শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
শাহ জাহান
পঞ্চম মুঘল সম্রাট উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
মির্জা শাহাবুদ্দিন মুহাম্মাদ খুররাম (ফার্সি: میرزا شهاب الدین محمد خرم)[৪] এছাড়াও তিনি পরিচিত শাহজাহান নামে (ফার্সি: شاه جهان), (জানুয়ারি ০৫, ১৫৯২ – জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬)[৫] মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহজাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে, যার অর্থ "পৃথিবীর রাজা"।[৬] তিনি ছিলেন বাবর, হুমায়ুন, আকবর এবং জাহাঙ্গীরের পরে পঞ্চম মুঘল সম্রাট।
তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার হিন্দু রাজপুত স্ত্রী তাজ বিবি বিলকিস মাকানির সন্তান। সিংহাসন আরোহনের পূর্ব পর্যন্ত শাহাজাদা খুররাম নামেই পরিচিত ছিলেন। ১৬২৭ সালে পিতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শাসনামলে মুঘলরা স্থাপত্য এবং সাংস্কৃতিক গৌরবের শিখরে পৌঁছেছিল। দাদা আকবরের মতো তিনিও তার সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী ছিলেন। ১৬৫৮ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে মুঘলদের রাজকীয় প্রাসাদ আগ্রা দুর্গে গৃহবন্দী করেন এবং সেখানে ১৬৬৬ সালে তার মৃত্যু হয়।
তার রাজত্বের সময়কাল মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ ছিল। সম্রাট শাহজাহান লালকেল্লা, শাহজাহান মসজিদ এবং তার স্ত্রীর সমাধিসৌধ তাজমহল সহ অনেক স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। শাহজাহান মেওয়ারের রাজপুত ও দাক্ষিণাত্যের লোদিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে অংশ নেন। ১৬২৭ সালের অক্টোবরে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর শাহজাহান তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা শাহরিয়ার মির্জাকে পরাজিত করে আগ্রা দুর্গে নিজেকে পরবর্তী মুঘল সম্রাট হিসাবে ঘোষণা করেন। শাহরিয়ার ছাড়াও, শাহজাহান সিংহাসনের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।
শাহজাহান দাক্ষিণাত্য সালতানাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি পর্তুগিজ এবং সাফাভিদের সাথে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। সভাপতিত্ব করেন, যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখেন।
Remove ads
প্রথম জীবন
সেনাপতি
শাহজাহান মেবারের বিদ্রোহী রাজা রানা অমর সিং কে পরাজিত করেন ও মুঘলদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন। তিনি দাক্ষিণাত্যের লোদীদের দমন করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যর সীমা ঠিক রাখতে পিতা সম্রাট জাহাঙ্গীরকে সাহায্য করেন। জাহাঙ্গীর তার ওপর যারপরনাই খুশি হন। তাকে পরবর্তী সম্রাট ঘোষণা করেন এবং শাহজাদা খুররমকে "শাহজাহান" বা " পৃথিবীর সম্রাট " উপাধি দিয়ে দরবারের স্থায়ী সভ্য করে নেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এতে করে মহলের লোকেরা কেউ তাকে হিংসা করতে লাগল, কেউ তাকে তোষামোদ করতে লাগল। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কেউই তাকে ভালবাসত না।
বিদ্রোহী রাজকুমার
শাহজাহান ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের ভাই আসফ খানের জামাতা। তার ছোটভাই শাহজাদা শাহরিয়ার ছিলেন সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের জামাতা, ( শের আফগানের কন্যার স্বামী)। শাহজাহান সন্দেহপ্রবণ ছিলেন যে তার অনুপস্থিতিতে শাহরিয়ারকে নূরজাহান সিংহাসনে বসাবেন। তাই সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন অসুস্থ তখন তিনি পিতা ও ভাইদের এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। তিনি যুদ্ধে জয়ী হলেও, এসময় কান্দাহার পারস্যের নিকট মুঘলদের হাতছাড়া হয়।
Remove ads
সম্রাট (১৬২৮-১৬৫৮)
১৬২৮ খৃষ্টাব্দে শাহরিয়ার মিরজার পদত্যাগের পর তিনি সিংহাসনে আরোহন করেন৷
শাহজাহানের সময় মুঘল বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা দশ লক্ষে উন্নীত হয়। এবং একে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করে। তাজমহল, লাল কেল্লা, দিল্লির শাহজাহানাবাদ শহর (পুরান দিল্লি) প্রভৃতি নির্মাণশৈলীর কারণে তাঁকে " প্রিন্স অফ বিল্ডার্স " বলা হয়ে থাকে।
মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসন
শাহজাহানের শাসনকালে ভারত বিশ্বের ২৪% জিডিপির যোগান দিত। এবং সমসাময়িক বিশ্বে মুঘল ভারত ছিল সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তথাপি ১৬৩০ সালে দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও খরার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ঐসময়ে শাহজাহান "লঙ্গর" নামে একধরনের " মেকশিফট কিচেন" হাজারে হাজারে স্থাপন করে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করেন। এরকম মেকশিফট কিচেন / লঙ্গরখানার চল এখনও আধুনিক ভারতবর্ষে রয়েছে।
শিল্পকলা পৃষ্ঠপোষকতা
শাহজাহান শিল্পকলার দারুণ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি পৃথিবীর স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সমাধিসৌধ "আগ্রার তাজমহল" নির্মাণ করেন। সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও বিলাসবহুল শাহজাহানাবাদ শহর নির্মাণ করেন দিল্লির বুকে। লাল কেল্লা তৈরি করেন বর্তমানে যেখান থেকে প্রতিবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
পরবর্তী জীবন
শাহজাহানের শেষ জীবন ছিল অবসর বিশ্রামের যুগ। তিনি তার জীবনের শেষ বিশ বছর আগ্রা দুর্গে পুত্র আওরঙ্গজেব কর্তৃক গৃহবন্দী হয়ে কাটান। গৃহবন্দী করে রাখা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটাকে গৃহবন্দী বলা যায় না। তার যাবতীয় ইচ্ছা সেখানে পূর্ণ করা হত। যখন আনন্দ ফূর্তি করার ইচ্ছা হত তখন নর্তকী, এবং যখন ধর্মকর্ম করার ইচ্ছা হত তখন আলেমরা এসে উপস্থিত হত। একথার সাক্ষ্য খোদ ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার দিয়েছেন।
স্থাপত্য নিদর্শন
সম্রাট শাহজাহান অত্যন্ত শিল্পানুরাগী ছিলেন। তাজমহল ছাড়াও তার অমর কীর্তি গুলো হচ্ছে:-

- জামা মসজিদ, দিল্লি, ভারত
- শাহজাহান মসজিদ, সিন্ধু, পাকিস্তান
- মতি মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
- শালিমার গার্ডেন, লাহোর, পাকিস্তান
- ওয়াজির খান মসজিদ, লাহোর, পাকিস্তান
- দেওয়ান-ই-আম
- দেওয়ান-ই-খাস
- ময়ূর সিংহাসন
অবদান
শাহজাহানের অবদান স্থাপত্যশিল্পে অনস্বীকার্য। তবে এসব স্থাপত্যশৈলি নির্মাণের ব্যয়ভার বহন করার সময় তিনি শাহী খাজনার দরজা খুলে দিতেন যেন কারিগররা ইচ্ছামত মজুরি নিতে পারে। ফলস্বরূপ ১৬৬৫ সাল নাগাদ মুঘল শাহী খাজনা প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। শাহজাহানের এই খামখেয়ালিপনাকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূচক কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করেছেন ইতিহাসবিদরা।
মুদ্রা
শাহ জাহান স্বর্ণ (মোহর), রৌপ্য (রুপি) এবং তামা (দাম), এই তিন ধাতুর মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। সিংহাসন আরোহনের পূর্বে প্রচলিত মুদ্রায় তার নাম খুররাম উল্লেখ করা ছিল।
- আগ্রা থেকে প্রাপ্ত স্বর্ণের মোহর
- শাহ জাহানের রৌপ্য মুদ্রা বা রুপি, পাটনা থেকে প্রাপ্ত।
- তামার মুদ্রা।
- মুলতান থেকে প্রাপ্ত রৌপ্য মুদ্রা।
Remove ads
সম্পূর্ণ নাম
আবুল মোজাফ্ফর সাহিব উদ্দীন মোহাম্মদ সাহিব-ই কিরান শাহজাহান বাদশা গাজি
আরবী ফার্সী মিশ্রিত সমপূর্ণ শাহী লকব হল আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকান আল মুকর্রম শাহিন শাহ আল সল্তনাত আল হিন্দীয়া ওয়াল মগূলিয়া আবুল মুজফফর সাহিবি কিরান শিহাব উদ্দীন খুর্রম মুহম্মদ শাহ জাহান বাদশাহ গাজী বিন মুহম্মদ জাহান্কীর বিন মুহম্মদ আকবর আল গোরকানী৷
(السُّلطَانُ الأَعظَم والخَاقَانُ المُكرَّم شَاهِنشَاهِ السَّلْطَنَةِ الْهِنْدِيَّةِ والمَغُولِيَّةِ أَبُو الْمُظَفَّرِ صَاحِبقِرَان شِهَابُ الدِّينِ خُرَّم مُحمَّد شَاهجِهَان پَادِشَاه غَازِي بن مُحمَّد (جِهَانكِير بن مُحمَّد أكبر الگوركاني
Remove ads
চিত্রশালা
- শাহ জাহানের প্রতিকৃতি।
- শাহ জাহান
- শাহ জাহান তাঁর পুত্রের সাথে অশ্বারোহন করছেন।

তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads