শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ
বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে গিয়ে শেষ হয়। এই দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। সরকারী হিসেব অনুসারে ২৭,৫০০[১] মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। বেসরকারি হিসেবে অনুমানিক ১,০০,০০০[২] থেকে ৪,৫০,০০০[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] জন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মৃত্যুবরণ করে। এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হিসেবে গন্য করা হয়।[৩]
Remove ads
পটভূমি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়ে। আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন অনুসারে:
গত মার্চ মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তাণ্ডবের পর, বিশ্বব্যাংকের পরিদর্শকদের একটি বিশেষ দল লক্ষ্য করেছিল যে কয়েকটি শহর "পারমাণবিক হামলার পরের দিনের সকালের মতো" দেখাচ্ছিল। তারপর থেকে, এই ধ্বংসাত্মকতা কেবলমাত্র আরও বেড়েছে। আনুমানিক ৬,০,০০,০০০ বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে এবং প্রায় ১৪,০০,০০০ কৃষক পরিবার তাদের জমিগুলিতে কাজ করার জন্য সরঞ্জাম বা পশু-পাখি নেয়া ছাড়াই চলে গেছে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যাহত। রাস্তাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেতুগুলি ভেঙে গেছে এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলি অবরুদ্ধ রয়েছে। এক মাস আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ না হওয়া পর্যন্ত এই দেশ ধর্ষণ অব্যাহত ছিল। যুদ্ধের শেষ দিনগুলিতে, পশ্চিম পাকিস্তানিদের মালিকানাধীন ব্যবসায়গুলি - যার মধ্যে প্রায় প্রতিটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল - কার্যত তাদের সমস্ত তহবিল পশ্চিমে জমা করেছে। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স চট্টগ্রাম বন্দর নগরীতে তার অ্যাকাউন্টে ঠিক ১১৭ রুপি (১৬ ডলার) রেখে যায়। সেনাবাহিনী ব্যাংক নোট এবং মুদ্রাও ধ্বংস করে দিয়েছে, যেন অনেক অঞ্চল এখন নগদ টাকার মারাত্মক ঘাটতির মধ্যে পড়ে। বন্দরগুলি বন্ধ হওয়ার আগেই ব্যক্তিগত গাড়িগুলি রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বা অটো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং পশ্চিম দিকে পাঠানো হয়েছিল।
— "BANGLADESH: Mujib's Road from Prison to Power" [বাংলাদেশ: মুজিবের কারাগার থেকে ক্ষমতায় আসার পথ], টাইম, ১৭ জানুয়ারি ১৯৭২
সেই দশকের শুরুতে সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ৭৪-এর মার্চ মাস থেকে দেখা দেয়। এই মাসের রংপুর অঞ্চলে প্রথম মন্দা দেখা দেয় এবং এই অঞ্চল ছিল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিন অঞ্চলের একটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র দুই বছর তিন মাসের মাথায় এটি ঘটে। সে সময় বাংলাদেশের মত একটি নতুন রাষ্ট্র তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ও বাজার নিয়ে এটি সামাল দেয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নব্য নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাগণ ব্যাপক দুর্নীতিপ্রবণ। যদিও এপ্রিল মাসে সরকারের লোকেরা বলতে থাকেন যে, এই দুর্যোগ বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল এবং দুর্ভিক্ষ আরও ব্যাপকতা লাভ করছিল। এপ্রিল থেকে জুলাই এই সময়টাতে সেসময় বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং ব্রহ্মপুত্র নদীতে বিধ্বংসী বন্যা দেখা দেয়; যা মে, জুলাইয়ের দিকে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এর ফলে ধানক্ষেত ধ্বংস হয়ে যায় এবং চালের দাম অসম্ভবভাবে বেড়ে যায়। অপরদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। অক্টোবর মাসে চালের দাম একদম শিখরে পৌছায়। তবে নভেম্বর মাসে বিদেশি সাহায্য ও রবি শস্য বাজারে আসার ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্ভিক্ষ শেষ হয়, যদিও বেশিরভাগ দুর্ভিক্ষের মতোই, "অতিরিক্ত" মৃত্যুহার (উদাহরণস্বরূপ রোগের কারণে) পরের বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অনাহারজনিত কারণে গ্রামাঞ্চলের লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। আঞ্চলিক দুর্ভিক্ষের তীব্রতা বন্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল এবং বন্যা দুর্ভিক্ষকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। দুর্ভিক্ষ হবার সতর্কতা বন্যা হওয়ার অনেক আগে থেকেই দেয়া হলেও, সাধারণত বন্যাকেই দুর্ভিক্ষ হবার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়ে থাকে।
Remove ads
মৃত্যু সংখ্যা
সরকারী হিসেব অনুসারে ২৭,০০০ মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। বেসরকারি হিসেবে অনুমানিক ১,০০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ জন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মৃত্যুবরণ করে। সর্বাধিক বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি ছিল রংপুর, বিশেষত কুড়িগ্রাম জেলা এবং সেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
মোট মৃতের সংখ্যা, যদিও বিভিন্ন পরিসংখ্যানে আলাদা আলাদা এসেছে, এক পণ্ডিত প্রায় ১৫ লাখকে গ্রহণযোগ্য আনুমানিক সংখ্যা হিসেবে ধরেছেন। এই সংখ্যায় দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত আছে। অনাহার একমাত্র কারণ ছিল না, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৃত্যুর কারণ ছিল কলেরা, ম্যালেরিয়া এবং ডাইরিয়ার মত রোগ। বেশিরভাগ দুর্ভিক্ষের মতো, এই দুর্ভিক্ষেও অনাহারজনিত দুর্বলতা, রোগ-সংবেদনশীল পরিস্থিতির কারণে দুর্ভিক্ষ পরবর্তী মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪,৫০,০০০ জন। প্রধানত, দরিদ্র, শ্রমিক এবং ভূমিহীনরা ভয়াবহতার শিকার হন।
অনেক লেখক সন্মত হয়েছেন যে, "সব ধরনের শ্রেণীর মধ্যে মজুরি শ্রমিকরা সর্বোচ্চ মৃত্যুতে পতিত হয়েছেন"। করুণ মৃত্যুর হার "তিন একর বা তার বেশি ভূমি থাকা পরিবারগুলির তুলনায় ভূমিহীন পরিবারগুলির মধ্যে তিনগুণ বেশি ছিল"।পৃ. ১৮
ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে, জন্মের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল।
Remove ads
কারণসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অধিকাংশ দুর্ভিক্ষের মত, বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল বহুবিধ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল বন্যা, দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি, খাদ্যশস্য মজুতের সরকারী অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দূর্নীতি, জেলাগুলির মধ্যে খাদ্যশস্য আনা-নেয়ার সীমাবদ্ধ আইন, প্রতিবেশী দেশগুলিতে খাদ্যশস্য চোরাচালান এবং তথাকথিত বিতরণ ব্যর্থতা। দুর্ভিক্ষ সমস্ত এলাকায় এবং সমস্ত জনসংখ্যার মধ্যে ঘটেনি বরং নির্দিষ্ট এলাকায় ঘটেছে; বিশেষত বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে গবেষণায় বিভিন্ন পণ্ডিতরা দেখতে পেয়েছেন যে ১৯৭৪ সালে গড় খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল 'স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ'। এ কারণে পন্ডিতদের যুক্তি, "১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে, খাদ্যের প্রাপ্যতার উপলব্ধতা দুর্ভিক্ষ নিয়ে যথেষ্ট ব্যাখ্যা দেয় না"।পৃ. ১৪১ তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, খাদ্যের প্রাপ্যতার ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়নি বরং বিতরণ ব্যর্থতার কারণে হয়, তখন একদল "বাজারে খাবারের উপরে আধিপত্য স্থাপন" করেছিল।পৃ. ১৬২
দুটি বিতরণ ব্যর্থতা লক্ষণীয়। প্রথম ব্যর্থতাটি ছিল অভ্যন্তরীণ: বাজার ও রাষ্ট্রে রেশন ব্যবস্থার নির্দিষ্ট রূপরেখার ফলস্বরূপ কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা শস্য মজুদ করে রাখে, ফলস্বরূপ দাম বেড়ে যায়। দ্বিতীয় ব্যর্থতা ছিল বাহ্যিক: যুক্তরাষ্ট্র ২.২ মিলিয়ন টন খাদ্য সহায়তা প্রতিসংহৃত করে রেখেছিল, কারণ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কিউবায় বাংলাদেশের পাট রফতানির নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত খাদ্য সহায়তা দিতে কথা দিতে পারবে না। এবং আমেরিকার চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ যখন কিউবায় পাট রফতানি করা বন্ধ করে, তখন খাদ্য সহায়তা আসতে আসতে তা "দুর্ভিক্ষের জন্য দেরি হয়ে যায়"।
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads