শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বদরুদ্দিন হাসান
১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ পর্যন্ত মিশরের মামলুক সুলতান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আবুল মাআ'লি নাসির বদরুদ্দিন হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে কালাউন (১৩৩৪/৩৫ -১৭ মার্চ ১৩৬১); যিনি নাসির হাসান নামে বেশি পরিচিত। তিনি ছিলেন মিশরের মামলুক সুলতান এবং সালতানাতের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত নাসির মুহাম্মাদের সপ্তম পুত্র। তিনি ১৩৪৭-৫১ এবং ১৩৫৪-৬১ সাল পর্যন্ত দুইবার রাজত্ব করেন। তার প্রথম শাসনামল তিনি ১২ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন, সিনিয়র মামলুক আমিররা যারা পূর্বে নাসির মুহাম্মাদের অধীনে ছিলেন, তার প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, যখন নাসির হাসান একটি আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৩৫১ সালে তিনি পদচ্যুত হন যখন তিনি সিনিয়র আমিরদের ক্ষোভের জন্য নির্বাহী কর্তৃত্ব জাহির করার চেষ্টা করেন। তিন বছর পর আমির শায়খু এবং সিরগিতমিশ কর্তৃক তার ভাই সুলতান সালিহ সালিহের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের সময় তাকে পুনর্বহাল করা হয়।
দ্বিতীয় শাসনামলে নাসির হাসান নেতৃস্থানীয় আমিরদের বিরুদ্ধে কূটকৌশল চালান, ধীরে ধীরে তাদের ও তাদের সমর্থকদের কারাবাস, জোরপূর্বক নির্বাসন এবং মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে প্রশাসন থেকে মুক্ত করেন। তিনি অনেক মামলুককে আওলাদুন নাস (মামলুকদের বংশধর) দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিলেন, যাদেরকে তিনি জনসাধারণের কাছে আরও নির্ভরযোগ্য, যোগ্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন। নাসির হাসানকে তার নিজের একজন মামলুক ইয়ালবুঘা উমারির দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল, যিনি নাসির হাসানের আওলাদুন নাসকে উন্নীত করার বিরোধিতাকারী একটি দলের প্রধান ছিলেন। দ্বিতীয় শাসনামলের সময়কালে নাসির হাসান কায়রোতে সুলতান হাসান মসজিদ-মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের পাশাপাশি কায়রো, জেরুসালেম, গাজা এবং দামেস্কে ধর্মীয় স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থাপত্য কাজ শুরু করেন।
Remove ads
প্রারম্ভিক জীবন এবং পরিবার
সারাংশ
প্রসঙ্গ
নাসির হাসান ১৩৩৪/৩৫ সালে কায়রোতে "কামারি" (বা "কুমারি" বানান[১]) নামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৪৭ সালে সালতানাতে যোগদানের পর তিনি তার নাম পরিবর্তন করে "হাসান" রাখেন।[২] ইতিহাসবিদ উলরিখ হারম্যানের মতে, তার তুর্কি নাম প্রত্যাহার এবং আরবি "হাসান" দিয়ে প্রতিস্থাপনের অর্থ ছিল প্রধানত তুর্কি মামলুকদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা, যা রাষ্ট্রে মামলুকদের ভূমিকা হ্রাস করার এবং তাদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে আওলাদুন নাস নামে পরিচিত মামলুকদের বংশধরদের উপর নির্ভর করা নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি প্রতীকী কাজ।[১] তিনি ছিলেন সুলতান নাসির মুহাম্মাদ (শা. ১৩১০-১৩৪১) এবং তার তাতার স্ত্রী কুদার সন্তান, কুদা নাসির হাসানের শিশু অবস্থায়ই মারা গিয়েছিলেন।[২][৩] সালতানাতের প্রশাসনিক সদর দফতর কায়রো দুর্গে তার শাশুড়ি খাওয়ান্দ উর্দুকিন তাকে লালন-পালন করেন।[২] ১৩৪১ সালে নাসির মুহাম্মাদ মারা যান এবং তার ছেলেরা ক্রমান্বয়ে উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন, কিন্তু আসল ক্ষমতা প্রকৃতভাবে নাসির মুহাম্মাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন শক্তিশালী ও পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী আমিরদের হাতে থাকে।[২]
নাসির হাসান তার পিতার একজন আমির আবদুল্লাহ নাসিরির কন্যা তুলুবিয়ার (মৃত্যু ১৩৬৩) সাথে বিয়ে করেছিলেন।[৪] তুলুবিয়ার এবং সম্ভবত অন্যান্য স্ত্রী বা উপপত্নীর মাধ্যমে নাসির হাসানের এগারোটি পুত্র এবং ছয়টি কন্যা ছিল। তার ছেলেরা হলেন আহমদ (মৃত্যু ১৩৮৬), কাসিম (মৃত্যু ১৩৫৮), ইব্রাহিম (মৃত্যু ১৩৮১), আলী, ইস্কান্দার, শাবান (মৃত্যু ১৪২১), ইসমাঈল (মৃত্যু ১৩৯৭), ইয়াহিয়া (মৃত্যু ১৩৮৪), মুসা, ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ।[৪] তার ছয় কন্যার মধ্যে শুধুমাত্র শাকরার (মৃত্যু ১৩৮৯) নাম সূত্রগুলোতে পাওয়া যায়।[৪] তিনি আমির নাসির হাসানের শাসনামলে সালতানাতের অন্যতম প্রধান আমির বেবুঘা কাসিমিকে (উরুস নামেও পরিচিত) বিয়ে করেছিলেন।[৪]
Remove ads
মিশরের সুলতান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রথম রাজত্ব
১৩৪৭ সালের ডিসেম্বরে সার্কাসিয়ান মামলুকদের সাথে সংঘর্ষে নাসির হাসানের সৎ ভাই মুযাফফর হাজ্জির মৃত্যুর পর[৫] নাসির হাসান সালতানাতে "মালিকুন নাসির হাসান" নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর, আসলে সিনিয়র মামলুক আমিরদের দ্বারা ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল।[২] আমিররা তড়িঘড়ি করে নাসির হাসানকে নিযুক্ত করেছিল, একইসাথে নাসির মুহাম্মাদের আরেক পুত্র এবং উত্তরাধিকারের জন্য মামলুকদের প্রিয় আমজাদ হোসেনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেছিল।[৬] নাসির হাসানের ভূমিকা ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিক। তার প্রকৃত ক্ষমতা নিম্নলিখিত চারজন মামলুক আমির দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল: নায়েবে সুলতান বেবুঘা কাসিমি, উস্তাদার (কর্মচারীদের প্রধান) এবং বেবুঘার ভাই মানজাক ইউসুফি, আমির শায়খু নাসিরি এবং তাজ নাসিরি।[২] সুলতান হিসেবে নাসির হাসানের প্রথম বছরটি মিশরের কালো মৃত্যুর সাথে মিলে যায়, যা ১৩৪৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে তীব্রতার শীর্ষে উঠেছিল এবং ১৩৪৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছিল।[২] ১৩৫০ সালে নাসির হাসান চারজন কাজীর (প্রধান বিচারক) একটি কাউন্সিল একত্রিত করে তার নির্বাহী ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন এবং এইভাবে আমিরদের অভিভাবকত্বের আর প্রয়োজন নেই। তিনি একই সাথে মানজাককে উজির এবং উস্তাদার হিসাবে বরখাস্ত করেন।[২] যাইহোক, নাসির হাসানের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব জাহির করার প্রচেষ্টা কয়েক মাস পরে তাজ দ্বারা দমন করা হয়।[২]
১৩৫১ সালের আগস্টে তাজ কৌশলে নাসির হাসানকে তার সৎ ভাই সালিহ সালিহ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে এবং তাকে দুর্গের হারেমে তার শাশুড়ি খাওয়ান্দের বাসস্থানে গৃহবন্দী করে।[২] নাসির হাসান এই সময়ে বন্দিশালায় ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করে অবসর সময় কাটিয়েছেন। বিশেষ করে বিখ্যাত শাফেয়ী পন্ডিত বায়হাকির দালাইলুন নুবুওয়য়াহ ("নবুওয়াতের লক্ষণ") এর কাজ অধ্যয়ন করেছেন।[১] নাসির হাসানকে আরবি ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ হিসেবেও পরিচিত করা হয় এবং তার পূর্বসূরিদের তুলনায় তিনি ছিলেন অধিকতর সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব।[১]
দ্বিতীয় রাজত্ব

সালিহের তিন বছরের শাসনামলে তাজ সালতানাতের শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন।[২] ১৩৫৫ সালের অক্টোবরে শাইখু এবং আমির সিরগিতমিশ নাসিরি কর্তৃক একটি অভ্যুত্থানে সালিহ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং নাসির হাসানকে সালতানাতে পুনরুদ্ধার করা হয়।[২] নাসির হাসানের দ্বিতীয় শাসনামলটি তার প্রশাসনকে শক্তিশালী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী আমিরদের থেকে মুক্তি দিয়ে নির্বাহী ক্ষমতাকে একচেটিয়া করার প্রচেষ্টার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল।[২] এই বিষয়ে তার প্রথম বড় পদক্ষেপ ছিল তাজকে বন্দী করা। কিন্তু শায়খুর হস্তক্ষেপের পর, যিনি সিরগিতমিশের সাথে হাসানের রাজদরবারে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলেন; নাসির হাসান তাজকে আলেপ্পোর নায়েব হিসাবে নিয়োগ করতে সম্মত হন। কার্যত, তাজকে কায়রো থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল, কিন্তু কারাবাস থেকে রক্ষা করা হয়েছিল।[২] ১৩৫৭ সালের নভেম্বরে শায়খুকে হত্যা করা হয়, এবং নাসির হাসান খলিল ইবনে কাওসুনের নেতৃত্বে শায়খুর পক্ষপাতিদের ক্ষমতায় আসা থেকে বাধা দেওয়ার জন্য মৃত্যু বা জোরপূর্বক নির্বাসনের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেন।[২] শায়খুর মামলুক পক্ষের মধ্যে যারা নির্বাসিত হয়নি, তারা আলেকজান্দ্রিয়ায় বন্দী ছিল।[২]
নাসির হাসানের রাজনৈতিক কূটকৌশলগুলি সিরগিতমিশকে নাসির হাসানের দরবারে সবচেয়ে শক্তিশালী আমির হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে।[২] সিরগিতমিশের পক্ষ থেকে অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা দূর করার জন্য নাসির হাসান তাকে ১৩৫৮ সালের আগস্ট মাসে আলেকজান্দ্রিয়ায় বন্দী করেন এবং পরে তাকে কারারুদ্ধ অবস্থায় হত্যা করা হয়। নাসির হাসান সিরগিতমিশের মামলুকদের সামরিক ও প্রশাসনিক পদ থেকে মুক্ত করতে অগ্রসর হন এবং তাদের নিজের মামলুক বা আওলাদুন নাসদের সাথে প্রতিস্থাপিত করেন।[২] আওলাদুন নাসকে উচ্চ পদে আসীন করা এবং যুক্ত করানোর কার্যক্রম পুরো মামলুক সালতানাতের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছিল।[২] একশত আমিরের (আমিরে মিআহ) সর্বোচ্চ সামরিক পদে অধিষ্ঠিত চব্বিশজন মামলুক জেনারেলের মধ্যে দশজন ছিলেন আওলাদুন নাস। আওলাদুন নাস এবং মামলুক নয় এমন খোজা আলেপ্পো এবং সাফাদের নিয়াবা প্রদেশসহ সালতানাতের সিরিয়া অঞ্চলের[১] প্রাদেশিক গভর্নর পদসহ অসংখ্য সিনিয়র প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।[৭] একশত আমিরের মর্যাদায় যারা পৌঁছেছিলেন তাদের মধ্যে আরও ছিলেন নাসির হাসানের দুই পুত্র।[৮]
আওলাদুন নাসকে উন্নীত করার পিছনে নাসির হাসানের বিবৃত উদ্দেশ্য ছিল তাদের নির্ভরযোগ্যতার প্রতি তার দৃঢ় আস্থা এবং তার বিশ্বাস যে তারা মামলুকদের চেয়ে কম বিদ্রোহের প্রবণ ছিল।[৯] তিনি আওলাদুন নাসকে সালতানাতের প্রশাসনিক শ্রেণিবিন্যাসে একীভূত করার অন্যান্য কারণগুলি হল, আওলাদুন নাস দ্বারা মামলুক প্রজাদের সাধারণভাবে উন্নত আচরণ এবং প্রশাসনিক বিধিবিধান সম্পর্কে তাদের আরও ভাল বোঝা।[৯] ইতিহাসবিদ পিটার ম্যালকম হল্টের মতে, আওলাদুন নাসের সাথে নাসির হাসানের নিয়োগ পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ এবং স্বল্পস্থায়ী ছিল।[১০] তবে ইতিহাসবিদ উলরিখ হারম্যান জোর দিয়ে বলেছেন যে, নাসির হাসানের মৃত্যু "কোনোভাবেই সামরিক ও প্রশাসনে আওলাদুন নাসের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে বাধা দেয়নি", তবে শুধুমাত্র বাহরি শাসনের অধীনে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, যা ১৪শ শতকের শেষ বছরগুলিতে শেষ হয়েছিল।[৭]
Remove ads
মৃত্যু
১৩৬১ সালের ১৭ মার্চ[৪] হাসানকে ২৭ বছর বয়সে তার নিজের মামলুক ইয়ালবুঘা উমারি হত্যা করে।[৯][১১] যিনি আওলাদুন নাসকে বিভিন্ন সরকারী পদে উন্নীত করার নাসির হাসানের নীতির বিরোধিতাকারী একটি মামলুক উপদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।[১১] নাসির হাসানের মৃত্যুর বিষয়ে মামলুক-যুগের ভাষ্যতে বলা হয়েছে যে "তার হত্যাকাণ্ড ... তার নিকটতম মামলুক এবং বিশ্বাসীদের হাতে হয়েছিল... তিনি তাদের ক্রয় করে লালন-পালন করেছিলেন, তাদের ধন-সম্পদ দিয়েছিলেন এবং তাদের সর্বোচ্চ দফতরে নিয়োগ করেছিলেন।"[১২]
ঐতিহাসিক কার্ল এফ. পেট্রির মতে, নাসির হাসান এবং সুলতান আশরাফ শাবান ছিলেন নাসির মুহাম্মাদের ক্ষমতাহীন বংশধরদের মধ্যে "সম্ভবত ব্যতিক্রম" যারা সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল কারণ তারা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিল,[১৩] এবং বিশেষ করে নাসির হাসান ছিলেন নাসির মুহাম্মাদের একমাত্র বংশধর যিনি সালতানাতের "ঘটনায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিলেন"।[১৪] মামলুক যুগের ঐতিহাসিক মাকরিজি তাকে "তুর্কিদের সেরা রাজাদের একজন" বলে প্রশংসা করেছেন।[১]
স্থাপত্য প্রতিষ্ঠা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

তিনি তার দরবারে মুসলিম পণ্ডিতদের প্রতি যে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছিলেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে[১৫] নাসির হাসান কায়রোর রুমাইলায় তার নামে একটি বিশাল মসজিদ-মাদ্রাসা কমপ্লেক্স নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে সুলতান হাসান মসজিদ ও মাদ্রাসা নামে পরিচিত।[১৬] কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ ১৩৫৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তী তিন বছর ধরে প্রতিদিন ২০,০০০ রৌপ্য দিরহাম ব্যয়ে কাজ করা হয়েছিল।[১৬] নাসির হাসানের মৃত্যুর পর তার সিনিয়র সহকারী বশির আগা জামদারের পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল, যিনি ১৩৬৩ সালে কমপ্লেক্সের সমাপ্তির তত্ত্বাবধান করেছিলেন।[১৬] মাকরিজি বর্ণনা করেছিলেন- মিশর, সিরিয়া, ইরাক, উত্তর আফ্রিকা বা ইয়েমেনের মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলির মধ্যে কোন সমতুল্য নয় এমন একটি অভয়ারণ্য কমপ্লেক্স।[১৭] একইভাবে মামলুক যুগের ইতিহাসবিদ ইবনে তাগরিবিরদি এবং ইবনে শাহিন কমপ্লেক্সটিকে বিশ্বের কোন সমতুল্য নয় বলে বর্ণনা করেছেন। আবার ইবনে হাবিব এটিকে শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে গিজার পিরামিডের চেয়ে উন্নত বর্ণনা করেছেন।[১৭] পশ্চিমা পর্যটক পিয়েত্রো ডেলা ভ্যালে এবং জিন থেভেনট উভয়েই এটিকে তাদের দেখা সর্বোত্তম মসজিদ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[১৭]
কমপ্লেক্সটির নির্মাণ আধুনিক ইতিহাসবিদ ওলেগ গ্রাবার দ্বারা উল্লেখযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ তার মতে, কমপ্লেক্সের পৃষ্ঠপোষক নাসির হাসান তার শাসনামলের বেশিরভাগ সময় সাধারণভাবে একজন দুর্বল নেতা ছিলেন এবং ব্যয়বহুল কমপ্লেক্সটির নির্মাণ একটি গুরুতর সময়ে ঘটেছিল। কায়রোতে কালো প্লেগের পর অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল।[১৬] মামলুক যুগের ঐতিহাসিক ইবনে ইয়াস লিখেছেন যে কমপ্লেক্সের জন্য বেশিরভাগ তহবিল জায়গাটির নীচে পাওয়া সোনার বিশাল ভান্ডার থেকে প্রাপ্ত, কিন্তু মিশরীয় ঐতিহাসিক হাওয়াইদা হারিসি দাবি করেছেন যে তহবিল সম্ভবত নাসির হাসানের সম্পত্তির ব্যাপক বরাদ্দ থেকে এসেছে। যেগুলোর উৎস প্লেগ আক্রান্তদের কাছ থেকে, যারা কোন আইনি উত্তরাধিকারী রেখে যাননি।[১৬] নাসির হাসান আমির আলতুনবুঘা মারিদানি এবং ইয়ালবুঘা ইয়াহইয়াভির জন্য তার পিতার নির্মিত দুটি প্রাসাদ থেকে কমপ্লেক্সের জায়গাটি বেছে নিয়েছিলেন, উভয়টি ভেঙে কমপ্লেক্সের জন্য পথ তৈরি করেছিলেন।[৯]
কায়রোর দক্ষিণ কবরস্থানে (কারাফা বা মৃতের শহর) সুলতানীয়া সমাধি নামে পরিচিত দ্বৈত সমাধির কাঠামোটিও সুলতান হাসান তৈরি করেছেন। যা তার মাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল।[১৮]
১৩৬০ সাল থেকে নাসির হাসান সালতানাতের অন্যান্য স্থাপত্য প্রকল্পগুলি শুরু করেন, যার মধ্যে কায়রো দুর্গের কাআ বায়সারিয়া টাওয়ার রয়েছে, যা মাকরিজি মামলুক স্থাপত্যের অনন্য কাঠামো হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[১৯] কাআ বায়সারিয়া ছিল একটি উঁচু গম্বুজযুক্ত টাওয়ার যা রত্নখচিত সোনার ব্যান্ড দিয়ে সজ্জিত ছিল।[১৯] অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১৩৬১ সালে জেরুজালেমে একটি মাদ্রাসা কমপ্লেক্স এবং জেরুজালেম, গাজা, দামেস্ক এবং অন্যান্য শহরে সাবিল-কুত্তাবস (জনগণের জন্য পানির ঝর্ণা ও সাথে বড় হলঘর, যেখানে কুরআন পড়ানো হয়)।[১৯] নাসির হাসান জেরুজালেমের আকসা মসজিদের একটি বড় সংস্কারও করেছিলেন।[২০]
Remove ads
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জী
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads