শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
শৈলজারঞ্জন মজুমদার
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
শৈলজারঞ্জন মজুমদার (১৯ জুলাই ১৯০০ – ২৪ মে ১৯৯২) একজন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, রবীন্দ্র সংগীত প্রশিক্ষক, রবীন্দ্র সংগীতের স্বরলিপিকার এবং বিশ্বভারতীর রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক।[১]
Remove ads
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
শৈলজারঞ্জন মজুমদারের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের তথা অধুনা বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাহাম নামক গ্রামে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই তথা ৪ শ্রাবণ ১৩০৭ বঙ্গাব্দে। পিতা ছিলেন নেত্রকোণা সদরের আইনজীবী রমণীকিশোর দত্ত মজুমদার। মায়ের নাম ছিল সরলা সুন্দরী। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে নেত্রকোণার উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) হতে আই.এসসি পাশ করেন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এসসি পাশ করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেন। এরপর তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছায় আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে আইন পাশও করেন।
Remove ads
কর্মজীবন
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রসায়নশাস্ত্রে এম.এসসি পাশের পর কিছুদিন কলকাতার আশুতোষ কলেজে পড়িয়েছেন, সেই সঙ্গে গবেষণার কাজও করেছেন। আইন পাশ করার পর অল্পকাল নেত্রকোণার বার লাইব্রেরিতে ছিলেন।
সঙ্গীতচর্চা ও অবদান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি শৈলজারঞ্জনের বিশেষ আগ্রহ ছিল। আট-নয় বছর বয়সে পাঠশালায় পড়ার সময়, তিনি তার ঠাকুরমার (প্রখ্যাত লেখক নীরদচন্দ্র চৌধুরীর পিসিমা) কাছে গান শেখেন এবং তার কাছ থেকে প্রথম রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর গানের কথা শুনেছেন। এমনকি তিনি স্থানীয় শিল্পীদের কীর্তন, শ্যামাসংগীত, বাউল, ভাটিয়ালী, প্রভৃতি লোকসঙ্গীত শুনে শুনে কিছু কিছু গান আয়ত্ত করেন। বিদ্যাসাগর কলেজে আই.এসসি পড়ার সময়ে সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের "পাগলাঝোরা" নামের এক অনুষ্ঠানে গানের দলে নাম লেখান। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি প্রথম রবীন্দ্রনাথের নিজ কণ্ঠে ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’ গান এবং ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে’ কবিতার আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হন – রবীন্দ্র অনুরাগী হয়ে পড়েন। শান্তি নিকেতনের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রভাতচন্দ্র গুপ্তর উদ্যোগে তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতনে রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপকরূপে যোগ দেন। এর সুবাদে কবিগুরুর কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে গান শেখার পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি করা শুরু করেন। ধ্রুপদী সংগীতে তালিম নেন হেমেন্দ্রলাল রায়ের কাছে। ক্রমে রসায়ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়ে উঠলেন শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষপদে ইস্তফা দিয়ে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে আসেন। এখানে তাঁর প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র ছিল "সুরঙ্গমা"। তাঁরই পরিকল্পনায় ও সক্রিয় তত্ত্বাবধানে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর আগে 'গীতবিতান' ও 'দক্ষিণী' প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাঁর অনেক খানি অবদান ছিল। তিনি রবীন্দ্রনাথের বহু গানের স্বরলিপি রচনা স্বরবিতানের সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজ করতে থাকেন।প্রায় দেড়-শোটি গানের সুরকার তিনি। রবীন্দ্রনাথের প্রধানত শেষ যুগের গানগুলির তিনিই প্রধান স্বরলিপিকার। কয়েক খণ্ড স্বরবিতানের সম্পাদনাও করেছেন। তাঁর সঙ্গীতচর্চায় তানপুরা ও এস্রাজ- এ দুটি অনুষঙ্গ যন্ত্রই ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি শেষ জীবন পর্যন্ত রবীন্দ্র সংগীতে হারমোনিয়ামের বিরুদ্ধতা করে গেছেন। রবীন্দ্রসংগীতের সংরক্ষণ ও তার শুদ্ধতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি তার সুদীর্ঘ জীবনে বহু ছাত্রছাত্রীকেও রবীন্দ্র-সঙ্গীতের শিক্ষাও দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন,অরুন্ধতী দেবী শুভ গুহঠাকুরতা প্রমুখ।শৈলজারঞ্জনের কাছে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন উপাস্য দেবতার মতো, আর 'গীতবিতান' ছিল তাঁর কাছে 'বেদ' বা 'গীতার মতোই পবিত্র গ্রন্থ'। ও দিকে রবীন্দ্রনাথও তাঁকে ভালবাসতেন নিবিড় মমতায়। এক জন্মদিনে কবি তাঁকে আশীর্বাণী দিয়েছিলেন -
“জন্মদিন এল তব আজি,ভরি লয়ে সংগীতের সাজি
বিজ্ঞানের রসায়ন রাগ রাগিণীর রসায়নেপূর্ণ হল তোমার জীবনে।
কর্মের ধারায় তব রসের প্রবাহ যেথা মেশে সেইখানে ভারতীর আশীর্ব্বাদ অমৃত বরষে।”
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে শৈলজারঞ্জনই প্রথম নেত্রকোণায় রবীন্দ্র জয়ন্তী উদ্যাপন করেন এবং তার উদ্যোগে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। [২] সুতরাং, বলাচলে দুই বাংলায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপনের অনুষ্ঠান-শুরু এই রবীন্দ্র অনুরাগীর উদ্যোগেই। শৈশবে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী আত্মাবোধানন্দের (সত্যেন মহারাজ) সংস্পর্শে আসেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্গে তাঁর আজীবন সংযোগ ছিল। তাঁর রচিত গ্রন্থ হল -
- মজুমদার, শৈলজারঞ্জন (১ জানুয়ারি ১৯৮৫)। যাত্রাপথের আনন্দগান। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৫০৪০-০৪৭-০।
- 'রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষা'
Remove ads
সম্মাননা
১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে সংগীত আকাদেমি পুরস্কার দেন এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশ্বভারতী থেকে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মাননা পান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট প্রদান করে।
মৃত্যু
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে কলকাতার সল্টলেকে তিনি প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads