Loading AI tools
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী সরকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আর্জি হুকুমত-এ-আজাদ হিন্দ (স্বশাসিত মুক্ত ভারত)(হিন্দি: आर्ज़ी हुक़ूमत-ए-आज़ाद हिन्द; উর্দু: عارضی حکومتِ آزاد ہند ; ইংরেজি: Provisional Government of Free India) ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত একটি অস্থায়ী ভারত সরকার। এই সরকার সাধারণত আজাদ হিন্দ সরকার নামে পরিচিত।
মুক্ত ভারত অস্থায়ী সরকার আর্জ়ী হুক়ূমৎ-এ-আজ়াদ্ হিন্দ্ आर्ज़ी हुक़ूमत्-ए-आज़ाद् हिन्द् عارضی حکومتِ آزاد ہند Ārzī Huqūmat-e-Āzād Hind | |
---|---|
১৯৪৩–১৯৪৫ | |
জাতীয় সঙ্গীত: শুভ সুখ চৈন | |
অবস্থা | অস্থায়ী সরকার |
নির্বাসনে রাজধানী | রেঙ্গুন সিঙ্গাপুর |
সরকার | অস্থায়ী সরকার |
রাষ্ট্রপ্রধান | |
• ১৯৪৩-১৯৪৫ | সুভাষচন্দ্র বসু |
ঐতিহাসিক যুগ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ |
• প্রতিষ্ঠা | ২১ অক্টোবর ১৯৪৩ |
• বিলুপ্ত | ১৮ অগস্ট ১৯৪৫ |
মুদ্রা | আজাদ হিন্দ টাকা |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN |
১৯৪০-এর দশকে অক্ষশক্তির সহায়তায় দেশ থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের লক্ষ্যে ভারতের বাইরে যে রাজনৈতিক সংগঠনগুলি গড়ে উঠেছিল আজাদ হিন্দ সরকার ছিল তার মধ্যে অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে সিঙ্গাপুরে জাপান সাম্রাজ্যের আর্থিক, সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তায় ভারতের ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে নির্বাসিত ভারতীয় জাতীয়তাবাদীগণ এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।[1] ১৯৪৩ সালের ২১ অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সরকার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতবাদে অণুপ্রাণিত হয়েছিল। নেতাজিই ছিলেন এই অস্থায়ী ভারত সরকারের সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রপ্রধান। এই সরকার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে বসবাসকারী অসামরিক ও সামরিক কর্মচারীদের উপর নিজ কর্তৃত্ব ঘোষণা করে। পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে জাপানি আক্রমণের পর জাপানি সেনাবাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ অধিকৃত অঞ্চলগুলির উপরেও নিজ কর্তৃত্ব ঘোষণা করে এই সরকার।[2] আজাদ হিন্দ সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, বিচারব্যবস্থা ও দণ্ডবিধি ছিল। এই সরকারের অস্তিত্ব ভারতের অভ্যন্তরেও ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল।[3][4][5]
একটি আইনসঙ্গত সরকারের অন্য সকল আবশ্যিক বিষয়গুলি এই সরকারে উপস্থিত থাকলেও এর অভাব ছিল একটি বৃহৎ ও সুনির্দিষ্ট সার্বভৌম অঞ্চলের। পরে ১৯৪৩ সালে আজাদ হিন্দ সরকার জাপানের কাছ থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিকার অর্জন করে এবং মণিপুর ও নাগাল্যান্ড দখল করে নেয়। তবে আগাগোড়াই এই সরকার জাপানি সাহায্যের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল ছিল।[6]
অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই এই সরকার ভারত-ব্রহ্মদেশ ফ্রন্টে ব্রিটিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।[7] আজাদ হিন্দ ফৌজ নামে পরিচিত এই সরকারের সেনাবাহিনী ইম্ফল-কোহিমা সেক্টরে জাপান সাম্রাজ্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী ও তার মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। জাপানি পঞ্চদশ বাহিনীর সঙ্গে আজাদ হিন্দ ফৌজ ইম্ফলের যুদ্ধে নিজ সাফল্যের ছাপ রেখে যায়। কোহিমায় ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মৈরাং সেলিয়ান্ট অবধি পৌঁছে মিত্র বিমানবাহিনীর দাপট ও রসদ স্বল্পতার কারণে জাপানি বাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ পিছু হঠতে বাধ্য হয়।[8]
আজাদ হিন্দ ফৌজ ও সরকারের অস্তিত্ব ছিল একই সীমানাবিশিষ্ট। যুদ্ধের শেষভাগে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পুনরায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে আজাদ হিন্দ সরকারই এই অঞ্চলের অসামরিক প্রশাসনের দায়িত্বে ছিল। রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ ফৌজের শেষ বৃহৎ সেনা আত্মসমর্পণের পরই এই সরকারে সীমিত ক্ষমতার পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর সুভাষচন্দ্রের তথাকথিত মৃত্যুর সংবাদে সমগ্র আজাদ হিন্দ আন্দোলনেরই পরিসমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমসাময়িক কালে এবং পরবর্তীকালেও মিত্রবাহিনীর অনেক ঐতিহাসিকের চোখে এই সরকার ছিল একটু পুতুল রাষ্ট্র। কোনো মিত্র সরকার এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি; স্বীকৃতি দেয়নি ভিসি ফ্রান্সও।
তবুও ভারতীয় জনমানস ও ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আজাদ হিন্দ সরকারের ভূমিকা গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধের পর আজাদ হিন্দ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ যেভাবে বিশ্বাসঘাতক ও ষড়যন্ত্রী থেকে "শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকে" উত্তীর্ণ হন, তাতে ব্রিটিশ সরকারও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।[9][10] আজাদ হিন্দ সরকারের বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতে একাধিক ব্রিটিশ বিরোধী উগ্র গণআন্দোলনে সূত্রপাত হয়। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মচারীরাও উপর্যুপরি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। ফলে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ত্বরান্বিত হয়। এর ফলে আজাদ হিন্দ সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়।[11]
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত ভারতীয়দের দুটি সম্মেলন আজাদ হিন্দ সরকারের মূল উৎস। এর মধ্যে প্রথমটি আয়োজিত হয় ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে টোকিওতে। জাপানে প্রবাসী ভারতীয় রাসবিহারী বসু আহ্বায়িত এই সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ। এই লিগই ছিল জাপান সাম্রাজ্যের সহযোগিতায় ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্থাপিত প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন। ভারত থেকে ব্রিটিশ বিতাড়নের উদ্দেশ্যে রাসবিহারী বসু একটি মুক্তিবাহিনী গঠন করতেও উদ্যোগী হন। এই বাহিনীই পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ ফৌজের রূপ পরিগ্রহ করে। সেই বছরেরই শেষভাগে ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু লিগকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন। সুভাষচন্দ্র সেই সময় জার্মানিতে ছিলেন। তিনি সাবমেরিন পথে জাপানে এসে উপস্থিত হন।
১৯৪৩ সালের ১৩ জুন সুভাষচন্দ্র টোকিওতে উপস্থিত হন। এরপরেই উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করার প্রথম লক্ষ্য হিসেবে পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলির উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। ২ জুলাই সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে উপস্থিত হন এবং অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র বলেন, "অস্থায়ী সরকারের কাজ হবে ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশ ও তার সহকারী শক্তিগুলির মূলচ্ছেদ করা সম্ভব, এমন সংগ্রাম ঘোষণা ও পরিচালনা করা।" (“It will be the task of the Provisional Government to launch and conduct the struggle that will bring about the expulsion of the British and their allies from the soil of India.”)[12] সুভাষচন্দ্র হতোদ্যম ও বিশৃঙ্খল আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং জাপানি সহায়তায় এটিকে একটি পেশাদার সেনাবাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। সেই সঙ্গে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাপান-অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদেরও ফৌজে অন্তর্ভুক্ত করেন। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয় ও হংকঙে ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের ফৌজে অন্তর্ভুক্ত করে বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করেন।
আজাদ হিন্দ সরকার গঠিত হয়েছিল একটি ক্যাবিনেট নিয়ে। এই ক্যাবিনেটের সর্বাধিনায়ক ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সমর ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী।
ক্যাপ্টেন ডাক্তার লক্ষ্মী স্বামীনাথন (পরে বিবাহিত জীবনে লক্ষ্মী সেহগল) ছিলেন নারী সংগঠন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। এই দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের মহিলা ব্রিগেড রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট কম্যান্ডের দায়িত্বেও ছিলেন। এশিয়ায় এই ধরনের নারীবাহিনী ছিল সর্বপ্রথম এবং এক সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। ডাঃ লক্ষ্মী ছিলেন সিঙ্গাপুরের এক বিশিষ্ট স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ। পরে তিনি তার লোভনীয় কর্মজীবন ত্যাগ করে আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যান্য জনপ্রশাসন মন্ত্রীরা হলেন:
আজাদ হিন্দ সরকারের সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রীরা ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিনিধি। এঁরা হলেন:
আজাদ হিন্দ সরকারের সংগঠন ও প্রশাসন পরিচালনার জন্য সুভাষচন্দ্রের একাধিক সচিব ও উপদেষ্টা নিযুক্ত ছিলেন। এঁরা হলেন:
আজাদ হিন্দ সরকারে এই সকল সচিব ও উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর সম মর্যাদা পেতেন। আজাদ হিন্দ সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্মের বিবরণী ধারাবাহিকভাবে নথিবদ্ধ করা হয়নি। তাই সুভাষচন্দ্রের সহকারী মন্ত্রিত্বের দায়িত্বভার পালন ছাড়া সরকারি পদাধিকারীরা আর কি কি কাজ করতেন সে বিষয়ে সঠিক জানা যায় না।
অল্প কয়েকটি দেশই ভারতে ব্রিটিশ সরকারের আইনসঙ্গত ও স্বাধীন উত্তরাধিকার হিসেবে আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই অল্প কয়েকটি দেশ হল অক্ষশক্তির প্রধান রাষ্ট্রসমূহ এবং তাদের অণুমোদিত ও ক্রীড়ানক রাষ্ট্রগুলি। যে নয়টি দেশের সঙ্গে আজাদ হিন্দ সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল, সেগুলি হল: নাৎসি জার্মানি, জাপান সাম্রাজ্য, ফ্যাসিস্ট ইতালি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেট অফ ক্রোয়েশিয়া, নানজিঙের ওয়াং জিংওয়ে সরকার, থাইল্যান্ড, ব্রহ্মদেশ রাজ্য, মাঞ্চুকুও ও দ্বিতীয় ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র। আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই ফ্রি আইরিশ স্টেটের রাষ্ট্রপতি এওমন ডে ভ্যালেরা সুভাষচন্দ্রকে একটি অভিনন্দন বার্তা প্রেরণ করেন। তবে অক্ষশক্তির অংশ হলেও ভিসি ফ্রান্স আজাদ হিন্দ সরকারকে আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক স্বীকৃতি দান করেনি।
আজাদ হিন্দ প্রতিষ্ঠার রাত্রিতেই এই সরকার ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আজাদ হিন্দ বাহিনী সুভাষচন্দ্র বসুকে "নেতাজি" উপাধিতে ভূষিত করে। উল্লেখ্য, সুভাষচন্দ্রই ছিলেন এই বাহিনী ও এই সরকারের সর্বময় কর্তা। আজাদ হিন্দ সরকারের প্রথম যুদ্ধ ঘোষণার সময় তিনি বলেন, "Cabinet had not been unanimous about the inclusion of the U.S.A. Bose had shown impatience and displeasure - there was never any question then or later of his absolute authority: the Cabinet had no responsibility and could only tender advice..."[13]
১৯৪৩ সালের অক্টোবর মাসে আজাদ হিন্দ প্রতিষ্ঠার পরই জাপানের গ্রেটার ইস্ট এশিয়া কো-প্রসপারিটি স্ফিয়ারের পরিদর্শক হিসেবে টোকিওয় বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দেন সুভাষচন্দ্র। তিনি এই সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। কারণ ভারত জাপানের "বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া" ধারণার বাইরে অবস্থিত ছিল। তবে এই সম্মেলনে তিনি পাশ্চাত্য ঔপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভাষণ দেন। এরপর যুদ্ধের প্রথম দিকে জাপান কর্তৃক বিজিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সীমিত শাসনভার আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেয় জাপান। সুভাষচন্দ্র লেফট্যানেন্ট কর্নেল এ. ডি. লোকণাথনকে এই অঞ্চলের গভর্নর করে এই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন "শহীদ" ও "স্বরাজ" দ্বীপপুঞ্জ।[14] আজাদ হিন্দ সরকারের পতনের পূর্ব পর্যন্ত এই দুই দ্বীপে এই সরকারের শাসন কায়েম ছিল।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষভাগে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জাপান সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজকে পরাজিত করে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পুনর্দখল করলে আজাদ হিন্দ সরকারের পতন ঘটে। এর পর নেতাজির মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে আজাদ হিন্দ আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। আজাদ হিন্দের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তিদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে নিয়ে গিয়ে দিল্লির লালকেল্লায় তাদের বিচার করা হয়।
আজাদ হিন্দ সরকার ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার ভারতের অধিবাসীদের মনে তীব্র ব্রিটিশ-বিরোধী অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পেরেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরই ভারতের নানা জায়গায় ব্যাপকহারে শ্রমিক অসন্তোষ, হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ভারতীয় সৈনিকেরাও বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহ হল ভারতীয় নৌবিদ্রোহ।[15]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.