শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
হিপোক্রেটিস
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কসের হিপোক্রেটিস (গ্রিক: Ἱπποκράτης; Ἱπποκράτης ইপ্পোক্রাতেস্); /hɪˈpɒkrəˌtiːz/) (৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ৩৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি দ্বিতীয় হিপোক্রেটিস নামেও পরিচিত, পেরিক্লেসের যুগের একজন প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক ছিলেন, যাঁকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয়। হিপোক্রেটীয় চিকিৎসাশৈলীর উদ্ভাবনের স্বীকৃতিতে তাঁকে পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রের পিতা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।[১][২][৩] তাঁর শৈলী দর্শন ও ধর্মীয় রীতিনীতি থেকে পৃথক করে চিকিৎসাশাস্ত্রকে একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।[৪][৫]
কর্পাস হিপোক্রেটিকামের লেখক ও হিপোক্রেটীয় চিকিৎসকদের কৃতিত্ব এবং স্বয়ং হিপোক্রেটিসের কার্যকলাপ প্রায়শঃই জনমানসে একাকার হলেও, হিপোক্রেটিস কি ভাবতেন, লিখতেন বা করতেন, তা নিয়ে খুব অল্পই জানা যায়। বর্তমানকালেও গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যবহৃত হিপোক্রেটীয় শপথ রচনার কৃতিত্বও হিপোক্রেটিসকে দেওয়া হয়ে থাকে। মনে করা হয়ে থাকে, তিনি পুরাতন চিকিৎসাশৈলীগুলিকে একত্র করে এবং চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করে নিদানিক চিকিৎসাবিদ্যার পদ্ধতিগত অধ্যয়নকে বহুলাংশে অধ্যয়ন করেন।[৪][৬]
Remove ads
জীবনী
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হিপোক্রেটিসের সমসাময়িক প্লেটো রচিত প্রোতাগোরাস এবং ফাইদ্রোস[৭] এবং অ্যারিস্টটল রচিত পলিটিক্স নামক গ্রন্থে[৮] তাঁর উল্লেখ রয়েছে। হিপোক্রেটিসের প্রথম জীবনীকার দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিক স্ত্রীরোগবিশারদ এফেসোসের সোরানোসের রচনা থেকেই তাঁর সম্বন্ধীয় ব্যক্তিগত তথ্য জানান যায়। দশম শতাব্দীতে রচিত সুদা এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে জন জেটজেসের রচনা তাঁর পরবর্তী জীবনী।[৪][৯]
ঐতিহাসিকদের মতে, হিপোক্রেটিস আনুমানিক ৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কস নামক একটি গ্রিক দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন।[১০] সোরানোস লিখেছেন যে হিপোক্রেটিসের পিতা হেরাক্লিদেস একজন চিকিৎসক ছিলেন এবং মাতা প্রাক্সিতেলা ছিলেন তিজানের কন্যা। হিপোক্রেটিসের দুই পুত্র থেসালোস ও দ্রাকো এবং জামাতা পলিবোস তাঁর ছাত্র ছিলেন। গ্যালেনের মতে, পলিবোস ছিলেন হিপোক্রেটিসের প্রকৃত উত্তরাধিকারী এবং থেসালোস ও দ্রাকো উভয়েরই হিপোক্রেটিস (তৃতীয় ও চতুর্থ হিপোক্রেটিস) নামে একটি করে পুত্রসন্তান ছিল।[১১][১২]
সোরানোসের মতে, পিতামহ প্রথম হিপোক্রেটিস ও পিতা হেরাক্লিদেসের নিকট হতে হিপোক্রেটিস চিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন। এছাড়া তিনি দিমোক্রিতাস ও গোর্গিয়াসের সঙ্গে অন্যান্য বিষয় অধ্যয়ন করেন। সম্ভবত তিনি কসের আসক্লেপিয়েইওনে থ্রেসের চিকিৎসক হেরোদিকোসের নিকট শিক্ষালাভ করেন। প্লেটো রচিত প্রোতাগোরাস গ্রন্থে হিপোক্রেটিসকে আসক্লেপিয়াদ উপাধিধারী কসের হিপোক্রেটিস নামে উল্লেখ করেছেন।[১৩][১৪] তিনি তাঁর ফাইদ্রোস গ্রন্থে বলেছেন যে আসক্লেপিয়াদ হিপোক্রেটিস মনে করতেন, চিকিৎসাবিদ্যায় শরীরের প্রকৃতির সম্পূর্ণ জ্ঞান প্রয়োজন।[১৫] হিপোক্রেটিস সারা জীবন চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন ও শিক্ষাদান করেন। তিনি কমপক্ষে থেসালি, থ্রেস ও মার্মারা সমুদ্র পর্য্যন্ত ভ্রমণ করেন।[১২] তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অনেক রকম তথ্য পাওয়া যায়। সম্ভবতঃ তিনি ৮৩, ৮৫ বা ৯০ বছর বয়সে লারিসায় মারা যান, যদিও কেউ কেউ মনে করেন, তিনি শতাধিক বছর জীবিত ছিলেন।[১২]
Remove ads
তত্ত্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হিপোক্রেটিসকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয় যিনি বিশ্বাস করতেন যে, কুসংস্কার বা ঈশ্বর থেকে নয়, বরং প্রাকৃতিক উপায়ে রোগের প্রকোপ ঘটে পিথাগোরাসের শিষ্যদের মতে, হিপোক্রেটিস দর্শন ও চিকিৎসাশাস্ত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন[১৬] কিন্তু বস্তুতঃ তিনি ধর্ম হতে চিকিৎসাবিদ্যাকে পৃথক করেন এবং মতপ্রকাশ করেন যে, রোগ দেবতাদের দ্বারা ঘটে না বরং, জীবনযাপনপদ্ধতি, খাদ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দ্বারা নিরূপিত হয়। এমনিকি কর্পাস হিপোক্রেটিকামে কোথাও রহস্যজনক অসুস্থতার উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি।[১৭][১৮][১৯]
প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসাপদ্ধতি নিডোস ও কস এই দুই অঞ্চলের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিভক্ত ছিল। নিডোস অঞ্চলের চিকিৎসাপদ্ধতি রোগনির্ণয়ের ওপর নির্ভর করত, কিন্তু একটি রোগেরই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে এই পদ্ধতি বিফল হত।[২০] অন্যদিকে কস অঞ্চলে প্রচলিত হিপোক্রেটীয় চিকিৎসাপদ্ধতি রোগনির্ণয়ের ওপর নির্ভর না করে রোগীর সেবা ও আরোগ্য সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিত, যা রোগ নিরাময়ে অধিক সাফল্যের কারণ হয়ে ওঠে।[২১][২২] রোগীর নিকট হতে বিশদে রোগের ইতিহাস জেনে তাঁর আরোগ্য সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা করা হত।[১৯][২৩]
হিপোক্রেটীয় চিকিৎসাপদ্ধতিতে সঙ্কটমুহুর্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সঙ্কটমুহুর্ত এমন একটি সময় যখন হয় রোগীর মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয় অথবা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় রোগনিরাময় ঘটার ফলে রোগী বেঁচে যান। সঙ্কটমুহুর্ত পেরোলে আবার একটি এরকম মুহুর্ত আশার সম্ভাবনা থাকে, যা রোগীর জীবনমৃত্যুর ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। হিপোক্রেটীয় তত্ত্বানুসারে, রোগ শুরু হওয়ার একটি বিশেষ সময় পরেই সঙ্কটের সময় শুরু হয়। এই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে যদি সঙ্কটমুহুর্ত আসে, তবে তা বারবার ফিরে আসতে পারে। গ্যালেনের মতে, এই ধারণা হিপোক্রেটিস প্রথম প্রচলন করেন, যদিও তাঁর পূর্ব থেকেই এই ধারণা প্রচলিত ছিল এমন মত রয়েছে।[২৪]
হিপোক্রেটীয় চিকিৎসাপদ্ধতি একটি নিরীহ ও নিষ্ক্রিয় পদ্ধতি বিশেষ। প্রকৃতির নিরাময়শক্তির ওপর এই পদ্ধতি নির্ভর করত। এই তত্ত্বানুসারে, চারটি ধাতুর ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষমতা শরীরের রয়েছে যা নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয়।[২৫] সেই কারণে এই চিকিৎসাপদ্ধতি এই প্রাকৃতিক উপায়কে আরও সহজ করার দিকে মনোযোগ দেয়। রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও শরীরের বিশ্রামের গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি।[২৬] হিপোক্রেটীয় পদ্ধতি সাধারণভাবে রোগীদের একদমই কষ্ট দিত না। যেমন, বিশুদ্ধ জল বা মদ দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করা হত। কখনও বা আরামদায়ক মলম লাগানোও হয়ে থাকত।[২৭]
হিপোক্রেটিস ওষুধ প্রদান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা প্রদান করতে চাইতেন না। সাধারণ রোগনির্ণয়ের পর সাধারণ চিকিৎসা করা হত।[২৭][২৮] তিনি সাধারণ চিকিৎসা হিসেবে উপবাস ও আপেলসুরার সির্কা পান করার পথয় দিতেন। তাঁর মতে রোগের সময় খাদ্যগ্রহণ করলে তা রোগকেই খাবার দেওয়ার মত হয়।[২৯]
Remove ads
তথ্যসূত্র
উৎস
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads