বহুফসলী চাষ (polyculture) ব্যবস্থা এবং টেকসই কৃষির একটি উদাহরণ। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশের অনুকরণে পরিচালিত হয়। গাছপালা কফি গাছের জন্য ছায়া, পুষ্টি ও মাটির কাঠামো সরবরাহ করে; কৃষকরা কফি এবং কাঠ সংগ্রহ করেন।

কৃষির পরিবেশগত প্রভাব (environmental impact of agriculture) অত্যন্ত বিশাল, যা জলবায়ু পরিবর্তনে (খাদ্য ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী মানুষের উৎপন্ন মোট গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী), জল সংকট, জলদূষণ, মাটি ক্ষয়, বন উজাড়সহ অন্যান্য অনেক পরিবেশগত পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষি যেমন পরিবেশ পরিবর্তন ঘটায়, তেমনি এই পরিবর্তনের দ্বারা নিজেও প্রভাবিত হয়।

টেকসই কৃষির মাধ্যমে এমন পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ করা হয়, যাতে ফসল উৎপাদন বা পশুপালন মানবজাতি বা প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি না করে। এতে মাটি, জল, জীববৈচিত্র্য এবং আশপাশের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করা হয়, পাশাপাশি কৃষকদের এবং নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। টেকসই কৃষির উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে পার্মাকালচার (permaculture), বনভিত্তিক কৃষি (agroforestry), মিশ্র কৃষি (mixed farming), বহুফসলী চাষ (multiple cropping) এবং ফসল আবর্তন (crop rotation)।

টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা মানবজাতির টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার অন্যতম কার্যকর উপায় হল টেকসই কৃষি ভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা তৈরি করা। টেকসই কৃষি এমন একটি সম্ভাব্য সমাধান প্রদান করতে পারে, যার মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিবেশগত পরিস্থিতির মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন টেকসই মান ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা রয়েছে, যেমন জৈব সার্টিফিকেশন (organic certification), রেইনফরেস্ট অ্যালায়েন্স (Rainforest Alliance), ফেয়ার ট্রেড সার্টিফিকেশন (Fair Trade), UTZ সার্টিফাইড, গ্লোবালগ্যাপ (GlobalGAP), বার্ড ফ্রেন্ডলি এবং কমন কোড ফর দ্য কফি কমিউনিটি (4C)।

Remove ads

সংজ্ঞা

১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (United States Department of Agriculture বা USDA) টেকসই কৃষিকে সংজ্ঞায়িত করেছে একটি সমন্বিত উদ্ভিদ ও প্রাণি উৎপাদন পদ্ধতি হিসেবে, যা নির্দিষ্ট স্থানে দীর্ঘমেয়াদে নিম্নলিখিত লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবে:

  • মানুষের খাদ্য ও বস্ত্রের চাহিদা মেটানো।
  • কৃষি অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশের মানোন্নয়ন করা।
  • অপরিবর্তনীয় সম্পদ ও কৃষিখামারের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সর্বোচ্চ দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জীবচক্র ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সংযুক্ত করা।
  • কৃষিখামারের অর্থনৈতিক টেকসইতা বজায় রাখা।
  • কৃষক ও সমগ্র সমাজের জীবনমান উন্নত করা।

তবে, এই ধারণাটি নতুন নয়; "টেকসই কৃষি" শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার বহু শতাব্দী আগে থেকেই আদিবাসী জনগোষ্ঠী জমির সাথে টেকসই সম্পর্ক বজায় রেখে চাষাবাদ করছিল।

Remove ads

লক্ষ্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

একটি সাধারণ মত হলো যে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত উপায় হল টেকসই কৃষি। গ্রহের জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষি পদ্ধতিকে ভবিষ্যৎ ব্যয়—পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় উভয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে—বিবেচনায় নিতে হবে।

মূলনীতি

টেকসই কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি প্রধান নীতি রয়েছে:

  1. কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতিতে পুষ্টি চক্র (nutrient cycling), মাটি পুনর্জনন (soil regeneration) এবং নাইট্রোজেন স্থিরীকরণ (nitrogen fixation)-এর মতো জৈবিক ও পরিবেশগত প্রক্রিয়ার সংযুক্তি।
  2. বিশেষত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অপরিবর্তনীয় এবং অ-টেকসই উপাদানের ব্যবহার হ্রাস।
  3. কৃষকদের দক্ষতা ব্যবহার করে জমিকে উর্বর রাখা এবং কৃষকদের আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী করে তোলা।
  4. বিভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন মানুষের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা, যেমন কীটনাশক ব্যবস্থাপনা (pest management) এবং সেচ (irrigation)।

এটি "স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের অর্থনীতিকে বিবেচনায় রাখে, কারণ টেকসইতা সহজেই 'চিরস্থায়ী' হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; অর্থাৎ, কৃষি পরিবেশগুলোকে এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে তা অবিরাম পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে।" এটি কৃষকদের জীবিকার প্রয়োজনীয়তার সাথে সম্পদ সংরক্ষণের ভারসাম্য বজায় রাখে।

এটি সমন্বয়মূলক বাস্তুবিদ্যা (reconciliation ecology) হিসাবে বিবেচিত হয়, যা মানবসৃষ্ট পরিবেশের মধ্যে জীববৈচিত্র্যের সংস্থান তৈরি করে।

সাধারণত, কৃষিতে টেকসই অনুশীলনের বাস্তবায়ন উপযুক্ত প্রযুক্তি (appropriate technology) এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

Remove ads

প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি

টেকসই কৃষি ব্যবস্থা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) গবেষণা ও উন্নয়নের একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও ফলন পূর্বাভাসের উন্নতি করা সম্ভব, যা কৃষকদের পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চার দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।

এআই-ভিত্তিক মোবাইল মাটি বিশ্লেষণ প্রযুক্তি কৃষকদের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে এবং একই সঙ্গে তাদের পরিবেশগত প্রভাব কমাতে সহায়তা করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা মাঠেই তাৎক্ষণিকভাবে মাটির পুষ্টি উপাদানের মূল্যায়ন করতে পারেন।

পরিবেশগত বিষয়সমূহ

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
প্রথাগত চাষাবাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কম থাকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

কিছু চাষাবাদ পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদে মাটির ক্ষতি করতে পারে, যেমন অতিরিক্ত জমি কর্ষণ (tilling), যা মাটি ক্ষয় ঘটায় এবং অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সেচ ব্যবস্থা, যা মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি করতে পারে।

Thumb
জাম্বিয়াতে সংরক্ষণ কৃষি (conservation farming)

একটি কৃষিক্ষেত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জলবায়ু, মাটি, পুষ্টি উপাদান এবং জল সম্পদ। এর মধ্যে জল সংরক্ষণমাটি সংরক্ষণ মানুষের হস্তক্ষেপে সবচেয়ে বেশি উন্নত করা সম্ভব।

কৃষকরা যখন ফসল ফলান ও কাটেন, তখন তারা মাটি থেকে কিছু পুষ্টি উপাদান সরিয়ে ফেলেন। যদি এই পুষ্টি উপাদান পুনরায় সরবরাহ করা না হয়, তাহলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং তা অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়তে পারে বা ফসল ফলন কমে যায়। টেকসই কৃষি পদ্ধতির মূল ভিত্তি হলো মাটির উর্বরতা ফিরিয়ে আনা এবং একই সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস বা খনিজ সম্পদের মতো অপরিবর্তনীয় সম্পদের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করা।

যদি কোনো কৃষি ব্যবস্থা "অবিরাম উৎপাদন" করতে পারে, কিন্তু এটি অন্যত্র পরিবেশগত গুণমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে সেটি টেকসই কৃষি নয়। উদাহরণস্বরূপ, সার বা পশুপাখির বিষ্ঠার ব্যবহার জমির উর্বরতা বাড়াতে পারে, তবে এটি নিকটবর্তী নদী ও উপকূলীয় জলাশয়গুলোর ইউট্রোফিকেশন ঘটিয়ে দূষণ সৃষ্টি করতে পারে।

অন্যদিকে, অত্যন্ত কম ফসল ফলানোর সমস্যাও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে; যেমন, মাটির পুষ্টিহীনতার কারণে বৃষ্টি বন ধ্বংস হচ্ছে।

এশিয়াতে, টেকসই চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ প্রায় ১২.৫ একর (৫.১ হেক্টর) বলে অনুমান করা হয়, যার মধ্যে পশুখাদ্যের জন্য জমি, নগদ ফসল উৎপাদনের জমি এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, ছোট আকারের জলচাষও যুক্ত করা হয় (AARI-1996)।

টেমপ্লেট:Sustainability

টেমপ্লেট:Populationটেমপ্লেট:Environmental technology

Remove ads
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads