শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
শূর্পণখা
লঙ্কার রাজা রাবণের বোন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
শূর্পণখা (মীনাক্ষী নামেও পরিচিত) হলো মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণের একটি চরিত্র৷ তিনি ছিলের রামায়ণের মূল খলচরিত্র লঙ্কার রাজা রাবণের ভগিনী[১] এবং ঋষি বিশ্রাব ও রাক্ষসী নিকষার কন্যা। শূর্পণখা শব্দটির সংস্কৃৃতাগত আক্ষরিক অর্থটি হলো কুলোর মতো নখ৷[২] আঞ্চলিকতার ওপর ভিত্তিক করে বিভিন্ন অঞ্চলে তার বিভিন্ন ধরনের নাম পাওয়া যায় যেমন, তামিল ভাষায় সূর্পণগৈ, ইন্দোনেশিয় ভাষাতে সর্পকনকা, খমের ভাষাতে শূর্পণখর, মালয় ভাষাতে শূরপণ্ডাকী এবং থাই ভাষাতে শম্মণক্খা।
Remove ads
বিবরণ ও চরিত্র
মহাকাব্যের বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে শূর্পনাখার চেহারার তীব্র পার্থক্য রয়েছে। বাল্মীকির রামায়ণ সহ বেশিরভাগ সংস্করণে তাকে কুৎসিত মহিলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শূর্পনাখা যখন প্রথম রামকে বনে দেখে, তখন বাল্মীকি তাকে মুখমণ্ডল অপ্রীতিকর, পাত্র-পেটযুক্ত, কুঁচকানো চোখ, তামাটে-কেশিওয়ালা, কুৎসিত বৈশিষ্ট্যযুক্ত, পিতল-স্বরযুক্ত, শোচনীয়ভাবে বৃদ্ধ, বাঁকা কথাবাজ, অসভ্য, অভদ্র এবং জঘন্য বলে বর্ণনা করেন।[৩] বিপরীতে, কাম্বা রামায়ণম তাকে একজন প্রেমিকা এবং সুন্দরী নারী হিসেবে বর্ণনা করে, তার আচরণকে একাকীত্বের জন্য দায়ী করে এবং এভাবে তাকে মানবিক করে।[৪]
Remove ads
ঘটনাপ্রবাহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ঋষি বিশ্রবা ও তার দ্বিতীয় পত্নী কৈকসী বা নিকষার কনিষ্ঠা কন্যা শূর্পণখা জন্মকালে মীনাক্ষী এবং দীক্ষা এইদুটি নাম পায়৷ আবার অনেকের মতে চাঁদের মতো আকৃৃতির নখের জন্য তিনি চন্দ্রনখা নামেও পরিচিতা ছিলেন৷ সে তার মাতা নিকষা এবং মাতামহী কেতুমতির মতোই সুদর্শনা ছিলেন৷ তিনি পরবর্তীকালে উপযুক্ত বয়সে কলকেয় দানব গোত্রের দানব রাজপুত্র বিদ্যুজ্জিহ্বাকে গোপনে বিবাহ করেন৷ স্বভাবতই শূর্পণখার বিবাহ দানবকুলে হওয়ার ফলে তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাবণ ক্রুদ্ধ হন৷ দানবরা ছিলো নীতিগতভাবে রাক্ষসদের বিপক্ষে তাই রাক্ষসরা তাদের শত্রু বলে মনে করতো৷ একারণে রাবণ শূর্পণখাকে দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে চাইলে তার স্ত্রী মন্দোদরী তাকে বাঁধা দেন এই তার বোনের ইচ্ছাকে সম্মতি জানিয়ে তার সম্মানরক্ষার জন্য সবকিছুমানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন৷ এভাবে রাবণ শূর্পণখার বিবাহকে ও দানবকুলকে নিজ আত্মীয় মেনে নিয়ে তাতে সামাজিক সম্মতি দেন৷
রাবণের সপ্তমতল, তথা রসাতল জয়ের কালে তিনি তার নববিবাহিত ভগিনী শূর্পণখার সঙ্গে দানবপুরীতে দেখা করতে যান৷ সেখানে গিয়ে তিনি তার দানব ভগ্নীপতির আসল উদ্দেশ্য আন্দাজ করতে পারেন ও বোঝেন যে বিদ্যুজ্জিহ্বা রাবণকে হত্যা করতেই শূর্পণখাকে বিবাহ করেছিলো৷ শূর্পণখার অনুপস্থিতিতে বিদ্দুজ্জিহ্বা রাবণের ওপর আক্রমণ করতে উদ্যত হয় কিন্তু আত্মরক্ষা করতে গিয়ে স্বয়ং রাবণ তার ভগ্নীপতিকে হত্যা করে বসে৷[৫] এরপর রাবণ নিজের কৃৃতকার্যের জন্য মর্মাহত হন ও নিজের ভগিনীর দুর্দশার কারণ হয়ে ওঠেন৷ এরপরে শূর্পণখা বৈধব্য গ্রহণ করে লঙ্কার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দক্ষিণ ভারতের বনাঞ্চলে বাস-স্থাপন করেন, রাবণের আদেশানুসারে এই সময়ে সঙ্গী হিসাবে তিনি তার দুই বৈমাত্রেয় ভাই খর ও দূষণকে সাথে পান৷ বৈধব্যকালে তিনি শাম্ভৃ নামে এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন৷ ঘটনাক্রমে শাম্ভৃ লক্ষ্মণের হাতে নিহত হন৷
রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের সাথে সাক্ষাৎ

বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, শূর্পণখা পঞ্চবটীবন পরিদর্শনের সময় পিতৃসত্য পালনার্থে বনবাসে ভ্রমণরত অযোধ্যার রাজপুত্র রাম ও লক্ষ্মণের সাক্ষাৎ পান৷ তার রূপ দেখে শূর্পণখা তার প্রতি আকৃষ্ট হন৷ রাম এই প্রস্তাব পেয়ে তৎক্ষণাৎ এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন এবং তাকে সীতাকে দেখিয়ে বলেন যে, তিনি তার স্ত্রীর বিশ্বাস খণ্ডন করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে অপারক৷ প্রত্যাখ্যাত শূর্পণখা তখন তার ভ্রাতা লক্ষ্মণের কাছে একই প্রস্তাব দিলে সে-ও তা প্রত্যাখ্যান করেন ও বলেন তার স্ত্রীয়ের প্রয়োজন নেই৷ একই সময়ে দুইভাই শূর্পণখাকে দেখে কৌতুক করতে থাকলে শূর্পণখা রেগে গিয়ে সীতাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়৷ তখন লক্ষ্মণ তার অসি দিয়ে শূর্পণখার নাক-কান কেটে দেয় ও তাকে তাদের কুটিরের আশপাশ থেকে তাড়িয়ে দেন৷

এই অপমানের পর শূর্পণখা তার ভ্রাতা খরের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান৷ খর এই খবর পেয়ে উক্তস্থানে সাত জন রাক্ষসকে পাঠান কিন্তু রাম সকলকে পদানত করেন৷ অতঃপর খর স্বয়ং ১৪,০০০ সৈন্য সহ উভয়কে আক্রমণ করলে তারাও রাম ও লক্ষ্মণের হাতে নিহত হন৷ একমাত্র সুমালীর পুত্র ও নিকষার ভ্রাতা অকম্পন বেঁচে যায় ও লঙ্কায় পলায়ন করে৷ শূর্পণখা তখন রাবণের কাছে বিচার চাইতে লঙ্কায় যান এবং সেখানে গিয়ে সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে সীতার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বলেন ও রাবণকে প্রস্তাব দেন সীতাকে বিবাহ করার জন্য৷ অকম্পনও রাবণকে প্ররোচিত করতে থাকে৷ রাবণ ভ্রাতা বিভীষণের বারণ অগ্রাহ্য করে সীতাহরণ করে আনলে লঙ্কায় রাম-রাবণের যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে৷
পরবর্তী জীবন ও মৃত্যু
বাল্মীকি রামায়ণে এই রহিত শূর্পণখার আর বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায় না৷ মনে করা হয় তিনি তার ভ্রাতা ও লঙ্কার পরবর্তী রাজা বিভীষণের সহিত লঙ্কাতেই পরবর্তী জীবন কাটান৷ তিনি এবং তার বৈমাত্রেয় ভগিনী কুম্ভিনী কিছুবছর পর সমুদ্রে প্রাণত্যগ করেন বলেও অনুমান করা হয়৷

Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads