শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

মহাকালী

হিন্দু দেবী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মহাকালী
Remove ads

মহাকালী (সংস্কৃত: महाकाली) হলেন হিন্দু ধর্মের একজন দেবী। তিনি দেবী কালীর একটি বিশেষ রূপ। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, তিনি মহাকালের (শিব) সঙ্গিনী। সংস্কৃত ভাষায় মহাকালী হলেন মহাকালের (শিবের একটি রূপ, যাকে মৃত্যুরূপেও কল্পনা করা হয়) স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। দেবী কালী এবং তাঁর অন্য সমস্ত রূপ মহাকালীর ই বিভিন্ন প্রকাশভেদ ।

দ্রুত তথ্য মহাকালী, দেবনাগরী ...
Remove ads

অর্থ

বিভিন্ন পৌরণিক এবং তান্ত্রিক হিন্দু ধর্মগ্রন্থে (শাস্ত্র) মহাকালীর উল্লেখ রয়েছে। এসব গ্রন্থে তিনি বিভিন্নভাবে আদ্যাশক্তি-দেবী দুর্গা হিসাবে চিত্রিত হয়েছেন। একই সাথে তাঁকে মহাবিশ্বের প্রাথমিক শক্তি এবং পরমসত্যস্বরূপ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এই বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি ব্রহ্মের সাথে অভিন্ন। একই সাথে তিনি প্রকৃতি (নারী) বা বিশ্ব হিসেবে পরিচিত হন যা পুরুষ চেতনার বিপরীত। আবার সাংখ্য দর্শনে তাঁকে মহাদেবী দুর্গার তিনটি রূপের মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করা হয়। এই ব্যাখ্যায় মহাকালী তমঃ বা শক্তির দ্যোতক। শক্তিবাদের (হিন্দু ধর্মের যে শাখায় আদ্যা দেবী দুর্গাকে অন্যান্য দেবদেবীর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া হয়) মূল গ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয় দেবীমাহাত্ম্যম্ ("দেবীর মাহাত্ম্য") বা "শ্রী শ্রী চণ্ডী" গ্রন্থ কে। এখানে ত্রিদেবীকে (মহাসরস্বতী, মহালক্ষ্মী এবং মহাকালী) সকল দেবদেবীর প্রধান হিসেবে মর্য্যাদা দেওয়া হয়। এইয়গ্রন্থে এই তিনজনের মধ্যে মহাকালীকে প্রথম চরিত্র রূপে বিবৃত করা হয়েছে। তাঁকে বিমূর্ত শক্তি এবং বিষ্ণুর যোগনিদ্রা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্রহ্মার অনুরোধে তিনি যোগনিদ্রামগ্ন বিষ্ণুর শরীরের প্রতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে উত্থিত হন। এরপরে বিষ্ণু মধু-কৈটভ নামক অসুরকে হত্যা করেন। তিনি কালের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

Remove ads

মূর্তিকল্প

সারাংশ
প্রসঙ্গ

জনপ্রিয় ভারতীয় শিল্পে মহাকালীকে প্রায়ই ঘন মেঘ বা নীল কাজলের রঙে চিত্রিত করা হয়।

তাঁর সর্বাধিক পরিচিত মূর্তিটি তাঁর ত্রিনয়নী চতুর্ভুজা - খড়্গ, মুণ্ড, বরাভয় যুক্ত দক্ষিণাকালীর মূর্তিকল্প। দক্ষিণাকালীর প্রমাম মন্ত্রে তাই বলা হয়

"কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিণি।

ধর্ম্মার্থমোক্ষদে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে।।"

উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপটিও ত্রিনেত্রা ও চতুর্ভুজা; তাঁর চারটি হাতে থাকে খড়্গ, ত্রিশূল, একটি কাটা মাথা এবং একটি খর্পর বা মাথার খুলি থাকে। উপরের হাতে থাকা কাটা মাথার রক্ত এই বাটিতে বা খুলিতে 'জমা হয়'। প্রচন্ড ক্রোধে তাঁর চোখ লাল হয়ে থাকে; তাঁর চুলগুলো থাকে অগোছালো। তাঁর দীর্ঘ দাঁতগুলো কখনো কখনো মুখের বাইরে বেরিয়ে থাকে, তিনি লোলজিহবা আর তাঁর কশ বেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এই মূর্তিতে মহাকালীর গলায় সদ্যকর্তিত নরমুণ্ডের মালা থাকে। এই মালায় নরমুণ্ডের সংখ্যা কদাচিৎ লোকাচার বশতঃ ১০৮ টি (হিন্দু ধর্মে ১০৮ সংখ্যাটি অন্যতম পূর্ণত্বের দ্যোতক) হয়, তবে সমস্ত তন্ত্রগ্রন্থে ৫১ টি (যা সংস্কৃত বর্ণমালার বর্ণের সংখ্যা) মুণ্ড যুক্ত মালার কথাই উল্লিখিত হয়েছে (প্রসঙ্গতঃ যেসমস্ত তান্ত্রিক দেবীর হাতে অক্ষমালা বা বর্ণমালার বিন্যাস থাকে তাতে 'অ' থেকে 'ক্ষ' পর্যন্ত ৫১টি অক্ষরের দ্যোতক গুটির ভাবনা করা হয়) । আর কর্তিত নরহস্তের মেখলা তাঁর কোমর বেষ্টন করে থাকে।

তাঁর দশবক্ত্রা (দশমুখী) রূপটি মহাকালী নামে পরিচিত এবং এই রূপে তিনি "মহাজ্ঞান" এর প্রতিনিধিত্ব করেন। দশটি মাথা, দশ বাহু, দশ পা আর ত্রিশটি নেত্র এই মূর্তিকল্পে সংযোজিত হয়েছে। তাঁর দশ হাতের অস্ত্রবিন্যাসের প্রত্যেকটির একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে , তবে এগুলির প্রত্যেকটিই একেকটি দেবতার প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রায়ই এগুলো কোনও দেবতার শনাক্তকারী অস্ত্র। এই সর্বদেবময়ী মহাকালী পূর্ণব্রহ্মের সাথে অভিন্ন। মহাকালীর অপর একটি জনপ্রিয় রূপভেদ পঞ্চমুখ ও দশহাত বিশিষ্ট মূর্তি, এছাড়াও একমুখ ও দশহস্তযুক্ত মূর্তির ও সন্ধান অপ্রতুল নয়।

Thumb
মহাকালীর 'যন্ত্র'

তাঁকে শায়িত ও নিশ্চল শিবের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর এই রূপটিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তবে সর্বাধিক প্রচলিত ব্যাখ্যাটি হল যে মহাকালী মহাশক্তির (এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিশুদ্ধ শক্তি) প্রতিনিধিত্ব করেন এবং শিব বিশুদ্ধ চেতনাকে প্রতিনিধিত্ব করেন যেখানে তিনি জড় অবস্থায় থাকেন এবং এই চেতনাও তাঁর মধ্যে জড় অবস্থায় থাকে। তাঁর এই রূপ সম্পর্কে অদ্বৈতবাদী শক্তিবাদে একটি ধারণা প্রকাশ করে এবং এটি একই সাথে কাশ্মীরের ননডুয়াল ত্রিকাপ দর্শনের (কাশ্মীর শৈববাদ, যা অভিনবগুপ্তের সাথে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ) সাথেও একমত। একটি কথা প্রচলিত আছে যে "শক্তি বিহীন শিব হচ্ছে শব" যার অর্থ হল মহাকালীর শক্তি ছাড়া শিব সর্বদা নিষ্ক্রিয় থাকেন। 'শব' শব্দের অর্থ হল মৃতদেহ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে নারীশক্তি ছাড়া শিব অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিজগতই নিশ্চল। শাক্তবাদ অনুযায়ী তাঁর ভৈরব এবং শৈববাদ অনুযায়ী শিব হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ দেবতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কেন শিবের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন এই দর্শন দ্বারা তা ব্যাখ্যা করা যায় । এই ব্যাখ্যাটি হল ধ্বংসাত্মক মহাকালী কেবলমাত্র চেতনার দেবতা শিবের উপস্থিতিতেই তার ক্রোধ থামাতে পারে, যাতে তাঁর ক্রোধ দ্বারা জীবনের ভারসাম্য নষ্ট না হয়।

কাশ্মীরের শৈব ধর্মে কালীর সর্বাধিক পরিচিত রূপটি হল কালসঙ্কর্ষিণী; যিনি নির্গুণা, নিরাকারা এবং প্রায়শই গুহ্যকালীর মাথার উপরে শিখার আকারে প্রদর্শিত হন। নেপালি নেওয়ার চিত্রগুলোতে, তাদের দেবদেবীর শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে মহাকালীর সাকারা এবং নিরাকারা বৈশিষ্ট্যগুলি প্রায়ই একই সত্তা হিসেবে কল্পনা করা হয়। গুহ্যকালীর চিত্রে সর্বোচ্চ সীমায় আগত অগ্নিশিখার সাথে কালসঙ্কর্ষিণী তাঁদের সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি নিজের মধ্যেই তার সময় ব্যয় করেন এবং কেবল পরম ব্রহ্মের প্রতিনিধিত্বকারী শিখা হিসাবে কল্পনা করা হয়। []

সহজভাবে বলা যায় তিনি যেন একটি সার্বজনীন নাটকে ঐশ্বরিক অভিনেত্রীর মত সৃষ্টিকালী, রক্ত কালী, রুদ্রকালী, যম কালী, সংহার কালী, মহাকাল কালী, পরমার্ক কালী, কালাগ্নিরুদ্র কালী, মার্তণ্ড কালী, স্থিতিনাশা কালী, মহাভৈরবঘোরচণ্ডা কালী (কালসঙ্কর্ষিণী কালী) ইত্যাদি চরিত্রে অভিনয় করেন।

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads