শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

হেপাটাইটিস সি

এক প্রকার সংক্রামক রোগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

হেপাটাইটিস সি
Remove ads

হেপাটাইটিস সি এক প্রকারের সংক্রমণ যা প্রধানত যকৃৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (এইচসিভি) এই রোগ সৃষ্টি করে। [] হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির সচরাচর কোন উপসর্গ (স্বাস্থ্য সমস্যা বা তার রোগ আছে এমন কোন লক্ষণ) থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ যকৃতে ক্ষত এবং বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে। কোন কোন ক্ষেত্রে সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির যকৃৎ অকার্যকর, যকৃতের ক্যান্সার, বা খাদ্যনালীপাকস্থলীর শিরা স্ফীত হতে পারে, যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।[]

Thumb
মাইক্রোস্কোপে হেপাটাইটিস সি' ভাইরাস

প্রধানত শিরায় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে রক্ত-থেকে-রক্তে সংযোগ, জীবাণু-যুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ও রক্ত সঞ্চালনের ফলে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ হয়। পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত। বিজ্ঞানীরা এইচসিভি’র ব্যাপারে ১৯৭০ এর দশকে তদন্ত শুরু করে এবং ১৯৮৯ সালে নিশ্চিত করে যে এর অস্তিত্ব রয়েছে।[] অন্যান্য প্রাণীতে এর কারণ জানা যায়নি।

Thumb
মানচিত্রে আক্রান্ত সীমা ও অঞ্চল

পেজিন্টারফেরন ও রাইবাভিরিন হল এইচসিভি’র মান সম্পন্ন ওষুধ। চিকিৎসাধীন ৫০-৮০% লোকের রোগ নিরাময় হয়। সিরোসিস ও যকৃতের ক্যান্সারে আক্রান্তদের যকৃৎ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে, তবে প্রতিস্থাপনের পর সাধারণত ভাইরাসটির পুনরাবির্ভাব ঘটে।[] হেপাটাইসিস সি-এর কোন টিকা নাই।

Remove ads

লক্ষণ এবং উপসর্গ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

মাত্র ১৫% ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি তীব্র উপসর্গ সৃষ্টি করে।[] অরুচি, ক্লান্তি, বিতৃষ্ণাবোধ, পেশি বা সংযোগস্থলে ব্যথা, ও ওজন-হ্রাসসহ উপসর্গসমূহ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃদু ও অস্পষ্ট।[] কেবল অল্প কিছু ক্ষেত্রেই তীব্র সংক্রমণের সঙ্গে জন্ডিস হয়ে থাকে।[] ১০-৫০% ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংক্রমণ চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যায় এবং অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে তা অন্যদের চেয়ে বেশি ঘটে।[]

দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ

এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা আশি শতাংশ লোকের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হয়।[] বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণের এক দশকের মধ্যে সামান্যই উপসর্গ দেখা যায় বা কোন উপসর্গই দেখা যায় না,[] যদিও দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে ক্লান্তি জড়িত থাকতে পারে।[] বহু বছর ধরে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি সিরোসিস ও যকৃতের ক্যান্সারের মূল কারণ। [] ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০-৩০% এর সিরোসিস হয়ে থাকে।[][] সিরোসিস আরো বেশি দেখা যায় হেপাটাইটিস বি বা এইচআইভি-এ আক্রান্ত, সুরাসক্ত ব্যক্তি ও পুরুষদের মধ্যে।[] সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বিশ গুণ বেশি, যা প্রতি বছর ১-৩% বৃদ্ধি পায়।[][] সুরাসক্তদের জন্য ঝুঁকি ১০০ গুণ বেশি।[১০] হেপাটাইটিস সি ২৭% সিরোসিস ও ২৫% যকৃতের ক্যান্সারের কারণ।[১১]

যকৃতের সিরোসিস থেকে যকৃতের সঙ্গে যুক্ত শিরায় উচ্চ রক্তচাপ, উদরে তরল জমা, সহজে কালশিরে বা রক্তপাত, বিশেষ করে পাকস্থলী ও খাদ্য নালীর শিরার সম্প্রসারণ, জন্ডিস (ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া), ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে।[১২]

যকৃতের বাইরে প্রভাব

বিরল ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সি সোগ্রেন’স সিনড্রোম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় বিসৃংখলা), রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে হ্রাস, দীর্ঘস্থায়ী চর্ম-রোগ, ডায়াবেটিস, ও নন-হজকিন লিম্ফোমা’র সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারে।[১৩][১৪]

Remove ads

কারণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস এক ধরনের ছোট, আবৃত, সিঙ্গল-স্ট্র্যান্ডেড, পজিটিভ-সেন্স আরএনএ ভাইরাস।[] এটি “ফ্লাভিরিডে” পরিবারের “হেপাসিভাইরাস” শ্রেণীর অন্তর্গত।[] এইচসিভি’র প্রধান সাতটি জিনগত কাঠামো (জেনেটাইপ) রয়েছে।[১৫] যুক্তরাস্ট্রে জিনগত কাঠামো ১ এর কারণে ৭০%, জিনগত কাঠামো ২ এর কারণে ২০% ও অন্যান্য জিনগত কাঠামোর কারণে ১০% হেপাটাইটিস সি দেখা যায়।[] জিনগত কাঠামো ১ দক্ষিণ আমেরিকাতে ও ইউরোপেও বেশ দেখা যায়।[]

রোগ সঞ্চালন

উন্নত বিশ্বে সঞ্চালনের প্রধান পদ্ধতি হল শিরায় মাদকের ব্যবহার (আইডিইউ)। উন্নয়নশীল বিশ্বে সঞ্চালনের প্রধান পদ্ধতি হল রক্ত সঞ্চালন ও অনিরাপদ চিকিৎসা প্রক্রিয়া। [১৬] ২০% ক্ষেত্রে কারণ জানা যায় না;[১৭] তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা আইডিইউ এর কারণে হয়ে থাকে।[]

শিরায় মাদকের ব্যবহার

বিশ্বের অনেক স্থানেই হেপাটাইসিস সি-এ আইডিইউ প্রধান ঝুঁকির কারণ।[১৮] ৭৭টি দেশের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যুক্তরাস্ট্র ও চীন[১৮] সহ ২৫টি দেশে শিরায় মাদকের ব্যবহারের কারণে হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের হার ৬০% থেকে ৮০% এর মধ্যে। [] ১২টি দেশে এই হার ৮০% এর বেশি।[] শিরায় মাদক গ্রহণের কারণে মোট ১০ মিলিয়ন লোকের হেপাটাইটিস সি সংক্রমণ হয়; চীন (১.৬ মিলিয়ন), যুক্তরাস্ট্র (১.৫ মিলিয়ন), এবং রাশিয়ায় (১.৩ মিলিয়ন) এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।[] যুক্তরাস্ট্রে কারাবন্দীদের হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের হার সাধারণ জনগণের চেয়ে দশ থেকে বিশ গুণ বেশি, এই সমীক্ষায় যার কারণ হিসাবে আইডিইউ ও জীবাণু-মুক্তকরণ ব্যতিরেকে সরঞ্জাম ব্যবহার করে শরীরে উল্কি তৈরির মত উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের উল্লেখ করা হয়েছে।[১৯][২০]

স্বাস্থ্যসেবায় ঝুঁকি

এইচসিভি পরীক্ষা ছাড়াই রক্ত সঞ্চালন, রক্ত উপাদান গ্রহণ, ও অঙ্গ সংযোজনের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।[] যুক্তরাস্ট্রে ১৯৯২ সালে সর্বজনীন পরীক্ষার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তারপর থেকে সংক্রমণের হার প্রতি ২০০ ইউনিট রক্তের জন্য ১ জন থেকে কমে[২১] প্রতি ১০,০০০ - ১০,০০০,০০০ ইউনিট রক্তের জন্য ১ জন-এ পরিণত হয়েছে।[][১৭] সম্ভাব্য রক্তদাতা হেপাটাইটিস সি-এ আক্রান্ত হওয়া ও রক্ত পরীক্ষায় তা ধরা পড়ার মধ্যে প্রায় ১১-৭০ দিনের সময় ব্যবধান থাকায় নিম্ন মাত্রার ঝুঁকি রয়েই গেছে।[১৭] কোন কোন দেশে খরচের কারণে এখনো হেপাটাইটিস সি পরীক্ষা করা হয় না।[১১]

কোন ব্যক্তির এইচসিভি আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুচ বিদ্ধ জনিত জখম থাকলে তার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১.৮%।[] সুচ ফাঁপা হলে ও জখম গভীর হলে এই ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়।[১১] শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি নিঃসৃত রস থেকে রক্তে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে; তবে এই ঝুঁকি নিম্ন, এবং অক্ষত ত্বকের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেই।[১১]

সুচ ও সিরিঞ্জ পুনঃব্যবহার, শিশির একাধিক ব্যবহার, দেহে প্রবেশযোগ্য তরলের ব্যাগ, এবং জীবাণু-মুক্তকরণ ব্যতিরেকে অস্ত্রপচার সরঞ্জামের মত হাসপাতালের সরঞ্জাম থেকেও হেপাটাইটিস সি সঞ্চালিত হয়।[১১] বিশ্বে সবচাইতে বেশি হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের হার রয়েছে মিশরে, যেখানে চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসার সুযোগের ক্ষেত্রে নিম্নমান এই রোগ বিস্তারের প্রধান কারণ।[২২]

যৌন মিলন

যৌন মিলনের কারণে হেপাটাইটিস সি সঞ্চালিত হয় কিনা তা জানা যায়নি।[২৩] উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ যৌন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে হেপাটাইটিস সি-এর সংশ্লিষ্টতা থাকলেও অনুল্লেখিত ওষুধের ব্যবহার ও যৌন কর্মের মধ্যে কোন্‌টি রোগ সঞ্চালনের কারণ তা নিশ্চিত নয়।[] প্রমাণ পাওয়া গেছে যে অন্য কারো সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা বিপরীতলিঙ্গের দম্পতিদের কোন ঝুঁকি নাই।[২৩] পায়ুগত প্রবেশের মত পায়ু পথের অভ্যন্তরীণ গাত্রের আবরণে আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা-যুক্ত যৌনক্রিয়া অথবা এইচআইভি বা যৌনাঙ্গে ঘা’য়ের মত যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমে সঞ্চালনযোগ্য রোগসহ যৌন ক্রিয়ায় ঝুঁকি বিদ্যমান।[২৩] যুক্তরাস্ট্র সরকার একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে কনডম ব্যবহারের সুপারিশ করে থাকে।[২৪]

দেহ ছিদ্র করা

উল্কি কাটলে হেপাটাইটিস সি-এর ঝুঁকি দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়।[২৫] জীবাণু-মুক্তকরণ ব্যতিরেকে সরঞ্জাম ব্যবহার বা ব্যবহৃত রং-এর দূষণের কারণে এটি হতে পারে।[২৫] ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ের আগে বা অদক্ষতার সঙ্গে করা উল্কি বা দেহ-ছিদ্র বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ, কেননা এ ব্যাপারে পূর্বের পদ্ধতি উন্নত ছিল না। এছাড়া অপেক্ষাকৃত বড় উল্কিতে অধিক ঝুঁকি রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।[২৫] কারাবন্দীদের প্রায় অর্ধেক জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়া উল্কির একই সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে।[২৫] লাইসেন্সকৃত প্রতিষ্ঠানে উল্কি কাটার সঙ্গে সরাসরি এইচসিভি সংক্রমণের সম্পৃক্ততা বিরল।[২৬]

রক্তের সঙ্গে সংস্পর্শ

রেজর, দাঁতের ব্রাশ, এবং হাত ও পা এর চিকিৎসা ও পরিচর্যা সরঞ্জামের মত ব্যক্তিগত ব্যবহার্য বস্তু রক্তের সংস্পর্শে আসতে পারে। এসব শেয়ার করলে এইচসিভি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।[২৭][২৮] দেহের কাটা ও ব্যথা-যুক্ত বা অন্যান্য রক্তক্ষরণের স্থানের ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা উচিত।[২৮] আলিঙ্গন, চুম্বন, বা খাদ্য গ্রহণ বা রান্নার সরঞ্জাম থেকে এইচসিভি ছড়ায় না।[২৮]

মা থেকে সন্তানে সঞ্চালন

গর্ভধারণের ১০% এর চেয়েও কম ক্ষেত্রে সংক্রমিত মা থেকে সন্তানে হেপাটাইটিস সি সঞ্চালিত হয়।[২৯] এই ঝুঁকি হ্রাসের কোন পদ্ধতি নাই।[২৯] গর্ভধারণ ও প্রসবকালে এই সঞ্চালন হতে পারে।[১৭] প্রসবে দীর্ঘসময় লাগলে সঞ্চালনে অধিক ঝুঁকি থাকে।[১১] এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে বুকের দুধ খাওয়ালে এইচসিভি ছড়ায়; তবে সংক্রমিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো পরিহার করা উচিত যদি দুধের বোঁটা ফেঁটে গিয়ে থাকে বা তা থেকে রক্ত ঝড়ে,[৩০] অথবা তার দেহে ভাইরাসের মাত্রা বেশি হয়।[১৭]

Remove ads

রোগনির্ণয়

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের সেরোলজিক প্রোফাইল

হেপাটাইসিস সি নির্ণয়ের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ এইচসিভি অ্যান্টিবডি, ইএলআইএসএ, ওয়েস্টার্ন ব্লট, ও পরিমাণগত এইচসিভি আরএনএ।[] পলিমারেজ চেইন প্রতিক্রিয়া (পিসিআর) সংক্রমণের এক থেকে দুই সপ্তাহ পর এইচসিভি আরএনএ শনাক্ত করতে পারে, অপরদিকে অ্যান্টিবডি এগুলো গঠন ও প্রকাশে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি সময় নেয়।[১২]

দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি হল ছয় মাসের অধিক সময় ধরে আরএনএ’র উপস্থিতির ভিত্তিতে হেপাটাইটিস সি-এর সংক্রমণ।[] দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ক্ষেত্রে দশকব্যাপী কোন উপসর্গ না থাকলে[] চিকিৎসকরা সাধারণত যকৃতের কার্য পরীক্ষা বা উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়মিত পরীক্ষা দ্বারা তা নির্ণয় করে থাকে। পরীক্ষা দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র সংক্রমণের পার্থক্য ধরা যায় না।[১১]

রক্ত পরীক্ষা

এইচসিভিতে অ্যান্টিবডি’র উপস্থিতি সনাক্ত করতে কোন এনজাইম ইমিউনোসে ব্যবহারের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা দ্বারা সাধারণত হেপাটাইসিস সি পরীক্ষা শুরু হয়।[] এই পরীক্ষার ফল পজিটিভ হলে ইমিউনোসে যাচাই ও তীব্রতা নিরূপণের জন্য দ্বিতীয় আরেকটি পরীক্ষা করা হয়।[] রিকমবিন্যান্ট পরীক্ষা ইমিউনোসে যাচাই করে, ও পলিমারেজ চেইন প্রতিক্রিয়া তীব্রতা নিরূপণ করে।[] কোন আরএনএ না থাকলে ও ইমিউনোব্লট পজিটিভ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূর্বে সংক্রমণ ছিল, তবে চিকিৎসা দ্বারা বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার উপশম হয়েছে; ইমিউনোব্লট নেগেটিভ হলে ইমিউনোসে সঠিক ছিল না।[] সংক্রমণের ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর ইমিউনোসে পরীক্ষার ফল পজিটিভ হয়।[]

সংক্রমণের প্রথমভাগে যকৃতের এনজাইম পরিবর্তিত হয়;[] এগুলো গড়ে সংক্রমণের সপ্তম সপ্তাহে বাড়তে শুরু করে।[] যকৃতের এনজাইম রোগের তীব্রতার সঙ্গে তেমন সম্পর্কিত নয়।[]

বায়োপসি

যকৃতের বায়োপসি দ্বারা এর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়, তবে এই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি রয়েছে।[] বায়োপসিতে যেসব পরিবর্তন ধরা পড়ে সেগুলো হল যকৃতের কলায় লিম্ফোসাইট, পোর্টাল ট্রায়াড-এ লিম্ফয়েড ফলিকল, ও পিত্তনালীর পরিবর্তন।[] ক্ষতির মাত্রা নিরুপণ ও বায়োপসি পরিহারের প্রচেষ্টায় বেশ কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষা রয়েছে।[]

পরীক্ষা

যুক্তরাস্ট্র ও কানাডায় সংক্রমিত ৫-৫০% জনগণ তদের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন।[২৫] যাদের দেহে উল্কি রয়েছে তাদেরসহ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছে।[২৫] যকৃতের এনজাইম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও পরীক্ষা সম্পাদনের সুপারিশ করা হয়েছে, কারণ এটি প্রায়শই দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিসের লক্ষণ।[৩১] যুক্তরাস্ট্রে নিয়মিত পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়নি।[]

Remove ads

প্রতিরোধ

২০১১ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি-এর কোন টিকা নাই। টিকা তৈরির কাজ চলছে এবং কিছু উৎসাহব্যঞ্জক ফলাফলও রয়েছে।[৩২] সুচ পরিবর্তন কর্মসূচির মত প্রতিরোধমূলক কৌশল ও অপব্যবহৃত বস্তুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা-এ দু’য়ের যৌথ প্রয়োগ শিরায় মাদক ব্যবহারকারীদের হেপাটাইটিস সি-এর উচ্চ ঝুঁকি ৭৫% হ্রাস করতে পারে।[৩৩] জাতীয় পর্যায়ে রক্তদাতাদের পরীক্ষা করা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বজনীন সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।[] যেসব দেশে জীবাণুমুক্ত সিরিঞ্জের পর্যাপ্ত সরবরাহ নাই, সেবা প্রদানকারীদের উচিত সেখানে ইঞ্জেকশনের পরিবর্তে মুখের মাধ্যমে ওষুধ সেবন করানো।[১১]

Remove ads

চিকিৎসা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

সংক্রমিত ব্যক্তিদের ৫০-৮০% এর মধ্যে এইচসিভি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে ৪০-৮০% ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের উপসম হয়। [৩৪][৩৫] বিরল ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই সংক্রমণ সেরে যায়। [] যাদের দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি রয়েছে তাদের উচিত অ্যালকোহল ও যকৃতের জন্য বিষাক্ত পদার্থ পরিহার করা,[] এবং হেপাটাইটিস এ ও হেপাটাইটিস বি এর টিকা নেয়া।[] সিরোসিস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের যকৃতের ক্যান্সারের জন্য রয়েছে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।[]

ওষুধ

এইচসিভি সংক্রমণের ফলে যকৃতের সমস্যা-যুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নেয়া উচিত। [] এর বর্তমান চিকিৎসা হল এইচসিভি এর ধরনের ওপর ভিত্তি করে ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা ধরে পেজিলেটেড ইন্টারফেরন ও ভাইরাস বিরোধী ওষুধ রিবাভাইরিন এর সংমিশ্রণ।[] চিকিৎসা গ্রহণকারী ৫০-৬০% ব্যক্তির ক্ষেত্রে ফলাফল ভাল হয়।[] রিবাভাইরিন ও পেজিন্টারফিরন আলফা’র সঙ্গে বসিপ্রেভির বা টেলাপ্রেভির যুক্ত করলে হেপাটাইটিস সি জেনোটাইপ ১ এর ক্ষেত্রে তা ভাইরাস বিরোধী সুফল-দায়ক হয়।[৩৬][৩৭][৩৮] এই চিকিৎসায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সাধারণ ঘটনা; চিকিৎসা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের অর্ধেকের মধ্যেই ফ্লু জাতীয় উপসর্গ দেখা দেয় এবং এক তৃতীয়াংশ আবেগগত সমস্যায় ভোগে।[] হেপাটাইটিস সি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগে প্রথম ছয় মাসে চিকিৎসায় অধিক কার্যকর।[১২] কোন ব্যক্তি নতুনভাবে সংক্রমিত হয়ে আট থেকে বার সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা না নিলে ২৪ সপ্তাহ ধরে পেজিলেটেড ইন্টারফেরন ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়।[১২] থ্যালাসেমিয়া (এক প্রকার রক্তের রোগ) আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য রিবাভাইরিন উপকারী বলে মনে হয়, তবে তা রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে দেয়।[৩৯] যারা বিকল্প চিকিৎসার সমর্থক তারা দাবি করে যে মিল্ক থিসল, জিনসেং, কলোডিয়া সিলভার হেপাটাইটিস সি-এর জন্য উপকারী।[৪০] তবে হেপাটাইটিস সি-এ কোন বিকল্প চিকিৎসাই সুফলদায়ক বলে দেখা যায় নাই এবং ভাইরাসের ওপর বিকল্প চিকিৎসার আদৌ কোন প্রভাব আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।[৪০][৪১][৪২]

Remove ads

সম্ভাব্য গতিধারা

জেনোটাইপের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা’র ফলাফল ভিন্ন হয়ে থাকে। এইচসিভি জেনোটাইপ ১-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪৮ সপ্তাহের চিকিৎসায় ৪০-৫০% ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যায়।[] এইচসিভি জেনোটাইপ ২ ও ৩-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ২৪ সপ্তাহের চিকিৎসায় ৭০-৮০% ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যায়।[] এইচসিভি জেনোটাইপ ৪-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৪৮ সপ্তাহের চিকিৎসায় ৬৫% ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যায়। জেনোটাইপ ৬-এ চিকিৎসার সাফল্য বর্তমানে বিরল, এবং যে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে তা জেনোটাইপ ১-এর ডোজ অনুযায়ী ৪৮ সপ্তাহের চিকিৎসা্র ওপর ভিত্তি করে।[৪৩]

Remove ads

জনসংখ্যা ভিত্তিক বণ্টন

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস সি এর বিস্তার
Thumb
Disability-adjusted life year for hepatitis C in 2004 per 100,000 inhabitants
  no data
  <10
  10-15
  15-20
  20-25
  25-30
  30-35
  35-40
  40-45
  45-50
  50-75
  75–100
  >100

১৩০ থেকে ১৭০ মিলিয়ন লোক, বা বিশ্বের জনসংখ্যার ~৩% দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি-এ আক্রান্ত।[৪৪] প্রতি বছর ৩-৪ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং হেপাটাইটিস সি-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগে প্রতি বছর ৩৫০,০০০ এর অধিক লোক মারা যায়।[৪৪] আইডিইউ এর সঙ্গে শিরায় প্রয়োগকৃত ওষুধ বা জীবাণু-মুক্তকরণ ব্যতিরেকে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে বিশ শতকে এই হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।[১১]

যুক্তরাস্ট্রে প্রায় ২% লোক হেপাটাইটিস সি-এ আক্রান্ত,[] যেখানে প্রতি বছর ৩৫,০০০ থেকে ১৮৫,০০০ লোক নতুনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হয়। রক্ত সঞ্চালনের পূর্বে উন্নত রক্ত পরীক্ষার কারণে পশ্চিমে এই হার ১৯৯০ দশকের পর কমে গেছে।[১২] যুক্তরাস্ট্রে এইচসিভি’র কারণে প্রতি বছর ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে। এইচসিভি পরীক্ষার আগেই সঞ্চালন দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করায় প্রকৃত মৃত্যু হার আরো বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়।[৪৫]

আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে সংক্রমণের হার বেশি।[৪৬] অত্যন্ত উচ্চ সংক্রমণ হার যুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশর (২২%), পাকিস্তান (৪.৮%) ও চীন (৩.২%)।[৪৪] মিশরে উচ্চ হারের কারণ হল ভুল প্রক্রিয়ায় জীবাণু- মুক্ত করা কাচের সিরিঞ্জ ব্যবহার করে সিস্টোসোম্যায়াসিস-এর গণ-চিকিৎসা অভিযান, যা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে।[১১]

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব হেলথ এর সঞ্চালিত রোগের চিকিৎসা বিভাগের সংক্রমিত রোগ সেকশনের প্রধান হার্ভি যে অলটার ও তার গবেষণা দল দেখান যে রক্ত সঞ্চালন পরবর্তী বেশির ভাগ হেপাটাইটিসের কারণ হেপাটাইটিস এ বা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নয়। এই আবিষ্কার সত্ত্বেও ভাইরাস সনাক্তকরণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা পরবর্তী দশকে ব্যর্থ হয়। ১৯৮৭ সালে কাইরন কর্পোরেশন এর মাইকেল হটন, কুই লুম চু ও জর্জ কু সেন্ট্রার্স ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এর ডঃ ডি ডব্লিউ ব্রাডলি’র সঙ্গে যৌথভাবে অজানা প্রাণীসত্তা সনাক্ত ও রোগনির্ণয় পরীক্ষা উদ্ভাবন করতে নতুন ধরনের আণবিক ক্লোন পদ্ধতি ব্যবহার করেন।[৪৭] ১৯৮৮ সালে নন-এ ও নন-বি হেপাটাইটিস প্যানেলের নমুনায় ভাইরাসটির অস্তিত্ব যাচাই করে অলটার এই ভাইরাস নিশ্চিত করেন। ১৯৮৯ সালে এইচসিভি এর আবিষ্কার “বিজ্ঞান” সাময়িকী’র দু’টি নিবন্ধে প্রকাশিত হয়।[৪৮][৪৯] এএই আবিষ্কারের ফলে রোগনির্ণয় ও ভাইরাস বিরোধী উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব হয়।[৪৭] ২০০০ সালে ডক্টরান্ডাস অলটার ও হটনকে “হেপাটাইটিস সি সৃষ্টিকারী ভাইরাস আবিষ্কারে পথ প্রদর্শন ও যুক্তরাস্ট্রে রক্ত সঞ্চালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হেপাটাইটিসের ঝুঁকি ১৯৭০ সালের ৩০% থেকে কমিয়ে ২০০০ সালে দৃশ্যত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরীক্ষা পদ্ধতি বের করার জন্য লস্কর অ্যাওয়ার্ড ফর ক্লিনিক্যাল মেডিকেল রিসার্চ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।”[৫০]

কাইরন ভাইরাস ও এ থেকে সৃষ্ট রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি পেটেন্ট এর জন্য আবেদন করে।[৫১] কাইরন সিডিসি-কে ১.৯ মিলিয়ন ও ব্রাডলিকে ৩৩৭,৫০০ ডলার পরিশোধ করার পর ১৯৯০ সালে সিডিসি পাল্টা প্যাটেন্ট এর আবেদন তুলে নেয়। ১৯৯৪ সালে ব্রাডলি এই প্যাটেন্ট এর অকার্যকরিতা, নিজেকে সহ-উদ্ভাবক হিসাবে অন্তর্ভুক্ত, ক্ষতি পূরণ ও আয়ের রয়্যালটি দাবি করে কাইরন এর বিরুদ্ধে মামলা করে । ১৯৯৮ সালে আপীল আদালতে পরাজয়ের পূর্বে সে মামলা তুলে নেয়।[৫২]

Remove ads

সমাজ ও সংস্কৃতি

বিশ্ব হেপাটাইটিস জোট প্রতি বছর ২৮শে জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আয়োজন করে থাকে।[৫৩] হেপাটাইটিস সি-এর অর্থনৈতিক ব্যয় ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাস্ট্রে ২০০৩ সালে এই রোগের আনুমানিক জীবনব্যাপী ব্যয় ৩৩,৪০৭ মার্কিন ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছ,[৫৪] যেখানে ২০১১ সালে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের আনুমানিক ব্যয় ছিল ২০০,০০০ মার্কিন ডলার।[৫৫] কানাডায় ২০০৩ সালে ভাইরাস বিরোধী চিকিৎসার একটি কোর্সের ব্যয় ছিল ৩০,০০০ কানাডীয় ডলার,[৫৬] আর যুক্তরাস্ট্রে ১৯৯৮ সালে তা ছিল ৯,২০০ থেকে ১৭,৬০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে।[৫৪] বিশ্বের অনেক স্থানেই মানুষ বিমার আওতায় না থাকায় বা তাদের বিমা এ ধরনের চিকিৎসার ব্যয় বহন না করায় ভাইরাস বিরোধী চিকিৎসার ব্যয় বহনে সক্ষম নয়।[৫৭]

গবেষণা

২০১১ সাল পর্যন্ত হেপাটাইটিস সি-এর জন্য প্রায় ১০০টি ওষুধ উন্নয়নের পর্যায়ে ছিল।[৫৫] এসব ঔষধের মধ্যে রয়েছে হেপাটাইটিস চিকিৎসায় টিকা, ইমিউনোমডিউলেটর ও সিসলোফিলিন ইনহিবিটর।[৫৮] হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের ব্যাপারে জ্ঞান বৃদ্ধির ফলেই এসব সম্ভাবনাময় নতুন চিকিৎসার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।[৫৯]

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads