Loading AI tools
মেয়েদের ঋতুস্রাবকালীন ছুটি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঋতুস্রাব অবকাশ হল এক ধরনের ছুটি, যেখানে একজন মহিলা তাঁর চাকরি থেকে সবেতন বা অবৈতনিক ছুটি নিতে পারেন, যদি তাঁর ঋতুস্রাব বা রজঃস্রাব হয় এবং এর কারণে তিনি কাজে যেতে অক্ষম হন।[১][২] এর ইতিহাস জুড়ে, ঋতুস্রাব ছুটি নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে এবং এটি পুরুষদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বলা হয়েছে। খুব কম দেশই এই নীতি প্রণয়ন করেছে; যেসব দেশে এই নীতি প্রণয়ন করার হয়েছে, সেখানেও একে কাজে লাগিয়েছেন খুব কম জন।[১] একে কেউ কেউ নারীর কর্মদক্ষতার সমালোচনা বা পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌনতা[৩][৪][৫] হিসেবে দেখেন। ঋতুস্রাব ছুটি নীতির সমর্থকরা এর কার্যকারিতা মাতৃত্বকালীন ছুটির সাথে তুলনা করেন এবং এটিকে লিঙ্গ সমতার প্রবর্তক হিসাবে দেখেন।[৬]
কিছু মহিলা ডিসমেনোরিয়া নামক একটি অবস্থার সম্মুখীন হন যার ফলে রজঃস্রাবের সময় ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়।[৭] ৯০% পর্যন্ত মহিলা ঋতুস্রাবের সময় দৈনন্দিন কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটার মতো যথেষ্ট সমস্যা অনুভব করেন না, যদিও তাঁরা ঋতুস্রাবের আগে কিছু সমস্যা থাকার অভিযোগ করতে পারেন। ২০ থেকে ৩০% মহিলার মধ্যে রজঃস্রাবের পূর্বের লক্ষণ দেখা যায়, যেগুলি স্বাভাবিক জীবনে হস্তক্ষেপ করে। এর ৩ থেকে ৮% এর মধ্যে লক্ষণগুলি গুরুতর হয়।[৮] রজঃস্রাবের পূর্বের ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (পিএমডিডি) হল রজঃস্রাবের পূর্বের লক্ষণের একটি গুরুতর রূপ, যা ১.৮ - ৫.৮% রজঃস্রাবী মহিলাকে অক্ষম করার মতো মাত্রায় প্রভাবিত করে।[৯]
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার কিছু চাকরির ক্ষেত্রে একটি ঋতুস্রাব অবকাশ নীতি প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল; কিন্তু এর ফলে নারী কর্মীদের প্রতি হওয়া বৈষম্যের কারণে, নীতিটি ১৯২৭ সালে তুলে নেওয়া হয়েছিল।[১]
দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রায় ১৯১২ সালের মতো সময়ে ছাত্রীদের জন্য ঋতুস্রাব অবকাশ মঞ্জুর করেছিল[১০]
১৯২০-এর দশকে, জাপানি শ্রমিক সংগঠনগুলি তাদের মহিলা শ্রমিকদের জন্য ছুটির (সেইরি কিউকা) দাবি করতে শুরু করে। ১৯৪৭ সালে, জাপানি শ্রমিক মানদণ্ড দ্বারা একটি আইন কার্যকর করা হয়েছিল যার ফলে ঋতুমতী মহিলারা কাজ থেকে ছুটি নিতে পারতেন। এটি একটি চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তা বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।[১১][১২][১৩]
ঋতুস্রাব অবকাশ নিয়ে কিছু খারাপ অনুভূতি আছে; লেভিট এবং বারনাক-টাভলারিসের (২০২০) মতে, এটি গতানুগতিক ব্যাপারগুলিকে স্থায়ী করতে পারে এবং ঋতুস্রাবের চিকিৎসাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।[২] ছুটি নেওয়ার জন্য পুরুষ ম্যানেজারদের এমন কিছু বলার প্রয়োজন হতে পারে যা মহিলারা তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যা বলে বিশ্বাস করেন। এটি নারীকে পুরুষের তুলনায় কম সক্ষম হিসাবে অঙ্কিত করতে পারে এবং তাই নারীদের প্রতি আরও বৈষম্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। খারাপ অনুভূতি দূর করার জন্য একটি পরামর্শ হল সব লিঙ্গের মানুষের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসা ছুটি প্রদান করা।[১৪]
ইন্দোনেশিয়ায়, ২০০৩ সালের শ্রম আইন নং ১৩ এর অধীনে, মহিলাদের প্রতি মাসে দুই দিনের ঋতুস্রাব ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে যদিও এটি অতিরিক্ত ছুটি নয়।[১৫]
জাপানে, ১৯৪৭ সাল থেকে, শ্রমিক মানদণ্ড আইনের ৬৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে "যখন একজন মহিলা ছুটির জন্য অনুরোধ করেছেন, যাঁর কাছে ঋতুস্রাবের সময় কাজ করা বিশেষভাবে কঠিন হয়ে পড়েছে, নিয়োগকর্তা সেই দিনগুলিতে এই ধরনের মহিলাকে নিয়োগ করবেন না।"[১৬][১৭] যদিও জাপানের আইনে, বিশেষ রূপে কষ্টকর ঋতুস্রাবের মধ্য দিয়ে যাওয়া একজন মহিলাকে ছুটি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া আছে, তবে কোম্পানিগুলিকে ঋতুস্রাবের সময় যাঁরা কাজ করেন সেই মহিলাদের জন্য সবেতন ছুটি বা অতিরিক্ত বেতন দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
দক্ষিণ কোরিয়ায়, মহিলা কর্মচারীরা শ্রমিক মানদণ্ড আইনের ৭১ অনুচ্ছেদ অনুসারে ঋতুস্রাবের ছুটি পাওয়ার অধিকারী,[১৮] এবং যদি তাঁরা ঋতুস্রাব ছুটি না নেন তবে তাঁদের অতিরিক্ত বেতন নিশ্চিত করা হয়।[১৯]
তাইওয়ানে, কর্মসংস্থানে লিঙ্গ সমতা আইন[২০] মহিলাদের প্রতি বছরে তিন দিনের "ঋতুস্রাব অবকাশ" দেয়, যাকে ৩০ দিনের "সাধারণ অসুস্থ ছুটি"র জন্য গণনা করা হবে না, এর ফলে মহিলারা বছরে ৩৩ দিন পর্যন্ত "স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় অবকাশ" পেতে পারেন। একজন মহিলা কর্মচারী নিয়ন্ত্রিত ৩০ দিন ছাড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত তিন দিন অর্ধ-বেতনের মধ্যে পড়বেন না।[২১]
ইউরোপে, ২০২৩ সালের হিসাবে, স্পেনে একটি জাতীয় ঋতুস্রাব অবকাশ দেওয়া হয়।[১][২২] ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে, স্পেন প্রতি মাসে তিন থেকে পাঁচ দিনের সবেতন ঋতুস্রাব অবকাশ প্রদান করেছে।[২২]
২০১৭ সালে, ইতালীয় পার্লামেন্টে ঋতুস্রাব অবকাশ নীতি প্রবর্তনের একটি প্রস্তাবে ইউরোপে বিতর্কের জন্ম দেয় যে কিভাবে শ্রমশক্তিতে মহিলাদের উপর ঋতুস্রাব স্বাস্থ্যের প্রভাব পড়ে। এই বিলে কোম্পানিগুলির জন্য একটি নীতি চালু করার কথা ছিল- যে মহিলারা গুরুতর ঋতুস্রাবের সমস্যায় ভোগেন তাঁদের জন্য তিন দিনের সবেতন ছুটি দেওয়া; কিন্তু নীতিটি প্রণীত হয়নি।[১]
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, জাম্বিয়াতে, সেখানকার ঋতুস্রাব অবকাশ নীতির কারণে মহিলারা আইনত প্রতি মাসে একটি দিনের ছুটি পাওয়ার অধিকারী, এটি "মা দিবস" নামে পরিচিত।[২৩] যদি একজন মহিলা কর্মচারী এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হন তবে তিনি নিজের নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বিচার চাইতে পারেন।
ব্রিস্টল সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংস্থা, কোএক্সিস্ট, মহিলাদের আরও নমনীয়তা এবং স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ দেওয়ার জন্য একটি "ঋতুস্রাব নীতি" চালু করেছে। ঋতুস্রাব সম্বন্ধে নিষিদ্ধ ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার প্রত্যাশী কোএক্সিস্ট, এই নীতি বাস্তবায়নকারী যুক্তরাজ্যের প্রথম কোম্পানি হয়ে উঠেছে।[২৪]
নাইকি যেখানেই কাজ করে সেখানেই ঋতুস্রাব অবকাশকে সমর্থন করে বলে ব্যাপকভাবে প্রতিবেদন করা হয়েছে, কিন্তু গণমাধ্যমে এই নীতি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে; নাইকি যেখানে কাজ করে, তারা সেখানকার স্থানীয় শ্রম আইন অনুসরণ করে।[১]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.