অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবল এক ধরনের ক্রীড়াবিশেষ। আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাটি অস্ট্রেলীয় ফুটবল নামে পরিচিত।[2] এছাড়াও, সচরাচর এ খেলাকে অসি রুলস, ফুটবল বা ফুটি নামে ডাকা হয়। সম্পূর্ণরূপে শারীরিক স্পর্শযোগ্য খেলা হিসেবে দলগত খেলাটি দুই দলের আঠারো জন করে খেলোয়াড় ডিম্বাকৃতি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায়শঃই ক্রিকেট মাঠকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সর্বোচ্চ ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থা | এএফএল কমিশন |
---|---|
উপনাম | ফুটবল, ফুটি, অসি রুলস, এএফএল |
প্রথম খেলা হয়েছে | মে, ১৮৫৯; মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া |
নিবন্ধিত খেলোয়াড় | ১,৪০৪,১৭৬ (২০১৬)[1] |
ক্লাব | ২৫,৭৭০ (২০১৬)[1] |
বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
শারীরিক সংস্পর্শ | সম্পূর্ণরূপে শারীরিক সংস্পর্শ |
দলের সদস্য | ২২ (মাঠে ১৮) |
মিশ্রিত লিঙ্গ | সর্বোচ্চ ১৪ বছর |
ধরন | বহিরাঙ্গন |
খেলার সরঞ্জাম | ফুটবল |
শব্দকোষ | অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবল পরিভাষা |
প্রচলন | |
অলিম্পিক | প্রদর্শনী ক্রীড়া; ১৯৫৬ মেলবোর্ন অলিম্পিক |
অস্ট্রেলিয়ায় এর উৎপত্তি ঘটেছে। এ খেলাটি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় খেলা ও সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্রীড়া।[3][4][5][6] অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলের প্রধান লীগভিত্তিক প্রতিযোগিতা হচ্ছে অস্ট্রেলীয় ফুটবল লীগ।
ইতিহাস
১৮৫৮ সালে টম উইলস নামীয় রাগবি স্কুল ও কেমব্রিজ কলেজের সাবেক ছাত্র রাগবি, ফুটবল ও গেইলিক ফুটবলের নিয়ম-কানুনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এ খেলার উৎপত্তি ঘটান। খেলাটিকে তিনি মৌসুম বহির্ভূত সময়ে ক্রিকেটারদের উপযোগী করে তৈরী করেন। এ খেলা সৃষ্টিতে তার কাকাতো ভাই এইচ.সি.এ. হ্যারিসন, ডব্লিউ.জি. হ্যামারস্লে ও জে.বি. টমসনের সহায়তা নেন[7]
অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের সাথে টম উইলসের শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। তিনি তাদের ভাষায় কথা বলতেন ও শিশুদের সাথে খেলতেন। ধারণা করা হয় যে, আদিবাসীদের খেলা মার্ন গ্রুকের অনুসরণে কিছু একই ধরনের নিয়ম-কানুন অবলম্বনে অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলের উৎপত্তি ঘটেছে। এর প্রধান কারণ হয়তোবা উইলস আদিবাসীদের সাথে শৈশবকাল অতিবাহিত করার সময় শিশুদের সাথে মার্ন গ্রুক খেলতেন। অস্ট্রেলীয় রুলস ফুটবলের নিয়ম-কানুন তৈরী করার সময় প্রভাব পড়েছে।[8]
১৪ মে, ১৮৫৯ তারিখে মেলবোর্ন ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ক্লাবটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ফুটবল ক্লাব হিসেবে টিকে রয়েছে। স্কচ কলেজ ও মেলবোর্ন গ্রামার স্কুলের মধ্যে একটি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পার্শ্বে খেলাটিত তিনদিন ধরে চলে। দুটি বিদ্যালয়ের দল এরপর থেকে সাংবার্ষিকভিত্ততে খেলতে থাকে। এ খেলাটিই পরবর্তীকালে মেলবোর্ন রুলস ফুটবল নামে পরিচিতি পায়। ঐ সময়ে স্থানীয় পর্যায়ের নিয়ম-কানুনে অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলার অন্যতম এটি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য খেলা ছিল শেফিল্ড রুলস ফুটবল। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, ১৮৬৩ সালের অ্যাসোসিয়েশন রুলস কিংবা ১৮৭১ সালের রাগবি রুলসে যোগ দেবে না। এটি ভিক্টোরিয়ান রুলস নামে পরিচিতি পাবে। তবে, ঐ দুটি নিয়ম-কানুনের সাথে প্রায় মিল রেখে তৈরি করা হয়। ১৮৮০-এর দশকে রাগবি ও অ্যাসোসিয়েশন রুলসে অনেক দূরে চলে যায়। ভিক্টোরিয়ান রুলস ১৮৫০-এর দশকের ফুটবলের নিয়মের সংশোধন করে রাগবি ও অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলের নিয়ম-কানুনের উপর ভিত্তি করে পুণর্গঠন করা হয়। তবে, চতুর্ভূজ আকৃতির মাঠকে ডিম্বাকৃতি মাঠে পরিণত করাসহ আরও খুঁটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্যান্য রাজ্যে এ ক্রীড়াটি জনপ্রিয় হয়ে উঠলে সাধারণ্যের কাছে খেলাটি অস্ট্রেলিয়ান রুলস নামে পরিচিতি ঘটে।
ভিক্টোরীয় ফুটবল লীগ
১৮৯৬ সালে ভিক্টোরীয় ফুটবল লীগের (ভিএফএল) সূত্রপাত ঘটে। পরের বছর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক খেলা শুরু হয়। প্রথম ক্লাবগুলো হলো - কার্লটন, কলিংউড, এসেনডন, ফিটজরয়, গিলং, মেলবোর্ন, সেন্ট কিল্ডা ও দক্ষিণ মেলবোর্ন। ১৯০৮ সালে রিচমন্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করে। তবে, ১৯১৪ সালের পর বিশ্ববিদ্যালয় দল ত্যাগ করে। ১৯২৫ সালে ফুটসক্রে, হথর্ন ও উত্তর মেলবোর্ন ভিএফএলে যোগ দেয়।
পরবর্তীতে যোগ দেয়া অন্যান্য দল হলো:
- ওয়েস্ট কোস্ট ঈগলস (১৯৮৭ সালে যোগ দেয়)
- ব্রিসবেন বিয়ার্স (১৯৮৭)
- অ্যাডিলেড ক্রোজ (১৯৯১)
- ফ্রিম্যান্টল ডকার্স (১৯৯৫)
- পোর্ট অ্যাডিলেড (১৯৯৭)
- ব্রিসবেন লায়ন্স (১৯৯৭)। ব্রিসবেন বিয়ার্স ও ফিটজরয় লায়ন্স একীভূত হয়ে এ দলটি গঠন করে।
- গোল্ড কোস্ট সান্স (২০১১)[9]
- গ্রেটার ওয়েস্টার্ন সিডনি জায়েন্টস (২০১২)[10]
১৯৯০ সালে ভিক্টোরীয় ফুটবল লীগ অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লীগের (এএফএল) সাথে একীভূত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে ফুটসক্রের নাম পরিবর্তন করে ওয়েস্টার্ন বুলডগস রাখা হয়। ১৯৯৯ সালে নর্থ মেলবোর্নের নাম ক্যাঙ্গারুস নাম রাখা হলেও ২০০৮ সালে পূর্বোক্ত নামে ফিরে যায়।
জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফুটবল অস্ট্রেলিয়ার সর্ববৃহৎ। সাধারণ খেলাগুলোয় ৫০-৮০,০০০ দর্শক এবং এমসিজিতে চূড়ান্ত ও বিশেষ খেলাগুলোয় সচরাচর স্বাগতিক ও অতিথি দলের লক্ষাধিক দর্শকের সমাগম ঘটে। ১৯৭০ সালে কার্লটন ও কলিংউডের মধ্যকার গ্র্যান্ড ফাইনালে ১২১,৬৯৬জন দর্শকের উপস্থিতি ইতিহাস গড়ে।
নিয়ম-কানুন
এএফএলে ১৬টি দলের অংশগ্রহণ রয়েছে। দলে ৪০-৪৫জন খেলোয়াড় থাকলেও খেলার দিন প্রত্যেক দল ২২জন খেলোয়াড়কে তালিকায় রাখে। খেলাকালীন ১৮জন খেলোয়াড় মাঠে নামেন। ৬জন ফরোয়ার্ড, ৩জন মধ্যমাঠে, ৬জন ব্যাকম্যান ও ৩জন ফলোয়ার থাকে। বাদ-বাকী চারজন খেলোয়াড় সংরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও প্রত্যেক দল কোচের চাহিদা অনুসারে তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তিত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন। চতুর্থ খেলোয়াড়কেও পরিবর্তন করা যায়। তবে, তিনি আর খেলার মাঠ থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন না।
প্রতিটি খেলাই চারটি অংশে বিভক্ত। প্রতি অংশে ২০ মিনিট ও অতিরিক্ত সময় যুক্ত থাকে। স্থগিত সময় সময়-রক্ষকের উপর নির্ভর করে মূল আম্পায়ার খেলার সময় নির্ধারণ করেন। প্রত্যেক অংশের পর দলের স্থান অদল-বদল হয়। আম্পায়ারের বাঁশিতে খেলা শুরু হয় ও তিনি মাঠের মাঝখানে বাউন্স থেকে বলকে উপরে নিয়ে যান যা বাস্কেটবলের টিপের ন্যায়। প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়েরা বল ধরতে বা দলীয় সঙ্গীদের কাছে দিতে সচেষ্ট থাকেন।
কিকের সাহায্যে অধিক গোলের দিকেই নজর দেয়া হয়। মাঠের প্রত্যেক প্রান্তে চারটি খুঁটি রয়েছে। বলকে কিকের সাহায্যে খুঁটিতে ফেলে পয়েন্ট সংগ্রহ করেন। কিকের সাহায্যে খুঁটির মাঝখানে গোল করা হয়। এরফলে ৬ পয়েন্ট পাওয়া যায়। তবে, অন্যান্য খুঁটির মাঝে বল গেলে তা বিহাইন্ড হিসেবে আখ্যায়িত হয় ও ১ পয়েন্ট লাভ হয়। খেলোয়াড়েরা বলকে বাউন্স খাইয়ে হাতে নিয়ে অন্য খেলোয়াড়ের কাছে প্রেরণ করে। যদি কোন খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড়ের কাছে থেকে কিকের সাহায্যে শূন্যে থেকে বল তালুবন্দী করে তাহলে তিনি মার্ক হিসেবে গণ্য হন ও তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত কেউ তাকে আটকাতে পারবে না।
বর্তমান দল
ক্লাব | ডাকনাম | শহর, রাজ্য | নিজেদের মাঠ |
---|---|---|---|
অ্যাডিলেড ফুটবল ক্লাব | ক্রোজ | অ্যাডিলেড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া | অ্যাডিলেড ওভাল |
ব্রিসবেন লায়ন্স | লায়ন্স | ব্রিসবেন, কুইন্সল্যান্ড | ব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (দ্য গাব্বা) |
কার্লটন ফুটবল ক্লাব | ব্লুজ | কার্লটন, ভিক্টোরিয়া | ইতিহাদ স্টেডিয়াম/মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) |
কলিংউড ফুটবল ক্লাব | ম্যাগপাইজ | কলিংউড, ভিক্টোরিয়া | মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) |
এসেনডন ফুটবল ক্লাব | বোম্বার্স | এসেনডন, ভিক্টোরিয়া | ইতিহাদ স্টেডিয়াম |
ফ্রিম্যান্টল ফুটবল ক্লাব | ডকার্স | ফ্রিম্যান্টল, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া | পার্থ স্টেডিয়াম |
গিলং ফুটবল ক্লাব | ক্যাটস | গিলং, ভিক্টোরিয়া | স্কিলড স্টেডিয়াম |
গোল্ড কোস্ট ফুটবল ক্লাব | সান্স | গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড | মেট্রিকন স্টেডিয়াম |
গ্রেটার ওয়েস্টার্ন সিডনি জায়েন্টস | জায়েন্টস | ব্ল্যাকটাউন, নিউ সাউথ ওয়েলস | ব্ল্যাকটাউন অলিম্পিক পার্ক |
হথর্ন ফুটবল ক্লাব | হকস | হথর্ন, ভিক্টোরিয়া | মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি)/অরোরা স্টেডিয়াম |
নর্থ মেলবোর্ন ফুটবল ক্লাব | ক্যাঙ্গারুস | উত্তর মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া | ইতিহাদ স্টেডিয়াম |
মেলবোর্ন ফুটবল ক্লাব | ডেমন্স | মেলবোর্ন, ভিক্টোরিয়া | মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) |
পোর্ট অ্যাডিলেড ফুটবল ক্লাব | পাওয়ার | পোর্ট অ্যাডিলেড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া | অ্যাডিলেড ওভাল |
রিচমন্ড ফুটবল ক্লাব | টাইগার্স | রিচমন্ড, ভিক্টোরিয়া | মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) |
সেন্ট কিল্ডা ফুটবল ক্লাব | সেন্টস | সেন্ট কিল্ডা, ভিক্টোরিয়া | ইতিহাদ স্টেডিয়াম |
সিডনি সোয়ান্স | সোয়ান্স | সিডনি, নিউ সাউথ ওয়েলস | সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এসসিজি) |
ওয়েস্ট কোস্ট ঈগলস | ঈগলস | পার্থ, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া | পার্থ স্টেডিয়াম |
ওয়েস্টার্ন বুলডগস | বুলডগস | ফুটসক্রে, ভিক্টোরিয়া | ইতিহাদ স্টেডিয়াম |
ব্যক্তিগত সেরা পুরস্কার
- ব্রাউনলো পদক (সেরা ও পরিচ্ছন্ন)
- কোলম্যান পদক (সর্বাধিক গোল)
- এএফএল উদীয়মান তারকা (সেরা তরুণ খেলোয়াড়)
- লেই ম্যাথুজ ট্রফি (ভোটের মাধ্যমে সেরা দামী খেলোয়াড়)
- নর্থ স্মিথ পদক (গ্র্যান্ড ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়)
- মাইকেল টাক (গ্র্যান্ড ফাইনাল পূর্ব সেরা খেলোয়াড় - বর্তমানে বিলুপ্ত)
- এএফএল বর্ষসেরা মার্ক (মৌসুমে সেরা মার্ক পুরস্কার)
- এএফএল বর্ষসেরা গোল (মৌসুমে সেরা গোল পুরস্কার)
- সেরা অস্ট্রেলিয়ান দল (সকল ক্লাব থেকে সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েগ গঠিত দল)
- সেরা ক্লাব ও পরিচ্ছন্ন পুরস্কার (ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়)
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.