Loading AI tools
ভারতীয় পরিসংখ্যানবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অশোক মিত্র (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ - ৯ জুলাই ১৯৯৯) একজন ভারতীয় দক্ষ প্রশাসক, ভারতের প্রথম জনগণনা কমিশনার, সমাজ বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট শিল্প ঐতিহাসিক ও শিল্প সমালোচক।
অশোক মিত্র | |
---|---|
জন্ম | ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯১৭ চাকলাই গ্রাম, হুগলি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ |
মৃত্যু | ৯ জুলাই ১৯৯৯ |
পরিচিতির কারণ | ভারতীয় দক্ষ প্রশাসক, ভারতের প্রথম জনগণনা কমিশনার, সমাজ বিজ্ঞানী, গবেষক, প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট শিল্প ঐতিহাসিক ও শিল্প সমালোচক |
পিতা-মাতা | যোগেশচন্দ্র মিত্র (পিতা)
ঊষামতী দেবী (মাতা) |
অশোক মিত্রের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার চাকলাই গ্রামে। পিতা সাব-ডেপুটি যোগেশচন্দ্র মিত্র। মাতা ঊষামতী দেবী। পিতার বদলির চাকরি হওয়ার তার ছেলেবেলা অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে কেটেছে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান টাউন স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরবর্তী শিক্ষা কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ও অক্সফোর্ডের মর্টন কলেজে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ইণ্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরবর্তী ৯ বছর অবিভক্ত বাংলা ও পরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫০-৫৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের লোকগণনার কাজ পরিচালনা করেন। এ কাজে তার বিশ্লেষণ দক্ষতার ফলে ২৬টি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। উপরন্তু ১৯৫৪-৫৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উন্নয়ন দুর্নীতিরোধ, শিল্প-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, সমবায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও মৎস্য দপ্তরের সচিব হিসাবে কাজ করেছেন। অশোক মিত্র বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের লোকগণনার কাজে Sampling system বা নমুনা ব্যবস্থা বা পদ্ধতি’র সপক্ষে মত ব্যক্ত করেন এবং তিনি দিল্লিতে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম সেন্সাস কমিশনার নিযুক্ত হন এবং দশ বৎসর যথেষ্ট নিপুণতায় সেই পদে আসীন ছিলেন। জাতীয় জীবনের ২৬ দিক নিয়ে অনুসন্ধানে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে মোট ১৪৫০টি রিপোর্ট প্রকাশ সম্পূর্ণ হয়। এরপর ১৯৬৫-৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদে কাজ করে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন রাষ্ট্রপতির সচিব পদ থেকে।
প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭৩-৮২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অব পপুলেশন স্টাডিজ হিসাবে অধ্যাপনা ও গবেষণা পরিচালনা করেন। ১৯৫৮-৬০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের ESCFE, WHO, FAO, UNICEF ও UNESCO সহ বিভিন্ন সংস্থায় নিজ নামে ও ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে নানা অনুসন্ধানের কাজে লিপ্ত ছিলেন। ১৯৬৪-৬৮ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রসংঘের প্রোটিন ও ক্যালোরি গ্রুপের নির্দেশদাতা, ১৯৭৬ - ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের নিউট্রিশন সোসাইটি সভ্য ও প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি দিল্লির সেন্টার ফর উইমেন্স ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর উইমেন্স স্টাডিজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভ্য ছিলেন। স্থায়ীভাবে পরবর্তী সময়ে কলকাতায় ফিরে এসে মাসিক ১ টাকা বেতনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভূমি ব্যবহারের ব্যাপারে সরকারের পরামর্শদাতার দায়িত্ব পালন করেছেন।
অশোক মিত্রের অভিজ্ঞতা একদিক থেকে এই শতাব্দীর ভারতের ইতিহাসের অংশ। গভীর অধ্যবসায়ে সেই মূল্যবান অভিজ্ঞতার দলিল লিখে রেখে গেছেন। 'তিন কুড়ি দশ' পাঁচ খণ্ডে সম্পূর্ণ তার আত্মজীবনীমূলক এক রবীন্দ্র-পুরস্কারপ্রাপ্ত গ্রন্থ। তিনি বিষ্ণু দে, সমর সেন, সুশোভন সরকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এছাড়া যামিনী রায়ের অনুগামী তিনি ছিলেন চিত্রকলা বিষয়ে এশিয়ার প্রথম সারির বিশেষজ্ঞদের অন্যতম। তারই প্রচেষ্টায় রুগ্ন প্রায় বাংলার বালুচরি শাড়ি তৈরির ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হয়। বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামের পোড়ামাটির ঘোড়ার শিল্পসৌন্দর্যের ও ডোকরা কামারদের শিল্পকৃতির প্রচারে তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চিত্রকলা নিয়ে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে লেখা 'ভারতের চিত্রকলা' ভারতীয় ভাষায় প্রথম ও প্রামাণিক গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত। অনুবাদক হিসাবে তার দক্ষতা প্রমাণিত। ইংরাজীতে তার অনূদিত 'চতুরঙ্গ', সমর সেনের 'বাবু বৃত্তান্ত' ও কমলকুমার মজুমদারের 'গোলাপ সুন্দরী' বিশেষভাবে প্রশংসিত।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি তাঁকে সম্মানসূচক ডি.এসসি উপাধি প্রদান করে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট তাঁকে অনারারি প্রফেসর হিসাবে সম্মানিত করে। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার 'তিন কুড়ি দশ' গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.