শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই থেকে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
Remove ads

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ একটি বৈশ্বিক যুদ্ধ যা ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই ইউরোপে শুরু হয় এবং ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ৬ কোটি ইউরোপীয়সহ আরো ৭ কোটি সামরিক বাহিনীর সদস্য ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই যুদ্ধে একত্রিত হয়।[] এটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের একটি এবং এর ফলে পরবর্তী সময়ে এর সাথে যুক্ত দেশগুলোর রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন হয়। অনেক দেশে এটি বিপ্লবেরও সূচনা করে।

দ্রুত তথ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, তারিখ ...
Thumb
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ: মোট জনসংখ্যার প্রতি সংঘবদ্ধ বাহিনী (%)
Remove ads

প্রেক্ষাপট

সারাংশ
প্রসঙ্গ

এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট শুরু হয় আরো আগে থেকেই।মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই ক্ষেত্রে একটা কারণ।১৯ শতকে(১৮০১-১৮৯৯) দেখা যায় ইউরোপে একটি ক্ষমতার সমতা লক্ষিত হয়।অর্থাৎ ইউরোপে কোনো দেশ নিজের অতিরিক্ত শক্তি দেখাতে পারত না সহজে।ঘটনা এই হলো যে, ব্রিটিশরা একটি নতুন মতবাদ নিয়ে আসল।তা অনেকটা একঘরে থাকার নীতি(Splendid Isolation)।সে অনুসারে তারা মূলত নিজের দেশের উন্নয়নেই কাজ করে গেলো,পুরো ইউরোপের রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য বিষয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিলো।সমস্যা হলো এই জায়গাতেই।দেখা গেলো এই সুযোগে জার্মানি তথা প্রুশিয়া তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করল।

১৮৭০-৭১ এ ফ্রান্স-প্রুশিয়ার যুদ্ধে ফ্রান্স হেরে যায় যার রেষারেষি তো ছিলোই।এদিকে ১৮৭৩ এ প্রুশিয়ার বিসমার্ক একটি শান্তিচুক্তি করে রাশিয়া ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরির সাথে।কিন্তু ১৮৭৭ এর পরে রুশ-তুর্কি যুদ্ধে এই চুক্তি বরবাদ হয় কারণ রুশরা চাচ্ছিলো বল্কানে দখল চালাতে।উল্লেখ্য যে বল্কান হলো কিছু গোষ্ঠীর সমষ্টি(Slavs,Croatic প্রভৃতি)।এবং অস্ট্রো -হাঙ্গেরির তো তাদের উপর শাসন ছিলো।পরে জার্মানি,অস্ট্রো,ইতালি মিলে তিন জোট হয়।।ওদিকে ব্রিটিশ ও ফ্রান্স, রুশ দের সাথে বন্ধুত্বের চেষ্টা চালায়।১৮৮৭ তে জার্মানি চালাকি করে রুশ দের সাথে গোপন চুক্তি করে(Reinsurance Treaty), তা হলো,

যদি রাশিয়াতে অস্ট্রো হাঙ্গেরিয় এবং জার্মানিতে ফ্রান্স আক্রমণ করে তাহলে উভয়েই চুপ থাকবে।আবার এই চুক্তির আরেকটি কথা হচ্ছে,যদি জার্মানি ফ্রান্স এবং রুশ অস্ট্রোদের হামলা করবে,তাহলে এই চুক্তি প্রযোজ্য নয়।

উল্লেখ্য জার্মানীর নেতৃত্বে এতদিন বিস্মার্ক(Otto Von Bismarck)ছিলো,কিন্তু তাকে সরিয়ে নতুন আসে উইলিয়াম ২(Wilhelm 2)।উক্ত মানুষ টি গোপন চুক্তিটি নতুন ভাবে করে নি।অর্থাৎ জার্মানি ও রাশিয়া আগের মতই হয়ে রইল।

ফ্রান্স, ব্রিটিশ ও রুশ ওদিকে তিন জোট বা Triple Entente গঠন করে।পরবর্তীতে আগাদির (Agadir crisis) এ ফ্রান্স ও জার্মানির যুদ্ধে ব্রিটিশ, রুশ একত্রিত হয়।

১৮৭১ এর পরে জার্মানীরা তাদের Navy (নৌ বহর ও বিমান বাহিনী)ও সামরিক বাহিনীকে মজবুত করার চিন্তা করে।এক্ষেত্রে জার্মানিরা ইংরেজদের সাথে টেক্কা দিতে আগ্রহী ছিলো।বিসমার্ক ভেবেছিলো ইংরেজরা যেহেতু এক ঘরে আছে, তাদের উস্কানো সঠিক হবে না।পরবর্তীতে তার পতনের পরে বিষয়টি দ্বন্দ্ব রূপ নেয়।কিন্তু দেখা যায় তারা তাদের সামরিক সেনাদের অর্থায়নে বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করছে।এটাকে Rüstungswende বা রণসজ্জার দিক পালটানো বলা যায়।

১৯০৫ সালে রাশিয়ার জাপানের সাথে যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল হলে, রাশিয়া পরবর্তীতে উঠে দাঁড়াতে থাকে।এটি জার্মানির জন্য চিন্তার বিষয় ছিলো।তারা সৈন্য যোজন শুরু করে।১৯১৩ সালে জার্মানির সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭০০০০।অন্যান্যরাও দেশের অভ্যন্তরীণ প্রজেক্ট এ অর্থায়ন না করে, সৈন্যে টাকা ঢালছিলো।

ওসমানীয় খিলাফতের পতনের সাথে রাশিয়া সুযোগ লুফে নেয় এবং ভেবেছিলো, Bosporus Strait( এটি কৃষ্ণসাগর ও মধসাগরের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ পথ) এ যদি উত্তম স্ল্যাভ ক্ষমতা নেয়(যেমন:বুল্গারিয়া),তা তাদের জন্য বিপদজনক।কারণ তাতে হয়ত তাদের ঘাটি স্থাপনে সমস্যা হবে।অন্যদিকে যদি ক্ষমতালোভী এবং বুদ্ধিহীন,দুর্বল কোনো শাসককে বসানো যায়,তাহলে কাজের কাজ হবে।

বল্কান অস্ট্রীয়দের জন্য খুবই দরকারী এবং তাদের উত্থান তাদের জন্য হুমকি ছিলো। তারা উসমানীয় সাম্রাজ্যের বোসনীয়া ও হেরযেগোভিনা, নামক প্রদেশ দখল করে।এটি সার্ভীয়দের বিরুদ্ধে, আবার রাশিয়ারা সার্ভীয়দের পক্ষে।অর্থাত,অস্ট্রিয়াদের সাথে রুশ বন্ধুত্ব হবে না।

১৯১১ তে ইতালি-তুর্কি যুদ্ধের পর বল্কান লীগ গঠিত হয়,পরবর্তীতে তাদের কূটকৌশলে এবং প্রথম বল্কান যুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য ধসে যেতে থাকে।তারা অস্ট্রোদের জন্যও হুমকির কারণ হয়।পরবর্তীতে দ্বিতীয় বল্কান যুদ্ধে বল্কানদের মধ্যেই যুদ্ধ হয়,বুল্গারিয়া, গ্রিস ও সার্বিয়া তে আক্রমণ করে।এতে বুল্গারিয়া হারে ও মেসেডোনিয়া ও ডব্রুজার অংশ হারায়। বুল্গারিয়া এটি সহ্য না করে সার্ব দের শত্রু অস্ট্রোর মিত্র হয়ে যায়।

Thumb
পৃথিবীতে কলোনি সাম্রাজ্য
Remove ads

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯১৪ সাল,গ্রীষ্মের সময়।২৮ জুন অস্ট্রিয়ার রাজা জোসেফের ছোট ভাইয়ের ছেলে, উত্তরাধিকার সূত্র আর্চডুক ফ্রানজ ফার্দিনান্দ,সারাজেভো( Sarajavo) তথা বোসনীয়া,হেরযে গোভিনা (অস্ট্রিয়ার দখলকৃত বল্কান এলাকা)তে ভ্রমণে গিয়েছিলো।উক্ত সময়ে গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপ নামক এক ১৯ বছর বয়সী যুবক তাকে গুলি করে হত্যা করে।কারণ তারা Yugoslavia বা দক্ষিণ স্লাভ এর স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে ছিলো।

ঐতিহাসিকদের দাবি এই যে ২৮-২৯ জুলাইয়েও জনগণ এই খুন যে তেমন কোনো পাত্তা দেয় নি।তবে সার্ভ বিরোধী আন্দোলন সারাজেভো হয়,অনেক সার্ভদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এতে যে সার্ভদের হাত আছে, এরকম মতবাদ দিয়ে তারা সার্ভদের বোসনিয়া থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছিলো কিন্তু তাদের যথেষ্ট প্রমাণ ছিলো না।অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১০ দফা আল্টিমেটাম দেয়,যেগুলা ঐতিহাসিকদের মতে সার্বিয়ার উপর জবরদস্তি ছিলো।উল্লেখ্য ১৮৭৮ সালেই সার্বিয়া স্বাধীন হয়।সার্বিয়া এর দুইটি দফা মানতে রাজি ছিলো না।অস্ট্রিয়া এতে সার্ভ দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে ২৮ জুলাই(হত্যার ১ মাস পর)। রাশিয়াতে সার্ভ মানুষের বসবাস ছিলো। সম্ভবত অন্য কারণে রাশিয়া যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়(৩০ জুলাই)।জার্মানি (৩১ জুলাই)ও ইতালি অস্ট্রিয়ার মিত্র(Triple Alliance) ছিলো,অন্যদিকে রাশিয়ার সাথে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মিত্র ছিলো(Triple entente)।যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

Thumb
Triple Entente and Triple Alliance

জার্মানীর অভ্যন্তরীণ কোন্দল রুখতে রাশিয়াকে খারাপ হিসেবে বুঝানো হয়,রাশিয়াকে ১২ ঘন্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের আল্টিমেটাম দেয়া এবং ফ্রান্স কে নিরপেক্ষ থাকতে বলা হয়।ফ্রান্স রাশিয়ার পক্ষে যোগদান করে।জার্মানী দুই ফ্রন্ট পশ্চিমা ফন্ট ও পূর্ব ফ্রন্ট।পশ্চিমা ফ্রন্ট মানে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স।পূর্ব মানে রাশিয়া।প্ল্যান ছিলো ৮০ শতাংশ সৈনিক ফ্রান্স দখল করে রাশিয়ার দিকে আসবে। Treaty of London মোতাবেক বেলজিয়াম জার্মান আগ্রাসনের পক্ষে থাকতে পারবে না,সে নিরপেক্ষ।আবার বেলজিয়াম দিয়ে জার্মানী ফ্রান্স আক্রমণ করতে আগ্রহী।জার্মানি বেলজিয়াম আক্রমণ করতে গেলে ব্রিটিশ চিঠি আসে যাতে বেলজিয়াম নিরপেক্ষতা কে অপমান না করা হয়।ফ্রান্স এতে রাজি হলেও জার্মানি জবাব দেয় না। পরবর্তীতে জার্মানী খবর পায়,ফ্রান্স আক্রমিত না হলে ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ করবে না।এতে মল্টকে(Moltke) কে সমস্ত সৈনিক রাশিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলো। পরবর্তীতে খবর মিথ্যা জানলে,উইলিয়াম,মল্টকে কে বলে তোমার যা ভালো মনে হয় কর।

ফ্রান্সে কমান্ডার ইন চিফ জোসেফ বেলজিয়াম দিয়ে আক্রমণের খবর পেয়ে বর্ডার ক্রস করে আগে ভাগেই আক্রমণ করতে বলে।কিন্তু বেলজিয়াম নিরপেক্ষতার কারণে তা সম্ভব ছিল না। ২ আগস্ট, জার্মানি লাক্সাম্বার্গ দখল করে।জার্মানি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।জার্মানি বেলজিয়াম দিয়ে ফ্রান্স আক্রমণের সুযোগ না পেয়ে,বেলজিয়াম আক্রমণ করে।এতে ব্রিটেন বেলজিয়ামের পক্ষে যুদ্ধে নামে।

Remove ads

যুদ্ধ চলাকালীন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

যুদ্ধ দুভাগে বিভক্ত হয়।Allied বা অক্ষ শক্তি,Central বা কেন্দ্রীয় শক্তি।Allied হলো ব্রিটিশ,রাশিয়া,ফ্রান্স,সার্বিয়া।কেন্দ্রীয় জার্মানী,অস্ট্রিয় হাঙ্গেরি ও উসমানীয় সাম্রাজ্য।জার্মানি তো অস্ট্রিয়াকে সাহায্য করবে বলেছে,এখন তারা যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাচ্ছে বোঝা যায়।তবে তা কতটা ফল প্রসু হবে তা সন্দেহজনক ছিলো।কারণ তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবে ফলিত করা হয় নি। ১২ আগস্ট থেকে ২ সপ্তাহ ব্যাপী অস্ট্রিয়া আর সার্বদের মধ্যে Cer ও Kolubara যুদ্ধসংঘর্ষ হয়।রাশিয়াদের সাথে পেরে ওঠা কঠিন বিধায় বিপুল পরিমাণ সৈন্য ব্যবহৃত হচ্ছিলো। ১৯১৫ সালে ইতিহাসে প্রথম, ভূমি থেকে (Ground to Air) অস্ট্রিয়ান বিমান ধবসে দেয়ার (Anti-Aircraft Warfare) নজির দেখা যায়। Schliffen,জার্মানির জেনারেল স্টাফফ,ভেবেছিলো,৮০ শতাংশ সৈনিক Right wing(Western front এর সৈন্যরা আবার দু ভাগে বিভক্ত ছিলো।এক টি Right wing,অন্যটি Left wing।প্রথমটি বেলজিয়াম দিয়ে অন্যটি ফ্রান্সের Alsace-Lorrain দিয়ে আক্রমণ করার জন্য)।নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম হয়ে ফ্রান্সের প্যারিস আক্রমণ করবে।এতে সে ৬ সপ্তাহ লাগবে ভেবেছিলো।পরবর্তীতে সে রাশিয়ায় বাকি সৈন্য পাঠাবে এমন চিন্তা।তার পরবর্তী Moltke সংখ্যাটি ৮৫ করার চেষ্টা করে।left উইং য়ে সংখ্যা কম রাখার কারণে ফ্রেঞ্চ সৈন্য ওখানে বেশি সৈন্য দিয়ে আক্রমণ করবে।কিন্তু পরবর্তীতে সংখ্যার অনুপাত ৭০:৩০ রাখা হয়।আবার নেদারল্যান্ডস এট্যাক না করে বেলজিয়াম দিয়ে এট্যাকের চিন্তা করা হয় কারণ নেদারল্যান্ডস এর সাথে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা দরকারি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। প্রথম দিকে জার্মানি সাফল্য দেখা যাচ্ছিলো যুদ্ধে। ফ্রান্সের প্রায় ২৬০০০০ সৈন্যের ২৭০০০ নিহত হয়।ব্যাপক সিদ্ধান্তে সৈন্যদের অতিরিক্ত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিলো,যা সুখকর ছিলো না।সৈন্য প্রধান ভন ক্লাক সরকারী নির্দেশ অবজ্ঞা করতে থাকে,সৈন্যদের মধ্যেও বিভেদ দেখা দেয়।ফ্রান্স BEC তথা British expeditionary corps(ব্রিটিশ বৈদেশিক বাহিনী বলা যায়) এর সাথে এই মতভেদের সুযোগ নিয়ে জার্মানদের ৮০ কি.মি পর্যন্ত পিছু হটায়।উভয় সৈন্যদলের মধ্যে সমতা (Stalemate) কাজ করছিলো,পরিখা পদ্ধতিতে যুদ্ধের বেশ কিছু সময় এগিয়ে যেতে লাগল।পরিখায় অবস্থানরত অবস্থায় অনেক সৈন্য রোগে যেমন:ট্রেঞ্চ লাইস(উকুন),ফিবার(জ্বর),টাইফাস, স্প্যানিশ ফ্লু প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়েও মারা যায়। ১৭ আগষ্ট, উত্তম ব্যবস্থাপনা ছাড়া রাশিয়া জার্মানির কিছু অংশ দখল করে।জার্মানিরা ফ্রান্সের অনেক অংশ দখল করে,দখল করে অনেক কয়লাকেন্দ্র।কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল থাকা এবং দুইটি যুদ্ধ একসাথে চালিয়ে যাওয়া জার্মানির জন্য ভালো ছিলো না।জার্মান শাসক বুঝে গিয়েছিলো তারা হারতে পারে,যদিও দীর্ঘ যুদ্ধ হতে পারে। ৩০ আগস্ট নিউজিল্যান্ড জার্মানে সামোয়া দখল করে।১১ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া জার্মান নিউ গিনিয়াতে নামে।২৮ অক্টোবর,রাশিয়ান Zhemchug যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়।জাপান জার্মানের ও অস্ট্রো হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে।জাপান ও অন্যান্য Allied বাহিনী জার্মানি বন্দর গুলো দখল করে নেয়। ৬-৭ আগস্ট জার্মানির বন্ধু এলাকা Togoland ও Kamerun(আফ্রিকায়) দখল হয়।১০ আগস্ট জার্মান দক্ষিণ আফ্রিকা আক্রমণ করে।উক্ত যুদ্ধ পুরো যুদ্ধ ব্যাপী চলে।

ভারতে তখন ব্রিটিশ দের থেকে মুক্ত থাকতে কিছু জাতীয়তাবাদীরা জার্মানের পক্ষে থাকলেও ভারত দিন শেষে ব্রিটিশদের পক্ষে যুদ্ধে যায়।বলা হয়ে থাকে,ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা ব্রিটিশ সৈন্যদের থেকে বেশি (১৩ লক্ষ)ছিলো।অর্থাৎ ব্রিটিশদের হয়ে ভারতীয়দের প্রাণ নেয়া।তাদের উতসাহ দেয়া হয়েছিলো ভারতে স্ব-শাসন প্রতিষ্ঠার কথা,যা যুদ্ধ পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়,যা ভারতীয় আন্দোলন ও স্বাধীনতায় প্রভাবক হয়।

আগে যদিও সামনাসামনি যুদ্ধ হত,নতুন যুদ্ধ উপকরণ আবিষ্কারের পর মানুষ তার বদলে পরিখা পদ্ধতি অবলম্বন করে।এমনকি প্রথম যুদ্ধে বিমান ব্যবহৃত হয় ১৯১১ সালে।অতএব পৃথিবীর যুদ্ধের যে নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না।মেশিন গান,কামান,ট্যাংক,বোমা প্রভৃতির ব্যবহারে মানুষ সামনাসামনি লড়াইয়ে আগ্রহী ছিলো না।কারণ এতে মরা ছাড়া মারার কোনো গতি নাই।এই গতি ত্বরান্বিত করতে তারা বিজ্ঞান চর্চার অপব্যবহার শুরু করে। জার্মানিরা হেগ কনভেনশন এর বিরুদ্ধে গিয়ে(যুদ্ধে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করা)প্রথম ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করে যুদ্ধ যা অত্যন্ত বিপদজনক ও মারাত্মক,সৈন্যরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় মারা যায়,যা পরবর্তীতে নিজেই একটি কনভেনশন বা রীতি হয়ে যায়।

জার্মানীরা যখন বিভিন্ন দেশের যুদ্ধজাহাজের হামলা চালাতে থাকে,ব্রিটেন জার্মানিকে বিশ্ববাজার থেকে blockade বা বয়কট করে। এছাড়া তারা সমুদ্রপথে মাইনিং বা বিস্ফোরক মাইন ব্যবহার করে জার্মানির ক্ষতির চেষ্টা করে।বদলা হিসেবে জার্মানিও একই কান্ড করে। তারা উত্তর আমেরিকা থেকে ব্রিটেন মালবাহী জাহাজ যেগুলোতে নিরপেক্ষ যাত্রী রয়েছে তাদের আক্রমণ করে।আক্রমণ করার সময় কোনো পূর্ব সতর্কতামূলক কোনো বার্তা দেয়া হয় না,যাতে সাধারণ যাত্রীরা জাহাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।এরকম RMS Lucitania তে প্রায় ১১৯৮ জন যাত্রী মারা যায় যেখানে ১২৮ জন আমেরিকান ছিলো।এরকম ঘটনা আমেরিকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়িয়ে তোলে এবিং জার্মান বিরোধী মনোভাবের জন্ম দেয়।এই মনোভাবের ভিত্তিতে জার্মান এই পলিসির পরিবর্তন তথা, পুর্বসতর্ক বার্তা দেয়া এবং যত্রতত্র হামলার ঘটনা না হওয়ার কথা উল্লেখ করে।জার্মানিদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিরোধে কনভয় সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়,ফলে ব্যবসায়ীরা দলবদ্ধভাবে ব্যবসায় সমুদ্রপথে বের হতো। সুয়েজ ক্যানেল দিয়ে ব্রিটিশের ভারত ভ্রমণ ও রাশিয়ার ককেশিয়ান এলাকা ওসমানীয় সাম্রাজ্যের জন্য ক্ষতিকর ছিলো।তারা এই যুদ্ধে তাই প্রবেশ করে।১৯১৪ এর ডিসেম্বরে ওরা পারশিয়া বা ইরান দখল করে পেট্রোলিয়াম ভান্ডার ব্রিটিশমুক্ত করতে।যুদ্ধের এক পর্যায়ে ট্রিটি অভ লন্ডনে ইতালি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে Allied force এ। যুদ্ধের প্রথম দিকে আমেরিকা শুধু মাত্র উভয় পক্ষে যুদ্ধব্যবসা করলেও পরবর্তীতে নিজেই যুদ্ধে জড়িয়ে যায়,জার্মানির unrestricted warfare এর বিরুদ্ধে।এছাড়া জার্মানি মেক্সিকোর সাথে আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের টেলিগ্রাম ফাঁস হয়ে যায়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে অনেক দেশ শান্তি ঘোষণা করে যুদ্ধ ত্যাগ করে। জার্মানির উইলিয়ামের পতন হয় এবং জার্মানিও শান্তি ঘোষণা করে।

Remove ads

যুদ্ধের ফলাফল

চারটি সাম্রাজ্যের পতন হয়;রাশিয়া,অস্ট্রো-হাঙ্গেরি,জার্মান ও উসমানীয়।কিছু দেশ পুনরায় স্বাধীনতা পায়,কিছু নতুনভাবে।Treaty of Versatile হয়,যার মোতাবেক জার্মানিতে ১লাখ এর বেশি সৈন্য হওয়া যাবে না,ট্যাংক, যুদ্ধবিমান,সাবমেরিন নেয়া যাবে না।পুরো যুদ্ধের দায় জার্মানির উপর। জার্মানিকে প্রায় ৩৩মিলিয়ন ডলার দিতে হয়।এছাড়া লীগ অব নেশন্স প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads