শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
লতা মঙ্গেশকর
ভারতীয় গায়িকা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
লতা মঙ্গেশকর (মারাঠি: लता मंगेशकर লতা মংগেশ্কর্; জন্ম: হেমা মঙ্গেশকর; ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ – ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২)[১] ছিলেন একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী।[২] তাকে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ও সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গণ্য করা হয়।[৩][৪][৫][৬] ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পে আট দশকের বেশি সময় অবদানের জন্য তিনি "সুরের রাণী", "ভারতের পাপিয়া", ও "সহস্রাব্দের কণ্ঠ"-সহ একাধিক সম্মানসূচক উপাধি পেয়েছেন।[৭]
তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন এবং তার গাওয়া মোট গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি।[৮][৯][১০] এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই।[৭][১১] ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে।[১২] তার অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়; এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী।[১৩] ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে।[১৪]
তিনি ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।[১৫]
পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে লতা সর্বজ্যেষ্ঠ। তার বাকি ভাইবোনেরা হলেন - আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মীনা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। তিনি ২০২২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Remove ads
প্রারম্ভিক জীবন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোর (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তার মাতা সেবন্তী[১৬][১৭] (পরবর্তী নাম পরিবর্তন করে সুধামতি রাখেন) বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের (বর্তমান উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র) একজন গুজরাতি নারী ছিলেন। তিনি দীনানাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী নর্মদা সেবন্তীর বড়বোন ছিলেন, যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।[১৮]
শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তার। বাবা চাইতেন ও শুধু ধ্রপদী গান নিয়েই থাকুক। জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স আঠারো। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাকে শুনতে হয় তা হচ্ছে, কে. এল. সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন তিনি। ৫ বছর বয়সে বাবার পরিচালিত গীতি-নাট্যে অভিনয় করেন। ১৯৪১ সালে রেডিওতে দুটি গান রেকর্ড করেন, বাবার মৃত্যুর পর পেশা জীবনে পা রাখেন। ১৩ বছর বয়সে মারাঠি গানের রেকর্ড হয়, কিন্তু সে গান সিনেমা থেকে বাদ যায়। তাঁর প্রথম হিন্দি গান মারাঠি 'জগভাউ' নামক ছবিতে। হিন্দি চলচ্চিত্র 'আপ কি সেবা মে' প্রথম হিন্দি গান গেয়েছেন তিনি। তারপর ১৯৪৮এ প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়-এর ছবি 'শহিদ' ছবিতে তিনি সুযোগ পান এবং মজবুর সিনেমায় 'দিল মেরা তোড়া' গানে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা পান।[১৭]
Remove ads
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
লতা মঙ্গেশকর তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন (২০০১), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে (১৯৬৯) ভূষিত হয়েছেন।[১৯] এই সঙ্গীতশিল্পীকে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব প্রদান করেছে। এছাড়া তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৯), মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭),[২০] এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯),[২১] এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে নতুন প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নাম ওঠে। তাঁকে ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনামের সাম্মানিক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৭ সালে আমেরিকার সাম্মানিক নাগরিকত্ব পান। ১৯৯০ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাম্মনিক ডক্টরেট প্রদান করা হয় । ১৯৯৬ সালে ভিডিওকন স্ক্রিন লাইফটাইম পুরস্কার। ২০০০ সালে আই আই এফ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার এরকম আরো বহু পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত।[২২]
Remove ads
উল্লেখযোগ্য বাংলা গান
বাংলাতে ২০০টি গান রেকর্ড করেছিলেন। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গান [২৩]-
- আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের
- প্রেম একবারই এসেছিল
- রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে
- না যেও না রজনী এখনও
- ওগো আর কিছু তো নাই
- আকাশ প্রদীপ জ্বলে
- একবার বিদায় দে মা
- সাত ভাই চম্পা
- নিঝুম সন্ধ্যায়
- চঞ্চল মন আনমনা হয়
- বাঁশি কেন গায়
- যদিও রজনী পোহাল তবুও
- ও মোর ময়না গো
- কেন কিছু কথা বলো না
- আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব
- চলে যেতে যেতে দিন বলে যায়
- চঞ্চল ময়ূরী এ রাত
- কে যেন গো ডেকেছে আমায়
- আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন
- মঙ্গল দীপ জ্বেলে
উল্লেখযোগ্য হিন্দি গান
তাঁর গলায় পনেরো হাজারেরও বেশি হিন্দি গান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হিন্দি ছায়াছবির জনপ্রিয় গান [২৩] -
- আয়েগা আনেওয়ালা (মহল)
- আজা রে পরদেসি (মধুমতী)
- পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম)
- আল্লা তেরো নাম (হম দোনো)
- অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো
- লগ যা গলে (ওয়োহ কৌন থি)
- আজ ফির জিনে কি (গাইড)
- রহে না রহে হম (মমতা)
- তু জাঁহা জাঁহা চলেগা (মেরা সায়া)
- হোঁঠো মে অ্যায়সি বাত (জুয়েল থিফ)
- আ জান-এ যা (ইন্তেকাম)
- রয়না বিতি যায়ে (অমর প্রেম)
- তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই (আঁধি)
- চলতে চলতে, ইঁয়ুহি কোই (পাকিজা)
- দুনিয়া করে সওয়াল তো হাম বহু (বেগম)
- অ্যায় দিল এ নাদান রাজিয়া (সুলতান)
- নাম গুম জায়েগা (কিনারা)
- সুন সাহিবা সুন (রাম তেরি গঙ্গা মইলি)
- সিলি হাওয়া ছু গয়ি (লিবাস)
- ইয়ারা সিলি সিলি (লেকিন)
- দিল তো পাগল হ্যায় (দিল তো পাগল হ্যায়)
- তেরে লিয়ে (বীর জারা)
- দিল হুম হুম করে (রুদালি)
- জিয়া জ্বলে (দিল সে)
- তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সনম (ডি ডি এল জে)
Remove ads
অসুস্থতা ও মৃত্যু
লতা ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা মুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী শারীরিক অসুস্থতায় অবস্থার অবনতি হয়। তিনি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮:১২ নাগাদ (ইউটিসি+৫:৩০) হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[২৪] মুম্বই-এর শিবাজী পার্কে তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, সচিন তেন্ডুলকর, শাহরুখ খান প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।[২৫] ভারতের রাষ্ট্রপতি[২৬], প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।[২৭] ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে শিল্পীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস ছুটি এবং পরবর্তী পনেরো দিন তাঁর গান বাজানোর কথা ঘোষিত হয়।[২৬]
Remove ads
আরও দেখুন
- ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পীদের তালিকা
- লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গানের তালিকা
- আশা ভোঁসলে
- মঙ্গেশকর পরিবার
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads