শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

গণতন্ত্র

শাসনব্যবস্থা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

গণতন্ত্র
Remove ads

গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতা থাকে জনগণের হাতে। সহজভাবে বললে, গণতন্ত্রে নেতারা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে, গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনই নয়, এতে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তাও থাকে।

Thumb
২০০৭ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে একজন নারী ভোট দিচ্ছেন
Thumb
চিত্রে গণতন্ত্রের চারটি রূপ রাষ্ট্রভেদে দেখানো হলো: পূর্ণ গণতন্ত্র (Full democracies), পরিচালিত গণতন্ত্র (Followed democracies), সংকর শাসনতন্ত্র (Hybrid regs) ও কর্তৃত্ববাদী শাসনতন্ত্র (Authoritarian regimes)।
গণতন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভিডিও (সাবটাইটেল উপলব্ধ)

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণ নিজেরা সরাসরি আইন তৈরি করে। আর প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি বেছে নেয়, যারা তাদের হয়ে শাসন পরিচালনা করে। কে এই "জনগণ" আর কীভাবে তাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করা হয়, তা সময়ের সঙ্গে আর দেশভেদে ভিন্নভাবে বদলেছে। গণতন্ত্রে সাধারণত থাকে সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, ধর্ম ও বাকস্বাধীনতা, নাগরিকত্ব, শাসিতদের সম্মতি, ভোটের অধিকার, জীবন ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার।

গণতন্ত্রের ধারণা সময়ের সঙ্গে অনেক বদলেছে। ইতিহাসে দেখা যায়, কিছু সম্প্রদায় জনসভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিত। আজকাল গণতন্ত্রের প্রধান রূপ হলো প্রতিনিধিত্বমূলক, যেখানে নাগরিকরা ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে, যেমন সংসদীয় বা রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায়। উদার গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতা থাকে, তবে সংবিধান আর সুপ্রিম কোর্ট সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে, যেমন বাকস্বাধীনতা বা সংগঠনের অধিকার।

খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে গ্রিসের নগর-রাষ্ট্রে, বিশেষ করে এথেন্সে, "গণতন্ত্র" শব্দটি এসেছিল, যার অর্থ "জনগণের শাসন", অভিজাততন্ত্রের বিপরীতে, যার মানে "অভিজাতদের শাসন"। প্রাচীন ও আধুনিক ইতিহাসে গণতান্ত্রিক নাগরিকত্ব প্রথমে শুধু অভিজাতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, পরে ১৯শ ও ২০শ শতকের ভোটাধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য প্রসারিত হয়।

গণতন্ত্র এমন শাসনব্যবস্থার বিপরীত, যেখানে ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে না, যেমন স্বৈরাচারী ব্যবস্থা। ইতিহাসে গণতন্ত্র ছিল বিরল এবং ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু ১৯শ শতক থেকে গণতন্ত্রের বিভিন্ন তরঙ্গে এটি বেশি প্রচলিত হয়েছে। আজকাল গণতন্ত্র বেশ জনপ্রিয়, কারণ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এটিকে অন্য ব্যবস্থার চেয়ে বেশি পছন্দ করে। এমনকি স্বৈরাচারী দেশগুলোও নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে। তবে, ভি-ডেম এবং ইকোনমিস্টের গণতন্ত্র সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধেকেরও কম মানুষ গণতন্ত্রে বাস করে।

Remove ads

বৈশিষ্ট্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

গণতন্ত্র মানে এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণই ক্ষমতার মালিক। সাধারণভাবে বললে, গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের নেতা বেছে নেয়। কিন্তু এর সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে সবাই একমত নয়। দার্শনিক কার্ল পপার বলেছেন, গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন, আর জনগণের শাসন করার অধিকার আছে। ইংরেজিতে গণতন্ত্রকে বর্ণনা করতে ২,২৩৪টির মতো বিশেষণ ব্যবহার হয়েছে!

গণতন্ত্রে সব যোগ্য নাগরিক আইনের কাছে সমান, আর তাদের আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় সমান সুযোগ থাকে। যেমন, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে প্রত্যেকের ভোটের মূল্য একই। নাগরিকদের অধিকার, যেমন বাকস্বাধীনতা, সাধারণত সংবিধানে লেখা থাকে। আবার, কখনো গণতন্ত্র মানে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রও হতে পারে, যেখানে মানুষ সরাসরি বিষয়ের ওপর ভোট দেয়। জাতিসংঘ বলে, গণতন্ত্র এমন এক পরিবেশ দেয় যেখানে মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান থাকে, আর মানুষ তাদের ইচ্ছা অবাধে প্রকাশ করতে পারে।

একটা তত্ত্ব বলে, গণতন্ত্রের জন্য তিনটি জিনিস দরকার: জনগণের হাতে ক্ষমতা, রাজনৈতিক সমতা, আর এমন সামাজিক রীতি যা এই দুটোকে মানে। আইনের সামনে সমতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর আইনের শাসন গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বলে মনে করা হয়।

কিছু দেশে, যেমন যুক্তরাজ্যে, সংসদের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি, তবে বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকে। ভারতে সংসদের ক্ষমতা সংবিধানের অধীন, যেখানে বিচারিক পর্যালোচনা আছে। গণতন্ত্র শব্দটা সাধারণত রাষ্ট্রের জন্য ব্যবহৃত হলেও, এর নীতি ক্লাব, সংগঠন বা কোম্পানির মতো জায়গাতেও ব্যবহার করা যায়।

গণতন্ত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনেক উপায় থাকতে পারে, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই সবচেয়ে বেশি চলে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা না হলে, তারা "সংখ্যাগরিষ্ঠের জুলুমের" শিকার হতে পারে। তাই নির্বাচন ও আলোচনা ন্যায্য হতে হবে। কিছু দেশে বাকস্বাধীনতা, রাজনৈতিক প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভোটাররা নিজেদের ইচ্ছা ও বিশ্বাস অনুযায়ী ভোট দিতে পারে।

গণতন্ত্রের আরেকটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো, সব ভোটার সমাজের জীবনে অবাধে অংশ নিতে পারে। সামাজিক চুক্তি ও সবার সম্মিলিত ইচ্ছার ওপর জোর দিয়ে, গণতন্ত্রকে এক ধরনের সমষ্টিগত শাসনও বলা যায়, কারণ এখানে সব যোগ্য নাগরিকের আইন তৈরিতে সমান অধিকার থাকে।

প্রজাতন্ত্র প্রায়ই গণতন্ত্রের সঙ্গে মিলে যায়, কারণ দুটোতেই জনগণের সম্মতিতে শাসন চলে। তবে প্রজাতন্ত্র মানেই গণতন্ত্র নয়, কারণ প্রজাতন্ত্রে জনগণ কীভাবে শাসন করবে তা বলা থাকে না। আগে "প্রজাতন্ত্র" বলতে গণতন্ত্র আর অভিজাততন্ত্র দুটোই বোঝানো হতো। এখন প্রজাতন্ত্র মানে এমন শাসন যেখানে রাজা নেই। তাই গণতন্ত্র হতে পারে প্রজাতন্ত্র বা সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেমন যুক্তরাজ্য।

Remove ads

ব্যুৎপত্তি

বাংলা "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি ইংরেজি ডেমোক্রেসি (Democracy) থেকে এসেছে। এই ইংরেজি শব্দটি আবার এসেছে গ্রিক শব্দ δημοκρατία (দেমোক্রাতিয়া) থেকে, যার অর্থ "জনগণের শাসন"[] শব্দটির দুইটি মূল হচ্ছে δῆμος (দেমোস) "জনগণ" ও κράτος (ক্রাতোস) "ক্ষমতা" থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে অ্যাথেন্স ও অন্যান্য গ্রিক নগররাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ক্লিসথেনিসের নতুন ধরনের সরকার চালু হয় এবং সেই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম গণতন্ত্র সৃষ্টি হয় গ্রিসের ছোট একটি শহর-রাষ্ট্র এথেন্সে। এই শহর-রাষ্ট্রটি ছিলো এথেন্স শহর এবং তার আশপাশের গ্রামাঞ্চল নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপজাতির মধ্য থেকে নেতাদের বেছে নেয়ার যে সনাতনী রীতি চালু ছিলো, ক্লিসথেনিস তার অবসান ঘটান। তার বদলে তিনি মানুষের নতুন জোট তৈরি করেন এবং প্রতিটি জোটকে ডিময় (Demoi) অথবা প্যারিশ (Parish)- এ বিভক্ত করেন। প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেয়া হয়। সাধারণভাবে এই ঘটনাকেই গণতন্ত্রের প্রথম উন্মেষরূপে গণ্য করা হয় যার পরে নাম হয় ডেমক্রেশিয়া (Democratia) যার অর্থ হচ্ছে জনগণের (demos) শক্তি (Kratos)।

Remove ads

সংজ্ঞা

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪২২ সালে ক্লিয়ান ডেমোক্রেসিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- That shall be the democratic which shall be the people, for the people. অনেক পরে আব্রাহাম লিঙ্কন তার এক ভাসনের মধ্যে ঠিক এমনই এক জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করেন। আব্রাহাম লিংকন (Abraham Lincoln) November 19, 1863 তারিখে তার দেয়া Pennsylvania state এর গেটিসবার্গ বক্তৃতাতে (Gettysburg Address) গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এভাবে 'Government of the people, by the people, for the people.' যার অর্থ হলো-গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। অধ্যাপক গেটেলের মতে,' যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী তাই গণতন্ত্র। [] []

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads