শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক কর্তৃপক্ষ। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটির কার্যনির্বাহী প্রধান গভর্নর হিসাবে আখ্যায়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কার্যত ব্যাংকসমূহের ব্যাংক।[২] রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের মুদ্রানীতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিরূপিত ও পরিচালিত হয়। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে। ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার কাগুজে নোট ব্যতীত সকল কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া এটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরুতে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের আদলে "স্টেট ব্যাংক অব বাংলাদেশ" ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের আদলে "ব্যাংক অব বাংলাদেশ" নাম প্রস্তাব করা হয়।[৩] কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্বদেশী ভাবধারা বজায় রাখতে "বাংলাদেশ ব্যাংক নামকরণ করেন।[৩] 'বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২' পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষণা করা হয়।[৪]
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আদলে অর্থনীতিকে গড়ে তোলার লক্ষে এবং যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশের উন্নয়নার্থে পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে সকল ব্যাংককে জাতীয়করণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংককে বিজাতীয়করণ করে এবং বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। ব্যাংকিং খাতকে পুনর্গঠন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষে ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল কমিশন অন মানি, ব্যাংকিং এন্ড ক্রেডিট নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। যদিও এরপরও ব্যাংকিং খাত দক্ষ ও কার্যকর হয়ে উঠতে সক্ষম হয়নি।[৪]
আলোচিত কর্মকাণ্ড
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুদ্রা
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার বিভিন্ন মুদ্রায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়।[৫] মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মহিদুল হক কারেন্সি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সিরিজের নোট করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে নোটের সিরিজ করার ব্যাপারে তিনি টাঁকশালের এমডির সঙ্গে একান্তে মিটিং করে তৎকালীন গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। চৌধুরী মহিদুল হকের নির্দেশনায় টাঁকশালে ডিজাইন, নোটের নকশা, কীভাবে নকশা করতে হবে, তার কাজ শুরু হয়। তৎকালীন একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে ডিজাইন অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে দেশের প্রখ্যাত আর্টিস্টরা ছিলেন। সবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে বাজারে ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট প্রচলিত আছে। এগুলোয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রচলিত ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েনেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রয়েছে।
স্মারক মুদ্রা
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, স্থান ও ঘটনাগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে স্মারকমুদ্রা, নোট ও ফোল্ডার দেশীয় ও বিদেশীয়ভাবে মুদ্রণ করা হয়। এসব স্মারকমুদ্রা ও নোট কোনোভাবে বিনিময়যোগ্য নয়। পরিচিত ব্যবহৃত নোট ও মুদ্রার বাইরে বিভিন্ন সময় কিছু স্মারক নোট ও মুদ্রা ইস্যু করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৭টি স্মারকমুদ্রা ইস্যু করা হয়েছে। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৬ সালে বের করা হয় স্মারক কয়েন। যার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৪০ টাকার স্মারক নোট বের করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নোটের সামনের অংশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি এবং অপর অংশে ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি যুক্ত করা রয়েছে।[৫]
Remove ads
শাখা কার্যালয়সমূহ
বাংলাদেশ ব্যাংক এর প্রধান কার্যালয়সহ আরও দশটি শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। শাখা কার্যালয়সমূহ হচ্ছে:[৬][৭]
- মতিঝিল অফিস
- সদরঘাট অফিস
- বগুড়া অফিস
- চট্টগ্রাম অফিস
- রাজশাহী অফিস
- বরিশাল অফিস
- খুলনা অফিস
- সিলেট অফিস
- রংপুর অফিস
- ময়মনসিংহ অফিস
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি নামে পরিচিত। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।




Remove ads
পরিচালনা পর্ষদ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা ৯জন ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি পরিচালনা পর্ষদের ওপর অর্পিত থাকে। এটির পরিচালনা পর্ষদ একজন গভর্নর, একজন ডেপুটি গভর্নর, তিন জন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং চার জন এমন ব্যক্তি যারা ব্যাংকিং, বাণিজ্য, ব্যবসায়, শিল্প ও কৃষি খাতে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন তাদের নিয়ে গঠিত হয়। পর্ষদের সভাপতি হলেন গভর্নর নিজেই। পরিচালনা পর্ষদের সবাই সরকার দ্বারা নির্বাচিত হন। পরিচালনা পর্ষদের সভা প্রতি ছয় মাসে কমপক্ষে একবার অথবা প্রতি তিন মাস অন্তর একবার বসে। সরকার দ্বারা অনুমোদিত গভর্নর পর্ষদের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কাজের দিক নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ[৮]
চেয়ারম্যান:
- ড. আহসান এইচ মনসুর (গভর্নর)
পরিচালকগণ:
ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদান | সচিব, অর্থ বিভাগ |
মোঃ আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ | সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। |
নাজমা মোবারেক | সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ |
মাহবুব আহমেদ | |
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহুমুদ তিতুমীর | উন্নয়ন অধ্যয়ণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
একেএম আফতাবুল ইসলাম, এফসিএমএ | চেয়ারম্যান, আইওই (বাংলাদেশ) লিমিটেড |
ড. ফাহমিদা খাতুন | নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি |
ড. মো. হাবিবুর রহমান | ডেপুটি গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক |
সদস্য সচিব: মো: ফোরকান হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত নীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ
মুদ্রানীতি
দেশের সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি পরিচালনা করে যা দেশের অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে[৯]-
- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা;
- বিনিময় হার স্থিতিশীলতা;
- যুক্তিসঙ্গত মূল্য স্থিতিশীলতা;
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা;
- ব্যবসায় চক্র স্থিতিশীল রাখা;
- সুদের হার নিয়ন্ত্রণ এবং
- বেকারত্ব হ্রাস করা।
রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা নীতি
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সংরক্ষণ করে যাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে ব্যাপক ওঠানামা থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি এবং বৈশ্বিক অর্থ বাজারে সুদের হারের ওঠা-নামায় সৃষ্ট ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে নস্ট্রো হিসাব পরিচালনা করে এবং হিসাবসমুহে জমাকৃৎ অর্থ উক্ত মুদ্রায় বিভিন্ন মেয়াদে ট্রেজারি বিল, রেপো এবং অন্যান্য সরকারী তহবিলে বিনিয়োগ করে। এছাড়াও মজুদ অর্থের কিছু অংশ নামী বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্বল্প মেয়াদী আমানত এবং কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। রিজার্ভ মজুদ ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত কার্যক্রম ব্যাংকের একটি পৃথক বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয় যেটির প্রধান থাকে ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর। রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার অন্তর্নিহিত নীতি হচ্চে ন্যূনতম বাজার ঝুঁকির সাথে বিনিয়োগের সর্বোত্তম রিটার্ন নিশ্চিত করা।[৯]
সুদ হার নীতি
আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক নমনীয় সুদ হার নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকে। সেই অনুযায়ী, ব্যাংকগুলি প্রতয়পত্র ব্যতীত যাবতীয় আমানত ও ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করে থাকে। বর্তমানে প্রি-শিপমেন্ট এক্সপোর্ট ক্রেডিট এবং কৃষি ঋণ ব্যতীত অন্ন কোন ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুদ হারের নির্দিষ্ট কোন সীমা নির্ধারণ করা নেই। তথাপি, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তুলনামূলক ঝুঁকি বিবেচনায় আমানতের উপর সুদের হার ও ঋণের উপর সুদের হারের পার্থক্য ৩ শতাংশ পর্যন্ত করে থাকে। ব্যাংকসমূহ তাদের আমানত ও ঋণের সুদ হার নিজ নিজ ওয়েবসাইটে আপলোড করে থাকে এবং সেই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করে। সময় সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যাংকের সুদের হারের সীমা বেঁধে দেয়।[৯]
ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন পর্যাপ্ততা নীতি
ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাংকিং তদারকি সম্পর্কিত ব্যাসেল কমিটি প্রণীত ব্যাসেল-৩ প্রবিধান চালু করেছে। ব্যাসেল-৩ প্রবিধানটি ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের তফসিলী ব্যাংকগুলি সর্বনিম্ন ৪ বিলিয়ন টাকা বা ঝুঁকিযুক্ত সম্পদের ১০ শতাংশের যেটি বেশি হয় তা বাংলাদেশ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। এছাড়াও, ব্যাংকসমুহকে সংগৃহীত আমানতের ৫ শতাংশ নগদ রিজার্ভ ও ১৩ শতাংশ বিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত সংরক্ষণ করতে হয়। তফসিলি ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমুহের আর্থিক অবস্থা ও আনুসাঙ্ঘিক ঝুঁকি বেবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যুনতম মূলধন, নগদ রিজার্ভ ও বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণের হার পরিবর্তন করে থাকে।[৯]
আমানত বীমা
আমানতকারীদের সুরক্ষা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৮৪ সালে আমানত বীমা চালু করেছে। আমানত বীমার অধীনে ব্যাংকসমুহে গচ্ছিত আমানতের একটা নির্দিষ্ট অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হয়। যদি কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যায় তবে উক্ত বীমার অধীনে জমাকৃত অর্থ থেকে আমানতকারীদের নির্দিষ্ট হারে অর্থ ফেরত দেয়া হবে।[১০]
Remove ads
বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যাবলী
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষ হিসাবে দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর ৭এ[১১] ধারা অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলীসমূহ হচ্ছে:
- মুদ্রানীতি ও ঋণনীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন;
- ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ এবং দেশীয় আর্থিক বাজারের প্রসার ও উন্নয়ন;
- দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা;
- মুদ্রা (ধাতব ও কাগুজে মুদ্রা) ইস্যু করা;
- পরিশোধ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান;
- টাকা পাচার (মানি লন্ডারিং) প্রতিরোধ;
- ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা;
- বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন করা;
- আমানত বীমা প্রকল্প পরিচালনা।[১২]
Remove ads
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশনাসমূহ
বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকাশনা, গবেষণাপত্র, প্রতিবেদন, অর্থনৈতিক পর্যালোচনা, আর্থিক ও ব্যাংকিং সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রতিবেদন এবং পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:[১৩]
- বার্ষিক প্রতিবেদন
- বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন
- আর্থিক নীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন
- বিবিটিএ জার্নাল: ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা
- গ্রিন ব্যাংকিং সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন
- আমদানি রপ্তানি প্রতিবেদন
- আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন।
Remove ads
গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে বলা হয় গভর্নর। এ পর্যন্ত ১২ জন ব্যক্তি এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর হলেন আহসান এইচ মনসুর।[১৪]
বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০০০ সালে চালু হয়।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে দেশের কয়েকজন প্রসিদ্ধ অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বোর্ড পুরস্কারের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- রেহমান সোবহান (২০০০)
- নুরুল ইসলাম (২০০৯)[১৫]
- মোশাররফ হোসেন (২০১১)
- মোজাফফর আহমদ এবং স্বদেশ রঞ্জন বসু (২০১৩)[১৬]
- আজিজুর রহমান খান এবং মাহবুব হোসেন (২০১৭)[১৭]
- আজিজুর রহমান খান ও মাহবুব হোসেন (২০১৮)[১৮]
- ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (২০২০)[১৮]
Remove ads
সমালোচনা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
রিজার্ভ চুরি
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৮১০ কোটি টাকা চুরি করে একদল হ্যাকার। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের $৮১ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৮১০ কোটি টাকা[১৯]) সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে হ্যাকাররা চুরি করে।[২০] বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয় চুরি হওয়া অর্থ চলে গিয়েছিল ফিলিপিনের ব্যাংক ও জুয়ার বাজারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, রিজার্ভ চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরের কেউ-কেউ জড়িত থাকতে পারে।যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে এসেছে।[২১] চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত ও দোষীদের খুঁজে বের করতে তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দেয় যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষতা ও অবহেলাকেই মূলত দায়ী করা হয়।[২২] প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির তথ্য ২৪ দিন পর্যন্ত সরকারের কাছে গোপন রেখেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আতিউর রহমান। এতে আরও বলা হয়, অর্থ চুরির তথ্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই, বরং গর্হিত অপরাধ।[২৩] পরবর্তীতে, ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) সহ ৫টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।[২৪] পরবর্তীতে জানা যায়, উক্ত মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালত খারিজ করে দেয়।[২৫] বিভিন্ন সময়ে চুরি যাওয়া অর্থের প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্ধার করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ চুরির প্রতিক্রিয়া হিসেবে, ১৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে পদত্যাগ করেন ব্যাংকের তখনকার গভর্নর আতিউর রহমান।[২৬] আতিউর রহমানের পদত্যাগের পর দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকেও অব্যাহতি দেয়া হয়।[২৭]
স্বর্ণ সংরক্ষণ বিতর্ক
২০১৮ এর জুলাইতে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে অনিয়ম পাওয়া গিয়েছে- এমনটা দাবী করা হয়। সে প্রতিবেদন অনুসারে; শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর দৈবচয়নের ভিত্তিতে করা অনুসন্ধানী পরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পড়ে। এই অনিয়মের প্রতিবেদনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়; সরকারের ১ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৬ টাকা ৬৭ পয়সা ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনের প্রথম তথ্যসূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে; কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তার কথা। তার সোনার একটি গোল চাকতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয়। যার ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, তার মাত্র ৪০ শতাংশের কাছাকাছি সোনা।[২৮] এরপর সেদিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন দাবী করেন, স্বর্ণের হিসাবে কোনো হেরফের হয় নি, বরং স্বর্ণকারের বাংলা ৪ ও ইংরেজি ৮ এর মধ্যকার সমস্যা থাকায় এই বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। এছাড়াও ৯৬৩ কেজি সংক্রান্ত সোনা সংক্রান্ত যে চিঠি শুল্ক বিভাগ দিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিউত্তরে আণবিক শক্তি কমিশন দ্বারা এই স্বর্ণ পুনরায় মাপার আহ্বান করে। ব্যাংক নির্বাহী পরিচালকের মতে, যে মানদন্ড শুল্ক বিভাগ ব্যবহার করেছে, তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।শুল্ক বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগের পক্ষে কোন অকাট্য প্রমাণ দেখাতে পারেনি।[২৯]
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads