শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
নকশাল আন্দোলন
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
নকশাল আন্দোলন একটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের নাম। বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি থেকে শুরু হয়ে এটি ধীরে ধীরে ছত্তীসগঢ় (তদানীন্তন মধ্যপ্রদেশ) এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে এটি একটি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।

নকশাল বা নকশালবাদী বলতে উগ্র বামপন্থী দলগুলোকে নির্দেশ করা হয়। এসব দলের জন্ম হয়েছিল চিন-সোভিয়েত(Sino-Soviet split) ভাঙনের সময়। মতাদর্শগত ভাবে এরা মাও সে তুং-এর পদাঙ্ক অনুসরণকারী। নকশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ধীরে ধীরে তা ভারতের অনুন্নত অঞ্চলসমূহে যেমন:ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ইত্যাদি রাজ্যের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে প্রসারিত হয়ে পড়ে।[১] এরা মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদে বিশ্বাসী এবং ২০০৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) নামক দল প্রতিষ্ঠা করে এরা নিজেদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছে। ভারতের প্রায় ৪০% অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে “রেড করিডোর” অঞ্চলে প্রায় ৯২০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা “রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং” (“র”) এর হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২০০০০ মাওবাদী সক্রিয় ভাবে এ কার্যক্রমে যুক্ত আছে। তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে শঙ্কিত হয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মাওবাদীদের কে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা বৃহত্তর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সিপিআই (মাওবাদী) এবং আরও কিছু নকশালপন্থী দলকে ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।[২]। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার নকশাল নির্মূলে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এতে উগ্রবামপন্থী আক্রান্ত অঞ্চল ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে, তাদের পলায়নের সব রাস্তা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।[৩]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
নকশাল শব্দটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোটগ্রাম ’’’নকশালবাড়ি’’’ থেকে। বিগত শতাব্দির ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) যে কোনোদিনই বিপ্লবের পথে এগোবে না এটা পার্টির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে আসছিল।। দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের পরিষ্কার বার্তা ছিল, "এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে উপকার দেয়া সম্ভব"। এর বিরুদ্ধ চিন্তাধারা তখন থেকেই সক্রিয় ছিল; যারা মনে করতো বিপ্লবের মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে, মানুষকে কোনো স্থায়ী উপকার দেয়া সম্ভব নয়। ১৯৬৬র খাদ্য আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণ বলি হওয়ার পর দল যেভাবে এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে ১০০ গ্রাম গম ও ৫০ গ্রাম চালের পরিবর্তে আন্দোলনটিকে নষ্ট করে দিল সেটা ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠির মতে দলের নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের বিরুদ্ধ তাদের নতুন করে চোখ খুলে দিয়েছিল। কাজেই নকশালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ওই বিরুদ্ধ চিন্তার ধারাবাহিক ফল। এই আন্দোলনটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে পুরো পরিপ্রেক্ষিতটা পরিষ্কার হয় না। প্রকৃতপক্য়ে, নকশালবাড়ির ঘটনা দলের ওই মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রথম সদর্থক আন্দোলন।
এখানে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র একাংশ ১৯৬৭ সালে তাদের নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) একটি পৃথক উগ্র বামপন্থী দল গঠন করেন। এ বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, সুশীতল রায়চৌধুরী, কানু সান্যাল ও জঙ্গল সাঁওতাল। এ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ২৫ মে তারিখে। তখন নকশালবাড়ি গ্রামের কৃষকদের উপর স্থানীয় ভূস্বামীরা ভাড়াটে গুন্ডার সাহায্যে অত্যাচার করছিল। এরপর এই কৃষকরা ঐ ভূস্বামীদের সেখান থেকে উৎখাত করে।[২]

চারু মজুমদার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং এর অনুসারী ছিলেন। তিনি মনে করতেন ভারতের কৃষক এবং গরিব মানুষদের মাও সে তুং এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্রেণিশত্রুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা প্রয়োজন। তার কারণ তারাই সর্বহারা কৃষক শ্রমিকদের শোষণ করে। তিনি নকশালবাড়ি আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার বিখ্যাত রচনা হল ‘’’হিস্টরিক এইট ডকুমেন্টস্’’’ বা আট দলিল যা নকশাল মতাদর্শের ভিত্তি রচনা করে।[৪] বিশিষ্ট বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সরোজ দত্ত শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতির পক্ষে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেন নকশালদের মুখপত্র 'দেশব্রতী' পত্রিকায়। নকশালপন্থীরা পরবর্তীতে সিপিআই(এম) থেকে বেড়িয়ে ‘’’অল ইন্ডিয়া কমিটি অব কমিউনিস্ট রেভুলশনারী’’’(এ আই সি সি সি আর) গঠন করেন। ১৯৬৯ সালে এ আই সি সি সি আর থেকে জন্ম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। বাস্তবে সকল নকশালবাদী দলেরই উদ্ভব হয়েছে সিপিআই(এম এল) থেকে । তবে “মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার্” নামে একটি ভিন্ন মতাদর্শের দল ছিল। তাদের উদ্ভব হয়েছিল “দক্ষিণদেশ গ্রুপ” নামে একটি সংগঠন থেকে; যার নেতৃত্বে ছিলেন অমূল্য সেন, কানাাই চ্যাটার্জি ও চন্দ্রশেখর দাশ। এরা CCCRএর অঙ্গ হিসেবে যুক্ত থাকলেও চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সিপিআই (এমএল)এ তারা যুুুুক্ত না হয়ে উক্ত মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র গঠন করে স্বাধীনভাবে বিপ্লবী আন্দোলন চালয়ে যেতে থাকে। পরবর্তী ক্ষেত্রে, ভেঙ্গে যাওয়া সিপিআই (এমএল) থেকে বেরিয়ে আসা “পিপলস ওয়ার গ্রুপ” (PWG) এবং "মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র" (MCC) একত্রিত হয়ে ২০০৪ সালে “কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)" গঠন করে। এছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের আর একটি দল হল “অন্ধ্র রেভুলশনারী কমিউনিস্টস্” এবং তারা “টি. নাগি রেড্ডি”-র “মাস লাইন” মতবাদের অনুসারী ছিল।
১৯৭০ সালের দিকে এ আন্দোলন অন্তর্দ্বন্দের কারণে কয়েকটি বিরোধী অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের দিকে প্রায় ৩০ টি নকশালবাদী দল সক্রিয় ছিল এবং তাদের জনবল ছিল প্রায় ৩০,০০০।[৫] ২০০৪ সাল ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে প্রায় ৯৩০০ নকশালবাদী ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৬৫০০ অনিবন্ধিত অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, এছাড়া দেশী অস্ত্র তো আছেই।[৬] Judith Vidal-Hall(২০০৬) এর মতে সাম্প্রতিক সময়ে নকশালদের সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০ এবং তারা ভারতের বনভূমির প্রায় এক পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের ভারতের ৬০৪ টি জেলার ভেতর ১৬০ টিতে বিস্তার করেছে।[৭]
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংশোধনবাদী চরিত্রগত কারণে তেলেঙ্গানার সংগ্রামকে নেহরুর পদতলে বিকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে নকশালবাড়ি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সুবিধাবাদী কেন্দ্র ও কাঠামোর উপর আঘাত হেনেই উপমহাদেশের বিপ্লব আকাঙ্ক্ষী বিপ্লবীদের নিজস্ব পার্টি গঠনের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। তেলেঙ্গানা পার্টি সংশোধনবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, নকশালবাড়ি তা করেনি।[৮]
বর্তমানে কিছু নকশালবাদী দল ভারতের মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, যেমন:সিপিআই (এম এল) লিবারেশন।
Remove ads
বাংলায় বিপ্লব
সারাংশ
প্রসঙ্গ

নকশাল আন্দোলন কলকাতার ছাত্র সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল।[৯] ছাত্রদের একটি বড় অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। বিশেষত নামকরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা প্রভাবিত হয়েছিল এই আন্দোলনে। চারু মজুমদার বলেছিলেন বিপ্লবী কার্যক্রম শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে চালিয়ে গেলেই চলবে না, বরং একে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি নকশালদের শ্রেণীশত্রু খতম করার নির্দেশ দেন। এ শ্রেণীশত্রুদের মধ্যে যেমন ছিল ভূস্বামী তেমনি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ এবং আরও অনেকে।
সে সময় কলকাতার সব স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নকশালপন্থী ছাত্ররা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিয়ে তার মেশিন শপে পুলিশদের সাথে লড়ার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজ ছিল তাদের সদর দফতর। তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ গোপাল সেন কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
নকশালরা অল্পসময়ের মধ্যে ভারতের শিক্ষিত সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। দিল্লীর “সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ” তাদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
এরপর সরকার নকশালদের কে শক্ত হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় নকশালদের উপর প্রতি-আক্রমণের নির্দেশ দেন। পুলিশকে কিছু মানবতা বিরোধী ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল নির্বিচারে হত্যা এবং অকারণে যে কাউকে বন্দী করার ক্ষমতা। লক -আপ হত্যা, জেলবন্দী হত্যা ও ভূয়ো সংঘর্ষ দ্বারা পুলিশ বিভিন্ন সময় নকশালপন্থীদের হত্যা করেছে। এক মাসের ভেতরে সরকার নকশাল আন্দোলন দমন করেছিল। “ নকশালদের শক্ত হাতে দমন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই” ভারত সরকার এবং পুলিশের মনোভাব ছিল এমনি। তারা দেশের জনগণ কে এ কথাও ভাল ভাবে বুঝিয়েছিল যে “দেশ এখন ঐ চরমপন্থীদের সাথে গৃহযুদ্ধে নেমেছে, এ যুদ্ধে গণতন্ত্রের নামে পরিহাসের কোন স্থান নেই। কেননা ঐ চরমপন্থীদের কাছে গণত্ন্ত্র মূল্যহীন”। এর ফলে দেশবাসীর কাছে নকশালদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যায়, আর তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলরা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
এছাড়া অর্ন্তকোন্দলের কারণে আন্দোলনে ছেদ পড়ে। দলের একটি বড় অংশ চারু মজুমদারের নির্দেশিত পথের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ১৯৭১ সালে সিপিআই(এম-এল) ভেঙে দু টুকরো হয়ে যায়। চারু মজুমদারের দল থেকে সত্য নারায়ন সিং বেরিয়ে যান। ১৯৭২ সালে চারু মজুমদার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আলীপুর জেলে নিহত হন। তাত্ত্বিক নেতা সরোজ দত্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি, সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়। পলিটব্যুরোর অন্যতম নেতা সুশীতল রায়চৌধুরী আত্মগোপন থাকা অবস্থায় মারা যান। প্রধান নেতৃবর্গের বড় অংশই জেল বন্দী হন। পরে নকশালপন্থী দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) বহু ধারা উপধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। অনেক বছর পরে অন্যতম প্রধান নেতা কানু সান্যাল ২০১০ সালের ২৩শে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ী থানার হাতিঘিষা গ্রামের নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শারীরিক অসুস্থতা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।[১০][১১] মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
সম্প্রতি ২০০৯ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের লালগড়ে পুলিশদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মিদের উপর হামলা চালায়। এ এলাকায় মাওবাদী জঙ্গীরা তাদের প্রভাব বাড়াচ্ছে এই অভিযোগে রাজ্য সরকার জুনের প্রথম দিকে পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে লালগড় পুনরুদ্ধার করে। মাওবাদী নেতা কিষেনজি এক সাক্ষাতকারে বলেন- “তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন বাম এবং তাদের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের জন্য মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে চায়। আর তারই শুরু হিসেবে তারা লালগড়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ১৯৭০ সালের পরে তারা আবার সংগঠিত হয়েছে আর ২০১১ সাল নাগাদ কলকাতাতে তারা সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করবে।“[১২]
Remove ads
সাহিত্য নকশাল প্রসঙ্গ
নকশাল আন্দোলন নিয়ে প্রচুর সাহিত্য রচিত হয়েছে। অরুন্ধতী রায় বুকার পুরস্কার জয়ী “গড অব স্মল থিংস্” উপন্যাসে একটি চরিত্র নকশাল আন্দোলনে যোগ দেয়। মহাশ্বেতা দেবী তার ‘’’হাজার চুরাশির মা’’’ উপন্যাসে নকশাল আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন। ১৯৯৮ সালে এ উপন্যাসের উপর ভিত্তিকরে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, নাম ছিল “হাজার চুরাশি কি মা”। সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কিন্নর রায় রচিত বেশ কিছু উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের কথা রয়েছে। তাছাড়াও মানব চক্রবর্তীর "কুশ" উপন্যাসে নকশাল আন্দোলনের কথা আছে। নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে ছোটগল্প, নাটক, গণসংগীত রচিত হয়েছিল যা বাংলার চিন্তাশীল মানুষকে প্রভাবিত করেছিল। যেমন, মহিনের ঘোড়াগুলি তাদের "চৈত্রের কাফন" গানটি নকশাল আন্দোলন নিয়ে লিখেছে।ঝুম্পা লাহিড়ীর "নাবাল জমি"(Lowland) বইয়ে নকশাল প্রসঙ্গে অনেক তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
ভারতে নকশালদের হাতে নিহতের পরিসংখ্যান
নকশালরা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী বিভিন্ন সালে নকশালদের হাতে নিহতের হার নিম্নরূপ-
- ১৯৯৬ সালে নিহত হয়েছে ১৫৬ জন[১৩]
- ১৯৯৭ সালে নিহত হয়েছে ৪২৮ জন[১৩]
- ১৯৯৮ সালে নিহত হয়েছে ২৭০ জন[১৩]
- ১৯৯৯ সালে নিহত হয়েছে ৩৬৩ জন[১৩]
- ২০০০ সালে নিহত হয়েছে ৫০ জন[১৩]
- ২০০১ সালে নিহত হয়েছে ১০০+ জন[১৩]
- ২০০২ সালে নিহত হয়েছে ১৪০ জন[১৩]
- ২০০৩ সালে নিহত হয়েছে ৪৫১ জন[১৩]
- ২০০৪ সালে নিহত হয়েছে ৫০০+ জন[১৩]
- ২০০৫ সালে নিহত হয়েছে ৮৯২ জন
- ২০০৬ সালে নিহত হয়েছে ৭৪৯ জন
- ২০০৭ (৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সালে নিহত হয়েছে ৩৮৪ জন[১৪] (related to Naxalite insurgency)[১৫]
- ২০০৮ সালে ৩৮ মাওবাদী সহ নিহত হয়েছে ৯৩৮ জন[১৬][১৭]
- ২০০৯ সালে ১৬ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট গ্রহণের সময় বিহার, ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খণ্ডে হামলা চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে। ২৩ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণের সময় জামশেদপুর এবং ঝাড়খণ্ডে হামলা চালিয়ে কয়েক জনকে আহত করে।মে মাসে সম্ভাব্য মাওবাদীদের হামলায় ১৬ জন পুলিশ নিহত হয়।[১৮]
বিবিসির হিসেব অনুযায়ী নকশালদের কারণে এখন পর্যন্ত ৬০০০ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Remove ads
অর্থায়ন
নকশালরা একটি টার্গেট এলাকায় কাজ করার আগে বিস্তারিত আর্থ-সামাজিক জরিপ পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন সম্পদের উপর নির্ভর করে। অধ্যয়নগুলি বিদ্রোহের মূল এলাকা এবং ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদ সহ এলাকার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্দেশ করেছে। খনি শিল্প হল একটি প্রধান আর্থিক উৎস, যেখানে তারা নকশাল নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় খনির কাজ চালিয়ে যাওয়ার উপায় হিসাবে এবং "সুরক্ষা" পরিষেবার জন্য প্রতিটি খনি কোম্পানি থেকে প্রায় 3% লাভ সংগ্রহ করে যা খনি শ্রমিকদের নকশাল আক্রমণ সম্পর্কে চিন্তা না করেই কাজ করতে দেয়। 2006 সালের একটি প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে মাওবাদীরা বছরে প্রায় ₹14 বিলিয়ন (US$160 মিলিয়ন) চাঁদাবাজি করেছে। সংগঠনটি মাদক ব্যবসার মাধ্যমেও অর্থ জোগায়, যেখানে এটি গাঁজা এবং আফিমের মতো সাইকোঅ্যাক্টিভ গাছের চাষ করে, যেগুলি নকশালদের পক্ষে কাজ করে এমন মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা সারা দেশে বিতরণ করা হয়।নকশাল তহবিলের প্রায় 40% আসে আফিম চাষ এবং বিতরণের মাধ্যমে। একজন আত্মসমর্পণকৃত নকশাল দাবি করেছে যে তারা কিছু অর্থ জনসাধারণের অবকাঠামোতে ব্যয় করেছে এবং বাকিটা গোষ্ঠীর ভরণপোষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। 2011 সালে, ভারতীয় পুলিশ চীনা সরকারকে আন্দোলনের নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিল এবং দাবি করেছিল যে পাকিস্তানি আইএসআই আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে ৷
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
সংশ্লিষ্ট বইয়ের তালিকা
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads