রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
কলকাতার একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কলকাতার একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (বিকল্প নাম: আর. জি. কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার সবচেয়ে পুরাতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলির মধ্যে অন্যতম।
এই নিবন্ধটিতে স্বপ্রকাশিত উৎসের অনুপযুক্ত তথ্যসূত্র থাকতে পারে। (জুলাই ২০১৩) |
নীতিবাক্য | জিভতা জ্যোতিরমোহী অবধি |
---|---|
স্থাপিত | ১৮৮৬: ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন ১৮৮৭: ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল ১৮৯৫: কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল ১৯০৪: দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল ১৯১৬: বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ ১৯১৯: কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ ১৯৪৮: রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল |
অধ্যক্ষ | সুহৃতা পাল[1] |
অবস্থান | ২২°৩৬′১৫″ উত্তর ৮৮°২২′৪২″ পূর্ব |
অধিভুক্তি |
|
ওয়েবসাইট | www |
১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে ডঃ রাধাগোবিন্দ কর ভারতে ফিরে আসলে কলিকাতায় একটি জাতীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরীর উদ্দেশ্যে তিনি একটি বৈঠক আহ্বান করেন। ঐ সালের ১৮ অক্টোবর ডঃ মহেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, ডঃ অক্ষয় কুমার দত্ত, ডঃ বিপিন বিহারী মৈত্র, ডঃ এম্. এল. দে, ডঃ বি. জি ব্যানার্জী এবং ডঃ কুন্দন ভট্টাচার্য্যের মত কলিকাতার বিখ্যাত চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে ঐ বৈঠকে ব্রিটিশ শাসকদের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক একটি মেডিক্যাল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।[4] এই সিদ্ধান্ত থেকে ১৬১, বৈঠকখানা বাজার রোডে ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শীঘ্রই ১১৭, বৌবাজার স্ট্রীটে স্থানান্তরিত হয়। ডঃ জগবন্ধু বসু এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। পঠনপাঠনের জন্য সরকারী ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের চিকিৎসা পাঠ্যক্রম গৃহীত হয়। বাংলা ভাষাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে স্থির করা হয়। এবং পঠন পাঠনের সময়কাল নির্ধারিত হয় ৩ বছর। ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দের আগস্ট মাসে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল রাখা হয় এবং ১৮৮৯ খৃষ্টাব্দে ডঃ লাল মাধব মুখার্জী ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই সময় ছাত্ররা ১৮৭৪ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মেয়ো হাসপাতালে তাদের প্রশিক্ষণ নিতেন। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে এই স্কুল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজের নিকটে ২২৮, আপার সার্কুলার রোডে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে শ্যামবাজার এবং বেলগাছিয়ার মধ্যবর্তী একটি স্থানের জমি ২৫,০০০ টাকায় ক্রয় করা হয়। প্রথমে এখানে ৭০,০০০ টাকা খরচ করে ৩০ শয্যার অন্তর্বিভাগ বিশিষ্ট একটি একতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। ব্যয়ের ১৫,০০০ টাকা প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টর এর ভারতদর্শনের স্মৃতিরক্ষা তহবিল থেকে পাওয়া যায় এবং ভবনের নাম তার নামে রাখা হয়। ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্নর স্যার জন ঊডবার্ণ দ্বারভাঙ্গার মহারাজা রামেশ্বর সিং বাহাদুর, রায় বাহাদুর বৈকুন্ঠ বসু রায়, ডঃ প্রিয়লাল দে, ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, রাজা শিউবক্স বোগলে, রাজা প্যারীমোহন মুখার্জী প্রভৃতি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন[5] এবং ১৯০২ খৃষ্টাব্দে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। [6]
১৮৯৫ খৃষ্টাব্দের ১০ই জুলাই ডঃ জন মার্টিন কোটসের মৃত্যুর পরে [7] মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া কোটসের স্মৃতিতে একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে কোটস স্মারক তহবিল চালু করে।[8] ঐ সালের ২৯শে নভেম্বর প্রস্তাবিত কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণের জন্য একটি বিশেষ সভা আহ্বান করা হয় যেখানে পঠন পাঠনের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও ইংরেজি দুটি ভাষাকেই স্থির করা হয় এবং পঠন পাঠনের সময়কাল নির্ধারিত হয় ৪ বছর। ডঃ জগবন্ধু বসু এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন।[9] ১৬৫, বৌবাজার স্ট্রীটে এই ১৪ শয্যার অন্তর্বিভাগ বিশিষ্ট কলেজটি স্থাপিত হয় এবং শীঘ্রই ২৯৪, আপার সার্কুলার রোডে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৯৬ খৃষ্টাব্দের ১৩ই জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।[5] ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দের ২৩শে জুন মাত্র ১২ জন ছাত্র নিয়ে পঠন পাঠন শুরু হয়। [6]
১৯০৪ খৃষ্টাব্দে ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল এবং কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল এই দুই প্রতিষ্ঠানকে একত্রীভূত করে দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল নাম দেওয়া হয়। মেডিক্যাল স্কুলটিতে বাংলা মাধ্যমে ৪ বছরের পাঠ্যক্রম এবং কলেজে ইংরেজি মাধ্যমে ৫ বছরে পাঠ্যক্রম চালু করা হয়।
এই বছর বাবু মানিকলাল শীলের দান করা ১২,০০০ টাকায় পান্নালাল শীল বহির্বিভাগ ভবন নির্মিত হয়[10] এবং স্যার অ্যাণ্ড্রুজ হেন্ডারসন লেইথ ফ্রেজার এর উদ্বোধন করেন। এই ভবনের তহবিলে কাশিমবাজারের বাহাদুর মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী ১৫,০০০ টাকা[11] এবং বাবু রামচরণ ভর ১০,০০০ টাকা দান করে সমৃদ্ধ করেন। ১০,০০০ টাকার একটি অনুদান বঙ্গ সরকার থেকে প্রাপ্ত হয়েছিল।
১৯০৯ খৃষ্টাব্দে অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল ভবন এর দ্বিতীয় তলা পোস্তা রাজপরিবারের রাণী কস্তুরীর ৩৭,০০০ টাকা অনুদানের মাধ্যমে নির্মিত হয় এবং শয্যা সংখ্যা ১০০ অব্দি বৃদ্ধি পায়। কর্তৃপক্ষের পরিষেবার প্রশংসাচিহ্ন হিসেবে ৫,০০০ টাকা অনুদান করে এর উদ্বোধন করেন বাংলার তৎকালীন লেফটনেন্ট গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার।
১৯০৯ খৃষ্টাব্দে বাবু দেবপ্রসন্ন ঘোষ ২০,০০০ টাকা, ১৯১০ খৃষ্টাব্দে মন্মথ ভট্টাচার্য্য স্মারক কমিটি ৯,০০০ টাকা এবং সম্রাট এডওয়ার্ড স্মারক কমিটি ১৭,৫০০ টাকা দান করে। ১৯১১ খৃষ্টাব্দে সম্রাট পঞ্চম জর্জ এবং সাম্রাজ্ঞী মেরী তাঁদের ভারত ভ্রমণকালে ৫,০০০ টাকা দান করেন।
১৯১৬ খৃষ্টাব্দের ৫ই জুলাই দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গলের নাম পরিবর্তন করে বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ রাখা হয়। এই কলেজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে রাজা ডি. এন. মল্লিক বহির্বিভাগ ভবন নির্মিত হয়।
১৯১৯ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেলের সাহায্যের স্বীকৃতি স্বরূপ কলেজের নাম পরিবর্তন করে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ রাখা হয়। এই সালে অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল ভবন ও পান্নালাল শীল বহির্বিভাগ ভবনের আরো একটি করে তলা নির্মিত হয় এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসমৃদ্ধ গবেষণাগার নির্মাণের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১০,০০০ টাকা ও সরকার ৫,০০০ টাকা দান করে।
১৯২১ খৃষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড রোনাল্ডসে শল্যচিকিৎসা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই ভবনের দ্বিতীয় তলা ২৮,০০০ টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছিল যার মধ্যে কাশীপুর চিৎপুর পৌ্রসভা ১০,০০০ টাকা দান করে। এর তৃতীয় তলে নির্মলেন্দু যক্ষ্মা স্বাস্থ্যালয় নির্মাণের জন্য রায় জ্ঞান চন্দ্র ঘোষের ১,০০,০০০ টাকা এবং ডঃ বিপিন বিহারী ঘোষ স্মারক সমিতির ১৪,০০০ টাকা অনুদান কাজে লাগে। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে এর আরেকটি তল নির্মিত হয়।
১৯২৬ খৃষ্টাব্দে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য একটি ঠান্ডা ঘর যুক্ত শারীরস্থান ভবনের নির্মাণের জন্য ৮১,৪০০ টাকা খরচ হয় যার মধ্যে ৫০,০০০ টাকা সরকার দান করে। ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে বিশ্বম্ভর দত্ত শিশু অন্তর্বিভাগ ৪৪,১০০ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে লালবিহারী গাঙ্গুলীর ১,৬৯,০০০ টাকা অনুদানে তারক গাঙ্গুলী ভবন নির্মিত হয়।
১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে ডঃ গিরীন্দ্রশেখর বসুর নেতৃত্বে এশিয়ার প্রথম সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ বিভাগ চালু হয়। এই কলেজে ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে দেশে প্রথম প্রাণরসায়ন বিভাগ এবং ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে হৃদরোগ বিভাগ চালু হয়। ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে স্যার নীলরতন সরকার গবেষণা কেন্দ্র চালু হলে তার একতলায় প্রাণরসায়ন বিভাগ ও হৃদরোগ বিভাগকে স্থানিন্তরিত কর হয়।
১৯৩৫ খৃষ্টাব্দে ৪,৪৫,০০০ টাকা ব্যয়ে স্যার কেদারনাথ দাস প্রসূতি হাসপাতাল নির্মিত হয়, যার মধ্যে বাংলা সরকার ১,৫০,০০০ টাকা, কলকাতা পৌরসভা ৩৪,০০০ টাকা, রায়পুরের লর্ড সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিনহা ৩১,০০০ টাকা এবং তৎকালীন হায়দ্রাবাদের নিজাম সপ্তম আসফ জাহ ৩৫,০০০ টাকা অনুদান করেন।
১৯৪১ খৃষ্টাব্দে স্যার নীলরতন সরকার রৌপ্য জয়ন্তী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং এই সালে ২,১৪,০০০ টাকা ব্যয় করে পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মিত হয়।[6]
স্বাধীনতার পরে ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দের ১২ই মে এই কলেজের নাম পরিবর্তন করে এর রূপকার ডঃ রাধাগোবিন্দ করের নামে রাধাগোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল রাখা হয়।
১৯৪৯ খৃষ্টাব্দে স্যার নীলরতন সরকার গবেষণা কেন্দ্রে আরো দুটি তল তৈরী হয় এবং এই সালেই পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ডঃ কৈলাশ নাথ কাটজু বেঙ্গল ইমিউনিটি থেরাপিউটিক ব্লকের উদ্বোধন করেন। ১৯৫৪ খৃষ্টাব্দে লেডি বঙ্গবালা মুখার্জী নার্সদের জন্য নির্মিত আবাসনের উদ্বোধন করেন।[6]
১৯৮৯ খৃষ্টাব্দে স্ত্রীরোগবিভাগের অধীনে জরায়ুনালীতে বন্ধ্যাত্বকরণের পর পুনরায় গর্ভ ধারণে ইচ্ছুক মহিলাদের চিকিৎসার জন্য একটি বিভাগ চালু হয়। এই সালের মার্চ মাস থেকে অবেদনবিদ্যা বিভাগের অধীনে ডঃ বিধান চন্দ্র রায় স্মারক ক্যাজুয়ালটি ভবনের সাত তলায় ছয় শয্যা বিশিষ্ট একটি অবেদন পরবর্তী তত্ত্বাবধান কেন্দ্র চালু হয়।
২০০০ খৃষ্টাব্দে নতুন দিল্লীর রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ সংস্থান এই কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগকে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম রাজ্যের এইডস রোগের নজরদারীর আঞ্চলিক সমন্বয় কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করে। ২০০৫ খৃষ্টাব্দে এই কলেজের বক্ষরোগ বিভাগকে সংশোধিত জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অধীনে পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক সংযোগকারী কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। [12]।
অধ্যক্ষগণের তালিকা[13] |
---|
|
১৯১৬ খৃষ্টাব্দে লেফটেনেন্ট কর্নেল সুরেশ প্রসাদ সর্বাধিকারী বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজের প্রথম সভাপতি এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ কর এর প্রথম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯১৮ খৃষ্টাব্দে কলেজের সুষ্ঠ পরিচালনার লক্ষ্যে "মেডিক্যাল এডুকেশন সোসাইটি অব বেঙ্গল" নামে একটি সমিতি গঠিত হয়। নীলরতন সরকার ১৯২২ হতে ১৯৪১ খৃষ্টাব্দ অব্দি এর সভাপতি পদ অলংকৃত করেন। ১৯২৭ খৃষ্টাব্দে ডঃ উপেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী হাসপাতালের প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং ১৯৫১ খৃষ্টাব্দে ডঃ হীরেন্দ্র কুমার চ্যাটার্জী প্রথম সহ-অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে।[6]
১৯১১ খৃষ্টাব্দে সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতার সমস্ত বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে তারা এক হয়ে একটি কার্যকরী চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে কলকাতা বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত হয়। ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে দ্য ক্যালকাটা মেডিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জেন্স অব বেঙ্গল কর্তৃপক্ষ সরকারের প্রস্তাবে রাজী হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১১ খৃষ্টাব্দে বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজের প্রারম্ভিক এম. বি. ডিগ্রী অনুমোদন করে। ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষ অব্দি এম. বি. ডিগ্রী প্রদান করতে অনুমোদন দেয় এবং ১০০ জন ছাত্র ভর্তি করার জন্য অনুমতি প্রদান করে। ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজের এম. বি. ডিগ্রী সম্পূর্ণ রূপে অনুমোদন করে। [6] তারপর থেকে ২০০৩ শিক্ষাবর্ষ অব্দি এই প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর পরে, এই প্রতিষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই কলেজের পশ্চিম দিকে পূর্ব ক্যানাল রোড, দক্ষিণ দিকে ক্ষুদিরাম বসু সরণী, পূর্ব দিকে চক্ররেল ও টালা রেল স্টেশন এবং উত্তর দিকে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড অবস্থিত।[14]
ক্যাম্পাসের উত্তরপূর্ব দিকে সাত তল বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন অবস্থিত।[14] এই ভবনে শারীরবিদ্যা, প্রাণরসায়ন, ভেষজবিজ্ঞান, জীবাণুর্বিজ্ঞান, ফরেন্সিক, কমিউনিটি মেডিসিন প্রভৃতি বিভাগ এবং গ্রন্থাগার অবস্থিত।
অ্যাকাডেমিক ভবনের ঠিক সামনেই তিন তল বিশিষ্ট ডঃ এম. এন. বসু শারীরস্থান ভবন অবস্থিত। [14] এর এক তলায় ডাক্তারী ছাত্রদের জন্য প্রদর্শন কক্ষ, মৃতদেহ সংরক্ষণস্থল এবং শব ব্যবচ্ছেদ বিভাগ রয়েছে। এর দোতলায় শারীরস্থান সংগ্রহালয় এবং তিন তলায় কলাস্থানবিদ্যা বিভাগ ও শব ব্যবচ্ছেদ বিভাগ রয়েছে। শারীরস্থান ভবনের বক্তৃতা প্রেক্ষাগৃহ এই ভবনের একতলায় পৃথক ভাবে অবস্থিত।
শারীরস্থান ভবনের বক্তৃতা প্রেক্ষাগৃহের ঠিক পাশেই একটি শবাগার বিশিষ্ট ময়না তদন্ত ভবন অবস্থিত। [14] এই ভবনে ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আকস্মিক, রহস্যজনক ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
কলেজের উত্তর দিকে ময়না তদন্ত ভবনের সামনেই প্লাটিনাম জয়ন্তী ভবন অবস্থিত। [14] ২০১১ খৃষ্টাব্দের ১ লা মার্চ পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন জনকল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর উপস্থিতিতে এই ভবনের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ডঃ অসীম দাসগুপ্ত। [15] এই ভবনে এক হাজার আসন বিশিষ্ট একটি প্রেক্ষাগৃহ আছে।
ডঃ এম. এন. বসু শারীরস্থান ভবনের সামনে কলেজের প্রশাসনিক ভবন অবস্থিত, যা নেপালের জেনারেল শূর শামসেরের নামে নামাঙ্কিত। [14] এই ভবনে কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয় এবং অন্যন্য প্রশাসনিক কার্যালয় রয়েছে।
জেনারেল শূর শামসের প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিমদিকে তিন তল বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসা ভবনটি অবস্থিত। [14] এই ভবনে একটি আধুনিক উপাচারশালা রয়েছে যেখানে ছয়টি অপারেশন টেবিলে নির্বাচিত ও পরিকল্পিত শল্যচিকিৎসা করা হয়। এই ভবনে ছয়টি অন্তর্বিভাগ ও একটি উপাচার পরবর্তী তত্ত্বাবধান কেন্দ্র রয়েছে।
শল্যচিকিৎসা ভবনের দক্ষিণে বিশ্বখ্যাত ধাত্রীবিশারদ ও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ স্যার কেদারনাথ দাসের নামাঙ্কিত প্রসূতি ভবন অবস্থিত। [14] এই ভবনে একটি জরুরি প্রসবকালীন চিকিৎসা বিভাগ, একটি স্ত্রীরোগের বহির্বিভাগ ও একটি ধাত্রীবিদ্যার বহির্বিভাগ রয়েছে। এই ভবনে শিশু প্রসবের জন্য দুইটি প্রসব কক্ষ, একটি প্রসবকালীন পর্যবেক্ষণ কক্ষ ও একটি উচ্চ রক্তচাপ জনিত মাতৃত্বকালীন জটিলতার পর্যবেক্ষণ কক্ষ রয়েছে। এই ভবনে স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যার দুইটি উপাচারশালা রয়েছে যেখানে নির্বাচিত, পরিকল্পিত এবং জরুরীকালীন শল্যচিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও এই ভবনে একটি উপাচার পরবর্তী অন্তর্বিভাগ, দুইটি প্রাক-প্রসব পর্যবেক্ষণ অন্তর্বিভাগ, একটি প্রসবকালীন সংক্রমণজনিত রোগের অন্তর্বিভাগ ও একটি মাতৃত্বকালীন জটিলতার অন্তর্বিভাগ রয়েছে। শিশুবিভাগের তত্ত্বাবধানে এই ভবনে অসুস্থ সদ্যোজাতদের জন্য একটি আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।
স্যার কেদারনাথ দাস প্রসূতি ভবনের পূর্বদিকে ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার সায়েন্সেস ভবন অবস্থিত।[14] ১৯৮৮ থেকে ২০০৫ খৃষ্টাব্দ অব্দি আর. জি. কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন হৃদরোগবিভাগের প্রধান ডঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আলবার্ট ভিক্টর হাসপাতালকে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ভবনটি গড়ে তোলে। [16] এই ভবনে উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা হৃদরোগের ঔষধীয় চিকিৎসা এবং হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর শল্য চিকিৎসা করা হয়। এই ভবনে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ও ভারতে দ্বিতীয় কৃত্রিম হৃৎকপাটিকা ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু রয়েছে। [17]
ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার সায়েন্সেস ভবনের উত্তরদিকে স্যার নীলরতন সরকার গবেষণা কেন্দ্র অবস্থিত।[14] এই ভবনের এক তলায় হৃদরোগ এবং হৃদশল্য বিভাগের বহির্বিভাগ রয়েছে। এই ভবনের দোতলায় স্ত্রীরোগবিভাগের অধীনে জরায়ুনালীতে বন্ধ্যাত্বকরণের পর পুনরায় গর্ভ ধারণে ইচ্ছুক মহিলাদের চিকিৎসার জন্য একটি বিভাগ রয়েছে।
১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে অধ্যাপক গিরীন্দ্রশেখর বসুর তত্ত্বাবধানে এই প্রতিষ্ঠানে এশিয়ার প্রথম সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ বিভাগ হিসেবে মনোরোগ বিভাগের বহির্বিভাগ চালু হয়। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব মেন্টাল হাইজিনের কলকাতা অধ্যায়ের পক্ষ থেকে প্রথমে সরকার দ্বারা পরিচালিত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এই পরিষেবা চালু করার জন্য বাংলা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললেও পরে সরকার পিছিয়ে আসে। এই পরিস্থিতে ঐ সংগঠন কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে সাধারণ হাসপাতাল মনোরোগ বিভাগ হিসেবে মনোরোগ বিভাগের বহির্বিভাগ চালু করতে রাজী করাতে সমর্থ হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ আসবাবপত্র ও বিনামূল্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলেও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব মেন্টাল হাইজিন সংগঠনের কলকাতা অধ্যায় ঐ পরিষেবার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করে। পরিষেবা ১লা মে চালু হলেও প্রথম রুগী নথিভুক্ত হয় ২রা মে।[18]
২০১১ খৃষ্টাব্দের ২৯শে মে এই প্রতিষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ও ভারতে দ্বিতীয় কৃত্রিম হৃৎকপাটিকা ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু করা হয়। এই পরিষেবা নতুন দিল্লীতে অবস্থিত অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থানের পরে দেশে দ্বিতীয়। এখানে মৃতদেহ থেকে কপাটিকা সংগ্রহ করে উপযুক্ত পরিবেশে সংরক্ষণ করে রোগীদের হৃৎপিণ্ডে প্রতিস্থাপিত করা হয়।.[17]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.