দ্যনিস মুকওয়েগে (জন্ম ১লা মার্চ ১৯৫৫) কঙ্গোর একজন স্ত্রীরোগবিশারদ এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজেতা। তিনি বুকাবু'তে পেনজি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই কর্মরত আছেন, যেখানে তিনি বিদ্রোহী বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিত্‍সা দিয়ে থাকেন।[1]

দ্রুত তথ্য দ্যনিস মুকেনজিরি মুকওয়েগে, জন্ম ...
দ্যনিস মুকেনজিরি মুকওয়েগে
Thumb
২০১৪ সালে দ্যনিস মুকওয়েগে
জন্মমার্চ ১৯৫৫ (বয়স ৬৯)
পেশাস্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
পুরস্কার
  • শাখারভ পুরস্কার
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার
  • লেজিওঁ দনর
  • নোবেল শান্তি পুরস্কার
বন্ধ
Thumb
মহিলা রোগীদের সঙ্গে মুকওয়েগে ড. মুকওয়েগে

দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ থেকেই তিনি ধর্ষণের শিকার হাজারো নারীকে চিকিত্‍সা সেবা প্রদান করে আসছেন। তার আঠারো ঘণ্টার কর্মদিবসে তিনি দৈনিক দশটি অস্ত্রোপচার করে থাকেন।[1][2] ২০১৮ সালে তিনি এবং নাদিয়া মুরাদ "যৌন নিপীড়নকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার এবং সশস্ত্র সংঘাত বন্ধে তাদের প্রচেষ্টার কারণে" যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[3]

প্রাথমিক জীবন

দ্যনিস মুকওয়েগে পরিবারের নয় ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। কারণ উন্নত চিকিত্‍সা সেবা থেকে বঞ্চিত কঙ্গোর নারীদের গর্ভধারণে জটিলতা দেখার পর তিনি চাইতেন তাদের সেবা করতে।[2]

১৯৮৩ সালে মেডিক্যাল ডিগ্রী নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব বুরুন্ডি থেকে স্নাতক হওয়ার পর দ্যনিস মুকওয়েগে বুকাবুর নিকটে লিমরা হাসপাতালে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন।[4][5] যদিও পরে যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাবে সন্তান জন্মদানের পর প্রায়ই ব্যাথাসহ নানা জটিলতায় ভোগা নারীদের সেবার জন্য তিনি স্ত্রীরোগ বিষয়ে ফ্রান্সের অঁজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে স্নাতক হন।[4][5][6]

পেশাজীবন

ফ্রান্সে পড়াশোনা শেষে দ্যনিস মুকওয়েগে পুনরায় লেমেরা হাসপাতালে যোগদান করেন, কিন্তু প্রথম কঙ্গো যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেকগুলো হিংসাত্মক ঘটনার কারণে তিনি বুকাবুতে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৯ সালে সেখানে পেনজি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।[6]

প্রতিষ্ঠার পর থেকে পেনজি হাসপাতালে জটিল স্ত্রীরোগ এবং ট্রমায় আক্রান্ত ৮৫ হাজারের অধিক (এক হিসাব অনুযায়ী এদের ৬০ শতাংশ যৌন নিপিড়নের স্বীকার) নারী রোগীকে সেবা দিয়ে আসছে, আর এসব রোগীর অধিংকাশই আসতেন সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে।[2] জার্মান ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল মিশন (ডিআইএইএম) মুকওয়েগেকে তার কাজে অর্থ ও ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে।[7]

জাতিসংঘে ভাষণ

২০১২ সালের সেপ্টম্বরে দ্যনিস মুকওয়েগে জাতিসংঘে এক ভাষণ প্রদান করেন, যেখানে তিনি গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিপুল হারে গনধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান,[8] এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য কঙ্গো সরকার এবং অন্যান্য দেশের সমালোচনা করেন। তার মতে,"এটি একটি অন্যায্য যুদ্ধ এবং কেবল নারীদের প্রতি নির্যাতন এবং ধর্ষনকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।"[9]

হত্যাচেষ্টা

Thumb
পেনজি হাসপাতালে তাঁর অফিসে দ্যনিস মুকওয়েগে

২৫ অক্টোবর ২০১২ সালে, চার অস্ত্রধারী ব্যক্তি তাঁর বাসভবনে হামলা চালায়, কিন্তু তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। হামলাকরীরা দ্যনিস মুকওয়েগের কন্যাকে জিম্মি করে এবং তাঁর ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে। মুকওয়েগে ফেরার পর অস্ত্রধারীরা তাঁর দেহরক্ষীকে হত্যা করে এবং গোলাগুলির সময় মাটিতে পড়ে যাওয়ার ফলে মুকওয়েগে বেঁচে যান।[10] হত্যাচেষ্টার পর মুকওয়েগে ইউরোপে চলে যান এবং পেনজি হাসপাতাল জানায় যে, তাঁর অনুপস্থিতে এর নিয়মিত কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।[11]

১৪ জানুয়ারী ২০১৩ সালে তিনি পুনরায় বুকাবুতে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি ২০ মাইলব্যাপী দীর্ঘ ভীড়ে জনগনের উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন, বিশেষ করে তাঁর রোগীদের থেকে, যারা আনারস ও পেঁয়াজ বিক্রি করে তাঁর ফেরার টিকিটের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিল।[12]

পুরস্কার

Thumb
ফ্রান্সের সর্ব্বোচ্চ পুরস্কার লিজিয়ন অব অনারসহ দ্যনিস মুকওয়েগে
  • জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার (নিউইয়র্ক, ১০ ডিসেম্বর ২০০৮)[13]
  • ওলফ পালমি পুরস্কার (সুইডেন, ২০০৮)[14]
  • আফ্রিকান অব দ্য ইয়ার (নাইজেরিয়া, জানুয়ারী ২০০৯), ডেইলি ট্রাস্ট কর্তৃক[14]
  • শেভেলিয়ের ডি লা লিজিয়ন ডি অনার (কিনশাসা, নভেম্বর ২০০৯) ফ্রান্স রাষ্ট্রদূত পিয়েরে জ্যাকুয়িমট কর্তৃক[15]
  • ভ্যান হিউভেন গোয়েডহ্যার্ট পুরস্কার (জুন ২০১০) নেদারল্যান্ডস রিফিউজি ফাউন্ডেশন কর্তৃক।
  • সম্মানিয় ডক্টরেট ডিগ্রী, উমিই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টি কর্তৃক।[16] (সুইডেন, জুন ২০১০)
  • ওয়ালেনবার্গ মেডেল, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক। (অক্টোবর ২০১০)
  • কিং বাউডোইন ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পুরস্কার। (ব্রাসেলস, ২৪ মে, ২০১১)[17] বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় আলবার্ট কর্তৃক।
  • ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড (নিউইয়র্ক, ২২ সেপ্টম্বর ২০১১)[18] রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন কর্তৃক।
  • জার্মান মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড (ফেব্রুয়ারি ২0১২)[19]
  • আফিসিয়ের ডি লা লিজিয়ন ডি'অনার (পেনজিPa, ৮ জুলাই ২০১৩) ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডির পুরস্কার নিয়ে বোকাবুতে আগমন।[20][21]
  • সিভিল কারেজ প্রাইজ (১৫ অক্টোবর ২০১৩) [22]
  • হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট এ্যাওয়ার্ড (আগস্ট ২০১৩)[23]
  • রাইট লিবলিহুড এ্যাওয়ার্ড (সেপ্টেম্বর ২০১৩)[24]
  • "প্রাইজ ফর কনফ্লিক্ট প্রেভেনশন" ফন্ডেশন চিরাক কর্তৃক (প্যারিস, অক্টোবর ২০১৩)[25] ২ ফরাসি রাষ্ট্রপতি জ্যাকুয়েস চিরাক ও ফ্র্যানকোইস হল্যান্ডের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদান
  • দ্য হিলারি ক্লিনটন এ্যাওয়ার্ড (ওয়াশিংটব, ডিসি, ফেব্রুয়ারি ২০১৪) জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদানের জন্য[26] ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হিউর সাথে
  • দ্য ইনামরি এথিকস প্রাইজ (অক্টোবর ২০১৪)[27]
  • সলিডারিটি প্রাইজ, মেডিসিনস ডু মোন্ডে এবং সেইন্ট পিয়েরে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃক প্রদান (ব্রাসেলস, অক্টোবর ২০১৪)[28]
Thumb
২০১৪ সালে স্ট্রাসবার্গে শাখারভ পুরস্কার অনুষ্ঠানে দ্যনিস মুকওয়েগে।
  • চিন্তার স্বাধীনতার জন্য শাখারভ পুরস্কার, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট থেকে গ্রহণ (স্ট্রাসবার্গ নভেম্বর ২০১৪)[29][30]
  • গুলবেনকিয়ান প্রাইজ (লিসবন, জুলাই ২০১৫)[31]
  • উইমেন ফর উইমেন ইন্টারন্যাশনাল "চ্যাম্পিয়ন ফর পিস এ্যাওয়ার্ড" (নিউইয়র্ক, নভেম্বর ২০১৫)[32]
  • প্রিক্স হিরোস পোওর এল'আফ্রিকিউ (হিরো ফর আফ্রিকা) (ব্রাসেলস, জানুয়ারি ২০১৬)[33]
  • ইউনিভার্সিটি অব পেনসেলভিনিয়া স্কুল অব নার্সিং, রেনফিল্ড ফাউন্ডেশন এ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল উইমেনস হেলথ (ফিলাডেলফিয়া, মার্চ ২০১৬)
  • ফর্চুন ম্যাগাজিন ৩৫তম ২০১৬ সালের বিশ্বের সেরা নেতা (মার্চ ২০১৬)[34][35]
  • ফোর ফ্রিডমস এ্যাওয়ার্ড (মিডলবার্গ, নেদারল্যান্ড, এপ্রিল ২০১৬)[36]
  • স্ক্যান্ডানেভিয়াব হিউম্যান ডিগনিটি এ্যাওয়ার্ড লরেট,স্ক্যান্ডানেভিয়ান হিউম্যান রাইটস লইয়ার্স অ্যান্ড কমিটি (স্টকহোম, অক্টোবর ২০১৬)
  • সিউল শান্তি পুরস্কার (সিউল, কোরিয়া, অক্টোবর ২০১৬)[37]
  • টাইম হান্ড্রেড (২০১৬)[1]
  • নোবেল শান্তি পুরস্কার (৫ অক্টোবর ২০১৮ নাদিয়া মুরাদের সাথে যৌথভাবে)

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.