শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
জিকির
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
যিকির বা যিকর এর আভিধানিক অর্থ হল স্মরণ করা বা উল্লেখ করা। পারিভাষিক অর্থে শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কুরআন পাঠ করা, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। জিকিরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে।


যিকির শব্দটি আরবী ভাষার “ذِكْر ” (যিকরুন) থেকে এসেছে। যার অর্থ আল্লার নাম স্মরণ করা। পবিত্র কুরআনে জিকির শব্দটি বহু জায়গায় এসেছে। কিন্তু বেশির ভাগ স্থানে পৃথক পৃথক অর্থে এ শব্দের ব্যবহার হয়েছে। এক বর্ণনা মতে, পবিত্র কুরআনে জিকির শব্দ সর্বমোট ২৬৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ১৫৪ বার এসেছে ক্রিয়া (ফেয়েল) হিসেবে আর ১১৪ বার এসেছে বিশেষ্য (ইসম) হিসেবে। (সূত্র : ইসলাম ওয়েব, ‘লফযুজ যিকরি ফিল কুরআন’)।
ইমাম নববী রহ. বলেন :- যিকির কেবল তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই যিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলার যিকির এমন এক মজবুত রজ্জু যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের উপর অবিচল রাখে। এ-কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রে গোপনে-প্রকাশ্যে যিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
“মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর”। [সূরা আহযাব ৪১,৪২]
Remove ads
যিকিরের গুরুত্ব ও ফযিলত
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আল্লাহর পবিত্র নামের যে বরকত ও লযযত এবং স্বাদ ও আনন্দ রয়েছে তা অন্য কিছুতে নেই। আল্লাহর যিকির এমন এক শক্তি, যা দুর্বলকে সবল করে এবং সকল বিপদে দৃঢ়পদ রাখে। কারণ আল্লাহর স্মরণকারীর বিশ্বাস এই যে, সব কিছু আল্লাহর হুকুমেই হয় এবং আল্লাহর কোনো ফয়সালা বান্দার জন্য অশুভ নয়। আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়ার মাঝেই বান্দার কামিয়াবি ও কল্যাণ। কুরআন মজীদে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর যিকির তথা আল্লাহর স্মরণ এমন এক বিষয়, যা মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং শরীয়তের হুকুম মোতাবেক চলতে সাহায্য করে। উপরন্তু তা এত সহজ যে, এর জন্য আলাদা করে বেশি সময় ব্যয় করার কিংবা অন্যান্য কাজ স্থগিত রাখার প্রয়োজন হয় না। আল্লাহর যিকির হচ্ছে যাবতীয় ইবাদতের রূহ। আবু ওসমান নাহদী রাহ. বলেন, কুরআন মজীদের ওয়াদা অনুযায়ী যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে তখন আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং শোকর গোযারি কর, না-শোকরি করো না।-সূরা বাকারা : ১৫২
সুতরাং আমরা যখন আল্লাহর যিকিরে মশগুল হই তখন একথা স্মরণ করা কর্তব্য যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলাও আমাদেরকে স্মরণ করছেন। এতে যিকিরের স্বাদ ও লযযত বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
মুসলমানরা বিশ্বাস করে জান্নাতের উচ্চ স্তরে প্রবেশ করার এবং আল্লাহর একেশ্বরবাদী একত্বকে মহিমান্বিত করার অন্যতম সেরা উপায় হল যিকির।
সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর যিকিরকে ধ্যানের একটি পদ্ধতি হিসাবে সমর্থন করে, যার লক্ষ্য হল শান্তির অনুভূতি, জাগতিক মূল্যবোধ (দুনিয়া) থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং নিজের ঈমানকে শক্তিশালী করা।
Remove ads
কোরআনের আয়াত
সারাংশ
প্রসঙ্গ
যিকিরের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল।
এক. কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।-সূরা আনফাল : ৪৫
দুই. অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।-সূরা রা’দ : ২৮
তিন. আরো বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে।-সূরা আনফাল : ২
চার. আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে।-সূরা হজ্ব : ৩৫
পাঁচ. অন্য আয়াতে বলেন, (তরজমা) আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।-সূরা আনকাবুত : ৪৫
ছয়. আল্লাহর অধিক যিকিরকারী পুরুষ ও যিকিরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহর প্রস্ত্তত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।-সূরা আহযাব : ৩৫
সাত. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর।-সূরা আহযাব : ৪১
আট. আরো বলেছেন, (তরজমা) স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়।-সূরা আরাফ : ২০৫
নয়. মুমিনদের সর্ম্পকে বলেছেন, যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।-সূরা আলে ইমরান : ১৯৯
দশ. মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন, যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।-সূরা নিসা : ১৪২
এগার. আরো বলেন, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।-সূরা আহযাব : ২০
বার. অন্য আয়াতে বলেন, যে তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে অতপর নামায আদায় করে।-সূরা আ’লা : ১৫
এ জাতীয় আরো আয়াতে যিকিরের কথা বলা হয়েছে। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
Remove ads
সাধারণ প্রকারভেদ
Remove ads
বাক্যাংশ এবং অভিব্যক্তি
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads