শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
মহাকাশযান
মহাকাশে যাত্রার জন্য নির্মিত যানবাহন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
মহাকাশযান[ক] বলতে মহাকাশ যাত্রার জন্য নির্মিত ও ব্যবহৃত যানবাহনকে বোঝায়। বিভিন্ন কারণে মহাকাশযান তৈরি করা হয় ও মহাকাশে পাঠানো হয়, যেমন টেলিযোগাযোগ, ভূপর্যবেক্ষণ, আবহাওয়া নির্ধারণ, দিক নির্ণয়, মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপন, মহাকাশ অনুসন্ধান এবং মানুষ ও মাল পরিবহন। মহাকাশযান সাধারণত নিজে থেকে মহাকাশে যেতে পারে না, রকেটের মাধ্যমে তাদের মহাকাশে পাঠানো হয়।


কিছু মহাকাশযান ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মহাকাশে প্রবেশ করে ও পৃথিবীর চারিদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন না করতে পেরে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। এধরনের মহাকাশ যাত্রাকে উপকক্ষীয় মহাকাশ যাত্রা বলা হয়। কক্ষীয় মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে মহাকাশযান পৃথিবী বা অন্য কোনো জ্যোতিষ্কের চারিদিকে একটি কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে যায়। মানব মহাকাশ যাত্রায় ব্যবহৃত মহাকাশযান চালক বা যাত্রী হিসাবে মানুষদের বহন করে। অন্যদিকে, মানববিহীন মহাকাশ যাত্রায় ব্যবহৃত মহাকাশযান স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত মানববিহীন মহাকাশযানকে মহাকাশ সন্ধানী যান বলা হয়। আর কোনো জ্যোতিষ্কের চারিদিকে আবর্তনরত মহাকাশযানকে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। বর্তমানে গুটিকয়েক মহাকাশযান সৌরজগৎ ত্যাগ করেছে বা ত্যাগ করার পথে, যেমন পায়োনিয়ার ১০ ও ১১, ভয়েজার ১ ও ২ এবং নিউ হরাইজনস।
বেশিরভাগ কক্ষীয় মহাকাশযানকে মহাকাশ থেকে উদ্ধার করা, অর্থাৎ অক্ষত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। উদ্ধার করা যায় এমন মহাকাশযান দুইরকম: ডানাবিহীন মহাকাশ ক্যাপসুল ও ডানাযুক্ত মহাকাশ বিমান। মহাকাশ ক্যাপসুল সাধারণত প্যারাশুটের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসে, আর মহাকাশ বিমান নিজ ডানার সাহায্যে উড়োজাহাজের মতো রানওয়েতে অবতরণ করে। আবার, উদ্ধার করা যায় এমন কিছু মহাকাশযানকে বারবার ব্যবহার করা যায় (যেমন নভোখেয়াযান, ড্রাগন ২), আবার নাও করা যায় (যেমন অ্যাপোলো, সয়ুজ, ওরায়ন)।
মানবজাতি মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করতে পারলেও খুব কম রাষ্ট্রের কাছে কক্ষীয় উৎক্ষেপণের প্রযুক্তি রয়েছে: রাশিয়া,[১] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,[২] ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রসমূহ,[৩] জাপান,[৪] চীন,[৫] ভারত,[৬] তাইওয়ান,[৭][৮][৯] ইসরায়েল, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। এছাড়া একাধিক বেসরকারি সংস্থা সরকারি সংস্থার সাহায্য ছাড়াই কক্ষীয় উৎক্ষেপণের প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে বা করছে, যাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও ব্লু অরিজিন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৪৪ সালের জুন মাসে জার্মানির পেনেম্যুন্ডে থেকে উৎক্ষিপ্ত ভি-২ রকেটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮৯ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে ইতিহাসে সর্বপ্রথম মহাকাশযানে পরিণত হয়।[১০] তবে ইতিহাসের প্রথম উৎক্ষিপ্ত কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল স্পুতনিক ১। ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন এটিকে একটি উপবৃত্তাকার নিম্ন ভূ-কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছিল। এই উৎক্ষেপণের ঘটনাটি বিশ্বে রাজনৈতিক, সামরিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এক নতুন যুগের সূচনা করে। স্পুতনিকের উৎক্ষেপণ একক ঘটনা হলেও এটিই ছিল মহাকাশ যুগের সূচনাবিন্দু।[১১][১২] স্পুতনিক ১ প্রযুক্তিগতভাবে অভূতপূর্ব একটি ঘটনা হিসেবে মূল্যবান তো বটেই, এর পাশাপাশি এটি কক্ষপথের পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে পৃথিবীর ঊর্ধ্ব-বায়ুমণ্ডলীয় স্তরের ঘনত্ব নির্ণয়ে সহায়তা করেছিল। এছাড়া এটি আয়নমণ্ডলের বেতার-সংকেত বিতরণের উপরে উপাত্ত সরবরাহ করে। কৃত্রিম উপগ্রহটির অসদ-দেহের চাপ-সংকুচিত নাইট্রোজেন প্রথমবারের মতো মহাকাশস্থ উল্কা শনাক্তকরণের সুযোগ করে দেয়। স্পুতনিক ১ উপগ্রহটিকে আন্তর্জাতিক ভূ-পদার্থবৈজ্ঞানিক বছরে কাজাখ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ৫ম তিউরাতাম পর্বতশ্রেণীর ক্ষেত্র নং ১/৫ (গ্যাগারিনের আরম্ভ) থেকে (বর্তমান বাইকোনুর মহাকাশ বন্দর) উৎক্ষেপণ করা হয়। উপগ্রহটি তার কক্ষপথে ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার বেগে ভ্রমণ করে ৯৬.২ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করত এবং ২০.০০৫ ও ৪০.০০২ মেগাহার্জ কম্পাংকে বেতার সংকেত প্রেরণ করত।
স্পুতনিক ১ পৃথিবীকে প্রদক্ষণকারী প্রথম মহাকাশযান হলেও তার আগেই অন্যান্য মানবনির্মিত প্রযুক্তি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বিমানচালনা সংঘ ফেদেরাসিওঁ আয়েরোনোতিক আঁতেরনাসিওনাল এই উচ্চতাটিকে অতিক্রম করাকে মহাকাশযাত্রা হিসেবে গণ্য করত। এই উচ্চতাটির নাম ছিল কারমান রেখা। বিশেষ করে ১৯৪০-এর দশকে ভি-২ রকেটের একাধিক পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের সময় রকেটগুলি ১০০ কিলোমিটার উচ্চতাকে ছাপিয়ে আরও বেশ উঁচুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
Remove ads
মানববাহী ও মানববিহীন মহাকাশযান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
মানববাহী মহাকাশযান

২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, কেবলমাত্র তিনটি রাষ্ট্র মানববাহী মহাকাশযানের মাধ্যমে মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছে। এগুলি হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক ইতিহাসের প্রথম মানববাহী মহাকাশযান। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গাগারিন এই মহাকাশযানে করে পৃথিবীর চারিদিকে একবার পূর্ণ আবর্তন করেছিলেন। ভস্টক মহাকাশযান ব্যবহার করে আরও পাঁচজন মানুষ মহাকাশে ভ্রমণ করেছিলেন।[১৩] যুক্তরাষ্ট্রের মার্কারি ইতিহাসের দ্বিতীয় মানববাহী মহাকাশযান। ১৯৬১ সালে গাগারিনের পর মার্কিন নভোচারী অ্যালান শেপার্ড এই মহাকাশযানে করে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮৭ কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় ভ্রমণ করেছিলেন। মার্কারি মহাকাশযান ব্যবহার করে আরও পাঁচজন পুরুষ মানুষ মহাকাশে ভ্রমণ করেছিলেন।
অন্যান্য সোভিয়েত মানববাহী মহাকাশযানগুলির মধ্যে ভসখোদ, সয়ুজ (এর মধ্যে সয়ুজ ৭কে-এল১ ও সয়ুজ ৭কে-এল৩ মহাকাশযানগুলিকে মানববিহীন হিসেবে ওড়ানো হয়েছিল), টিকেএস, সালিউত ও মির মহাকাশ স্টেশনের নাম উল্লেখ্য। অন্যান্য মার্কিন মানববাহী মহাকাশযানগুলির মধ্যে জেমিনি, অ্যাপোলো (কমান্ড ও সার্ভিস মডিউল এবং লুনার মডিউল নিয়ে গঠিত), স্কাইল্যাব মহাকাশ স্টেশন, নভোখেয়াযান ও ড্রাগন ২-এর নাম উল্লেখ্য। মার্কিন বোয়িং কোম্পানিও নিজেদের মহাকাশযান নির্মাণ ও উৎক্ষেপণ করে, যার নাম বোয়িং স্টারলাইনার, যেটি ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে একটি মানববাহী অভিযান পরিচালনা করে। চীন শুকুয়াং নামের একটি মহাকাশযান নির্মাণ করলেও সেটিকে উৎক্ষেপণ করেনি; দেশটি বর্তমানে তার শেনচৌ কর্মসূচির মাধ্যমে মহাকাশচারী প্রেরণ করছে। চীন ২০০৩ সালে তাদের প্রথম মানববাহী মহাকাশ অভিযানটি পরিচালনা করে।
মার্কিন নভোখেয়াযান বা স্পেস শাটল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বুরান মহাকাশ বিমান (যেটি কেবলমাত্র একটিমাত্র মানববিহীন পরীক্ষামূলক যাত্রা সম্পাদন করেছিল) ব্যতীত অন্য সমস্ত পুনরুদ্ধারযোগ্য মানববাহী কক্ষীয় মহাকাশযাত্রাগুলি ছিল মহাকাশ আধার (ক্যাপসুল)।
- মানববাহী মহাকাশযান
- মার্কিন মার্কারি, জেমিনি ও অ্যাপোলো মহাকাশযান
- সোভিয়েত ভস্টক আধার (ক্যাপসুল)
- সোভিয়েত ভসখোদ মহাকাশযান (ভস্টকের একটি প্রকারভেদ)
- ১৮৬৭ সালে উৎক্ষিপ্ত সোভিয়েত/রুশ সয়ুজ মহাকাশযান
- চীনা শেনচৌ মহাকাশযান
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আরও বেশ কয়েকটি দেশের যৌথ উদ্যোগে স্থাপন করা হয়। ২০০০ সালের নভেম্বর মাস থেকে এটিতে বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারীরা অবস্থান করে আসছেন।
মানববিহীন মহাকাশযান


মানববিহীন মহাকাশযান বলতে সেই সব মহাকাশযানকে বোঝায়, যেগুলিতে কোনও মানব চালক এবং/অথবা যাত্রী থাকে না। মানববিহীন মহাকাশযান বিভিন্ন মাত্রায় মানব নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন উপায়ে পরিচালিত হতে পারে। যেমন এগুলিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে, দূর থেকে নির্দেশনা দিয়ে চালানো হতে পারে, এমনকি এগুলি সম্পূর্ণ স্বতশ্চল হতে পারে। শেষোক্ত ক্ষেত্রে মহাকাশযানটিতে একটি পূর্বলিখিত কর্মসূচি (কর্মকাণ্ডের তালিকা) থাকে, এবং ভিন্ন কোনও আদেশ না পেলে যানটি সেই কর্মকাণ্ডগুলিই নির্বাহ করে থাকে।
বহুসংখ্যক মহাকাশ অভিযান আছে, যেগুলি মানববাহী অভিযানের পরিবর্তে দূর-স্বয়ংক্রিয় (টেলিরোবটিক) অভিযান হিসেবে পরিচালনা করাই শ্রেয়, কেননা এতে খরচের সাশ্রয় হয় ও ঝুঁকিও কম থাকে। অধিকন্তু, কিছু গ্রহীয় গন্তব্যস্থল যেমন শুক্র গ্রহ বা বৃহস্পতি গ্রহের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল। সৌরজগতের বহিঃস্থ গ্রহগুলি যেমন শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন এত দূরে অবস্থিত যে বিদ্যমান মানববাহী মহাকাশযাত্রা প্রযুক্তির মাধ্যমে এগুলিতে মানুষের পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই দূর-স্বয়ংক্রিয় সন্ধানীগুলিই এগুলি অনুসন্ধানের একমাত্র উপায়। এছাড়া জীবাণুশূন্য করা যায় বলে দূর-স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিগুলি (টেলিরোবটিকস) এমন সব অঞ্চল অনুসন্ধানের সুযোগ করে দেয়, যেগুলি পৃথিবীর অণুজীবের সংক্রমণ হবার ঝুঁকিতে থাকে। মানুষকে মহাকাশযানের মতো জীবাণুশূন্য করা সম্ভব নয়, কেননা মানবদেহের অভ্যন্তরে অসংখ্য অণুজীব সহাবস্থান করে। এছাড়া এই সব অণুজীব বা জীবাণুগুলিকে মহাকাশযান বা মহাকাশচারীর বিশেষ পরিধানের (স্পেসস্যুট) ভেতরে জোর করে ধারণ করে রাখাও দুরূহ। অদ্যাবধি চাঁদ, সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ, সূর্য, একাধিক ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক নভোবস্তু যেমন ধূমকেতু ও গ্রহাণু অধ্যয়নের জন্য একাধিক মহাকাশ সন্ধানী প্রেরণ করা হয়েছে।
মানববিহীন মহাকাশযানগুলির একটি বিশেষ দল হল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। এটি হল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র, যাকে মহাকাশে স্থাপন করে হয়। মার্কিন অর্বিটিং অ্যাস্ট্রোনমিকাল অবজারভেটরি (অর্থাৎ "আবর্তনশীল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক মানমন্দির") নামক মহাকাশযানগুলি ছিল ইতিহাসের প্রথম ব্যবহারোপযোগী বা সফলভাবে কার্যকর মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। ১৯৬৮ সালে অর্বিটিং অ্যাস্ট্রোনমিকাল অবজারভেটরি-২ মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন সালিউত ১ মহাকাশ স্টেশনের সাথে ওয়াইয়ন ১ অতিবেগুনি দূরবীক্ষণ যন্ত্রটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলির দুইটি সুবিধা আছে। প্রথমত এগুলিতে পর্যবেক্ষণকৃত তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের পরিশ্রুতি (ফিল্টারিং) ও স্ফূরণজনিত বিকৃতি এড়ানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত ভূ-ভিত্তিক মানমন্দিরগুলি যে আলোক দূষণের শিকার হয়, সেটিও এড়ানো যায়। হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ও জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র সবচেয়ে সুপরিচিত দুইটি মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র।
তৃতীয় আরেক ধরনের মানববিহীন মহাকাশযান হল মালবাহী মহাকাশযান। এগুলিকে বিভিন্ন মালামাল যেমন খাদ্য, প্রচালক জ্বালানি (প্রপেল্যান্ট) ও অন্যান্য রসদ পরিবহন করার জন্য নকশা করা হয়, এবং এগুলি সাধারণত একটি মহাকাশ স্টেশনের ফুরিয়ে যাওয়া রসদ পুনরায় সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়। ১৯৭৮ সাল থেকেই স্বয়ংক্রিয় মালবাহী মহাকাশযান ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলি সালিউত ৬, সালিউত ৭, মির, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ও থিয়েনকুং মহাকাশ স্টেশনগুলিকে সেবা প্রদান করেছে।
অন্যান্য
কিছু মহাকাশযান একই সাথে মানববাহী ও মানববিহীন মহাকাশযান হিসেবে পরিচালিত হতে পারে। যেমন রাশিয়ার বুরান মহাকাশ বিমানটি স্বয়ংচালিত হলেও এটিতে মানুষের দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও বিদ্যমান, যদিও অদ্যাবধি এটিকে কখনও মানববাহী মহাকাশযান হিসেবে চালনা করা হয়নি।[১৪][১৫]
অন্যান্য মানববাহী/মানববিহীন অর্থাৎ দ্বিমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল স্পেসএক্স ড্রাগন ২,[১৬][১৭][১৮][১৯] ড্রিম চেসার (Dream Chaser)[২০][২১] এবং চীনের থিয়েনচৌ।[২২][২৩]
Remove ads
মহাকাশযানের ধরন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহ
যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহ বলতে এমন এক ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহকে বোঝায় যেটি একটি প্রত্যুত্তর সংকেতপ্রেরক যন্ত্র (ট্রান্সপন্ডার) ব্যবহার করে বেতার টেলিযোগাযোগ সংকেতগুলিকে বিবর্ধিত করে অনুপ্রচার করে, যার ফলে একটি উৎস সম্প্রচারযন্ত্র (ট্রান্সমিটার) ও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অবস্থানে অবস্থিত গ্রাহক যন্ত্রগুলির মধ্যে একটি যোগাযোগ প্রণালীর সৃষ্টি হয়। যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে দূরদর্শন বা টেলিভিশন, দূরালাপনী (টেলিফোন), বেতার সম্প্রচার, আন্তর্জাল (ইন্টারনেট) প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা হয়ে এবং এর অনেক সামরিক প্রয়োগও বিদ্যমান।[২৪] বহুসংখ্যক যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর বিষুবরেখার ঠিক উপরে ২২,৩০০ মাইল (৩৫,৯০০ কিলোমিটার) উচ্চতায় একটি ভূ-স্থিতিশীল কক্ষপথে বিরাজ করে, যাতে কৃত্রিম উপগ্রহটিকে আপাতদৃষ্টিতে আকাশের ঠিক একই অবস্থানে স্থিতিশীল আছে বলে মনে হয়। এ কারণে ভূকেন্দ্রগুলির থালা আকৃতির অ্যান্টেনা বা শুঙ্গগুলি ঐ অবস্থানটির দিকে স্থায়ীভাবে তাক করে রাখা যায় এবং কৃত্রিম উপগ্রহটিকে পিছু পিছু অনুসরণ করার জন্য বারবার সেগুলিকে নড়াচড়া বা স্থান পরিবর্তন করাতে হয় না। অন্য এক ধরনের যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহগুলি নিম্ন ভূ-কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ স্তবক গঠন করে, যেখানে ভূস্থিত শুঙ্গ বা অ্যান্টেনাগুলিকে আকাশে ঐ কৃত্রিম উপগ্রহগুলির অবস্থান অনুসরণ করতে হয় এবং প্রায়শই একাধিক উপগ্রহের সাথে গ্রাহকের সংযোগস্থান বদল করতে হয়।
টেলিযোগাযোগ সংযোগ স্থাপনের জন্য যে উচ্চ কম্পাংকের বেতার তরঙ্গগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি দৃশ্য রেখা ধরে ভ্রমণ করে, তাই এগুলি পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের বক্রতা দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহগুলির উদ্দেশ্য হল সংকেতগুলিকে পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের বক্রতাকে পাশ কাটিয়ে অনুপ্রচার করা, যাতে বিপুল দূরত্বে অবস্থিত পৃথক দুইটি ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়।[২৫] যোগাযোগমূলক কৃত্রিম উপগ্রহগুলি বহু বিভিন্ন ধরনের বেতার ও অণুতরঙ্গ কম্পাংক ব্যবহার করে থাকে। সংকেতের ব্যতিচার এড়ানোর জন্য কোন্ কোন্ কম্পাংক পরিসর বা "ব্যান্ড" ব্যবহার করার অনুমতি আছে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রবিধান প্রনয়ন করেছে। "ব্যান্ড" বা কম্পাংক পরিসরের এই বণ্টনের কারণে সংকেতের ব্যতিচারের ঝুঁকি ন্যূনতম করা সম্ভব হয়।[২৬]
মালবাহী মহাকাশযান

মালবাহী বা পুনর্যোগানদাতা মহাকাশযান বলতে সেইসব স্বয়ংক্রিয় মহাকাশযান বোঝায়, যেগুলিকে মালামাল পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়, যার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য মহাকাশ স্টেশনগুলির পরিচালনায় সহায়তা দানের জন্য খাদ্য, প্রচালক জ্বালানি (প্রপেল্যান্ট) ও অন্যান্য রসদ পরিবহন করে পৌঁছে দেওয়া।
১৯৭৮ সাল থেকেই স্বয়ংক্রিয় মালবাহী মহাকাশযান ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলি সালিউত ৬, সালিউত ৭, মির, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ও থিয়েনকুং মহাকাশ স্টেশনগুলিকে সেবা প্রদান করেছে।
২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে মালামাল সরবরাহের কাজে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মালবাহী মহাকাশযান ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলি হল রুশ প্রোগ্রেস, মার্কিন স্পেসএক্স ড্রাগন ২ ও সিগনাস এবং চীনের থিয়েনকুং মহাকাশ স্টেশনকে মাল সরবরাহকারী থিয়েনচৌ।
মহাকাশ সন্ধানী
মহাকাশ সন্ধানী বলতে এমন সব স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত (রোবটচালিত) মহাকাশযানকে বোঝায়, যেগুলিকে গভীর মহাকাশ কিংবা পৃথিবী অপেক্ষা ভিন্ন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু অনুসন্ধান করতে প্রেরণ করা হয়। এগুলি অবতরণ যান নামক মহাকাশযানগুলি অপেক্ষা স্বতন্ত্র, কারণ এগুলি কোনও গ্রহের পৃষ্ঠতলে বা বায়ুমণ্ডলে কাজ করে না, বরং উন্মুক্ত মহাকাশে কাজ করে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত হবার সুবাদে ব্যয়বহুল ও ভারী জীবনরক্ষক ব্যবস্থাগুলির প্রয়োজন পড়ে না। যেমন অ্যাপোলো কর্মসূচির মানববাহী চন্দ্র অবতরণগুলির জন্য স্যাটার্ন ৫ রকেটের ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়েছিল, যেগুলির একেকটি উৎক্ষেপণের জন্য একশত কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ পড়েছিল। এর বিপরীতে মহাকাশ সন্ধানী উৎক্ষেপণে অপেক্ষাকৃত হালকা ও দামে সস্তা রকেট ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। মহাকাশ সন্ধানীগুলি অদ্যাবধি সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহ ও প্লুটো নামক বামন গ্রহটিকে সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া পার্কার সৌর সন্ধানীটির কক্ষপথটি এমন যে এটি নিকটতম বিন্দুতে সূর্যের বর্ণমণ্ডলের অভ্যন্তরে অবস্থান করে। পাঁচটি মহাকাশ সন্ধানী রয়েছে যেগুলি অধিবৃত্তীয় গতিপথ অনুসরণ করে সৌরজগৎ পরিত্যাগ করেছে বা করছে। এগুলি হল ভয়েজার ১, ভয়েজার ২, পায়োনিয়ার ১০, পায়োনিয়ার ১১ এবং নিউ হরাইজনস।
ভয়েজার কর্মসূচি
১৯৭৭ সালে মার্কিন ভয়েজার কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুইটি অভিন্ন ভয়েজার সন্ধানী (যাদের প্রতিটির ওজন ৭২১.৯ কিলোগ্রাম (১,৫৯২ পাউন্ড))[২৭] উৎক্ষেপণ করা হয়, যেগুলিকে ভয়েজার ১ ও ভয়েজার ২ নাম দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের অবস্থানের একটি বিরল বিন্যাসের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এক অভিযানেই গ্রহ চারটি পরিদর্শনের সুযোগ সদ্ব্যবহার করতে এই মহাকাশযানগুলি ঐ সময়ে উৎক্ষেপণ করা হয়, যেখানে অভিকর্ষীয় সহায়তা ব্যবহার করে প্রতিটি গন্তব্যস্থল অধিকতর দ্রুত সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়। বাস্তবে টাইটান ৩ই নামের রকেটটি সন্ধানীগুলিকে শনিগ্রহের কক্ষপথে প্রেরণ করতে ব্যর্থ হলেও ২০২৩ সালে এসে ভয়েজার ১ মোটামুটি ১৭ কিলোমিটার/সেকেন্ড গতিবেগে ও ভয়েজার ২ মোটামুটি ১৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড গতিবেগে ভ্রমণ করে চলছে। ২০১২ সালে ভয়েজার ১ সৌরজগতের বলয় (হেলিওস্ফিয়ার) থেকে বের হয়ে যায় এবং ২০১৮ সালে ভয়েজার ২-ও একই কাজ সম্পাদন করে। ভয়েজার ১ সন্ধানীটিকে প্রকৃতপক্ষে ভয়েজার ২-এর ১৬ দিন পরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, কিন্তু এটি শেষোক্তটির আগেই বৃহস্পতি গ্রহে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কারণ ভয়েজার ২ অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ একটি গতিপথ অনুসরণ করে বৃহস্পতির পরে ইউরেনাস ও নেপচুন পরিদর্শন করতেও সক্ষম হয়। অন্যদিকে ভয়েজার ১ ইউরেনাস বা নেপচুন নয়, বরং শনিগ্রহের উপগ্রহ টাইটানের পাশ কাটিয়ে উড়ে যায়। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী ভয়েজার ১ ১৬০ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করেছে, অর্থাৎ এটি পৃথিবী থেকে সূর্যের যে দূরত্ব, তার ১৬০ গুণ বেশি দূরে অবস্থান করছে। ফলে এটি সূর্য থেকে অদ্যাবধি সর্বাধিক দূরে অবস্থিত মহাকাশযান। অন্যদিকে ভয়েজার ২ ২০২৩-এর আগস্ট মাসের হিসাবে সূর্য থেকে ১৩৪ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক সমপরিমাণ দূরত্বে অবস্থিত। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা বাস্তব সময়ে সন্ধানীগুলির দূরত্বের উপাত্ত ও একই সাথে সন্ধানীগুলির মহাজাগতিক রশ্মি শনাক্তকারকগুলির উপাত্তগুলিও প্রদান করে থাকে।[২৮] সময়ের সাথে সাথে সন্ধানীর শক্তি নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং তেজস্ক্রিয়-সমস্থানিক তাপ-বৈদ্যুতিক উৎপাদকগুলির মানের অবনতি ঘটছে, তাই নাসা শক্তি সংরক্ষণের স্বার্থে সন্ধানীগুলির কিছু যন্ত্রপাতি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ২০২০-এর দশকের মাঝামাঝি এমনকি ২০৩০-এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সন্ধানীগুলিতে কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি চালু থাকার সম্ভাবনা আছে। ২০৩৬ সালের পরে দুইটি সন্ধানীই গভীর মহাকাশ জালকব্যবস্থার পরিসীমার বাইরে চলে যাবে।
মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র
মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা মহাকাশ মানমন্দির হল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুসমূহ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র, যাকে মহাকাশে স্থাপন করে হয়। মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলির দুইটি সুবিধা আছে। প্রথমত এগুলিতে পর্যবেক্ষণকৃত তড়িৎ-চুম্বকীয় বিকিরণের পরিশ্রুতি (ফিল্টারিং) ও স্ফূরণজনিত বিকৃতি এড়ানো সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত ভূ-ভিত্তিক মানমন্দিরগুলি যে আলোক দূষণের শিকার হয়, সেটিও এড়ানো যায়। মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলিকে দুইটি প্রকারে ভাগ করা যায়। প্রথম প্রকারেরগুলি সমগ্র আকাশের মানচিত্রণ সম্পাদন করে (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক জরিপ)। দ্বিতীয় ধরনেরগুলি নির্বাচিত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বা আকাশের অংশবিশেষ ও এগুলি ছাড়িয়ে দূরবর্তী কোনও অবস্থানের উপর দৃষ্টিনিবদ্ধ করে থাকে। মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলি ভূচিত্রণ কৃত্রিম উপগ্রহগুলি অপেক্ষা স্বতন্ত্র, যেগুলিকে কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক আলোকচিত্রণ প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্যে পৃথিবীর দিকে মুখ করানো থাকে এবং যেগুলি থেকে প্রাপ্ত চিত্র ও উপাত্ত আবহাওয়া বিশ্লেষণ, গুপ্তচরবৃত্তি ও অন্য ধরনের তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয়।
অবতরণ যান

অবতরণ যান (ইংরেজি পরিভাষায় ল্যান্ডার) বলতে এমন এক ধরনের মহাকাশযানকে বোঝায় যা পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনও নভোবস্তুর পৃষ্ঠতলে কোমল অবতরণ সম্পাদন করে। কিছু কিছু অবতরণ যান, যেমন ফিলি ও অ্যাপোলো লুনার মডিউল (আক্ষরিক অর্থে "অ্যাপোলো চান্দ্র উপাংশ") নিজস্ব জ্বালানি সরবরাহ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অবতরণ কর্মটি সম্পাদন করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে বহু অবতরণ যান আছে (যাদের সাথে ভূপৃষ্ঠে অবতরণকারী কিছু মহাকাশযানও অন্তর্ভুক্ত), যেগুলি বায়ব-গতিরোধন পদ্ধতি ব্যবহার করে। বিশেষ করে দূরের গন্তব্যস্থলগুলির জন্য শেষোক্ত পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে মহাকাশযানটি কৌশলী কক্ষপথ পরিচালনার দ্বারা নিজের গতিপথ এমনভাবে বদলে ফেলে যাতে এটি গ্রহ বা উপগ্রহের বায়ুমণ্ডল ভেদ করে অবতরণ করে। মহাকাশযানের সাথে বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষের কারণে যে পিছুটান বল সৃষ্টি হয়, তা কোনও জ্বালানির ব্যবহার ছাড়াই যানটির গতিবেগ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। তবে এর কারণে যানের দেহে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়, তাই সেটিকে মোকাবেলা করার জন্য তাপ রক্ষাঢাল জাতীয় কিছুর ব্যবহার আবশ্যক।
মহাকাশ-কোষ
মহাকাশ-কোষ (ইংরেজি পরিভাষায় স্পেস ক্যাপসুল) হল এমন এক ধরনের মহাকাশযান যেগুলি কমপক্ষে একবারের জন্য মহাকাশ থেকে ফেরত আসতে পারে। এগুলির আকৃতি ভোঁতা হয়। এগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জ্বালানি থাকে না। মহাকাশ বিমানের মতো এগুলিতে কোনও ডানা বা পাখা থাকে না। মহাকাশ-কোষগুলি হল পুনরুদ্ধারযোগ্য মহাকাশযানের সবচেয়ে সাধারণ রূপ, তাই এগুলিকেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এগুলিতে সাধারণত জীবনরক্ষক ব্যবস্থাসহ মানব মহাকাশচারী ধারণ করার সক্ষমতা থাকে। প্রথম মহাকাশ-কোষটি ছিল সোভিয়েত ভস্তক মহাকাশযানে অন্তর্ভুক্ত মহাকাশ-কোষ, যেটিতে ইতিহাসের সর্বপ্রথম মহাকাশচারী ইউরি গাগারিনকে পরিবহন করেছিল। সোভিয়েত নির্মিত সয়ুজ ও মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নির্মিত ওরায়ন মহাকাশযানগুলিতেও মহাকাশ-কোষ রয়েছে।
মহাকাশ বিমান

মহাকাশ বিমান বলতে এমন এক ধরনের মহাকাশযানকে বোঝায় যেগুলিকে সাধারণ বায়ুমণ্ডলে ভ্রাম্যমাণ বিমান তথা উড়োজাহাজের আকৃতিতে নির্মাণ করা হয়, যাতে তারা উড়োজাহাজের মতো কাজ করতে পারে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫ ছিল এইরূপ মহাকাশ বিমানের সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত, যেটি দুইটি মানববাহী উড়ান পরিচালনা করে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও অধিক উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এটি ছিল প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান যেটিকে ১৯৬৩ সালের ১৯শে জুলাই তারিখে একটি উপকক্ষীয় গতিপথে আকাশ থেকে উৎক্ষিপ্ত করা হয়।
প্রথম পুনর্ব্যবহারযোগ্য কক্ষীয় মহাকাশ বিমান ছিল স্পেশ শাটল অর্বিটার। মহাকাশ ভ্রমণকারী প্রথম আবর্তন যানটির (অর্বিটার) নাম ছিল স্পেস শাটল (নভোখেয়াযান) কলাম্বিয়া। ইউরি গাগারিনের প্রথম মহাকাশ যাত্রার ২০তম বার্ষিকীতে ১৯৮১ সালের ১২ই এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটিকে উৎক্ষেপণ করে। শাটল বা নভোখেয়াযান যুগে ছয়টি আবর্তন যান (অর্বিটার) নির্মাণ করা হয়, যাদের মধ্যে সবগুলিই বায়ুমণ্ডলে উড্ডয়ন করতে ও পাঁচটি মহাকাশে যাত্রা করতে সক্ষম হয়। স্পেস শাটল এন্টারপ্রাইজ নামক মহাকাশ বিমানটিকে কেবলমাত্র নিকটাগমন ও অবতরণ পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটিকে শাটল পরিবাহী বিমান বোয়িং ৭৪৭ এসসিএ-র পিঠ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং তারপর সেটি ভেসে ভেসে কোনও ইঞ্জিনশক্তি ছাড়াই ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডস বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে অবতরণ করে। কলাম্বিয়া-র পরে চ্যালেঞ্জার, ডিস্কভারি, অ্যাটল্যান্টিস ও এন্ডেভার নভোখেয়াযানগুলিও মহাকাশে ভ্রমণ করে। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে চ্যালেঞ্জার নভোখেয়াযানটি এসটিএস-৫১-এল নামক অভিযানের সময় বিস্ফোরিত হলে এন্ডেভার যানটি নির্মাণ করা হয়। কলাম্বিয়া যানটি ২৮টি অভিযানের পরে শেষ অভিযানে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের বুরান কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত বুরান-শ্রেণীর নভোখেয়াযানটিকে প্রথম স্বয়ংক্রিয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশ বিমান হিসেবে গণ্য করা হয়, যেটিকে ১৯৮৮ সালের ১৫ই নভেম্বর একটিমাত্র মানববিহীন অভিযান হিসেবে উৎক্ষিপ্ত করা হয়েছিল। এই মহাকাশ বিমানটিকে মানববাহী অভিযানের জন্য নকশা করা হয়েছিল। এটি দেখতে ছিল অনেকটা মার্কিন স্পেস শাটল নভোখেয়াযানগুলির মত। তবে এটির পরিত্যাজ্য গতিবর্ধক "বুস্টার" রকেটগুলিতে তরল প্রচালক জ্বালানি ব্যবহার করা হত এবং এটির মূল ইঞ্জিনগুলি এটির পাদদেশে অবস্থিত ছিল, যে একই অবস্থানে মার্কিন শাটলগুলির ক্ষেত্রে বহিঃস্থ জ্বালানি আধারটি রাখা হত। তহবিলের অভাব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তিজনিত জটিলতার কারণে বুরান মহাকাশ বিমান আর কখনও উৎক্ষিপ্ত হয়নি। বুরানের পরে অবশ্য মার্কিন স্পেস শাটলগুলির নকশাতেও পরিবর্তন সাধন করা হয়, যাতে সেগুলি প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়।
ভিশন ফর স্পেস এক্সপ্লোরেশন (আক্ষরিক অর্থে "মহাকাশ অনুসন্ধানের রূপকল্প") নামক নথিটি অনুযায়ী স্পেস শাটল যানগুলিকে ২০১১ সালে মূলত এগুলির বয়স ও প্রতি যাত্রাতে একশত কোটি মার্কিন ডলারের উচ্চ খরচ - এই দুই কারণেই মূলত অব্যাহতি দেওয়া হয়। শাটলের মানব পরিবহনের ভূমিকাটি বেসরকারি কোম্পানি স্পেসএক্স-এর স্পেসএক্স ড্রাগন ২ ও বোয়িং কোম্পানির সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার যানগুলি দ্বারা প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা আছে। ২০২০ সালের ৩০শে মে ড্রাগন ২ তার প্রথম মানববাহী যাত্রাটি সম্পন্ন করে।[২৯] স্পেস শাটলের ভারী মালামাল পরিবহনের কাজটি করার জন্য খরচযোগ্য রকেট যেমন স্পেস লঞ্চ সিস্টেম এবং ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স-এর ভালককান রকেট এবং বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ যান ব্যবহার করার পরিকল্পনা আছে।
স্কেলড কম্পোজিটস কোম্পানির স্পেসশিপওয়ান ছিল একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকক্ষীয় মহাকাশ বিমান যেটি ২০০৪ সাল উপর্যুপরি দুইটি উড়ানে চালক মাইক মেলভিল ও ব্রায়ান বিনিকে পরিবহন করে আনসারি এক্স পুরস্কার বিজয় করে। ভার্জিন গ্যালাকটিক কোম্পানির পরিচালনায় স্পেসশিপটু মহাকাশ বিমানের একটি বহর দিয়ে ২০১৪ সালে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যক্তি উদ্যোগে মহাকাশ যাত্রা আরম্ভ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু ভিএসএস এন্টারপ্রাইজ-এর দুর্ঘটনার পরে এটি পিছিয়ে যায়।
Remove ads
মহাকাশযানের গতি
বর্তমানে মহাকাশযানের যে গতি তা দিয়ে মহাবিশ্বের বিরাট ব্যাপ্তিতে ভ্রমণ অসম্ভব। এজন্য মানুষকে তাদের সৃষ্ট মহাকাশযানের গতি বাড়াতে হবে। হিস্টরি চ্যানেলের দ্য ইউনিভার্স নামক ধারাবাহিক প্রামাণ্য চিত্রে মহাকাশযানের গতি বৃদ্ধির কয়েকটি উপায়ের উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হল:
- সূর্যের বিকিরণ চাপকে কাজে লাগিয়ে সৌর পাল
- র্যামজেট ইঞ্জিনের মাধ্যমে হাইড্রোজেন সংযোজন বিক্রিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানো।
- কণা-প্রতিকণা সংঘর্ষের মাধ্যমে উৎপাদিত শক্তি ব্যবহার করা।
- স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দিয়ে দূরবর্তী স্থানকেই কাছে নিয়ে আসা।
- ট্যাকিয়ন নামক তাত্ত্বিক অতিপারমাণবিক কণার আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে ভ্রমণের প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা।
Remove ads
আরও দেখুন
- মহাকাশ সন্ধানী যান
- রকেট
টীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads