শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
নারায়ণগঞ্জ জেলা
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
নারায়ণগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। নারায়ণগঞ্জ শহরে এ জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর অবস্থিত। অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ সোনারগাঁও এ জেলার অন্তর্গত। নারায়ণগঞ্জ সোনালী আঁঁশ পাটের জন্য প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে পরিচিত। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর একটি বিখ্যাত নদীবন্দর। ৬৮৩.১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলাটি ঢাকা বিভাগের সবচেয়ে ছোট জেলা। রাজধানী ঢাকার সাথে এ জেলার সীমানা রয়েছে।
Remove ads
নামকরণ
১৭৬৬ সালে হিন্দু ধর্মীয় নেতা বিকন লাল পান্ডে , যিনি বেণুর ঠাকুর বা লক্ষী নারায়ণ ঠাকুর নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চল অধীনে নিয়েছিলেন। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পতি হিসেবে ঘোষণা করেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।[২] কালেক্টরেটের প্রারম্ভিক দলিল-দস্তাবেজে নারায়ণগঞ্জের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নামের কোনো নগরীর অস্তিত্ব প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে পাওয়া যায় না। নারায়ণগঞ্জ নামকরণের পূর্বে সোনারগাঁ ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। মুসলিম আমলের সোনারগাঁ নামের উদ্ভব প্রাচীন সুবর্ণগ্রামকে কেন্দ্র করেই। বহু অঞ্চলে মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা নগরের অভ্যুদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল সোনারগাঁ। ফিরোজ শাহ চতুর্দশ শতাব্দীর প্রায় প্রথমদিকে এই অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়ে তা অন্তর্ভুক্ত করেন লখনৌতি রাজ্যের। এর ফলে ঘটে হিন্দু রাজত্বের অবসান। সোনারগাঁ লখনৌতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহ-এর ক্ষমতা লাভের (১৩২২) পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সোনারগাঁয়ের গুরুত্ব সাময়িকভাবে কিছুটা কমে গেলেও এটি একটি বন্দর ও টাঁকশাল শহর হিসেবে গুরুত্ব পেতে থাকে। ১৩২৪ খ্রিষ্টাব্দে গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলা অধিকার করে সাতগাঁও, লখনৌতি ও সোনারগাঁ- এই তিনটি প্রশাসনিক অংশ বা ইউনিটে বিভক্ত করেন। ১৩৩৮ থেকে ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সোনারগাঁ ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ। তিনি সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের সাহায্যকারী ছিলেন। ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুলতানের মৃত্যু ঘটলে দিল্লী হতে নতুন শাসনকর্তা নিয়োগে বিলম্ব হলে তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করে সোনার গাঁ অধিকার করেন। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ সোনারগাঁ দখল করেন ১৩৫২ খ্রিষ্টাব্দে। সেখান থেকে জারি করা হয় মুদ্রা। সুদূর বাগদাদ নগরী থেকে দিল্লীতে আধ্যাত্মিক সাধু সম্রাট শাহ ফতেহউল্লাহ্ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পরে এখানেই তাকে কবরস্থ করা হয়। তার নাম থেকেই বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সুফী সাধকের স্মৃতি বিজড়িত এক সময় পরগনা নামে পরিচিত এই এলাকার একটি অঞ্চল ফতেহউল্লাহ্ বা ফতুল্লা নামকরণ করা হয়।
মুসা খানের পতনের পর (১৬১১) সোনারগাঁ মুঘল সুবাহ বাংলার একটি সরকারে পরিণত হয়। সোনারগাঁয়ের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের দ্রুত পতন শুরু হয় ঢাকার মুঘল রাজধানী স্থাপনের (১৬১০) পর থেকেই। সোনারগাঁয়ের একটি অংশে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে গড়ে উঠেছিল পানাম নগর। নানা স্থাপত্য নিদর্শন থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, বর্তমান পানাম নগর ও খাস নগরের মধ্যবর্তী এলাকার বিস্তৃত হিন্দু আমলের রাজধানী শহর মুসলিম আমলে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়নি, সম্ভবত এই স্থানে প্রথমদিকের মুসলিম শাসনকর্তাদের আবাসস্থল ছিল।
মোগল আমলেরও পূর্বে খিজিরপুর, কদমরসুল ও মদনগঞ্জ বাণিজ্যিক অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক নদীবন্দর ছিল। পলাশী যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর কাছে বাংলার শেষ নবাবের পরাজয়ের পর পর ইংরেজরা দল বেঁধে এ অঞ্চলে আসতে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের আশায়। সে সময় এ অঞ্চল পাট, লবণ ও বিভিন্ন ধরনের খাবার মসলার জন্য বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। রাজধানী ঢাকা ও সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে (শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড়) সড়ক ও জল পথের সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কোম্পানির লোকেরা শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম সড়ককে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। একের পর এক নিম্ন জলাভূমি ভরাট করে গড়ে তোলে ঘরবাড়ি। কোম্পানির আগে মোগল সরকারের আমলে এই নদী বন্দর থেকে ব্যবসায়িক রাজস্ব আয় ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ টাকা ১০ আনা ৯ পয়সা। কোম্পানির আমলে ১৮৫০ সালে এই বন্দর থেকে ৩ কোটি গজ চট বস্ত্র ইউরোপ, আমেরিকায় রপ্তানি করা হয়। তখন ১০০ চট বস্ত্রের মূল্যে ছিল ৭ টাকা। পলাশী যুদ্ধে যেসব ব্যক্তি ইংরেজদের সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল তাদের প্রত্যেককে ইংরেজ সরকার পুরস্কৃত করে। এই সুবাদে বাংলা ১১৭৩ সালে ভীখন লাল ঠাকুর ওরফে লক্ষ্মী নারায়ণ ঠাকুর কোম্পানির নবাব মোজাফফর জঙ্গের (মহম্মদ রেজা খান) কাছ থেকে একটি দলিলের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ভোগস্বত্ব লাভ করেন। লক্ষ্মী নারায়ণ ঠাকুরের নামে উৎসর্গকৃত বলে এই অঞ্চলের নাম খিজিরপুর বদলিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় নারায়ণগঞ্জ। নরসিংদীর টোকবর্গী থেকে মুন্সীগঞ্জের মোহনা পর্যন্ত দীর্ঘ ৬৫ মাইল শীতলক্ষ্যা নদী নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত। ইংল্যান্ডের টেমস নদীর পর পৃথিবীর দ্বিতীয় ‘হারবার’ বেষ্টিত শান্ত নদী শীতলক্ষ্যা। এক সময় ইংল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ তৈরির কাজে এই নদীর স্বচ্ছ সুশীতল পানি ব্যবহার করতো। কোম্পানি এ অঞ্চলকে আধুনিক শিল্প বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৮৭৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড় কদমরসুল, বন্দর ও মদনগঞ্জ এবং পশ্চিম পাড়ের মোট ৪.৫ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথম পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মি. এইচটি উইলসন। ১৮৬৬ সালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের সঙ্গে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হয়। এ সময় রানারের মাধ্যমে ডাক সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ডাক বিভাগের শাখা ছিল বরপা, হরিহরপাড়া, নবীবগঞ্জ, কাইকারটেক, শীতলক্ষ্যা, টানবাজার ও সোনারগাঁয়ের পানাম নগরীতে। ইংরেজরা তাদের নিজেদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার জন্য ব্যক্তিগত এক্সচেঞ্জ বসিয়ে ১৮৭৭ সালে টেলিফোন সার্ভিস চালু করেন। ইংরেজরা তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বণিকদের উৎসাহিত করতে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরকে ১৮৮০ সালে ফ্রিপোর্ট ঘোষণা দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নারায়ণগঞ্জের আগমনের পর পর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী পথে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সমুদ্র পথের চট্টগ্রাম বন্দর, কলকাতাসহ বিভিন্ন নদী পথে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়। তখন কলকাতা ও আসাম থেকে যাত্রী এবং মালামাল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরে স্টিমার ভিড়তো। এ সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থান ভ্রমণের একমাত্র পথ ছিল নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর। এ জন্য নারায়ণগঞ্জকে বাংলা ভ্রমণের প্রবেশদ্বার বলা হতো। যাত্রী সাধারণের সুবিধার দিকে নজর দিয়ে ও মালামাল পরিবহন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। সব মেইল ট্রেন এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই ছেড়ে যেত। ফলে ভারতবর্ষের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শিল্প ও বন্দর নগরীর যোগাযোগ স্থাপিত হয়। স্থল পথ, জল পথ ও টেলিযোগাযোগের সুব্যবস্থার কারণে বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে স্থান করে নেয়।
৫২-এর ভাষা আন্দোলন নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় এক অধ্যায়। যেহেতু নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০ কি.মি. অদূরেই অবস্থিত ঢাকা জেলা, তাই পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে পাকিস্তানি স্বৈরশাসককে উৎখাত করার জন্যই এ এলাকার জনগণ ছিল প্রতিবাদমুখর। তৎকালীন ছাত্রনেতা শামসুজ্জোহা, বজলুর রহমান, বদরুজ্জামান, মফিজ উদ্দিন, হাবিব রশিদ, সুলতান মাহমুদ মলিক, কাজী মজিবুর, শেখ মিজান ও এনায়েত নগরের শামসুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম হন। এখনও এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে আত্মায় ধারণ করে প্রতিবৎসর ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন সুসংঘঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার এম.এ গনি, মোহাম্মদ আলী, মোঃ নাসির উদ্দিন, মহিউদ্দিন রতন, নুরুল ইসলাম, মোঃ সামসুল হক, মমিনুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ফতুল্লার পঞ্চবটিতে ডালডার মিল নামের এলাকা ছিল পাকসেনাদের দখলে। প্রতিরাতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে যমুনা জেটির কাছে নিয়ে আসত এবং গুলিবর্ষণ করে হত্যার পরে লাশগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর জলে নিক্ষেপ করে ভাসিয়ে দেওয়া হতো বলে জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধা দুলাল ও আমিনুর ডিক্রিরচর ও কানাই নগরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ তৈরী করেন। বাবুরাইলের মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল আশ্রাফ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন।
Remove ads
অবস্থান ও আয়তন
নারায়ণগঞ্জ জেলা রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্বে, ২৩°৩৩' থেকে ২৩°৫৭' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬' থেকে ৯০°৪৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর জেলা উত্তরে নরসিংদী জেলা, গাজীপুর জেলা এবং দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে ঢাকা। নারায়ণগঞ্জ জেলার মোট আয়তন ৬৮৪.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১৩ মিটার বা ৩২ ফুট।[৩] ভূসংস্থান অনুসারে এ জেলা গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকার পাললিক মাটির সমতল ভূমি। জেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৭৭৭ মিলিমিটার। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ উপজেলাতেও এপ্রিল থেকে জুন হলো সবচেয়ে উষ্ণতম মাস, যার তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হলো সবচেয়ে শীতলতম মাস, তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

২৯২ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় যা ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১৮৮২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহকুমা ঘোষিত হয়, যা ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়। ২০১১ সালের ৫ই মে নারায়ণগঞ্জ সদর পৌরসভা, বন্দর থানার কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা সমন্ময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় উপজেলা ৫টি। সেগুলো হল -
নারায়ণগঞ্জ জেলা সর্বমোট ৭টি থানায় বিভক্ত করা হয়েছে।
Remove ads
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন
২০১১ সালের ৫ই মে নারায়ণগঞ্জ সদর পৌরসভা, বন্দর থানার কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম প্রশাসক ছিলেন শাহ কামাল। ৩০ অক্টোবর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম বারের মতো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। সেলিনা হায়াৎ আইভী বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র। ২০১১ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
Remove ads
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
২৭টি ওয়ার্ড সমন্বয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়।
Remove ads
নারায়ণগঞ্জের পৌরসভা সমূহ
- মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৬৩টি
- গ্রাম- ১৩৩টি, মহল্লা ৭৪টি
- ৫টি ইউ,পি নিয়ে ডি.এন.ডি এলাকা গঠিত। এর আয়তন ৮,৫৪০ একর।
জনসংখ্যা
২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা হলো ৩০,৭৪,০৭৭ জন। ২০১১ সালের আদমশুমারী ও গৃহগণনা অনুসারে নারায়ণগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ছিল ২৯৪৮২১৭ জন[৪] (জাতীয় জনসংখ্যার ২.০৫%, যা মঙ্গোলিয়ার মত একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের জনসংখ্যার সমান[৫] বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের মোট জনংখ্যার সমান। জেলায় পুরুষ জনসংখ্যা ১৫২১৪৩৮ জন এবং নারী জনসংখ্যা ১৪৬৭৭৯ জন। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০৭:১০০, যা জাতীয় অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি। ২০০১-২০১১ এর দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫%। জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩০৮ জন বা প্রতি বর্গমাইলে ১১১৫৭ জন মানুষ বসবাস করে। গৃহহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬৬৮ জন। ২০১৫ সালের জেলা পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী এ জেলায় স্বাক্ষরতার হার ৫৭.১০%, নারী স্বাক্ষরতার হার ৫৯.৪৮% এবং পুরুষ স্বাক্ষরতার হার ৫৪.৫৬%, যা জাতীয় স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৪% এর চেয়ে কম। জেলায় ৬৭৫৬৫২ টি খানা বা পরিবার রয়েছে, প্রতি পরিবারের আকার ৪.৩৪%।
জেলা পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২৮০২৫৬৭ জন মুসলমান, ১৪৪১০৫ জন হিন্দু, ৯৬৩ জন খ্রিস্টান, ৩৭৮ জন বৌদ্ধ এবং ২০৪ জন অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।[১] ধর্মহীন বা নাস্তিকদের কোন পরিসংখ্যানগত সরকারি তথ্য নেই।
Remove ads
অর্থনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

রপ্তানী শিল্পে পাট যখন বাংলাদেশের প্রধানতম পণ্য, তখন নারায়ণগঞ্জ "প্রাচ্যের ডান্ডি" নামে খ্যাত থাকলেও বর্তমানে নিট গার্মেন্টস ও হোসিয়ারী শিল্পের জন্য সুপরিচিত। নিটওয়্যার রপ্তানীকারকদের সংগঠন "বিকেএমইএ" ও হোসিয়ারী শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রধান কার্যালয় "হোসিয়ারী সমিতি" নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। ফতুল্লা এনায়েতনগর এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৭০০ গার্মেন্টস আছে। সারা নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় ১ হাজার রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস আছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ গার্মেন্টসই নিট গার্মেন্টস। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের তৈরী পোশাক রাজধানী ঢাকাতে ও বেশ সুনাম অর্জন করতে পেরেছে।
বর্তমানেও নারায়ণগঞ্জ পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী পাটকল নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত ছিল যা বর্তমানে বন্ধ করে আদমজী ইপিজেড গড়ে তোলা হয়েছে। পাট ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশন বা বিজেএ এর প্রধান কার্যালয় নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।
দেশের প্রধান নদীবন্দর নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত যা শতবছরের পুরনো। সবচেয়ে বড় সারের পাইকারী বাজার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। দেশের প্রধানতম লবণ কারখানা ও নির্মাণ সামগ্রীর পাইকারী বাজারের জন্য ফতুল্লা বিখ্যাত। এছাড়া লবণ, গম, আটা ও ময়দা পাইকারী ব্যবসা ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। দেশের প্রধানতম সিমেন্ট কারখানাগুলো সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীর তীরজুড়ে গড়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা ব্যতীত সকল উপজেলার প্রধান অর্থনীতি হলো কৃষি।
রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও অঞ্চলের জামদানি ও মসলিনের কাপড় তৈরির ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৪ শত বছরের পুরোনো। ইতিহাস খ্যাত মসলিন কাপড় প্রাচীনকালে এখানে তৈরী হতো। মিশরের মমির শরীরে পেচানো মসলিন এই সোনারগাঁয়ের তৈরি বলে জানা যায়। বর্তমানে জামদানি শিল্প টিকে থাকলেও মসলিন শিল্প বিলুপ্ত।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক ব্যবসা কেন্দ্র। এক কথায় বলা যায় চাষাড়া এখন নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র। এছাড়া বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যতম ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ এর যাত্রা শুরু হয় এই জেলা থেকেই।
চিত্তাকর্ষক স্থান

- প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ, বারদী
- বারদী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির
- লাঙ্গলবন্দ স্নান ঘাট (পুন্য স্নানের জন্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্য তীর্থ -স্নান )
- লাঙ্গলবন্দ প্রাচীন মন্দির
- সাব্দী কালী মন্দির
- সাব্দী মঠ
- রাজা লক্ষী নারায়ণ মন্দির (১১৭৩)
- লক্ষী নারায়ণ পুষ্কুরিনি
- লক্ষী নারায়ণ কটন মিল
- সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি (১৩৯৩-১৪১১)
- কাজী সিরাজউদ্দিনের সমাধি (১৩৯৩-১৪১১)
- পাঁচ পীরের সমাধি
- জয়বাবা লোকনাথ মন্দির (১৪০১)
- বন্দর শাহী মসজিদ (১৪৮১)
- বন্দর শাহী মসজিদ পুষ্কুরিনি বা "গায়েবানা পুকুর' (১৪৮১)
- সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৪৮৪)
- কাইকারটেক হাট
- লর্ড ইংরেজ সাহেবের বাংলো (ধ্বংসাবশেষ )
- বাবা সালেহর মসজিদ (১৫০৫)
- বাবা সালেহর সমাধি (১৫০৬)
- গোয়ালদি মসজিদ (১৫১৯)
- কদম রসুল দরগাহ (১৫৮০)
- কদম রসূল সুলতানি মসজিদ (১৫৮০)
- কাঠ গোলাপ স্থান
- গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা "সড়ক ই আজম "
- সোনাকান্দা হাট
- সোনাকান্দা দুর্গ (১৬৬০)
- ত্রিবেণী ঈশা খান পরিখা (সোনারগাঁও থেকে সোনাকান্দা) (১৬৬০)
- ত্রিবেণী পুল (১৬৬০)
- হাজিগঞ্জ দুর্গ (১৬৬৩)
- কেল্লার পুল (১৬৬৩)
- ত্রিমোহনী পুল (১৬৬৬)
- পাগলা পুল (১৬৬৬)
- বিবি মরিয়মের সমাধি, তোরণ দ্বার, অভ্যর্থনাগার। (১৬৭৮)
- বিবি মরিয়ম মসজিদ
- আশরাফিয়া জামে মসজিদ, আমলাপাড়া
- ঈসা খাঁ জমিদার বাড়ি
- পানাম নগর, সোনারগাঁও
- "কোম্পানি কুঠি" বা "সোনারগাঁও নীলকুঠি"
- সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর
- (অধুনা লুপ্ত) আদমজী জুট মিল্স
- জিন্দা পার্ক
- রাসেল পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা
- মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
- সাব্দী কালী মন্দির
- লর্ড ইংরেজ সাহেবের কুঠি
- বায়তুল আমান (১৯৩৯)
- বোস কেবিন (১৯৪২)
- এ কে এম রহমত উল্ল্যাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট (১৯৫২)
- বাংলার তাজমহল
- বাংলার পিরামিড
- কাঁচপুর সেতু
- কাঞ্চন সেতু
- সুলতানা কামাল সেতু
- পূর্বাচল উপশহর
- রূপায়ণ উপশহর
- পন্ডস গার্ডেন
- সোনাকান্দা স্টেডিয়াম
- টি হোসেন গার্ডেন, বাগান বাড়ি।
- জালকুড়ি বোট ক্লাব
- নম পার্ক
- মেরি এন্ডারসন (পর্যটনের ভাসমান রেস্তোরা)
- এডভ্যাঞ্চার ল্যান্ড
- জাতীয় ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম (৩য়), ফতুল্লা
- রয়েল রিসোর্ট
- বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি
- গোপালদী জমিদার বাড়ি
- সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি
Remove ads
শিক্ষা
নারায়ণগঞ্জে জেলার শিক্ষার হার ৮৫.১৫%। এই জেলার শিক্ষার মান অত্যন্ত উন্নত মানের। জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম থাকলেও ঢাকা সিটির সাথে থাকায় সহজেই শিক্ষার্থীরা সহজেই শিক্ষা লাভ করতে পারে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় ১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট ২০ টি কলেজ, ২০ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়(একই সাথে স্কুল ও কলেজ), ভোকেশনাল স্কুল ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৫৮, কিন্ডার গার্টেন ৭৬ ও মাদ্রাসা ৫৬ রয়েছে। হামদার্দ বিশ্ববিদ্যালয় সোনারগাও উপজেলায় অবস্থিত, দেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত মেরিন ও শিপবিল্ডিং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এখানে রয়েছে। এছাড়া সরকারি তোলারাম কলেজ ও নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
Remove ads
গণমাধ্যম
জাতীয় দৈনিকগুলোর পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ হতে প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় ১৬টি দৈনিক, ৯টি সাপ্তাহিক পত্রিকা।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads