শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
অরণ্য
তুলনামূলকভাবে বিশাল অঞ্চল জুড়ে উদ্ভিদের ঘন সংগ্রহ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
অরণ্য বা বন বা জঙ্গল হলো ঘন বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের দ্বারা ঘেরা একটি এলাকা। [১] বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে, বনের নানান ধরনের সংজ্ঞা আছে।[২][৩][৪] ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত[৫][৬] জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ২০০৬ সালে অরণ্য চার বিলিয়ন হেক্টর (১৫ মিলিয়ন বর্গ মাইল) বা বিশ্বের জমির প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে।[৪] এই বনাঞ্চল অনেক প্রাণীর লালনক্ষেত্র হিসেবেও যেমন কাজ করে তেমনি বিভিন্ন নদী-নালার পথ পরিবর্তন, মাটি সংরক্ষণের মতো কাজ করে। পৃথিবীর জীবমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ অরণ্য।[৭] যদিও প্রাথমিকভাবে একটি বনের বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট করা হয় তার গাছের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী। এ হলো অক্সিজেনের এক বিপুল সরবরাহকারী। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া অন্য সব মহাদেশেই অরণ্য বর্তমান। গরমকালে দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ও বার্ষিক পঁচাত্তর সেন্টিমিটার বৃষ্টিপূর্ণ স্থান অরণ্য গড়ে ওঠার পক্ষে উপযোগী।

Remove ads
অরণ্য বা বন সংরক্ষণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
যে পদ্ধতিতে দেশের বনজ সম্পদের সুরক্ষা করা হয় এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে ঐ সম্পদ ব্যবহার করা হয় তাকে অরণ্য বা বন সংরক্ষণ বলে।
বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে বন সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। বন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে নিচে বর্ণনা করা হল;
(১) বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় ভারসাম্য স্থিতিশীল রাখা: উদ্ভিদ ও প্রাণীরা ক্রমাগত শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে অক্সিজেন শোষণ করলেও তা ফুরিয়ে যায় না এই কারণে যে, গাছপালা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে সেই কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে আবার অক্সিজেন উৎপাদন করে। এখন বড়ো বড়ো গাছপালা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস অপসারিত করে এবং অক্সিজেন গ্যাস উৎপাদন করে। সুতরাং, বনের গাছপালা ধ্বংস করলে গ্যাসীয় ভারসাম্য বক্ষার কাজে বিঘ্ন ঘটে।
(২) ভূমিক্ষয় নিবারণ: বড়ো বড়ো গাছপালার শিকড় মাটির নীচে বহুদূর পর্যন্ত জালের আকারে ছড়িয়ে যায় যা মাটিকে শক্তভাবে ধরে রাখে। এছাড়া এরকম গাছপালার উপস্থিতিতে ঝোড়ো হাওয়া সজোরে মাটির উপর আছড়ে পড়তে পারে না। আর বৃষ্টির জল মাটি ধুয়ে নিয়ে যেতে পারে না। এসব কারণে বড় বড় গাছপালার সাহায্যে ভূমিক্ষয় নিবারণ সম্ভব হয়। কোনো অঞ্চলের গাছপালা কাটা হতে থাকলে ক্রমাগত ভূমিক্ষয়ের ফলে সেই অঞ্চল ক্রমে রুক্ষ মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে।
(৩) আবহাওয়া শীতল রাখা ও বৃষ্টিপাত ঘটানো: পৃথিবীর বুকে যে সব গাছপালা রয়েছে সেগুলি প্রতিদিন বাষ্পমোচন বা প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় (Transpiration) বিপুল পরিমাণ জল বাষ্পাকারে বাতাসে বের করে দেয়। পাতার পত্ররন্ধ্রের (stoma) পথ দিয়ে এই জলীয় বাষ্প বেরিয়ে আসে। একটিমাত্র ভুট্টা গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লিটার জল বাষ্পাকারে বাতাসে মেশে। এর থেকেই বোঝা যায় আকাশে মেঘ সৃষ্টির কাজে গাছের ভূমিকা কিরকম গুরুত্বপূর্ণ।
এইভাবে বাষ্পমোচন করতে গিয়ে গাছপালা আশপাশের পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে। আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘ এই শীতল আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলেও ঠান্ডা হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই কারণে বনাঞ্চলে বেশী বৃষ্টিপাত হয়। আমাদের মতো কৃষিপ্রধান দেশে বৃষ্টির জল কৃষিকার্যের জন্যে যে কত দরকার তা আমরা সবাই জানি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাষবাসের জন্যে এখনও এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কৃষিক্ষেত্রে যত বৃষ্টিপাত হয় তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জলই গাছপালার বাষ্পমোচনের ফলে বাতাসে জমা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কাজেই এলোপাথাড়ি গাছপালা কেটে ফেলতে থাকলে এই বাষ্পমোচন প্রক্রিয়াও যায় বন্ধ হয়ে, আর পরিণামে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কমে যায় বা অনাবৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর যাবৎ যে খরা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে বনাঞ্চল অপসারণকে অনেকে সেজন্য দায়ী করেছেন। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন না করলে শস্যশ্যামল কৃষিভূমি যদি কোনদিন রুক্ষ নীরস মরুতে পরিণত হয় তাহলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
এইসব বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করে বন সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য আইন প্রণয়ন করতে হয়েছে ও সরকার বন অধিগ্রহণ করে তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। শুধু বন সংরক্ষণই নয়, ঐ সঙ্গে বৃক্ষরোপণেও উৎসাহ দেখানো হচ্ছে। গাছপালা যে কতভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করে চলেছে সে বিষয়ে সর্বসাধারণকে সচেতন করা আশু প্রয়োজন।
(৪) অর্থনৈতিক গুরুত্ব: দেশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেকটা নির্ভর করে বনজ সম্পদের উপর। জ্বালানী কাঠ, ভেষজ ঔষধ, খাদ্য, বস্ত্র, যানবাহনের কাঠামো ও আসবাবপত্রের উৎস। বনজ উদ্ভিদ গৃহনির্মাণে ও কাগজ তৈরিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
(৫) বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল: বনের মধ্যে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বসবাস করে। বনজ সম্পদ ঠিক মত সুরক্ষিত থাকলে বন্যপ্রাণীরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালাতে পারে। বন ধ্বংস হলে বন্য প্রাণীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।[৮]
Remove ads
বন-সংরক্ষণের উপায়
বন-সংরক্ষণের জন্য বনাঞ্চলের গাছকাটা যথাসম্ভব কমাতে হবে। সেই সঙ্গে নতুনভাবে চারাগাছ লাগাতে হবে। দ্রুত বৃদ্ধি পায় এমন প্রজাতির নতুন গাছ লাগানো দরকার। বনে যাতে আগুন না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কারণ, বনে আগুন লাগলে, দাবানলে বনজ সম্পদের দারুণ ক্ষতি হয়। বনাঞ্চলের উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ এবং পচনশীলতা দমন করা দরকার। উপযুক্ত সার প্রয়োগ করলে বনভূমির উর্বরা শক্তি বজায় থাকে। বনাঞ্চলের বৃষ্টির জল যাতে সহজে ঐ এলাকার মাটিতে প্রবেশ করে সেজন্য মাঝে মধ্যে খাল কাটা এবং আল দেওয়া প্রয়োজন। বনাঞ্চলে মানুষ এবং গবাদি পশুর অত্যাচার যথাসম্ভব কমাতে হবে। লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা যেমন নিতে হবে তেমনি আবার ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হাত থেকে বনাঞ্চলের উদ্ভিদকে রক্ষা করতে হবে।[৯]
Remove ads
বন ধ্বংসের কারণ ও ফলাফল
লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর প্রায় ষাট শতাংশই অরণ্যাবৃত ছিল। আমূল জলবায়ুর পরিবর্তন, হিমশৈলের চলন এবং মানুষের কার্যকলাপের জন্য বিপুল অরণ্যভূমি নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে মানুষের নির্দয়ভাবে গাছ কাটার জন্য বনাঞ্চল ধ্বংসের পথে৷ এছাড়াও ঘর-বাড়ি এবং অবকাঠামো নির্মাণে কাঠের দরকারে গাছ কাটে।
অরণ্য বাস্তুসংস্থান
সারাংশ
প্রসঙ্গ




গাছ বেড়ে উঠতে পারে এমন সব এলাকায় বন পাওয়া যায়। গাছের বেড়ে ওঠা সম্ভব এমন উচ্চতা পর্যন্ত (ট্রি লাইন) গাছ জন্মায়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। যেমন যেখানে প্রাকৃতিক কোনো কারণে বার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বা অন্যান্য ঝঞ্ঝা খুব বেশি অথবা মানুষেরই কোনো কাজের ফলে পরিবেশে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, এমন এলাকায় বনাঞ্চল দেখা যায় না।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের ১০° উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশ এলাকার অধিকাংশ হচ্ছে ক্রান্তীয় বৃষ্টিঅরণ্য প্রভাবিত এলাকা। আবার ৫৩°উত্তর এবং ৬৭°উত্তর দ্রাঘিমাংশের মধ্যে রয়েছে উত্তরের বন।
বহু প্রাণী এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাসস্থান হলো বন। অন্যান্য উদ্ভিদজগতের তুলনায় এই এলাকার ইউনিট প্রতি জৈববস্তু বা বায়োমাস অনেক বেশি থাকে। মাটির নিচে শিকড় পদ্ধতিতে এবং গাছের আংশিকভাবে পচে যাওয়া বর্জ্য বস্তু থেকেই বেশিরভাগ সময়ে এই জৈববস্তু তৈরি হয়। বনের মধ্যে কাঠের যে যৌগ আছে তার মধ্যে লিগণিন থাকে। সেলুলোজ বা কার্বোহাইড্রেটের মতো জৈবপদার্থের তুলনায় এতে পচন ধরে অপেক্ষাকৃত ধীরে। বনের সঙ্গে বনভূমির পার্থক্য করা হয় তার গাছগাছালির চাঁদোয়া কতোটা দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। বনে অনেক সময় বিভিন্ন গাছের শাখা এবং তার পত্রসমষ্টি মিশে যায় একে অপরের সঙ্গে। যদিও বন হিসেবে যেটা উল্লেখ করা হচ্ছে তার এলাকার মাপে ফারাক থাকতে পারে। বনভূমিতে আবার বড় বড় গাছ থাকা এলাকায় একটানা অনেকটা খোলা চাঁদোয়া পাওয়া যায়, একেকটি গাছের মধ্যে জায়গাও অনেক ছড়িয়ে থাকে। যার ফলে তার মধ্যে দিয়ে মাটিতে অনেক বেশি সূর্যের আলো এসে পৌঁছতে পারে।
Remove ads
পশ্চিমবঙ্গে বনাঞ্চল কমছে
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সম্প্রতি জানা গেছে বনাঞ্চলের আয়তন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাচ্ছে। এই ঘটনা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। ভারতে সামগ্রিকভাবে বেড়েছে বন ও বৃক্ষ-আচ্ছাদন। কিন্তু ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। ভারত সরকারের বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ জানিয়েছেন, 'ইন্ডিয়ান স্টেট অব ফরেস্ট রিপোর্ট' অনুযায়ী, ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১৬,৯০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বনাঞ্চলের আওতায় ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বনাঞ্চল কমে দাঁড়িয়েছে ১৬,৮৩২ বর্গ কিলোমিটারে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে এখন বনাঞ্চল ও বৃক্ষ-আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ৮,২৭,৩৫৬.৯৫ বর্গ কিলোমিটার, যা গোটা দেশের ২৫.১৭%। মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় দেশে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৪৪৫.৮১ বর্গ কিলোমিটার। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে দশটিতে অরণ্য আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে। এই জেলাগুলি হল, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, হুগলি,হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর।[১০]
শ্রেণীভুক্তিকরণ
বিভিন্নভাবে এবং বিশেষত্বের বিভিন্ন মাপকাঠিতে বনগুলিকে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। তারই একটার পরিভাষা হলো ‘বায়মে, প্রজাতির অধিকাংশের পাতার দীর্ঘজীবনের সঙ্গে কীভাবে গাছপালা টিকে থাকে তাকেই প্রকাশ করা হয় এই পরিভাষা দিয়ে (এই প্রজাতিগুলি চিরহরিৎ পর্ণমোচী তা বোঝা যায়)। আরেকটা স্বাতন্ত্রও আছে, যেখানে বনগুলি বড় পাতার গাছ, সরলবর্গীয় (সূঁচালো পাতা) গাছ অথবা মিশ্র ধরনের গাছ দিয়ে সাজানো।
- উপমেরু অঞ্চলে উত্তরের অরণ্য রয়েছে। এগুলি সাধারণত চিরহরিৎ ও সরলবর্গীয় ধরনের হয়।
- শীতপ্রধান এলাকায় বড় পাতার পর্ণমোচী গাছের বন (যথা, শীতপ্রধান পর্ণমোচী বন) এবং চিরহরিৎ সরলবর্গীয় বন (যথা, শীতপ্রধান সরলবর্গীয় বন ও শীতপ্রধান বৃষ্টি অরণ্য) উভয় ধরনের বনই হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় আবার জলপাই জাতীয় বৃক্ষের চিরসবুজ পাতাওয়ালা গাছের বনসহ বড় পাতার চিরহরিৎ অরণ্য টিকে থাকতে পারে।
- ক্রান্তীয় এবং প্রায় ক্রান্তীয় বনের অন্তর্ভুক্ত হলো ক্রান্তীয় এবং প্রায় ক্রান্তীয় আর্দ্র বন, ক্রান্তীয় এবং প্রায় ক্রান্তীয় শুষ্ক বন এবং ক্রান্তীয় এবং প্রায় ক্রান্তীয় সরলবর্গীয় বন।
- কোনো জঙ্গলের সাধারণ বৈশিষ্ট্য তাদের সামগ্রিক প্রাকৃতিক কাঠামো অথবা উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের অবস্থার ভিত্তিতে শ্রেণী বিন্যস্ত হয়। (যথা ওল্ড গ্রোথ বনাম সেকেন্ড গ্রোথ)
- জলবায়ু ও কোন প্রজাতির গাছ বেশি রয়েছে, তার ভিত্তিতেও বনগুলিকে আরো নির্দিষ্টভাবে শ্রেণী বিন্যস্ত করা যায়, ফলস্বরূপ বহু ধরনের বনের ধরন পাওয়া যায় (যথা, পোন্দেরোসা পাইন/ডগলাস ফার বন)
গোটা বিশ্বে বহু সংখ্যক বন প্রকারভেদ ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু কোনোটাই সর্বজনীন স্বীকৃত নয়।[১১] অন্যান্য জটিল ব্যবস্থার থেকে UNEP-WCMC-এর বন প্রকারভেদ ব্যবস্থা একটা সরলীকৃত ব্যবস্থা (যথা,UNESCO -র জঙ্গল ও বনভূমি উপবিভাগ)। বিশ্বজুড়ে এই ব্যবস্থাটি বনগুলিকে ২৬টি মূল শ্রেণীতে ভাগ করেছে, যাতে জলবায়ু এলাকার পাশাপাশি প্রধান গাছপালার চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই ২৬টি মূল শ্রেণীকে আবার ৬টি বড় শ্রেণীতে নতুন করে ভাগ করা যায়: শীতপ্রধান সূঁচালো পাতা, শীতপ্রধান বড় পাতা এবং মিশ্র, গ্রীষ্মমন্ডলীয় শুষ্ক, ঘন নয় এমন গাছ এবং বনসৃজন। প্রত্যেকটি শ্রেণীর বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো।
শীতপ্রধান সূঁচালো পাতা
শীতপ্রধান সূঁচালো পাতাওয়ালা গাছের বনের বেশিরভাগটাই রয়েছে উত্তর গোলার্ধের মেরু অঞ্চলের পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অতি উচ্চ এলাকা এবং কিছু গ্রীষ্মপ্রধান এলাকাতেও, বিশেষত পুষ্টির অভাব অথবা অন্যথায় প্রতিকূল মাটি. এই বনগুলির গোটাটাই কিংবা আংশিক তৈরি হয় পাইন জাতীয় প্রজাতির গাছ (কনিফেরোফাইটা) দিয়ে. উত্তর গোলার্ধে পাইন পিনাস, বড়ো আকারে ফার পিচিয়া, লার্চেস ল্যারিক্স, সিলভার ফার অ্যাবিয়েস ডগলাস ফার সিউডটসুগা — হেমলক সুগা আচ্ছাদনের কাজ করে তবে অন্যান্য টাক্সাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ. দক্ষিণ গোলার্ধে বেশিরভাগ সরলবর্গীয় গাছ, আরাউকেরিয়াসিস ও পোডোকারপাসিয়ের সদস্য, এগুলি বড় পাতার সংমিশ্রণ যাকে বড় পাতা ও মিশ্র জঙ্গল. শীতপ্রধান সূঁচালো ও মিশ্র পাতা শীতপ্রধান সূঁচালো পাতাওয়ালা ও মিশ্র গাছের বনের মধ্যে অ্যান্থাফাইটার পর্যাপ্ত উপাদানের গাছপালা থাকে। সাধারণত এগুলি উষ্ণ অক্ষাংশের বৈশিষ্ট্য, তবে ঠান্ডাতেও এই গুণ লক্ষ্য করা যায়, বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধে।শ এগুলির মধ্যে এমন ধরনের বন থাকে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন-জাপানের মিশ্র পর্ণমোচী জঙ্গলে দেখা যায়, জাপান, চিলি ও তাসমানিয়ার বড় পাতার চির হরিত বৃষ্টি বন এবং অস্ট্রেলিয়া, মধ্য চিলি, ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্লেরোফিলাস বনেও একই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তাছাড়া চিলি ও নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় নোথোফাগুস বনেরও একই বৈশিষ্ট্য। ক্রান্তীয় আর্দ্রতা [14] ক্রান্তীয় আর্দ্রতার বনাঞ্চলে রয়েছে বহু ধরনের বন। এই ধরনের বনের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং বিস্তৃত বনভূমি হল নিম্ন এলাকার চিরহরিত চওড়া পাতার বৃষ্টি অরণ্য। উদাহরণসহ বলা যেতে পারে, মরসুমে প্লাবিত হয়ে পড়া ভেরজিয়া এবং জগাপো বন এবং আমাজন উপত্যকার টেরা ফার্মা বন; এছাড়া স্যাঁতস্যাতে জলাভূমি এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আর্দ্র ডিপটেরোকার্প বন এবং কঙ্গো উপত্যকার উপরের বনে এই ধরনের গাছ দেখা যায়। ক্রান্তীয় পাহাড়ি এলাকার বনও এই বৃহত্ শ্রেণীর অন্তর্গত। এই বনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা উচ্চতার ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয় তা উচ্চ এবং নিম্ন পার্বত্য এলাকায় সাধারণত বিভক্ত। এই পার্বত্য বনের মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মেঘ থেকেই জল নিয়ে বেড়ে ওঠা মাঝারি বা উচ্চ উচ্চতার বন, মেঘ বনাঞ্চল। একইসঙ্গে এই বনাঞ্চলে রয়েছে নলিযুক্ত বা নলিবিহীন এপিফাইট ধরনের গাছের অতিপ্রাচুর্য। মধ্য আমেরিকার ক্রান্তীয় সরলবর্গীয় বনের মতোই এই বৃহত্ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় বনও। ক্রান্তীয় শুষ্ক ক্রান্তীয় শুষ্ক অরণ্য হলো মরসুমি খরায় প্রভাবিত ক্রান্তীয় অঞ্চলের পরিচয়বাহী। বৃষ্টিপাতের ঋতুনির্ভরতা সাধারণভাবে প্রতিফলিত হয় গাছের আচ্ছাদনের পাতা ঝরার মাধ্যমে, যেখানে বছরের বেশ কয়েক মাস বেশির ভাগ গাছগুলি পাতাহীন হয়ে পড়ে থাকে। যদিও কম উর্বর জমি অথবা খরার কম আন্দাজের মতো কিছু শর্তের নিরিখে চিরহরিত প্রজাতির অণুপাত বেড়ে যায় এবং সেই বনের চরিত্রায়ন হয় ‘স্ক্লেরোফিলাস’ বলে। কাঁটার জঙ্গল, বড় সংখ্যায় কাঁটা বা গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদের উপস্থিতিতে কম উচ্চতার গভীর জঙ্গল দেখা যায় যেখানে খরা দুর্ঘস্থায়ী হয়, বিশেষ করে যেখানে প্রচুর গবাদি পশু থাকে। এই খারাপ জমিতে যেখানে দাবানল প্রায়শই লেগেই থাকে, যেমন জঙ্গলাকীর্ণ সাভানা (স্পার্স ট্রিস অ্যান্ড পার্কল্যান্ড দেখুন) বিরল গাছ এবং উদ্যান
বিরল গাছপালা এবং উদ্যান হলো এমন বনাঞ্চল যেখানে 10-30শতাংশ হচ্ছে মুক্ত চাঁদোয়া বিশিষ্ট একটি ক্রাউনের আচ্ছাদন। তারা মূলত বনভূমি এলাকা বা বনভূমি নয় এমন এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রূপান্তরিত হয়। যে দুটি বৃহত্ অঞ্চলে এই ধরনের বাস্ত্তুতন্ত্র দেখা যায় সেগুলি হলো উত্তরের অঞ্চল এবং মরসুমে শুষ্ক ক্রান্তি অঞ্চল। উচ্চ অক্ষাংশে উত্তরের বনভূমি বা তৈগার প্রধান এলাকায় সবসময়ের জন্য বনের একটি নিবিড় আচ্ছাদনে গাছেদের বেড়ে ওঠার পর্যাপ্ত পরিবেশ নেই। সেইজন্য গাছগুলির আচ্ছাদন যথেষ্ট পাতলা এবং ছড়ানো ছেটানো। এই ধরনের বিভিন্ন উদ্ভিদকে মুক্ত তৈগা, মুক্ত লিচেন, বনাঞ্চল এবং তুন্দ্রা বন বলে অভিহিত করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কম আছে, ব্রায়োফাইট’র আচ্ছাদন আছে এবং এখানে আগুন লেগে যায় খুব ঘন ঘন। বনসৃজন সাধারণত কাঠ ও বাঁশ উত্পাদনের জন্যই বনসৃজন করা হয় যার ফলে বিশ্বজুড়ে বনের মোট এলাকা বেড়েছে। সাধারণভাবে এক ধরনের এবং কিংবা অনেক ধরনের গাছপালার সমষ্টিতে এই বাস্তুতন্ত্র সহযোত্পন্ন জীববৈচিত্রের আবাসভূমির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদিও এই উপায়ে এরা জলাভূমি ও ভুমি কাঠামো রক্ষার পাশাপাশি কার্বন ভাণ্ডার গড়ে এদের জীববৈচিত্র্য কার্যকারিতা বাড়াতে সক্ষম হয়। এরা কাঠ ও জ্বালানির কাঠের জন্য প্রাকৃতিক বনের ওপর চাপ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। জঙ্গলের শ্রেণী
28 শ্রেণীর বন আছে যা জাতীয় এবং আঞ্চলিক শ্রেণী থেকে একটা পৃথিবীব্যাপী সাদৃশ্যবিধানকারী ব্যাবস্থায় রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম:
শীতপ্রধান ও উত্তরের বনের ধরন
1. চিরহরিত সূঁচালো পাতা বিশিষ্ট গাছের বন — 30%-র বেশি গাছপালার চাঁদোয়া সহ প্রাকৃতিক বন, এক্ষেত্রে এই আচ্ছাদনের 75%-র বেশি অংশ জুড়েই থাকে চিরহরিত সূঁচালো পাতা।
2. পর্ণমোচী সূঁচালো পাতা বিশিষ্ট গাছের বন — 30%-র বেশি গাছের চাঁদোয়া সহ প্রাকৃতিক বন, এক্ষেত্রে এই আচ্ছাদনের 75%-র বেশি অংশজুড়েই থাকে পর্ণমোচী সূঁচালো পাতা।
3. চওড়া আকৃতির পাতা/সূঁচালো পাতা বিশিষ্ট গাছের মিশ্র বন — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক বন, এক্ষেত্রে চওড়া আকৃতির পাতা ও সূঁচালো পাতার মিশ্রণ দেখা যায় (কোথাও কোথাও 50:50, আবার কোথাও এই অণুপাত 25:75 শতাংশ)।
4. চওড়া আকৃতির পাতার চিরহরিত বন — 30%-র বেশি গাছের চাঁদোয়া সহ প্রাকৃতিক বন, এক্ষেত্রে আচ্ছাদনের 75%-র বেশি অংশজুড়েই থাকে চিরহরিত ও চওড়া পাতা।
5. পর্ণমোচী চওড়া আকৃতির পাতার বন — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক বন, এর মধ্যে 75%-র বেশি অংশ জুড়েই থাকে পর্ণমোচী চওড়া আকৃতির পাতা।
6. স্বচ্ছ জলের জলাভূমির বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক বন, এখানকার গাছগুলিতে নানা ধরনের ও আকৃতির পাতা দেখা যায়, ঋতু নির্ভর এই বনাঞ্চলের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যই হল এখানকার মাটির জলধারণের ক্ষমতা থাকে।
7. স্ক্লেরোফাইলাস শুষ্ক বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক বন, এক্ষেত্রে গাছপালার চাঁদোয়া তৈরি হয় বড় আকৃতির স্ক্লেরোফাইলাস পাতা দিয়ে (আচ্ছাদনের 75%-ই থাকে এই চিরহরিত পাতায় মোড়া)।
8. বিশৃঙ্খল প্রাকৃতিক অরণ্য — যে বনাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ তাত্পর্য হল মানুষের দ্বারা বনের শান্তি বিঘ্নিত করা, যেমন বন কেটে সাফ করা, কাঠ জোগারের জন্য গাছ কাটা, অ্যানথ্রোপোজেনিক আগুন, রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি।
9. বিরল গাছ ও উদ্যান— প্রাকৃতিক বন যাতে ১০-৩০শতাংশ গাছের আচ্ছাদন থাকে, যেমন বিশ্বের তৃণহীন অঞ্চলে থাকে। এখানে গাছপালা যে কোনো ধরনের হতে পারে (যথা, সূঁচালো পাতা, চওড়া পাতা, বাঁশজাতীয়)।
10. বিচিত্র প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ—রোপণ— 30% -এর বেশি গাছের আচ্ছাদন নিয়ে ব্যাপকভাবে রক্ষিত বন, সাধারণত দেশে প্রাকৃতিকভাবে যে প্রজাতির গাছপালা পাওয়া যায় সেগুলি রোপণ করে মানুষই এই বন তৈরি।
11. দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ— 30% -এর বেশি গাছের আচ্ছাদন নিয়ে ব্যাপকভাবে রক্ষিত বন, সাধারণত দেশে প্রাকৃতিকভাবে যে প্রজাতির গাছপালা পাওয়া যায় সেগুলি রোপণ করে মানুষই এই বন তৈরি।
12. *স্বতন্ত্র করা যায় না এমন বন সৃজন— ব্যাপকভাবে বনসৃজনের তথ্য তুলে ধরে তবে এর বাইরে ঐ ধরনের বন সম্পর্কে আর কোনো তথ্য থাকে না. এই তথ্য বর্তমানে কেবল ইউক্রেনের কথা তুলে ধরে।
13. *শ্রেণীভুক্ত নয় এমন বন সংক্রান্ত তথ্য— বন সংক্রান্ত ডেটা যা কেবল বনের কেবলমাত্র সম্প্রসারণের তথ্যই তুলে ধরে যদিও এর বাইরে ঐ ধরনের বন সম্পর্কে আর কোনো তথ্য থাকে না।
যেগলি *চিহ্নিত তা এমন তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে যা কোনো বনের প্রকারভেদকে বোঝায় না, তাই 26টি শ্রেণীর কথা বলা হচ্ছে, 28টি দেখানো হচ্ছে না।
ক্রান্তীয় বনের ধরন
1. নিচু ভূমিতে চিরহরিত চওড়া পাতার বৃষ্টি অরণ্য — 30%-র বেশি গাছের আচ্ছাদনসহ প্রাকৃতিক অরণ্য, কম[17] উচ্চতার এই বনাঞ্চল আয়তনে খুব বড় নয়, ঋতু নির্ভর নয়, যে গাছপালা আকাশকে কার্যত ঢেকে রাখে সেই গাছের পাতার 75%-র বেশি প্রশস্ত বা চওড়া ও চিরহরিত। 2. কম উচ্চতায় মনটেন অরণ্য — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদনসহ প্রাকৃতিক অরণ্য, 1200-1800 মিটার উচ্চতায় যে কোনো ঋতুতেই এই বনাঞ্চল গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন মাপের পাতা দেখা যায়। 3. অধিক উচ্চতায় পার্বত্য অরণ্য — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদনসহ প্রাকৃতিক অরণ্য, বেশি [18]উচ্চতায় যে কোনো ঋতুতেই এই বনাঞ্চল গড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন মাপের পাতা দেখা যায়। 4. স্বচ্ছ জলের জলাভূমির বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছের চাঁদোয়া সহ প্রাকৃতিক অরণ্য, নিচু[19] জায়গাতেই সাধারণত দেখা যায়, এখানকার গাছগুলিতে নানা ধরনের ও আকৃতির পাতা দেখা যায়, ঋতু নির্ভর এই বনাঞ্চলের পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যই হলো এখানকার মাটির জলধারণের ক্ষমতা থাকে। 5. প্রায় চিরহরিত আর্দ্র চওড়া পাতার অরণ্য — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[20] জায়গাতেই হয়, এক্ষেত্রে পাতার যে চাঁদোয়া তৈরি হয় তার 50-75%-ই চিরহরিত, 75% পাতাই চওড়া আকৃতির এবং ঋতুভেদে ফল ও ফুল হয়। 6. মিশ্র প্রশস্ত পাতা/সূঁচালো পাতার অরণ্য — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদনসহ প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[21] জায়গাতেই হয়, মিশ্র প্রশস্ত পাতা এবং সূঁচালো পাতার মিশ্রণেই তৈরি হয় গাছের চাঁদোয়া (কোথাও এর অণুপাত 50:50, আবার কোথাও 25:75শতাংশ)। 7. সূঁচালো পাতার অরণ্য — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[22] জায়গাতেই হয়, এক্ষেত্রে আচ্ছাদনের 75%-ই সূঁচালো পাতা দিয়ে মোড়া। 8. ম্যানগ্রোভ — 30%-র বেশি গাছের চাঁদোয়া সহ প্রাকৃতিক অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ, সাধারণত দেখা যায় ঈষত লোনা মাটির উপকূলীয় অঞ্চলে, সমুদ্র উপকূলে। 9. বিশৃঙ্খল প্রাকৃতিক অরণ্য — যে বনাঞ্চল যেখানে মানুষের দ্বারা অরণ্যের শান্তি বিঘ্নিত হয়, যেমন বন কেটে সাফ করা, কাঠ জোগাড়ের জন্য গাছ কাটা, অ্যানথ্রোপোজেনিক আগুন, রাস্তা নির্মাণ ইত্যাদি। 10. পর্ণমোচী/আধা পর্ণমোচী চওড়া পাতার বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদনে মোড়া প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[23] জায়গাতেই হয়, এক্ষেত্রে আচ্ছাদনের 50-100%-ই পর্ণমোচী ও বড় আকৃতির পাতা দিয়ে মোড়া (প্রায় 75%)। 11. স্ক্লেরোফাইলাস শুখনো বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ চিরহরিত প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[24] জায়গাতেই হয়, এক্ষেত্রে গাছপালার চাঁদোয়া তৈরি হয় বড় আকৃতির স্কেরোফাইলাস পাতা দিয়ে (আচ্ছাদনের 75%-ই থাকে এই পাতায় মোড়া)। 12. কণ্টকময় গুল্ম গাছের বনাঞ্চল — 30%-র বেশি গাছপালার আচ্ছাদন সহ প্রাকৃতিক অরণ্য, সাধারণত নিচু[25] জায়গাতেই হয়, এক্ষেত্রে ক্যানোপি বা গাছপালার আচ্ছাদনটি তৈরি হয় মূলত গুল্ম জাতীয় পর্ণমোচী বৃক্ষ ও সুপুষ্ট কান্ড বিশিষ্ট রসালো, ফাঁপালো গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের দ্বারা। 13. বিরল গাছ ও পার্কল্যান্ড — প্রাকৃতিক অরণ্য, এখানে গাছপালার আচ্ছাদন থাকে 10-30%-র মধ্যে, পৃথিবীতে সাভানা এলাকা এমনই একটি অঞ্চল। সব ধরনের পাতার গাছ দেখা যায় (যেমন সূঁচালো পাতা, বড় আকৃতির পাতা, পামজাতীয় গাছের পাতা)। 14. বিভিন্ন ভিনদেশী প্রজাতির উপবন — গভীর অরণ্য, এখানে গাছপালার আচ্ছাদন থাকে 30%-র বেশি, দেশে দেখা মেলে না এমন প্রজাতির গাছ যা বপন করে মানুষই। 15. দেশীয় প্রজাতির গাছের উপবন — গভীর অরণ্য, এখানে গাছপালার আচ্ছাদন থাকে 30%-র বেশি, দেশেই দেখা মেলে এমন প্রজাতির গাছ যা বপন করে মানুষই। বন বিনষ্ট ও ব্যবস্থাপনা মূল নিবন্ধ: ফরেস্ট্রি , লগিং অ্যাণ্ড ডিফরেস্টেশন
বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ এবং পরিবেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ বনের বাস্তুতন্ত্র হিসাবেই চিহ্নিত, বনের ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনাকে বলা হয় অরণ্যবিদ্যা। গত কয়েক শতাব্দী হলো বন পরিচালন ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে বদল এসেছে, 1980 সালের পর থেকে এই পরিবর্তন দ্রুত হয়েছে এবং বর্তমানে তা নিরবচ্ছিন্নভাবেই একটা টেকসই বন ব্যবস্থাপনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বন বাস্তুবিদ্যানর ছাত্ররা নকশার মাধ্যমে বনকে সাজাচ্ছেন এবং এই প্রক্রিয়াকে বাস্তব রূপ দিতে মনোনিবেশ করছেন, সাধারণত কারণ ও সম্পর্কের বিচার বিশ্লেষণ করাই এর লক্ষ্য. বনপালরা মূলত বাস্তুবিদ্যা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধের সংহতিকে টিকিয়ে রাখতেই বন পরিচালন ব্যবস্থাকে দেখভাল করে থাকেন, এমনকি এই কাজে তাঁরা স্থানীয় মানুষ ও অন্যান্যদের পরামর্শও নিয়ে থাকেন।
মানবজাতির উদ্ভব সংক্রান্ত বিদ্যা সম্পর্কিত বিষয়গুলি বনের ওপর প্রভাব ফেলেছে, গাছের গুঁড়ি কাটা, নগরের বিস্তার, মানুষের তৈরি দাবানল, অ্যাসিড বৃষ্টি, বিভিন্ন আক্রমণকারী প্রজাতি এবং সুইডেনের ছাঁটা ও আগুন জ্বালানো কৃষির ধরন ও কৃষিকাজের দিকে মানুষের যাওয়ার ফলে সভ্যতার সাথে সাথে বনের ক্ষতি হয়েছে। বনভূমির ক্ষতি ও তার নতুন করে বিকাশের থেকে দুধরনের বনের শ্রেণীর পার্থক্য করা যায়, প্রাথমিক অথবা ওল্ড গ্রোথ বন এবং সেকেণ্ডারি বন। সময়ে সময়ে আরো কিছু প্রাকৃতিক বিষয় রয়েছে যা বনে পরিবর্তন এনেছে, যেমন দাবানল, কীটপতঙ্গ, রোগ, আবহাওয়া, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রভৃত। 1997-এ দ্য ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট লিপিবদ্ধ করেছিল যে বিশ্বের আসল অরণ্যের মাত্র 20 শতাংশ এখনও নির্বিঘ্নে অক্ষত রয়েছে।[26] এই অক্ষত বনগুলির 75% —এর বেশিই রয়েছে তিনটি দেশে— রাশিয়া ও কানাডার উত্তরে বন ও ব্রাজিলের বৃষ্টি বন। 2006-এ এই অক্ষত বনের তথ্য সর্বশেষ উপগ্রহ ছবির মাধ্যমে সংশোধিত করা হয়।
কানাডাতে এমন[27] বনভূমি রয়েছে। এই বনভূমির 90% –র বেশিটাই সরকারের মালিকানায় রয়েছে এবং মোট বনভূমির প্রায় 50% –এ ফসল ফলানোর কাজ চলে। একটা টেকসই বন ব্যাবস্থাপনার নীতিকে ব্যবহার করেই এই বরাদ্দ জমিগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, স্থানীয় দাবিদারদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা করেই একাজ করা হয়। কানাডার বনভূমির প্রায় আট শতাংশকে সম্পদ উন্নয়ন থেকে আইনিভাবে রক্ষা করা হচ্ছে (Global Forest Watch Canada)(Natural Resources Canada)[ (Natural Resources Canada)]। এর থেকে ঢের বেশি বনভূমি— মোট বনভূমির প্রায় 40 শতাংশের রক্ষণাবেক্ষণের মাত্রা বদল হতে পারে, এবং তা হয় স্বীকৃত বনভমির মতো সুসংহত জমি ব্যবহার পরিকল্পনা অথবা নির্দিষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ এলাকায় http://web.archive.org/web/20080115024558/http://www.nrcan.gc.ca/cfs-scf/national/what-quoi/sof/sof06/overview_e.html (Natural Resources Canada)। 2006–এর ডিসেম্বরের মধ্যে কানাডার 1,237,000 বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি বনভূমি (গোটা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক)(Canadian Sustainable Forestry Certification Coalition)-এর মাধ্যমে বিধিসম্মত বলে ঘোষিত হয়েছে। ফসল তোলা হয়েছে এমন জমিগুলির পুনর্বিকাশ নিশ্চিত করতে আইনগতভাবে ক্লিয়ারকাটিং পদ্ধতিকে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়। কানাডার বেশিরভাগ প্রদেশেরই সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট মাপ[28] নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে, যদিও পুরোনো কিছু সুস্পষ্ট নির্দিষ্ট মাপকাঠি যা বহু বছর ধরে কাটা হচ্ছে আরো বাড়ানো যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিকভাবেই বেশিরভাগ বন কিছুটা মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে, যদিও সাম্প্রতিক কালে বনসৃজনের চর্চা বেড়ে যাওয়ায় বড় মাত্রার বা মারাত্মক ধরনের ক্ষয়ক্ষতিতে নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়েছে। ইউনাইটেড স্টেটস ফরেস্ট সার্ভিসের হিসেব হলো 1997 থেকে 2020সালের মধ্যে প্রায় 2মিলিয়ন হেক্টর (4,942,000 একর) বনভূমি লুপ্ত হয়েছে। এই হিসেবের মধ্যে নগরায়ন এবং শহরতলীর উন্নয়নসহ অন্যান্য কাজে বনভূমির রূপান্তরের বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি জঙ্গল কাটা এবং পড়ে থাকা আবাদী জমি ও পশুচারণভূমিকে ফের বনে পরিবর্তন করার হিসেবও যুক্ত আছে এতে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এলাকায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু প্রদেশে বন এলাকা সুস্থিতই আছে অথবা বাড়ছে।
ওল্ড গ্রোথ বন মূলত সেরাল ধরনের জীব বৈচিত্রের প্রাকৃতিক ধরনগুলির গাছপালা নিয়ে তৈরি হয়, এবং তাতে মূলত থাকে ঐ অঞ্চলের ও লালন ক্ষেত্রের জাতক প্রজাতি। এর ফলে প্রাকৃতিক কাঠামো ও লালন ক্ষেত্রের উপাদান বদলের লাগাতার চেষ্টা না থাকায় এর প্রাকৃতিক গঠন ও প্রক্রিয়া মোটেই মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হয় না। সেকেণ্ডারি বনে বেশ কিছু লক্ষ্যণীয় প্রজাতির উদ্ভদ থাকে যা মূলত অন্য অঞ্চলের অথবা লালনক্ষেত্রের।
শহরে আরো ছোট বনভূমির রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় নগর বনসৃজনের মাধ্যমে, কখনও এগুলি জনসাধারণের জন্য তৈরি পার্কের মধ্যেও হতে পারে। এগুলি প্রায়শই মানুষের উপকারে আসে, মনোযোগ পুনরুদ্ধার তত্বের যুক্তি হল প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে তা চাপ কমায় এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, ফরেস্ট স্কুল ও কিণ্ডারগার্টেনগুলি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি বনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দক্ষতাও বাড়াতে সাহায্য করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহারিক বিদ্যার জন্য শিশুরা যেখানে থাকে তার জন্য জরুরী।
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads