মার্কণ্ডেয়

প্রাচীন হিন্দু ঋষি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মার্কণ্ডেয়

মার্কণ্ডেয় (সংস্কৃত: मार्कण्‍डेय) ছিলেন একজন প্রাচীন হিন্দু ঋষি। তিনি ঋষি ভৃগুর বংশে জাত। মার্কণ্ডেয় শিববিষ্ণু উভয় দেবতারই এক বিশিষ্ট ভক্ত। একাধিক পুরাণে তার উল্লেখ রয়েছে। মার্কণ্ডেয় পুরাণ ঋষি মার্কণ্ডেয় ও জৈমিনীর কথোপকথনের আকারে রচিত। ভাগবত পুরাণ-এরও কিয়দংশ মার্কণ্ডেয়র কথোপকথন ও প্রার্থনার সংকলন।[] মহাভারত-এও মার্কণ্ডেয়ের উল্লেখ রয়েছে।[] সকল মূল শাখার হিন্দু সম্প্রদায়গুলির কাছেই মার্কণ্ডেয় এক শ্রদ্ধেয় ঋষি।

Thumb
শিব মার্কণ্ডেয়কে যমের হাত থেকে রক্ষা করছেন।

বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় যমুনোত্রী মন্দিরের ট্রেকিং রুটে মার্কণ্ডেয় তীর্থ নামে একটি স্থান অবস্থিত। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এখানেই মার্কণ্ডেয় তার মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থখানি রচনা করেছিলেন।[]

পৌরাণিক উপাখ্যান

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ঋষি মার্কণ্ডেয় সম্পর্কে প্রচলিত জনপ্রিয় উপাখ্যানটি নিম্নরূপ:

মৃকণ্ডু ঋষি ও তার পত্নী মরুদবতী পুত্রকামনায় শিবের আরাধনা করেন। তাদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে শিব তাদের সম্মুখে উপস্থিত হন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তারা কেমন পুত্র চান – দীর্ঘজীবী মূর্খ পুত্র না ক্ষণজীবী জ্ঞানী পুত্র। মৃকণ্ডু ঋষি ক্ষণজীবী জ্ঞানী পুত্রই চান। জন্ম হয় মার্কণ্ডেয়ের।

মার্কণ্ডেয়ের আয়ু ছিল মাত্র ষোলো বছরের। সে ছিল শিবের ভক্ত। ষোড়শ বছরে পদার্পণ করার পর যখন তার মৃত্যুকাল আসন্ন, তখন সে একটি শিবলিঙ্গ গড়ে পূজায় বসে। যম তাকে নিয়ে যেতে এলে সে সেই শিবলিঙ্গ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে। যম তার রজ্জু দিয়ে মার্কণ্ডেয়কে বন্ধন করলে, মার্কণ্ডেয় শিবলিঙ্গটিকে আঁকড়ে ধরে এবং শিবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে থাকে। ভক্তবৎসল শিব ভক্তের দুর্দশা দেখে শিবলিঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন। ক্রুদ্ধ শিব আক্রমণ করেন যমকে। যম পরাভূত হন এবং মার্কণ্ডেয়ের উপর তার দাবি ত্যাগ করে ফিরে যান। শিব যমকে পরাজিত করে মৃত্যুঞ্জয় নামে পরিচিত হন। শিবের বরে মার্কণ্ডেয় অমরত্ব লাভ করেন।

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র মার্কণ্ডেয়ের রচনা মনে করা হয়।[] তামিলনাড়ুর তিরুক্কদাভুর মন্দিরে শিবের যমবিজয়ের ধাতুচিত্র রয়েছে।[] নৃসিংহ পুরাণ গ্রন্থেও একই প্রকার একটি কাহিনির উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এই কাহিনি অনুযায়ী, মার্কণ্ডেয় কর্তৃক মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠের পর বিষ্ণু যমের হাত থেকে মার্কণ্ডেয়কে রক্ষা করেছিলেন।[]

ভাগবত পুরাণের উপাখ্যান

Thumb
মার্কণ্ডেয় বিষ্ণুকে বন্দনা করছেন।

ভাগবত পুরাণ গ্রন্থে উল্লিখিত কাহিনি অনুসারে, সমগ্র বিশ্ব জলময় হলে মার্কণ্ডেয় বিষ্ণুর স্তব করে তাকে উদ্ধার করার আবেদন জানান। বিষ্ণু পাতায় ভাসমান একটি বালকের বেশ ধরে এসে তাকে বলেন যে তিনিই সময়মৃত্যু। বালক ঋষিকে অনুরোধ করেন যে তিনি যেন নিজেকে ক্রমবর্ধমান জলরাশি থেকে উদ্ধার করতে বালকের মুখে প্রবেশ করেন। বালকের উদরে প্রবেশ করে সেখানে মার্কণ্ডেয় সেখানে বিশ্বচরাচর, সপ্তলোক ও সপ্ত মহাসমুদ্রের উপস্থিতি দেখতে পান। সকল পর্বত, রাজ্য ও জীব সেখানে বিদ্যমান ছিল। উদভ্রান্ত হয়ে মার্কণ্ডেয় বিষ্ণুর স্তব করতে থাকেন। সেই মুহুর্তেই বালকের মুখের বাইরে বেরিয়ে আসেন। বিষ্ণু তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে তাকে বর দেন। মার্কণ্ডেয় বালকরূপী বিষ্ণুর উদরে এক হাজার বছর কাটিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বালমুকুন্দাষ্টকম্ স্তোত্র রচনা করেন।

দেবীমাহাত্ম্যম্

শাক্তধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ দেবীমাহাত্ম্যম্ মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থের অংশবিশেষ।[]

চলচ্চিত্র

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.