শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

যৌনমিলন (প্রাণিবিজ্ঞান)

প্রজনন প্রক্রিয়া উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

যৌনমিলন (প্রাণিবিজ্ঞান)
Remove ads

প্রাণিবিজ্ঞানে যৌনমিলন হল প্রাণীর এক প্রকার যৌন আচরণ যার মধ্যে পুরুষ প্রাণীটি স্ত্রী প্রাণীর শরীরের ভেতর অর্থাৎ প্রজননতন্ত্রের ভেতর বিশেষ প্রক্রিয়ায় সরাসরি বীর্য প্রবেশ করায়।[][] এটা মিলনেরই একটা রূপ। অনেক প্রাণী যারা জলে বসবাস করে তারা বহিঃনিষেক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে, কিন্তু বিলম্বিত অর্ডোভিসিয়ান অবস্থায় তরল মাধ্যমে জননকোষকে ঠিক রাখার জন্যে অন্তঃনিষেক প্রক্রিয়া বিকশিত হয়। অনেক মেরুদণ্ডী প্রাণী (যেমন- সরীসৃপ, কিছু মাছ এবং অধিকাংশ পাখি) অন্তঃনিষেক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ক্লোয়েকাল মিলনের (আরও দেখুন হেমিপেনিস) মাধ্যমে, যেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণী যোনিপথের মাধ্যমে যৌনমিলন ঘটায় এবং অনেক ব্যাসাল মেরুদণ্ডী প্রাণী বহিঃনিষেক প্রক্রিয়ায় যৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। [][]

নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (তীক্ষ্ণদন্তযুক্ত প্রাণী, কুকুর-জাতীয় প্রাণী, বিড়াল-জাতীয় প্রাণী, গবাদী পশু এবং ঘোড়া-জাতীয় প্রাণী) প্রজনন অঙ্গের শারীরতত্ত্ব এবং স্নায়ুতন্ত্রের কিছু সার্কিট (বর্তনী) বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীদের সাথে যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে নির্মিত হয়। [] অন্যদিকে মানুষের যৌন আচরণ কিছু জৈব (বায়োলজিক্যাল) উপাদান দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয় যা এই স্তন্যপায়ী জীবের যৌনমিলন নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে। []

Remove ads

মাকড়শা এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের মধ্যে

সারাংশ
প্রসঙ্গ

মাকড়শা এবং বিভিন্ন কীট-পতঙ্গের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু এরা (মাকড়সা) সাধারণ কীট-পতঙ্গ নয়, বরং এরা অ্যারাকনিডা/এরাকনিডা শ্রেণীর প্রাণী। [][] মাকড়সার মধ্যে পৃথক পুরুষ এবং স্ত্রী প্রাণী আছে। একত্রিত হওয়া এবং যৌনমিলনের পূর্বে পুরুষ মাকড়সা একটি ছোট জাল বুনে এবং এর মধ্যে বীর্যস্খলন ঘটায়। এরপর সে তার বৃহৎ পেডিপাল্প এর আধারে বীর্য সংরক্ষণ করে এবং যার থেকে স্ত্রী প্রাণীর যৌনাঙ্গে বীর্য স্থানান্তর করে। স্ত্রী প্রাণী অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে এই বীর্য সংরক্ষণ করতে পারে। []

উঁচুস্তরের কীট-পতঙ্গে পুরুষ প্রাণী কোন স্তরের উপর অথবা মাঝে মাঝে কোন কাঠামোর মধ্যে শুক্রানু জমা রাখে এবং কোর্টশিপের মাধ্যমে মিলন ছাড়াই স্ত্রী প্রাণী তাদের যৌনাঙ্গের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে বীর্যের থলে নিয়ে নিতে পারে, আর এজন্যে এখানে প্রকৃত যৌনমিলন ঘটে না। [১০][১১] ফড়িং গোত্রীয় প্রাণীদের প্রজননের ধরনের সাথে মাকড়সার মিল রয়েছে, এদের পুরুষ প্রাণী এক ধরনের সেকেণ্ডারি (মাধ্যমিক) থলে জাতীয় কাঠামোতে বীর্যস্খলিত করে এবং স্ত্রী প্রাণীর মধ্যে প্রবেশ করানোর জন্য জননছিদ্র দিয়ে বের করে দেয়। ফড়িং গোত্রীয় প্রাণীতে এটা উদরের দ্বিতীয় অংশে (segment) অবস্থিত একটা স্টারনাইটের সেট। [১২] আরও উঁচুস্তরের কীট-পতঙ্গে পুরুষ প্রাণী এদের উদরের প্রান্তীয় অংশ থেকে সৃষ্ট উপাঙ্গগুলো স্ত্রী প্রাণীর জননতন্ত্রে সরাসরি বীর্য (যদিও অনেকসময় ক্যাপসুলে আবদ্ধ থাকে যা স্পার্মাটোফোর নামে পরিচিত) জমা করার কাজে ব্যবহৃত হয়। [১৩]

Remove ads

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে

সারাংশ
প্রসঙ্গ

নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে

কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় যে, নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্রের গঠন বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীদের সাথে যৌনমিলনের জন্যে বিশেষভাবে নকশা করা থাকে।[১৪] সহজভাবে বলা যায়, তিনটি প্রধান স্বয়ংক্রিয় এবং স্থায়ী জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) সার্কিট রয়েছে যেগুলো হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়: ক) অলফ্যাক্টরি সার্কিট (লাল তীর চিহ্ন, নিচের চিত্রে) যা যৌন উত্তেজনা এবং যৌন অনুভূতির জন্যে দায়ী; খ) সেক্সুয়াল (যৌন) রিফ্লেক্স (প্রতিবর্তী ক্রিয়া) এর সার্কিট (লর্ডোসিস বা যৌন মিলনের সময় শরীরের বাঁকানো অবস্থান, ইরেকশন, বীর্যস্খলন......কমলা তীর চিহ্ন) যা যৌন মিলন ঘটায়; গ) সেক্সুয়াল (যৌন) রিওয়ার্ড এর সার্কিট (রিওয়ার্ডতন্ত্র শিশ্ন/ভগাঙ্কুরের সাথে যুক্ত (বিশেষত যৌন প্ররোচনা)। [১৫]

Thumb
নিচুস্তরের স্তন্যপায়ী স্ত্রীপ্রাণীর জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) সার্কিটের সরলিকৃত চিত্র যা এদের প্রজনন আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। সহজভাবে বলা যায় যে বিভিন্ন হরমোন এই সহজাত বা প্রাকৃতিক সার্কিটগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এরা ফোরেমনকে সনাক্ত করে [১৬] এবং এদের ক্ষরণ চালু করার মাধ্যমে লর্ডসিস রিফ্লেক্সকে (যৌন মিলনের সময় শরীরের বাঁকানো অবস্থান) ত্বরান্বিত করে। [১৭] অলফ্যাক্টরি সার্কিটগুলো (২-লাল তীর চিহ্ন) পুরুষ প্রাণীর (১) ফোরেমনকে সনাক্ত করে এবং পরিচালিত করে। তারা হিপ্পোক্যাম্পারের নিউরোজেনেসিসকে [১৮] (স্নায়বিক কোষের বৃদ্ধি এবং উন্নতিকরণ) উদ্দীপিত করার মাধ্যমে স্ত্রীপ্রাণীর যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং হাইপোথ্যালামাসের মাধ্যমে লর্ডসিস রিফ্লেক্সকে সহজতর করে তোলে। [১৯] পুরুষ প্রাণীর আরোহণ স্ত্রীপ্রাণীর (৩) পশ্চাদ্দেশকে উদ্দীপিত করে যা এদের লর্ডসিস রিফ্লেক্সকে (৪-কমলা তীর চিহ্ন) ত্বরান্বিত করে।[১৭] স্ত্রীপ্রাণী পশ্চাদ্দেশকে বাঁকানোর মাধ্যমে যোনিকে পুরুষ (৫) প্রাণীর কাছে উপস্থাপন করে। এই অবস্থানে ভগাঙ্কুরের সংবেদনশীলতা (৬) কিছু প্রজাতির (এবং সকল পূর্বপুরুষের প্রজাতিতে [২০]) ডিম্বস্ফোটনকে ত্বরান্বিত করে; যা রিওয়ার্ড সিস্টেমকে (৭-কমলা তীর চিহ্ন) চালু করার মাধ্যমে যৌন প্ররোচনা শেখা [২১] এবং যৌন সঙ্গীর কাছাকাছি (সংযুক্ততা) থাকতে উৎসাহিত করে। [২২]

নির্দিষ্টভাবে স্ত্রী প্রাণীদের মধ্যে লর্ডসিসের মোটর সেক্সুয়াল রিফ্লেক্সসহ (যৌন প্রতিবর্তী ক্রিয়া) আরও কিছু জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) পদ্ধতির মাধ্যমে যৌন মিলন নিয়ন্ত্রিত হয় [১৭] (নিচের চিত্রে দেখুন)।

Thumb
লর্ডসিস রিফ্লেক্সের কিছু জৈবস্নায়বিক (নিউরোবায়োলজিক্যাল) সার্কিটের সরলীকৃত চিত্র যা স্তন্যপায়ী স্ত্রী প্রাণীর জন্যে নির্দিষ্ট এবং যৌনমিলনের অনুভূতি বোঝার জন্যে অপরিহার্য। এই জটিল মোটর সেক্সুয়াল রিফ্লেক্স (যৌন প্রতিবর্তী ক্রিয়া) স্পাইনাল কর্ডে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়ে অগ্রমস্তিষ্ক থেকে অন্তর্মুখী সংকেত গ্রহণ করে। [১৫][১৭][২৩] এদের ক্যাপশন বা শিরোনামগুলো হল: a) মধ্যবর্তী প্রিওপটিক নিউক্লিয়াস; b) অগ্রবর্তী হাইপোথ্যালামাসের নিউক্লিয়াস; c) ভেন্ট্রোমেডিয়াল হাইপোথ্যালামাসের নিউক্লিয়াস; d) মস্তিষ্কের রেটিকুলার (জালিকাময়) গঠন; e) ভেস্টবুলো স্পাইনাল ট্র্যাক্ট; f) রেটিকুলো (জালিকাময়) স্পাইনাল ট্র্যাক্ট; g) ডর্সাল (পৃষ্ঠদেশীয়) রুটস বা রাস্তাসমূহ যেমন-L1, L2, L5, L6 এবং S1. বিশেষ দ্রষ্টব্য: স্নায়বিক সার্কিট দ্বিপার্শীয়। স্পষ্টভাবে বোঝার জন্যে এই চিত্রটি সরল করা হয়েছে।

সহজভাবে বলা যায়, স্ত্রী প্রাণী লর্ডসিস ছাড়া অন্যকোন যৌন কার্যক্রমে তেমন অংশ নেয় না।

পুরুষ প্রাণীতে যৌনমিলনের অনুভূতি আরও জটিল কারণ এদের ক্ষেত্রে কিছু শিক্ষাগ্রহণ করা জরুরী। তাসত্ত্বেও প্রকৃতিজাত পদ্ধতিগুলো (যোনিতে শিশ্ন প্রবেশের সময় বিপরীতমুখী নিয়ন্ত্রণ, পেলভিস বা শ্রোণীর ছন্দময় নড়াচড়া, স্ত্রী প্রাণীর ফোরেমন সনাক্তকরণ.....) যৌনমিলনের জন্যে নির্দিষ্ট। [২৪]

যদিও এই প্রক্রিয়ায় এভাবে হরমোন, ফোরেমন এবং সেক্সুয়াল রিফ্লেক্সের সমন্বয় হয়ে থাকে, তবুও নিচুস্তরের প্রাণীতে এটাই প্রকৃত যৌন আচরণ।

হোমিনিডে যৌনমিলন নিয়ন্ত্রণের বিবর্তন

Thumb
প্রধান জৈবস্নায়বিক উপাদানগুলোর বিবর্তন যেগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণীদের যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। [১৫]

অত্যন্ত উন্নত মস্তিষ্কযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (শিম্পাঞ্জি, বনোবো, ওরাংওটাং, ডলফিন) ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক-সম্পর্কিত (cerebral) অঙ্গগুলোর গঠনও উন্নত হয়। এইসব উদ্ভূত পার্থক্যের ফলস্বরূপ মানুষের যৌনমিলন (সহবাস) অন্য ধরনের জৈবস্নায়বিক নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করেঃ []

  • হোমিনিডায়ে স্ত্রী লর্ডসিসের আচরণ সেকেণ্ডারি বা মাধ্যমিক হয়ে থাকে এবং মানুষের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। [২৫] যৌন উদ্দীপনা পশ্চাদ্দেশকে নিশ্চল করতে বা উত্তোলিত করে বাঁকাতে ত্বরান্বিত করে না। যখন কোন স্ত্রী মেঝেতে উপুড় হয়ে থাকে এবং তার পশ্চাদ্দেশকে বাঁকাইয় এবং স্থির রাখে, তখন এটা যৌন উদ্দীপক দ্বারা প্রতিফলিত (রিফ্লেক্স) গতিবিধিকে আর নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং এটাকে ঐচ্ছিক গতিবিধি (নড়াচড়া) বলা যেতে পারে। [১৫]
  • ফোরেমন সেকেণ্ডারি বা মাধ্যমিক হয়ে থাকে। ৯০% যৌন ফোরেমনের রিসিপ্টর জিনগুলি সিউডোজিন হয়ে থাকে,[২৬] এবং ভোমেরোনাসাল অঙ্গগুলো (অর্গান) পরিবর্তিত হতে পারে। [২৭]
  • বিশেষ করে বোবোন (pan paniscus) [২৮] এবং মানুষের যৌন কার্যক্রমগুলো ক্রমান্বয়ে হরমোনের হরমোনের চক্রগুলো [২৫] থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
  • যৌনশিক্ষা যৌন রিওয়ার্ড এবং রিওয়ার্ড সিস্টেম দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং হোমিনিডের ক্ষেত্রে অনেক বড় ফ্যাক্টর (ব্যাপার) হয়ে থাকে। [১৪][২৯]
  • হোমিনিডের কর্টেক্সের (বহি:আবরণ) ক্রমবিকাশ জটিল শিক্ষা ক্ষমতার ক্রমোন্নতি ঘটায় যা মানব প্রজাতির সভ্যতা চর্চার উন্নতি ঘটায় [৩০]

এভাবে হোমিনিডের যৌনমিলন কার্যক্রম সম্পর্কিত আচরণ কিছু উপায়ে বিশেষায়িত হয়ে থাকে: প্রজনন সংক্রান্ত আচরণ সাধারণত যৌন আচরণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। [] মানুষের মধ্যে যোনিপথে যৌনমিলন এখনো বহুলভাবে চর্চিত হয়, কিন্তু এটা রিফ্লেক্স মোটরের কোন কার্যক্রম নয় বরং হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ফোরেমনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটা বরং এক ধরনের যৌন আঐচ্ছিকভাবেচরণ যা অন্যদের মধ্যে সেরেব্রাল রিওয়ার্ড (যৌন প্রমোদ[২৯]) অর্জন করার জন্যে ঐচ্ছিকভাবে সম্পন্ন হয়।[১৫]

Remove ads

আরও পড়ুন

Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads