কারাগার (ইংরেজি: Prison) একটি বিশেষ আবাসস্থল, যেখানে আসামীরা অবস্থান করেন। গাউল, জেল, দ্য বিগ হাউজ, দ্য স্ল্যামার অথবা দ্য স্টোনি লোনসাম নামেও কারাগারের পরিচিতি রয়েছে। এরফলে অপরাধী ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বাঁধাগ্রস্ত হন ও মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন না। কারাগার সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। কারাগারের ইংরেজি শব্দ হচ্ছে প্রিজন যা প্রাচীন ফরাসী শব্দ প্রিসাউন থেকে উৎপত্তি হয়েছে।[1]

একটি আধুনিক জেল প্রকোষ্ঠ

প্রয়োগ

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশ কর্তৃক অপরাধজনিত কারণে আটক বা গ্রেফতারের ফলে ব্যক্তিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মহামান্য আদালতের রায়ের পূর্ব পর্যন্ত অপরাধী হিসেবে ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত ও আদালতে প্রেরণ করা না হয় তাহলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হবে যদি -

  • পুলিশ তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার করে ও আদালতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
  • আদালত যদি মনে করে যে ব্যক্তিকে জেরাবিহীন অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে।
  • সমাজের জন্য বিপজ্জনক মনে করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
  • জামিনযোগ্য হয়েও যদি প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করতে অপরাগ হন।

ব্যক্তিকে যদি কারাগারে রাখা হয় তাহলে তিনি প্রিজনার নামে আখ্যায়িত হন। দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত আসামীদের ক্ষেত্রেও প্রিজনার শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যদি তিনি অপরাধের জন্য অপরাধীরূপে ঘোষিত হন। এছাড়াও, মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিকেও ফাঁসিতে ঝুলানোর পূর্ব পর্যন্ত কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়।

ব্যবস্থাপনা

সাধারণতঃ পুরুষ এবং নারী অপরাধীকে পৃথক স্থানে অথবা পৃথক কারাগারে আটক রাখা হয়। কারাগারের দেয়াল ও মূল ফটক বেশ মজবুতসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিঃশ্ছিদ্র থাকে। এছাড়াও নিয়ন্ত্রণজনিত কারণে কারাগারের অভ্যন্তরভাগের দরজাগুলো তালাবদ্ধ থাকে।

সেল নামে পরিচিত ছোট্ট, ক্ষুদ্র তালাবদ্ধ কক্ষে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়। বাঙ্ক বেড, টয়লেট এবং সিঙ্কের ব্যবস্থা করা থাকে। প্রতিদিনই আটককৃত ব্যক্তিদের ব্যায়ামের জন্য কক্ষ ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়। কিছু ব্যক্তি কারাগারে অবস্থানকালীন সময়ে দিবাভাগে কারখানায় কাজ করেন অথবা রান্নাবান্না কিংবা কাপড় ধৌতকরণে নিযুক্ত থাকেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাগণ কারারক্ষী নামে পরিচিত ও তাদের দেখাশোনার ভার গ্রহণ করেন। কারাগার পরিচালক ওয়ার্ডেন বা জেলার নামে পরিচিত।

এছাড়াও, কারাগারে গ্রন্থাগার, ব্যায়ামাগার, ছোট্ট পরিসরে হাসপাতাল, ভিজিটিং রুম, রান্নাঘর রয়েছে। ভিজিটিং রুমে আটককৃতের পরিবার এবং আইনজীবিদের পরিদর্শনের জন্য বরাদ্দ থাকে। ১৯৫৫ সালে মানবিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ আদর্শ ক্ষুদ্রতম আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করেছে।[2]

সামরিক কারাগার

সামরিক বাহিনীতে বিশেষ কারাগার রয়েছে যা সামরিক কারাগার নামে পরিচিত। সাধারণতঃ যুদ্ধ অপরাধী, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতাজনিত কারণে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকি সৃষ্টিকারী সেনা সদস্য(দেরকে) সামরিক আদালতে যথোচিত বিচার করা হয়। গুরুতর অপরাধে সেনা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ধরনের কারাগার সামরিক বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে এমপি বা মিলিটারী পুলিশ

সামরিক কারাগার দুই ধরনের হয়ে থাকে।

  • পেনাল যা শাস্তি ও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীনে থেকে অপরাধীকে সংশোধনের চেষ্টার জন্য।
  • যুদ্ধ চলাকালীন ধৃত ও অবরুদ্ধ শত্রু সেনাদেরকে সামরিক কারণে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তরীণ রাখার জন্য।

অপরাধী পরিসংখ্যান

২০০৬ সালের তথ্য মোতাবেক বৈশ্বিকভাবে কমপক্ষে ৯.২৫ মিলিয়ন লোক কারাগারে আটক রয়েছেন।[3] ধারণা করা হচ্ছে যে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। অনুমান নির্ভর প্রতিবেদন, বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্যের অপর্যাপ্ততা, কর্তৃপক্ষীয় সীমাবদ্ধতাই এর প্রধান কারণ।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি লোক আটক আছে। ২ মিলিয়নেরও অধিক লোক আমেরিকার জেলগুলোতে রয়েছে। ১৯৮৫ সালে সেখানে ৭৪৪,০০০ জন আটক ছিল।[4]

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.